বাজানকারা সেতু ধ্বংস
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানায় বাজানকারা অবস্থিত। ২০ সেপ্টেম্বর মুক্তিযােদ্ধাদের ১টি গেরিলা দল চট্টগ্রাম-কুমিল্লার রাস্তায় জগন্নাথদিঘির কাছে বাজানকারা সেতুটি উড়িয়ে দিয়ে সেতু থেকে কিছু উত্তরে ১০জন গেরিলা ও ১টি নিয়মিত বাহিনী নিয়ে অ্যামবুশ পেতে রাখে। সেতুটি ধ্বংসের সংবাদ পেয়ে | ফেনী থেকে পাকিস্তানিদের ১টি শক্তিশালী দল সেতুর দিকে অগ্রসর হয়। সেতুতে পৌঁছার আগেই শক্ররা মুক্তিযােদ্ধাদের অ্যামবুশে পড়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে ১জন অফিসারসহ ২৫জন। শত্রুকে হত্যা করেন। শত্রুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ফেনীর দিকে পালিয়ে যায়।
পায়েলগাছার রাস্তায় অ্যামবুশ
কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানায় পায়েলগাছা অবস্থিত। শত্রুদের ১টি শক্তিশালী দল কুমিল্লার দক্ষিণে পায়েলগাছা থেকে নারায়ণপুরের দিকে অগ্রসর হয়ে নারায়ণপুরের অনেক বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং নারী ধর্ষণ করে। ২-৩ ঘণ্টা তাদের অত্যাচার চলে। নারায়ণপুরের কাছে অবস্থিত মুক্তিযােদ্ধাদের মাত্র ১৩ সদস্যের ছােটো ছােটো গেরিলা দল শত্রুদের নারায়ণপুরের দিকে অগ্রসর হতে দেখে । পরে এ দল পায়েলগাছার রাস্তায় অ্যামবুশ পাতে। শত্রুরা নারায়ণপুরে অত্যাচার চালায়। আক্রমণে ১৪জন শত্রু ও ২৮ জন রাজাকার নিহত এবং ১৩জন শত্রু ও ১৬জন রাজাকার আহত হয়। মুক্তিযােদ্ধারা গুলি শেষ না হওয়া। পর্যন্ত প্রাণপণে আক্রমণ চালিয়ে যান। এ অ্যামবুশে শেষ পর্যন্ত ৫জন গেরিলা শহিদ হন এবং বাকি ৮জন ফিরে আসতে সমর্থ হন। শক্তিশালী পাকিস্তানি দলের সঙ্গে ক্ষুদ্র এ গেরিলা বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণ এবং আত্মত্যাগ কোনােদিন ভুলে যাওয়ার নয়।
নয়নপুরের যুদ্ধ
কুমিল্লা শহর থেকে উত্তরে ২-৩ কিলােমিটার দূরে সদর থানায় নয়নপুর অবস্থিত। নয়নপুর রেল স্টেশনের কাছে গােডাউনে পাকিস্তানিদের কিছুসংখ্যক সৈন্য তাদের ঘাঁটি গড়েছিল। এ সংবাদ ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘এ’ কোম্পানি জানতে পারে। পরবর্তী সময় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের ফলে শত্রুদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও শত্রু ঘাঁটির পতন ঘটে। নয়নপুর রেল স্টেশন শত্রুবাহিনী বা মিত্রবাহিনী উভয়ের কাছে সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা রেল স্টেশন দখল প্রতিপক্ষের যােগাযােগ ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে বিফল করে তােলে। পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্তিশালী দল নয়নপুর রেল স্টেশন এলাকার গােডাউনে সুদৃঢ় অবস্থান করেছিল। পাকিস্তানি সেনারা এ ঘাটির অবস্থান বাড়িয়ে শালদা নদীর অবস্থান পর্যন্ত যােগাযােগ স্থাপন করার চেষ্টা করছিল। পাকিস্তানি সেনারা পরবর্তী সময় ঘাঁটিতে এক কোম্পানির অধিক সৈন্য প্রেরণ করে শক্ত প্রতিরােধ ব্যবস্থা গড়ে তােলে। মুক্তিবাহিনীর অন্তর্গত ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘এ’ কোম্পানির ১টি প্লাটুন গণবাহিনী নিয়ে নয়নপুর রেল স্টেশনের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুয়ায়ী রাত আড়াইটার সময় স্টেশনের উত্তর দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর ২ প্লাটুন একসাথে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। ১টি প্লাটুন স্টেশনের ২০০ গজ উত্তরে রেললাইন পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে দখল করে নিতে সক্ষম হয়। এ সময় পাকিস্তানি সেনাদের গােলাগুলি তীব্রতর হতে শুরু করে এবং মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময় মেজর খালেক অন্যান্য প্লাটুনকে আক্রমণ তীব্র করার নির্দেশ দেন। এ প্লাটুনগুলাে বৃষ্টির মধ্য দিয়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে এবং রেল স্টেশনের ২৫ গজের মধ্যে পৌছাতে সক্ষম হয়। এ পর্যায়ে পাকিস্তানি। সেনাদের ৬-৭টি বাংকার ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তী সময় পাকিস্তানি সেনাদের। তীব্র আক্রমণের মুখে মুক্তিবাহিনী পশ্চাতে সরে আসতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে। মুক্তিবাহিনীর ৭জন শহিদ এবং ৯জন আহত হন।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড