You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.05.13 | ABC Channel Interview with Sheikh Mujibur Rahman | Part 2 - সংগ্রামের নোটবুক
ABC Channel Interview with Sheikh Mujibur Rahman | Part 2

বিদেশি টেলিভিশন সাংবাদিকের সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার. 

ঢাকা, ১৩ মে ১৯৭২

মার্কিন ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (এবিসি) কর্তৃক গৃহীত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকারটি ১৫ মে ১৯৭২ সারা যুক্তরাষ্ট্রেটেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের সাথে ১৯৭২ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত দীর্ঘ টিভি সাক্ষৎকারের পূর্ণ বিবরণ নিয়ে দেওয়া হলো :

প্রশ্নকর্তা : কথার মাঝখানে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, এক্ষুণি আবার শুরুকরছি, (মি, মরিশাস জিজ্ঞাসা শুরু করলেন)। জনাব প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বলেছেন, এতদঅঞ্চলের শাস্তি অথবা একটি মতৈক্যের জন্য তাকে আপনার বিশ্বাস করতে হবে। আপনি কী ব্যক্তিগতভাবেভুটাকে বিশ্বাস করেন?

বঙ্গবন্ধু : আপনি এসব কল্পনাশ্রয়ী অনুমিত প্রশ্ন ছাড়তে পারেন জনাব? পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার উপর বিশ্বাসের প্রশ্ন নির্ভর করেআমি একাকী এগুতে পারি না।

প্রশ্নকর্তা : মাফ করবেন, প্রধানমন্ত্রী, ওটা যে নিতান্তই অনুমাননির্ভর প্রশ্ন, এব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। আপনি কী ভুট্টোকে বিশ্বাস করেন?

বঙ্গবন্ধু : তিনি আমাকে বিশ্বাস করেন কী করেন না, এটা কোন প্রশ্ন নয়। এটা মুজিবুর রহমান ও মি, ভুট্টোর মধ্যে ব্যক্তিগত পারস্পরিক আস্থার কোন প্রশ্ন নয়। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের এ-দুদেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টি হয়েছে কিনা। প্রশ্নকর্তা : যুদ্ধ অবসান এবং বাংলাদেশের মুক্তিলাভের পর আপনাকে ছেড়ে দেওয়া এবং দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে অনেকে ভুট্টোকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন। অন্যেরা বলছেন, সে সময়ে তার সাথে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আপনার। এটা কী সত্য?

বঙ্গবন্ধু : হ্যা, আমরা আলোচনা করেছি। আমরা অনেক কিছু আলোচনা করেছি। ভুট্টো যদি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেন আমরা সর্বদাই আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

কেননা, আলোচনার মাধ্যমেই মীমাংসায় পৌঁছানো সম্ভব।

প্রশ্নকর্তা : সমঝোতার জন্যই কী বিশ্বাস করা প্রয়োজন?

বঙ্গবন্ধু : হ্যা, ভুট্টোকে বাংলাদেশের বাস্তবতাকে প্রথম স্বীকার করে নিতে হবে।

আপনারা কেন আমাকে এ ধরনের প্রশ্ন করছেন-আমি বুঝতে অক্ষম। যিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্ররূপে স্বীকৃতি দেয় নি-তাকে আমি কী করে বিশ্বাস করতে পারি।

 জনাব ভুট্টো এখনও বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তান অথবা পূর্ব বাংলারূপে আখ্যায়িত করছেন। তাঁর এভাবে কথা বলার কী অধিকার রয়েছে? যখন সে এইভাবে ব্যবহার করছে- তখন তাকে কী করে বিশ্বাস করতে পারি? তাঁকে বাংলাদেশের বাস্তবতাকে অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। পরস্পর পরস্পরকে বুঝা ও সহযোগিতা করা বিভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। নিক্সনের সফর।

প্রশ্নকর্তা : আমি কী বিষয়ের সামান্য পরিবর্তন করতে পারিআমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন চীন সফর করেছেন ও মস্কো যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি কী ঐসব দেশ বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য সফর করছেন?

বঙ্গবন্ধু : মি, নিক্সন তার দেশের স্বার্থের জন্য ঐসব দেশ সফর করছেন। উপরন্তু তারা বৃহৎ রাষ্ট্র। তারা যা খুশি আলোচনা করতে পারেন-আমার বলার কিছুই নেই।

আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে নারাজ।

 মার্কিন স্বীকৃতি প্রসঙ্গে প্রশ্নকর্তা : জনাব প্রধানমন্ত্রী, মি, নিক্সন তো কখনও আপনাকে বৃহৎ শক্তির সাথে দেখেনিকিন্তু চীন সফর ও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর তার সম্বন্ধে আপনার ধারণা কী পরিবর্তিত হয়েছে?

বঙ্গবন্ধু : আমি অত্যন্ত সুখী যে, যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। অবশ্য প্রেসিডেন্ট নিক্সন স্বীকৃতি দিতে বেশ দেরি করেছেন। কিন্তু আমি জানি যে, মার্কিন জনগণ, সংবাদপত্র ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করেছেন। তাঁরা আন্তরিকভাবে বাংলাদেশের জন্য কাজ করেছেন। এমনকি কেহ কেহ এক কোটি বাঙালি শরণার্থীকে ভারতে দেখার জন্যও এসেছিলেন। আমি তাঁদের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি-অবশ্য মি. নিক্সন পাকিস্তানকে। সেই সময় সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন। আমি মি, নিক্সনকে সেজন্য ধন্যবাদ দিতে পারি নি। আমি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি চাই

প্রশ্নকর্তা : কিন্তু জনাব প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশকে সাহায্যদানকারী দেশসমূহের মধ্যে আমেরিকাই বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য দিচ্ছে ও ভবিষ্যতেও দিতে থাকবে। আপনি এই পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণভাবে এই উপমহাদেশে ও বিশেষ করে বাংলাদেশ ও আমেরিকার সাথে কী ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান।

বঙ্গবন্ধু : যুক্তরাষ্ট্র একটি বৃহৎ শক্তি-সে সাহায্য করতে সক্ষমও আমিও সাহায্য নিতে কোন বাধা-বিপত্তি দেখছি নাঅবশ্য এই সাহায্য সর্বপ্রকার শর্তহীন হতে হবে। আমেরিকা এখন পর্যন্ত শর্তহীনভাবেই সাহায্য দিয়েছে। কিছু সাহায্য সরাসরি ও কিছু আনরডের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। এখন স্বীকৃতি এসেছে-আমরা আরও আলোচনা করব-আমি শুধু আমার দেশ সম্বন্ধেই বলতে পারি যেখানে সাড়ে সাত কোটি লোক বসবাস করছে। আমি পূর্ব বা পশ্চিমের কোন ব্লকের সাথে সংযুক্ত নই। আমার নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট-আমি নিরপেক্ষ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী। আমি সোভিয়েত ও ভারতের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি-কেননা, এই দুটি মহান দেশ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সহযোগিতা করেছে।