You dont have javascript enabled! Please enable it! লাকসামের অ্যামবুশ,বাটপাড়ার অ্যামবুশ, চৌদ্দগ্রাম-মিয়াবাজার রােডে অ্যামবুশ,গৌরীপুর রেইড,ধনপুরের অ্যামবুশ - সংগ্রামের নোটবুক
লাকসামের অ্যামবুশ (লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইন অ্যামবুশ)
কুমিল্লা জেলা সদর থেকে দক্ষিণে লাকসাম থানা অবস্থিত। ২৯ মে বিকাল ৪টায় ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাইওনিয়ার পার্টিকে লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইনে মাইন পুঁতে রেলগাড়ি লাইনচ্যুত করার জন্য পাঠানাে হয়। এ দলটি মাইন পুঁতে লাকসাম ও নােয়াখালীর মাঠে ৩টি রেলওয়ে বগি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। ফেরার পথে পাইওনিয়ার পার্টির ছােট দলটি চৌদ্দগ্রামচট্টগ্রাম সড়কের ওপর একটি সদ্য মেরামত করা ব্রিজের ওপর মাইন পুঁতে রাখে। রাত ৮টায় ১টি জিপে ৫জন পাকিস্তানি সেনা ফেনীর দিক থেকে আসে। জিপটি যখন ব্রিজের ওপর পৌছে, তখন মাইন বিস্ফোরিত হওয়ায় ব্রিজটি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এর ফলে ১জন অফিসারসহ ৩জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং অন্য ২জন গুরুতর আহত হয়। ঐদিনই সন্ধ্যায় ৩জন গেরিলাকে হ্যান্ড গ্রেনেডসহ চৌদ্দগ্রাম থানায় পাঠানাে হয়। থানার সন্নিকটে দিঘির কাছে শত্রুদের ১টি বাংকার ছিল। গেরিলা দলটি গ্রেনেড ছুড়ে বাংকারটি ধ্বংস করে দেয়। ফলে ৩জন শত্রু সৈন্য নিহত এবং কিছু স্থানীয় লােকও আহত হয়।
বাটপাড়ার অ্যামবুশ
সদর থানায় বাটপাড়া অবস্থিত। ২৯ মে রাতে মুক্তিবাহিনীর ১টি প্যাট্রল পার্টি কুমিল্লার বাটপাড়ায় অ্যামবুশ পেতে বসে থাকে। শত্রুদের ২টি গাড়ি রাত ২টার সময় অ্যামবুশে পড়ে। অ্যামবুশ পার্টি সাফল্যের সাথে ২টি গাড়ি ধ্বংস করে দেয় এবং সেই সঙ্গে ৪জনকে হত্যা করে। শত্রুদের পেছনের গাড়িটি ফাঁদে পড়ার আগেই পালিয়ে যায়। ি২৯ মে রাত ৯টায় ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে ২টি সেকশন কসবার পশ্চিমে টি আলীর বাড়িতে শত্রুদের অবস্থানের ওপর অকস্মাৎ অনুপ্রবেশ করে এবং আক্রমণ চালায়। সঙ্গে সঙ্গে মর্টারের সাহায্যে আড়াআড়ি শত্রু অবস্থানের ওপর গুলি চালায়। এ আক্রমণে শত্রুদের ১টি বাংকার ধ্বংস হয়ে যায় এবং ৩জন নিহত এবং ২জন শত্রু সৈন্য আহত হয়। এরপর মুক্তিযােদ্ধারা আক্রমণ শেষ করে নিজ অবস্থানে চলে আসেন।
চৌদ্দগ্রাম-মিয়াবাজার রােডে অ্যামবুশ
কুমিল্লা জেলার সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে চৌদ্দগ্রাম থানা অবস্থিত। ৩০ মে চৌদ্দগ্রামের ১ কিলােমিটার উত্তরে চৌদ্দগ্রাম-মিয়াবাজার রােডের ওপর ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘বি’ কোম্পানির ১টি প্লাটুন হঠাৎ শক্রদের ২৭জনের একটি দলকে দূর থেকে আসতে দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি অ্যামবুশ পাতে। শত্রুরা যদিও এ অতর্কিত আক্রমণে হতচকিত হয়ে যায়, কিন্তু তারা ত্বরিতগতিতে রাস্তার পশ্চিম পাশে সরে পড়ে। অ্যামবুশের ফলে শুধু ৩জন শত্রুসেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা লাকসাম-বাংগােড়া কাঁচা রাস্তার ওপর ফেলনা গ্রামের কাছে মাইন পুঁতে রাখে। শত্রুদের ১টি ৩ টন গাড়ি এ মাইনে বিধ্বস্ত হয়। ২৯ মে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘বি’ কোম্পানির ১টি প্লাটুন ২টি ৩ ইঞ্চি মটারসহ সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার ওপর মটারের সাহায্যে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। অতর্কিত মর্টারের গােলার আঘাতে এবং হালকা মেশিনগানের আঘাতে তারা যথেষ্ট হতাহত হয়।
গৌরীপুর রেইড
সদর থানার দক্ষিণে গৌরীপুরে পাকিস্তানি ক্যাম্প। মে মাসের মাঝামাঝি পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনীর কমান্ডােরা হঠাৎ আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ৯জন শত্রু নিহত হয়। মুজাহিদ ক্যাপ্টেন আব্দুল হক এ আক্রমণের নেতৃত্ব দেন।
ধনপুরের অ্যামবুশ
সীমান্তের এপারে এবং ওপারে কুমিল্লা থেকে ৮ কিলােমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ধনপুর অবস্থিত। ধনপুরে (ভারত) লেফটেন্যান্ট আবু কায়সার মােহাম্মদ ফজলুল কবিরের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্প থেকে যােদ্ধারা বাংলাদেশের ভেতরে বিভিন্ন রেইড, অ্যামবুশ প্যাট্রল পরিচালনা করতেন। ৫-৬ জুন ১টি ফাইটিং প্যাট্রল রাতে প্যাট্রলিং করে ভােরে ক্যাম্পে পৌছে। লেফটেন্যান্ট কবির তখন তাদের জানান যে, শক্রর ১টি দল বাংলাদেশি ধনপুরে এসেছে। ফাইটিং প্যাট্রলের যােদ্ধারা কোনাে বিশ্রাম ছাড়াই শত্রুর ওপর রেইড করার জন্য তৈরি হয়ে যান। সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে প্রায় ২ কিলােমিটার পথ অতিক্রম করে তারা শত্রুকে অবরােধ করে ফেলেন। শত্রুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ প্লাটুন এবং তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ১জন ক্যাপ্টেন। মুক্তিযােদ্ধাদের সংখ্যা ছিল ১৫জন। মুক্তিযােদ্ধাদের নেতা বাবুল ওয়াকি-টকির মাধ্যমে পরিস্থিতি লেফটেন্যান্ট কবিরকে অবহিত করেন এবং তাকে অনুরােধ করেন আরও মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে অকুস্থলে আসার জন্য। লেফটেন্যান্ট কবির ১৫জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে বাবুলের সাথে যােগ দেন। প্রফেসর খােরশেদ আলম এমএনএ হাতে ১টি মেগাফোন। নিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণ করার জন্য ইংরেজি ও উর্দুতে আহ্বান জানাতে থাকেন। শত্রুপক্ষ পাল্টা গুলি ছুড়লে মুক্তিযােদ্ধারাও গুলিবর্ষণ শুরু করেন। শত্রু পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বুঝে গুলি করতে করতে কুমিল্লা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে।  এ অপারেশনে শক্রর ৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। শক্রর ৩টি জি-৩ রাইফেল, ২টি চাইনিজ রাইফেল পাউচসহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় নির্ভয়পুর থেকে লেফটেন্যান্ট মাহবুব ৭-৮জন মুক্তিযােদ্ধাসহ লেফটেন্যান্ট কবিরের দলের সাথে যােগ দেন। ততক্ষণে যুদ্ধ শেষ।

 

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড