হবিগঞ্জ থানা ও বিদ্যুৎ ভবনের যুদ্ধ
হবিগঞ্জ সদর থানায় বিদ্যুৎ ভবন অবস্থিত। ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা শহর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে শত্রুর সাথে মুক্তিযােদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে হবিগঞ্জ থানা বিদ্যুৎ ভবনের যুদ্ধ। এ ভবন দুটির মধ্যে রাজাকার ও পাকিস্তানিরা অবস্থান নেয়। মুক্তিযােদ্ধাদের ৩৫-৪০জনের ১টি প্লাটুন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে খােয়াই নদীর অপর তীরে (বর্তমানে সদর হাসপাতালের সম্মুখে) থানা ভবনের সামনে ১টি দল এবং বিদ্যুৎ ভবনের উত্তরপূর্ব দিকে আরেকটি দল অবস্থান গ্রহণ করে। ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা তাদের অবস্থান প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। তখন মুক্তিযােদ্ধারা স্থানীয় জনগণের সহায়তায় শত্রুর কাছ থেকে ৭টি ৩০৩ রাইফেল উদ্ধার করেন। পুরাে পরিকল্পনা ও মুক্তিযােদ্ধাদের নেতৃত্ব প্রদান করেন। প্লাটুন অধিনায়ক হাবিলদার শহিদ (অব.) ।
মিরাশি হাই স্কুলের যুদ্ধ
চুনারুঘাট থানার মিরাশি উচ্চ বিদ্যালয়ে ছিল একটি রাজাকার ঘাটি। পাকিস্তানিদের এখানে প্রবল প্রতাপ ছিল। যত রকমের দুষ্কর্ম আছে, তার সব কিছু সমানে চালিয়ে তারা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তাই জুনের শেষ দিকে মুক্তিযােদ্ধারা এ অঞ্চলে একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। এ দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ইপিআর হাবিলদার এম এ জহির। বাগাই অবস্থান থেকে রওনা দেয় মুক্তিযােদ্ধাদের দলটি। এলাকাটি বারবার পর্যবেক্ষণ করে তারা সংগ্রহ করে নেয় রাস্তাঘাটের তথ্য ও দূরত্ব। তারপর তারা ঠিক করে একজন পথপ্রদর্শক, যার সমস্ত রাস্তাঘাট চেনা। তারপর নির্দিষ্ট দিনে। সন্ধ্যার মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পথপ্রদর্শকের প্রদর্শিত পথে তারা অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্ত। তারপর অতিক্রম করে আরও ২৫ কিলােমিটার রাস্তা। হাওরা জঙ্গল পাড়ি দিয়ে এক সময় মিরাশি থেকে ২ কিলােমিটার দূরত্বে তারা অবস্থান নেয়। এখানে এসে তারা আবার তথ্য সগ্রহ করে। স্থানীয় স্কুল এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হয়। স্কুলের বাইরে ছিল ৪ জন সশস্ত্র প্রহরী। আক্রমণের শুরুতেই এদের ধরে নিরস্ত্র করা হয়। এরপর স্কুলের। জানালা দিয়ে ভেতরে গ্রেনেড চার্জ করা হয়। সাথে কভারিং পার্টি পিছন থেকে ফায়ার দিতে থাকে। ফলে রাজাকাররা স্কুল ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৩-৪জন। রাজাকার আহত হয় এবং মুক্তিযােদ্ধারা ৭টি রাইফেল হস্তগত করেন।
রেমা চা-বাগানের যুদ্ধ
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার দক্ষিণে রেমা চা-বাগান অবস্থিত। খােয়াই নদীর পূর্ব তীরে রেমা চা-বাগানের বালুমারা, রেমা বন বিট অফিসের পাশে। পাকিস্তানি সেনা এবং ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে এক ভয়ানক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকিস্তানিদের আক্রমণের মুখে সৈনিক রমিজ উদ্দিন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে মােকাবিলা করেন। এ যুদ্ধে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক রমিজ উদ্দিন শহিদ হন এবং সেখানে ৩জন শত্রু মারা যায়। এখানেই শহিদ মাে. রমিজ উদ্দিনের সমাধিস্থল। পরে তাকে বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড