You dont have javascript enabled! Please enable it! ধূপপাতিয়ার অ্যামবুশ,মরুড়া আক্রমণ,লালচান্দ চা-বাগানে পাকিস্তানিদের আক্রমণ - সংগ্রামের নোটবুক
ধূপপাতিয়ার অ্যামবুশ
আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় ৩ নম্বর সেক্টরের অধীন কাঁচামাটি সাব-সেক্টর ঘাঁটি। প্রায় ৫ কিলােমিটার ভেতরে ধূপপাতিয়া গ্রাম, যা চুনারুঘাট থানার আসামপাড়ার দক্ষিণে কাছেই ভারতীয় সীমান্ত আর গৌরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাকিস্তানি বাহিনী বাল্লায় ঘাঁটি স্থাপন করে। এ দিক দিয়েই যাতায়াত করতাে শত্রুরা। মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর এ রাস্তায় অ্যামবুশ করেন। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ১০০জন মুক্তিযােদ্ধা। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইপিআর সুবেদার সুলতান আহমদ। এদিকে কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা এ সময় দেশের ভেতর থেকে মালামাল নিয়ে ক্যাম্পে যাচ্ছিলেন। সেসব মাল তারা বহন করছিলেন ট্রাক্টরযােগে। ঠিক এ সময় পথিমধ্যে রাজাকারদের পুঁতে রাখা মাইনে ট্রাক্টরের চাকা পড়লে বিস্ফোরণ ঘটে এবং তাতে শহিদ হন ট্রাক্টরচালক নীলাম্বর রুদ্রপাল ও দিদারুল আলম। এ মর্মান্তিক ঘটনার মুখে অ্যামবুশ থেকে বের হয়ে আসে মুক্তিবাহিনী। শহিদদের অকুস্থল থেকে তুলে নিয়ে দাফন করা হয় গৌরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।
মরুড়া আক্রমণ
হবিগঞ্জ মহকুমা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে চুনারুঘাট থানার অবস্থান। চুনারুঘাট থানার কালেঙ্গার পাহাড়ে অবস্থান ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের এখান থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের ১টি দল শায়েস্তাগঞ্জের খােয়াই নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থান করে। বিভিন্ন স্থানে তাদের অপারেশন পরিচালনা করে আগস্ট মাসে মুক্তিযােদ্ধারা শায়েস্তাগঞ্জের নিকটবর্তী মরুড়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক শহিদ তরফদারের অধিনায়কত্বে ১৫-২০জন মুক্তিযােদ্ধার ১টি দল নির্দিষ্ট দিনে যাত্রা শুরু করে। বেশ দূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে তারা মিরাশী গ্রামের পূর্ব পাশে এসে পৌছায় এর উত্তর-পূর্ব দিকে রানীগাঁও মাঝখানে একটি হাওরে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান কাছাকাছি ছিল রাজাকার বাহিনীর ঘাঁটি ব্যাপারটা জেনে ফেলে তারা তাই রাজাকাররা অতর্কিতে আক্রমণ করে মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যায় মুক্তিযােদ্ধারা মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে এখানে সামনাসামনি যুদ্ধ করা মােটেই যুক্তিযুক্ত হবে না। তাই কুলিয়ারছড়া পার হয়ে নিরাপদে কালেঙ্গায় প্রবেশ করেন তারা চলে যায় আরও ১১-১২ দিন। আবার শুরু হলাে প্রস্তুতি পুনরায় যাত্রা। শুরু হয় শায়েস্তাগঞ্জের অভিমুখে শায়েস্তাগঞ্জ শহরের পাশে মরুড়া রাজাকার। ঘাঁটি আক্রমণ করা হবে। মুক্তিযােদ্ধারা যথাযথ আক্রমণ চালান রাজাকারদের ওপর রাজাকাররা তাদের সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে পারেনি অবশেষে রাজাকাররা মরুড়া ঘাটি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
লালচান্দ চা-বাগানে পাকিস্তানিদের আক্রমণ
চুনারুঘাট সদর থেকে ৭-৮ কিলােমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ৫ নম্বর শানখােলা ইউনিয়নে লালচান্দ চা-বাগান অবস্থিত। ভারতীয় সীমান্তের ১৫ কিলােমিটার ভেতরে কাতলামারায় ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের ঘাটি। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক শহিদ জামানের নেতৃত্বে ৩০জন মুক্তিযােদ্ধার একটি দল কাতলামারা ঘাঁটি থেকে এখানে আসে। অপারেশনের জন্য ছেলেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে লালচান্দ বাগানে আঘাত আনার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু অপারেশন করার পূর্বেই রাজাকার বাহিনী তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। রাজাকারদের আক্রমণে লালচান্দ চাবাগানে ১১জন শহিদ হন। শায়েস্তাগঞ্জ রেল ক্রসিংয়ে তাদের সবাইকে দাফন করা হয়। স্বাধীনতার পর তাদের মৃতদেহ উঠিয়ে এনে অন্যত্র সমাহিত করা হয়। তাদের স্মরণে লালচান্দ চা-বাগানের স্মৃতিসৌধ মুক্তিযুদ্ধের স্বাক্ষর বহন করে আসছে।

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড