মনতলার যুদ্ধ
মনতলা যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান
মনতলা বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার দক্ষিণে সিলেট-আখাউড়া রেললাইনের সীমান্তবর্তী একটি রেল স্টেশন। মনতলার অবস্থান আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে ৫ কিলােমিটার পূর্ব দিকে। মনতলা, তেলিয়াপাড়া থেকে ৭ কিলােমিটার দক্ষিণে এবং হরষপুর রেল স্টেশন থেকে ৮ কিলােমিটার উত্তরে অবস্থিত তেলিয়াপাড়া থেকে একটি সড়ক মনতলা হয়ে মাধবপুরকে সংযুক্ত করেছে। সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়ক থেকে মনতলার অবস্থান পূর্ব দিকে। মনতলার দক্ষিণে কাশিমপুর রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। মনতলা রেল স্টেশন, হরষপুর রেল স্টেশন ও কাশিমপুর এ ৩টি স্থান নিয়ে মনতলা কমপ্লেক্স।
যুদ্ধের পটভূমি
আশুগঞ্জ ও মাধবপুর পতনের পর মেজর সফিউল্লাহর নেতৃত্বে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তেলিয়াপাড়া, মনতলা, হরষপুর অঞ্চলে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯ মে তেলিয়াপাড়া পতনের পর ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সিংগার বিলের, হরষপুর ও কাশেমপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। ফলে সিলেট-আখাউড়া রেলপথ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট মহাসড়কের একাংশ মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে | চলে আসে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট সড়ক ও রেলপথ ব্যবহারে মনতলা কমপ্লেক্সই ছিল শক্রর কাছে প্রধান বাধা মনতলা এলাকা ছিল এ অঞ্চলের মুক্তিযােদ্ধাদের শেষ ঘাটি। এর পতনের অর্থ হলাে এ অঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে দাঁড়ানাের আর কোনাে জায়গা থাকবে না। তাই এ অঞ্চলকে নিজেদের দখলে রাখা ছিল ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য। খুব গুরুত্বপূর্ণ। তেলিয়াপাড়া থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের হটিয়ে দেওয়ার পর পাকিস্তানি সৈন্যরা মনতলা অঞ্চল থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের বিতাড়িত করার জন্য তাদের শক্তি সমাবেশ ঘটায় এবং ৩ সপ্তাহ ধরে বিক্ষিপ্ত আক্রমণ চালিয়ে যায়। কিন্তু তাদের পক্ষে মুক্তিযােদ্ধাদের বিতাড়িত করা তাে সম্ভব হয়নি, বরং এর জন্য তাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়। তারপরও শত্রু নিরস্ত্র না হয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের বিপক্ষে বেপরােয়া আক্রমণের পরিকল্পনা করে। অস্তিত্ব রক্ষার | সংগ্রামে নিয়ােজিত মুক্তিযােদ্ধারা মরিয়া হয়ে ওঠে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মনতলার সামরিক গুরুত্ব
২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কাছে মনতলা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনতলা ছিল এ অঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধাদের শেষ ঘাঁটি। এ ঘাটি হাতছাড়া হলে মুক্তিযােদ্ধাদের বাংলার মাটিতে অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হতাে। অন্যদিকে আখাউড়া-সিলেট রেললাইন চালু করা এবং সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক নিরাপদ রাখার জন্য মনতলা এলাকা থেকে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে উৎখাত করা পাকিস্তানির জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ এলাকা দখল করতে পারলে পাকিস্তানিরা অত্র এলাকায় সহজে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে।
যুদ্ধের সংগঠন
