You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.23 | আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জনসাধারণের প্রতি নির্দেশাবলী | দেশের ডাক - সংগ্রামের নোটবুক

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জনসাধারণের প্রতি
নির্দেশাবলী

স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের সর্বাধিনায়ক জনসাধারণের প্রতি যে নির্দেশ সূচক সার্কুলার প্রচার করিয়াছেন তাহার একটি কপি আমাদের হাতে পৌঁছিয়াছে। নিম্নে তার হুবহু দেওয়া হলাে।
১. কোনাে প্রকার গুজবে কান দেবেন না। তাহারা শত্রুর গুপ্তচর হইতে পারে। শত্রু মিথ্যা প্রচার অভিযান চালিয়ে অথবা বেতারে মিথ্যা খবর প্রচার করে আমাদের অটুট মনােবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করিতে পারে। আপনারা সাহস, বুদ্ধি, পরিশ্রম এবং সতর্কতার সাথে মুক্তিবাহিনীর সাথে একত্রে সংগ্রাম করিয়া যান। মনে রাখিবেন পৃথিবীর কোনাে শক্তিই মুক্তিকামী মানুষকে পরাজিত করিতে পারে না। শান্তিকামী সকল মানুষ আমাদের সর্বপ্রকার সাহায্য করিবে।
২. আপনারা সাবধানের সাথে শত্রুর গতিবিধি, কার্যকলাপ, অস্ত্রশস্ত্র, শত্রুর সংখ্যা, গুড়ি ও আগমনের পথসমূহ লক্ষ রাখিবেন এবং সাথে সাথে সেই সংবাদ নিকটস্থ মুক্তিবাহিনীর কাছে পৌছাবেন।
৩. স্বাধীনতা আন্দোলনের এই চরম মুহূর্তে প্রত্যেকের পক্ষে মিতব্যয়ী হওয়া অবশ্য প্রয়ােজন। প্রয়ােজনের অতিরিক্ত খাদ্য, পেট্রোল, কেরােসিন মজুদ করিবেন না। মনে রাখিবেন শক্রর সাহায্যে এসব জিনিস যেন না আসিতে পারে।
৪. শত্রু নিকটে আসিলে কেউ পেছনের দিকে দৌড়াদৌড়ি না করে নিজস্ব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কোনাে দেয়ালের পাশে অথবা নিকটবর্তী গর্তের মধ্যে আশ্রয় নিবেন। যেখানে গােলাগুলি আরম্ভ হয় তার থেকে অন্ততপক্ষে, তিন মাইল দূরে অবস্থান করিবেন। যদি আপনাদের হাতে কোনাে গােলাগুলি না থাকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে তীর, ধনুক, বর্শা, দা, শাবল ইত্যাদি দিয়ে শত্রুকে ঘায়েল করুন। শত্রু যদি স্বাধীন এলাকার কোনাে স্থানে ঘাঁটি করে তবে মুক্তিবাহিনীর সাথে পরামর্শ করিয়া দলে দলে গুপ্ত যুদ্ধ শুরু করিবেন।
৫. দু’চারজন শত্রু সৈন্য থাকিলে চোরা পদ্ধতিতে আক্রমণ করিবেন। কুইচ অথবা বল্লম দ্বারা দু’চারজনকে সহজেই খতম করা যায়। শক্রর মৃতদেহ সাথে সাথে মাটি চাপা করিবেন এবং সংগৃহীত অস্ত্র মুক্তিবাহিনীর কাছে পৌছে দিবেন।
৬. মনে রাখিবেন গাড়িতে জয় বাংলার পতাকা এবং মুখে জয় স্বাধীন বাংলা বলিয়াও বর্বর দস্যুরা আগাইয়া আসিতে পারে। রাত্রিবেলা ছত্ৰীসৈন্য বিল অথবা মাঠে নামিতে পারে। সন্দেহ হওয়া মাত্র তাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিবেন এবং ইংরেজি অথবা উর্দুতে জিজ্ঞাসা না করিয়া গ্রামীণ ভাষায় জিজ্ঞাসাবাদ করিবেন। পাঞ্জাবী ইয়াহিয়ার পােষা কুকুর হইলে সাথে সাথে সমাধিস্থ করিবেন।
৭. লক্ষ রাখিবেন রাত্রিবেলা ঘরের আলাে যাহাতে বাইরে না আসিতে পারে। টর্চের আলাে উপরের দিকে ফেলিবেন না। বাইরে কখনাে সিগারেট অথবা হুক্কা খাইবেন না।
৮. বিমান আকাশে দেখিলে ভীত সন্ত্রস্ত না হইয়া নিকটবর্তী গর্তে আত্মগােপন করিবেন এবং রান্নাঘরের চুলা নিভাইয়া ফেলিবেন। প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি ঘরের সামনে পরিখা খনন করুন।
৯. মুক্তিবাহিনী প্রধানের পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কেউ শহর ছাড়িয়া গ্রামে যাইবেন না। যখন শহর ছাড়িতে নির্দেশ দেওয়া হইবে তখন আপনারা শহর হইতে ২/৩ মাইল ভিতরে নিরাপদ স্থানে যাইতে পারিবেন। শত্রুসৈন্য পিছু হটিয়া গেলে শহরে আসিয়া স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করুন। বাংলার সাড়ে সাত কোটি জনতার জয় অবশ্যম্ভাবী।

সূত্র: দেশের ডাক
২৩ এপ্রিল, ১৯৭১
০৯ বৈশাখ, ১৩৭৮