You dont have javascript enabled! Please enable it!

টাইম ম্যাগাজিন, এপ্রিল ২৬, ১৯৭১

সীমান্তের দিকে চাপ

 

গত সপ্তাহে রেডিও পাকিস্তান ঘোষণা করেছে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা আর যশোর শহরের মধ্যে আভ্যন্তরীণ বিমান ফ্লাইট চালু হয়েছে, যা বিদ্রোহীদের একটি শক্ত ঘাঁটি । ব্রডকাস্ট নোট করতে ব্যর্থ হয় যে পি আই এ প্রপজেট শুধুমাত্র সেনাদের বহন করছিল এবং যশোর বিমান বন্দরে এয়ার ফোর্স SABRE জেট দ্বারা তারা পাহারায় ছিল ।

 

এটা সত্যি যে, পাকিস্তানের অসভ্য গৃহযুদ্ধে সেনাবাহিনী আক্রমণাত্মক ভাবেই গ্রহণ করেছে । যতক্ষণ না পর্যন্ত অতিরিক্ত জনবল ও সরবরাহ না পৌঁছায়, সৈন্যরা নিজেদের অধ্যুষিত এলাকায় থাকা বেছে নেয়। গত সপ্তাহে তারা ভারতীয় সীমান্তে চাপ দেয়, সময়ের মধ্যে রাস্তার উপরে শক্ত আস্তরণ রক্ষা করার জন্য । মে মাসের শেষের দিকে সাধারণত বর্ষা আরম্ভ হয় । যদি তা রক্ষা করা যায় তাহলে তারা যে কোন মাপের অস্ত্র এবং অন্যান্য উপকরণ আমদানি অবরুদ্ধ করতে পারবে বাংলাদেশী প্রতিরক্ষা যোদ্ধাদের জন্য।

 

নকশাল সহানুভূতি

 

অপারেশনের ভারী খরচ সত্ত্বেও ( প্রতিদিন প্রায় ১.৩ মিলিয়ন ) এবং বিশ্বব্যাপী সমালোচনার দরুন, পাকিস্তান সরকারের রাষ্ট্রপতি আগা মোহাম্মাদ ইয়াহিয়া খান একটি নিষ্পত্তিমূলক বিজয় ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । আমেরিকা সহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে । ওয়াশিংটন ঘোষণা করেছে, মার্চের ২৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানকে কোন অস্ত্র সাহায্য করা হয়নি। অপরদিকে সাম্যবাদী চীন পাকিস্তানকে জোরালো সমর্থন করে যাচ্ছে, যেখানে পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী বিপক্ষ ভারত, বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

পূর্ব বাঙ্গালী বিদ্রোহীদের নিকটাত্মীয় পশ্চিম বাঙ্গালী অনেকেই গভীরভাবে জড়িত ছিল । কিন্তু পশ্চিম বাঙ্গালীরা পূর্ব বাংলার দীর্ঘায়িত যুদ্ধে তাদেরও দাম দিতে হতে পারে ভেবে ভয় পাচ্ছিলো। এতদিন পশ্চিম বাংলা সীমান্ত পার হয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের একটা ধীর অবিচল প্রবাহ গ্রহণ করে আসছিল। এই ধারা এখন বৃদ্ধি পেয়েছে যা স্টেটের অর্থনীতিতে অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিম বাঙ্গালীদের মধ্যে অতি উৎসাহী কিছু শহুরে সন্ত্রাসী আছে যারা মাওবাদী নকশাল। এদের মধ্যে কেউ কেউ সীমান্ত পার হয়ে ঘরোয়া বন্দুক ও বোমা নিয়ে বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে।

 

 

কঠোর শব্দ

 

সরকারীভাবে ভারত শান্ত থাকার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানে ভারত কখনই ‘নীরব দর্শক’ হয়ে থাকবে না। কিন্তু গত সপ্তাহে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল এটাকে কি রাজকীয় যুদ্ধ বলা হবে কিনা, জবাবে তিনি কঠোরভাবে বলেন, ‘কঠোর শব্দের ব্যবহারে কোন লাভ নেই’।

 

পূর্ব পাকিস্তানের ক্যাম্প থেকে রিপোর্ট করা হয় যে ধ্বংসলীলা চলছেই, মৃতের সংখ্যা দুইলক্ষ বা তারও অধিক। চিটাগাং বন্দরে শতাধিক লাশ নদীতে ফেলা হয়েছে স্রোতে ভেসে যাওয়ার জন্য। কৃষক ভুমিদস্যুদের কমে যাচ্ছে বলে কিছু পর্যবেক্ষক পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত নেতাদের বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল প্রতিবেদন করেছে। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানী ব্যবসায়ীদের মালিকানাধীন আধুনিক পাটকল ও ধ্বংস হয়েছে।

 

অস্থায়ী সরকার

 

বাঙ্গালীদের দিকেও কিছু বর্বরতা ছিল। ১৯৪৭ সালের দেশভাগে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে যে ভারত ও পাকিস্তান হয়েছিল তাদের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে বসতি স্থাপন করা অ-বাঙ্গালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা পুরাতন শোধ পরিশোধে তৎপর হয়। দিনাজপুর শহরে এই গ্রুপের সকল পুরুষদের মেরে ফেলা হয় এবং মহিলাদের আন্তঃক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়। বিদ্রোহীদের রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবর (মুজিব) রহমানের ক্রমাগত অনুপস্থিতিতে, যিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন, বিদ্রোহীরা গত সপ্তাহে একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের ঘোষণা দেয় । তারা শেখ মুজিবর রহমানকে রাষ্ট্রপতি রেখে, পূর্ব পাকিস্তানে তাদের সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী বানায়। বিদ্রোহীরা অস্থায়ী সরকারের রাজধানী হিসেবে মেহেরপুরকে ঠিক করে যা ভারত সীমান্ত থেকে মোটামুটি চার মাইল দুরত্ত্বে অবস্থিত।

 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেট্রোল ও জ্বালানীর অভাবে পড়ে এবং একটি সুসংগঠিত সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ সামগ্রীর অভাবে পড়ে। তারা সম্পূর্ণ স্কেল প্রবৃত্তি এড়িয়ে চলা শুরু করে যাতে অবশ্যম্ভাবী ক্ষয়ক্ষতিতে টিকে থাকা যায়। তাছাড়া কিছু পর্যবেক্ষকের বিশ্বাস, ততদিনে গেরিলা যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে যার শহরের অংশ সেনাবাহিনী এবং গ্রামাঞ্চলের অংশ বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারের পূর্ব পাকিস্তানে বজায়ে রাখা আপাত সংকল্পের পরেও, পরিস্থিতির নিছক মানবীয় গানিতিক হিসাবে বাঙ্গালীদের জয়ের সম্ভাবনা বা কম করে হলেও আঞ্চলিক সায়ত্ত্বশাসন জিততে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের মধ্যে বিপরীতে বাঙ্গালী সেনাদের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১০০০ থেকে ১ জনে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!