১. মুক্তিবাহিনী: মনতলা এলাকায় ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩টি কোম্পানি মােতায়েন করা হয় তথা: ক্যাপ্টেন এ এস এম নাসিমের নেতৃত্বে ১টি কোম্পানি, ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূইয়ার নেতৃত্বে ১টি কোম্পানি এবং লেফটেন্যান্ট হেলাল মােরশেদের নেতৃত্বে ১টি কোম্পানি। পাকিস্তানি বাহিনী: মনতলা এলাকার যুদ্ধে পাকিস্তানি ২৭ পদাতিক ব্রিগেডের ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়ন, ৩৩ বালুচ রেজিমেন্ট, ৯৮ মুজাহিদ ব্যাটালিয়ন, ২১ আজাদ কাশ্মীরের ১টি কোম্পানি, আর্টিলারির ১টি ব্যাটারি, মর্টার ব্যাটারি এবং ১টি কমান্ডাে প্লাটুন এ যুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধের অবস্থান ১. পাকিস্তানি বাহিনী: পাকিস্তানিদের ২৭ ব্রিগেডের ইউনিটগুলাে। আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মাধবপুরে মােতায়েন ছিল। ১৫ জুন পাকিস্তানিরা তাদের যুদ্ধকৌশল পরিবর্তন করে পরিখা খননের মাধ্যমে মনতলার দিকে অগ্রসর হয়। তাদের ১টি ব্যাটালিয়ন মনতলার উত্তরে ইটাখােলায় এবং অপর ১টি ব্যাটালিয়ন মনতলার পশ্চিমে আজবপুরে অবস্থান নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। মুক্তিবাহিনী: ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩টি কোম্পানি মনতলা কমপ্লেক্সে রেলপথে মােতায়েন করা হয়। ক্যাপ্টেন নাসিমের নেতৃত্বে ১টি কোম্পানি মনতলা এলাকা ও রেল স্টেশন এলাকায় অবস্থান নেয়। ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ১টি কোম্পানি মনতলার দক্ষিণে কাসিমপুরে রেল স্টেশন এলাকায় অবস্থান নেয়। লেফটেন্যান্ট মােরশেদের নেতৃত্বে ১টি কোম্পানির অবস্থান ছিল। হরষপুর ও রেল স্টেশন এলাকায়। ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। সদর দপ্তর ছিল ভারতের মনতলায়।
যুদ্ধের পরিকল্পনা ১. মুক্তিবাহিনী: মনতলা কমপ্লেক্স দখলে রাখার জন্য মেজর কে এম সফিউল্লাহর নেতৃত্বাধীন ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩টি কোম্পানি আখাউড়া-সিলেট রেললাইনকে বিবেচনায় রেখে মনতলা, কাশিমপুর ও হরষপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। মনতলা অঞ্চল ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের শেষ মুক্তাঞ্চল। এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। সে জন্য ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট মনতলা কমপ্লেক্স রক্ষার জন্য সর্বশক্তি নিয়ােগ করে এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ধরে রাখার পরিকল্পনা করে। পাকিস্তানি বাহিনী: মনতলা কমপ্লেক্স দখলে রাখার জন্য পাকিস্তানের ২৭ ব্রিগেড ব্যাপক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে। প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থানের ওপর বিক্ষিপ্ত আক্রমণ চালায়। তেলিয়াপাড়া থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের হটিয়ে দেওয়ার পর পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলাদেশের মাটি থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের বিতাড়িত করার জন্য তাদের শক্তি সমাবেশ করে এবং ৩ সপ্তাহ ধরে বিক্ষিপ্ত আক্রমণ চালিয়ে যায়। কিন্তু তাদের পক্ষে মুক্তিযােদ্ধাদের বিতাড়িত করা তাে সম্ভব হয়ে ওঠেইনি, বরং এর জন্য তাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির শিকার। হতে হয়। তারপরও শত্রু নিরস্ত্র না হয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের বিপক্ষে বেপরােয়া আক্রমণ অব্যাহত রাখে। অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নিয়ােজিত মুক্তিযােদ্ধারা মরিয়া হয়ে ওঠেন। প্রচলিত যুদ্ধপদ্ধতিতে ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানিরা তাদের কৌশলগত দিক পরিবর্তন করে।
যুদ্ধের বিবরণ
১৫ জুনের পর থেকে পাকিস্তানিরা রণকৌশলের পরিবর্তন করে। তারা মনতলা রেল স্টেশনের দিকে পরিখা খননের মাধ্যমে অগ্রসর হতে থাকে। ১টি ব্যাটালিয়ন অগ্রসর হয় উত্তর দিকের ইটাখােলা থেকে, আরেকটি ব্যাটালিয়ন অগ্রসর হয় দক্ষিণের আজবপুরের দিক থেকে। দিনের বেলা পাকিস্তানিরা পরিখা থেকে ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহার করে এবং ইটাখােলা ও মাধবপুর থেকে আর্টিলারি গােলাবর্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধাদের ব্যস্ত রাখে। রাতের বেলা আক্রমণের। তীব্রতা বেড়ে যায়। শুরু হয় ভয়াবহ গােলাবর্ষণ। বৃষ্টির মতাে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থানগুলােয় বর্ষিত হতে থাকে কামানের গােলা। যুগপভাবে পদাতিক বাহিনী রাতের আঁধারে পরিখা তৈরির কাজ চালিয়ে যায় এবং হামাগুড়ি দিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হয়। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের হালকা অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের কোনাে ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়। তা ছাড়া শক্রর আর্টিলারি। কামানগুলাে মুক্তিযােদ্ধাদের মর্টারের লক্ষ্যসীমার বাইরে থাকে। মুক্তিযােদ্ধারা। মাঝে মাঝে মর্টার ফায়ারের মাধ্যমে শক্রর অগ্রগতি থামিয়ে দেয়। তবে সেই থামিয়ে দেওয়া ছিল ক্ষণিকের জন্য। যে শক্তিমাত্রা প্রয়ােগে আক্রমণ প্রতিহত করা দরকার, তা মুক্তিযােদ্ধাদের ছিল না। ৫ দিন ধরে এ অবস্থা চলে এবং ২০ জুনের মধ্যে পরিখা খনন করে অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি ব্যাটালিয়নগুলাে মুক্তিযােদ্ধাদের কাছাকাছি চলে আসে।
ইতােমধ্যে দেশের সব ফ্রন্টে যুদ্ধের তৎপরতা বেড়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী আকাশ থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে এবং জঙ্গিবিমানগুলাে নীচ দিয়ে উড়ে গিয়ে ঐ অবস্থানগুলাের ছবি তােলে। এদিকে ক্যাপ্টেন নাসিমের কোম্পানি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তিনি তার শক্তি বৃদ্ধির জন্য আরও সৈন্য চেয়ে পাঠান। অবস্থা দুঃসহ হয়ে ওঠে। হাতে নিয়মিত সৈনিক খুবই কম। ক্যাপ্টেন নাসিমের অনুরােধ বাস্তবসম্মত বিধায় ক্যাপ্টেন মতিনের কোম্পানি থেকে ১টি প্লাটুন প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্লাটুনটি ক্যাপ্টেন নাসিমের সাহায্যে ২০ জুন রাতে তার কাছে পৌছে। ২১ জুন সকালে পাকিস্তানিরা ৪টি ব্যাটালিয়নের সমাবেশে বেপরােয়া আক্রমণ চালায়। শত্রুর ৪জন সৈনিকের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর মাত্র ১জন। এটি ছিল প্রভাতকালীন আক্রমণ। তিন দিক থেকে অভিযান। এ ছাড়া রয়েছে গােলন্দাজ বাহিনীর গােলাবর্ষণ। হেলিকপ্টারে স্থাপিত পর্যবেক্ষণ ফাড়ি সঠিক লক্ষ্যস্থলে আঘাতের ব্যাপারে পাকিস্তানি বাহিনীকে তথ্য প্রদান করে। ক্যাপ্টেন নাসিমের অবস্থানে পরিখার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া পাকিস্তানি ২টি ব্যাটালিয়ন আক্রমণ চালায়। ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূইয়ার অবস্থানে পশ্চিম দিকের চান্দুরা থেকে ১টি ব্যাটালিয়ন আক্রমণ চালায়। লেফটেন্যান্ট মােরশেদের অবস্থানে অভিযান চালায় দক্ষিণপশ্চিমের মুকুন্দপুর থেকে ১টি ব্যাটালিয়ন। ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়াকে আক্রমণকারী ব্যাটালিয়ন চান্দুরার দিক থেকে বিদ্যুৎ গতিতে তার অবস্থানকে দলিত-মথিত এবং বিধ্বস্ত করে দেয়। অতঃপর হরষপুরের দিকে মােড় ফিরে লেফটেন্যান্ট মােরশেদের অবস্থান ঘিরে ফেলে।
যুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টারে লেফটেন্যান্ট মােরশেদের কোম্পানির অবস্থানের পিছনে কমান্ডাে বাহিনী নামিয়ে দেয়। এর ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের সংকটে এক নতুন মাত্রা যােগ হয়। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ক্যাপ্টেন নাসিম এক বেপরােয়া যুদ্ধে লিপ্ত, ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়ার অবস্থান নিশ্চিহ্ন, লেফটেন্যান্ট মােরশেদ ঘেরাও। অবরুদ্ধ অবস্থা খুবই বিপন্ন। অবশিষ্ট রয়েছে শুধু ক্যাপ্টেন মতিনের ২টি প্লাটুন। ক্যাপ্টেন নাসিম অতিরিক্ত সৈন্য চেয়ে পাঠিয়েছেন কিন্তু মেজর সফিউল্লাহর হাতে কোনাে সৈন্য নেই। লেফটেন্যান্ট মােরশেদ শত্রুর বেষ্টনী ভেঙে বেরিয়ে আসার জন্য প্রাণপণ লড়াইয়ে নিয়ােজিত। যুদ্ধের গতি ফেরানাের মতাে পর্যাপ্ত সৈন্য হাতে নেই। তাই ক্যাপ্টেন নাসিমকে নির্দেশ দেওয়া হয়, ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে অভ্যন্তরে সরে যাওয়ার জন্য। অন্যদিকে লেফটেন্যান্ট মােরশেদের অবস্থাও গুরুতর। তাঁকে বিপদমুক্ত করার জন্য ক্যাপ্টেন মতিনের মাত্র ২টি প্লাটুন নিয়ে পাল্টা আক্রমণ পরিচালনা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ইতােমধ্যে ক্যাপ্টেন ভূইয়ার কোম্পানি কাশিমপুর থেকে ভারতীয় এলাকায় পাড়ি দেয়। তৎক্ষণাৎ ক্যাপ্টেন মতিন ও ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়ার কোম্পানি একত্র করে লেফটেন্যান্ট মােরশেদের সৈন্যদের বিপজ্জনক অবস্থা থেকে বের করার জন্য কলকলিয়ার দিক থেকে বেপরােয়া পাল্টা আক্রমণ শুরু করা হয়। এ মরণপণ আক্রমণ ফলপ্রসূ হয়। শত্রু সৈন্যদের পিছনে হটিয়ে দেওয়া হয়।
এর ফলে লেফটেন্যান্ট মােরশেদের সৈন্যরাই যে উদ্ধার পায় তাই নয়, মুক্তিযােদ্ধাদের হারিয়ে যাওয়া কিছু এলাকাও পুনরুদ্ধার হয়। এ ক্ষুদ্র ভূখণ্ডটি বাংলাদেশ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ ঘটনা মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য বিরাট গৌরব বয়ে আনে। যুদ্ধের ফলাফল প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট মনতলা কমপ্লেক্সের রণাঙ্গন থেকে প্রত্যাহার করে ভারতে আসে। তবে শক্রর ১টি ব্রিগেডের আক্রমণের মুখে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকেরা সাহস ও সংকল্পের পরিচয় দেয়। পাল্টা আক্রমণগুলাে ছিল বিশেষ সাহসী অপারেশন। পাল্টা আক্রমণের ফলে লেফটেন্যান্ট মােরশেদের সৈন্যরাই যে উদ্ধার পায় তা নয়, মুক্তিযােদ্ধাদের হারিয়ে যাওয়া কিছু এলাকাও পুনর্দখল হয়। এ ক্ষুদ্র ভূখণ্ডটি বাংলাদেশ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবােজ্জ্বল ঘটনা। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস বিশেষত মুজাহিদ দৌলার সাহস ও বীরত্ব এক অনুপ্রেরণাময় ঘটনা। যুদ্ধের সার্বিক মূল্যায়ন ১. পাকিস্তানিদের সাফল্যের কারণ ক. অবস্থানগত দিক অনুকূলে ছিল। খ, আর্টিলারি সমর্থন ছিল পর্যাপ্ত । গ. মুক্তিবাহিনীর চেয়ে তাদের সৈন্যবলের সংখ্যাধিক্য। ঘ. অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ। মুক্তিবাহিনীর ব্যর্থতার কারণ ক. সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না। খ, নিজেদের মধ্যে যােগাযােগের অভাব। গ. প্রয়ােজনীয় অস্ত্রের অভাব। ঘ. আর্টিলারি ফায়ারের অভাব। ঙ. প্রশিক্ষিত সৈন্যের অভাব। চ, শত্রুদের তুলনায় মুক্তিবাহিনীর সৈন্যবল কম ছিল।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড