You dont have javascript enabled! Please enable it!
ধর্মপাশা আক্রমণ
সুনামগঞ্জ মহকুমার দক্ষিণ-পশ্চিমে ধর্মপাশা থানার অবস্থান। কাজী আলমের নেতৃত্বে ২ ডিসেম্বর ধর্মপাশার সড়ক ধরে অগ্রসর হচ্ছিল মুক্তিবাহিনীর ১টি দল। প্রায় সাড়ে ৫ মাস আগে ধর্মপাশায় এক সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হয়েছিল। মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল হাই। তার পর থেকে ধর্মপাশা পাকিস্তানিদের দখলে ছিল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিবাহিনীর ১টি দল ধর্মপাশা পৌছায় ভােরের অল্প কিছুক্ষণ আগে। গ্রামবাসী অনেকেই তখনাে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। ঠিক তখনই হঠাৎ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে পুরাে পরিবেশ। জীবনের। ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযােদ্ধা মােফাজ্জল বাজারের পাশে ১টি পাকিস্তানি ট্রেঞ্চে গ্রেনেড চার্জ করার জন্য অগ্রসর হন। যদিও শত্রুর ট্রেঞ্চে গ্রেনেড চার্জ করতে সক্ষম হন। কিন্তু পরক্ষণেই শক্রর বুলেটের আঘাতে তার বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায়। পরদিন ৩ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন হামিদের নেতৃত্বে ৫০জন মুক্তিবাহিনীর ১টি দল খায়েরদিয়ার মাদ্রাসা থেকে ধর্মপাশা আসার পর পরই শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ আলী জুলফিকার (শাহজাহান), জুনাম আলী, মধুসিংহ, আবু বক্কর ও আব্দুল হক প্রমুখ মুক্তিযােদ্ধাসহ অধিনায়ক ক্যাপ্টেন হামিদ অতর্কিত আক্রমণ করে বাজারে প্রবেশ করেন। তাদের প্রচণ্ড গুলিবর্ষণে। পাকিস্তানি সদস্যরা পশ্চাদগামী হতে বাধ্য হয়। তারা ৩জন পাকিস্তানি এবং ১জন রাজাকারের লাশ নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। একই দিনে ধর্মপাশা শত্রুমুক্ত হয় এবং আর কখনাে ধর্মপাশা শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়নি।
তাড়ল অপারেশন
সুনামগঞ্জ মহকুমার ভাটি অঞ্চলের থানা দিরাইয়ের একটি গ্রাম তাড়ল। তাড়ল দিরাইয়ের দক্ষিণে কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত। ৪ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের বাহুবল থানা সদরে একটি সফল অপারেশন পরিচালনার মাধ্যমে ঐ এলাকা। শত্রুমুক্ত হয় এবং প্রচুর অস্ত্র ও গােলাবারুদ হস্তগত হয়। তারপর মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল কাইয়ুমের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর ৩০জনের ১টি দল প্রচুর অস্ত্র ও গােলাবারুদসহ ১০টি নৌকা নিয়ে টেকেরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তাঁর সহযােদ্ধাদের মধ্যে আবদুল গনি, মফিল উদ্দিন, আব্দুর রউফ ও ময়না মিয়ার নাম উল্লেখযােগ্য। পথিমধ্যে পাকিস্তানিদের মুখােমুখি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় তাড়লেই তারা রাত যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে মুক্তিযােদ্ধারা যে-কোনাে সময় শক্রর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় একটু হলেও উৎকণ্ঠিত ছিলেন। টহলরত শত্রুর নৌকাগুলাে বারবার তাদের কাছাকাছি এসে ফিরে যাচ্ছিল তাই মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানিদের যে-কোনাে আক্রমণের জবাব দিতে প্রস্তুত ছিল। অতঃপর ৫ ডিসেম্বর ভাের ৫টায় আমাদের মুক্তিকামী দামাল ছেলেরা টেকেরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
যাত্রা শুরুর অল্প কিছুক্ষণ পরই নৌকাগুলাে যখন বাঁক ঘুরে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখনই অন্য ১টি নৌকা তাদের সামনাসামনি এসে পড়ে। প্রথমে ভুল করে মাছ ধরার নৌকা ভাবলেও পরবর্তী সময় তাদের সন্দেহজনক গতিবিধিতে বােঝা যায়, এটি আসলে টহলরত শত্রুর নৌকা। নৌকায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সদস্য ও রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর ওপর আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল।  তখনাে চারদিকে কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ এমতাবস্থায় কালবিলম্ব না করে মুক্তিযােদ্ধারা ত্বরিত আক্রমণ করে বসে পাকিস্তানিদের টহলরত নৌকার ওপর মাত্র ১৫-২০ মিনিটের ব্যবধানে বাংলার মুক্তিযােদ্ধারা সম্মুখসমরে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি সদস্যদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হন। ঐ অপারেশনে ৫জন পাকিস্তানি নিহত হয় এবং অন্ধকার থাকায় রাজাকাররা সাঁতরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।  ঐ অপারেশনে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের শুধু কিছু বুলেট ছাড়া অন্য কিছু হারাতে হয়নি। অবশেষে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় তারা টেকেরঘাট সাব-সেক্টর সদর দপ্তরে পৌছাতে সক্ষম হন।

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!