You dont have javascript enabled! Please enable it!
মাধবপুর থানা সদর আক্রমণ
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আশুগঞ্জে একটি। প্রতিরক্ষাব্যুহ তৈরি করে উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা থেকে অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি বাহিনীকে বাধা দেওয়া। কিন্তু পাকিস্তানিরা তাদের আর্টিলারি, মর্টার ও জলপথে গানবােট এবং আকাশপথে বিমান হামলা চালায়। এ আক্রমণের মুখে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিরােধ করতে না পেরে কৌশলগত কারণে পিছু হটে যায়। মুক্তিযােদ্ধারা মাধবপুরে অবস্থান গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময় পাকিস্তানিদের আক্রমণের মুখে মাধবপুরের পতন হলে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তেলিয়াপাড়া, মনতলা, মুকুন্দপুর অঞ্চলে অবস্থান করে। ঢাকা-সিলেট সড়কপথে মাধবপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, একে সিলেট জেলার প্রবেশদ্বার বলা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম প্রভৃতি স্থানে সিলেট থেকে যােগাযােগ করতে হলেও মাধবপুর ছাড়া কোনাে বিকল্প সড়ক ছিল না। তাই এ পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট মােরশেদ ১২জন সৈন্য নিয়ে ১৪ মে মাধবপুর থানা সদরে পৌঁছান। লেফটেন্যান্ট মােরশেদ ঢাকা-সিলেট সড়কের মাধবপুর থানা সদরের সামনে। পাকিস্তানি সৈন্যদের ওপর অ্যামবুশ করে শত্রুর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে ২ দিন প্রচণ্ড যুদ্ধের পর মুক্তিযােদ্ধারা এ অঞ্চল থেকে তাদের অবস্থান প্রত্যাহার করে নেন।
হরষপুর রেল স্টেশনের যুদ্ধ
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার অন্তর্গত ১ নম্বর ইউনিয়নে হরষপুর রেল স্টেশন অবস্থিত। ৪-৫ এপ্রিল মেজর মইনুলের নেতৃত্বে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩৫-৪০জন নিয়মিত সৈনিক ও ২০০জন মুক্তিযােদ্ধা হরষপুর রেল স্টেশনে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করেন। প্রায় ১ মাসের বেশি সময় অবস্থানে। থাকার পর এ স্টেশনে পাকিস্তানি বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে এ বিশাল আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব ছিল না। তাই মুক্তিযােদ্ধারা সাময়িকভাবে ভারতের কলকলিয়ায় চলে যান। শত্রুর ১০০জন সৈনিক ও প্রায় ৩৫-৪০জন রাজাকার নিয়ে হরষপুর রেল স্টেশনে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে এবং ১৬ ডিসেম্বরের ৪-৫ দিন পূর্বে তাদের অবস্থান প্রত্যাহার করে। হরষপুরে পাকিস্তানি ক্যাম্পের ওপর মুক্তিবাহিনী খণ্ড খণ্ড আক্রমণ। পরিচালনা করতাে এবং তাদের ব্যতিব্যস্ত রাখতাে।
ভবানীপুরের (তেলিয়াপাড়া-ধর্মগড় রােড) অ্যামবুশ
তেলিয়াপাড়া থেকে ধর্মগড় পর্যন্ত জেলা বাের্ডের রাস্তা। ভবানীপুর স্থানটি ভারতীয় সীমান্তের একেবারে কাছে অবস্থিত। দূরত্ব মাত্র ২ কিলােমিটার। তেলিয়াপাড়া থেকে এ সড়কে পাকিস্তানি বাহিনী ধর্মগড় ক্যাম্পে যাতায়াত করতাে। ১৫-১৬ মে এ সড়কে পাকিস্তানি শক্রদের প্রতিরােধ ও আক্রমণ করার জন্য ১টি দল প্রেরণ করা হয়। নায়েক রফিক উদ্দিন, আবুল খায়ের ও মুসলিমসহ দলটি দ্রব্য ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাতের বেলা তেলিয়াপাড়া-ধর্মগড় রাস্তায় প্রবেশ করে। এ দলটির পথপ্রদর্শক ছিলেন একজন ডিম ব্যবসায়ী। ভবানীপুরকে অপারেশন স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। দলটি ঐ স্থানে মাইন পুঁতে অপেক্ষা করতে থাকে। সারারাত ধরে বৃষ্টি পড়তে থাকে। মুক্তিবাহিনী এ বৃষ্টির মধ্যেও সারারাত অপেক্ষা করতে থাকে। পরদিন সকাল ৮টায় পাকিস্তানি বাহিনীর জিপ ভবানীপুর অ্যামবুশ স্থান অতিক্রমকালে প্রচণ্ড আওয়াজে জিপটি উড়ে যায়। জিপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয় ৫জন পাকিস্তানি শত্রু। এদের মধ্যে ১জন ক্যাপ্টেন, ১জন লেফটেন্যান্ট ও ৩জন সৈনিক ছিল।

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!