You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.18 | নিকলি থানা আক্রমণ,সাচনা-জামালগঞ্জ সংঘর্ষ - সংগ্রামের নোটবুক
নিকলি থানা আক্রমণ
১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর। সুনামগঞ্জ মহকুমার একটি থানা হলাে নিকলি। নিকলি থানাতেই ছিল পাকিস্তানিদের শক্ত অবস্থান। জানা গেছে, প্রায় ১০০জনের মতাে নিয়মিত পাকিস্তানি বাহিনী এখানে থাকতাে। মুক্তিযােদ্ধারা এ খবর পেয়ে অতর্কিতেই তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঐ দিন ভােরবেলা দুই দিক থেকেই পাকিস্তানি ঘাঁটি আক্রমণ করে। নেতৃত্বে ছিলেন মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক হাবিবুর রহমান এবং সাথে ছিল ৫০জন মুক্তিযােদ্ধার সমন্বয়ে ১টি চৌকস কমান্ডাে দল। মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে কিছুক্ষণের মধ্যে পাকিস্তানিরা নিকলি ছেড়ে সুনামগঞ্জে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি পক্ষের হতাহতের সংবাদ জানা না গেলেও মুক্তিবাহিনীর ১জন আহত হওয়া ছাড়া আর মারাত্মক কোনাে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অন্যদিকে, মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ১৯। অক্টোবর ২টি ৩০৩ রাইফেল, ১২ বােরের ১টি রাইফেল এবং বেশ কিছু গােলাবারুদ হস্তগত করে। অক্টোবর মাসের মধ্যেই ক্যাপ্টেন মুসলিম তার বাহিনী নিয়ে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি অধিকৃত এলাকা মিঠামাইন, বাজিতপুর, কটিয়াদি, হােসেনপুর, পাকুন্দিয়া এবং তারাইল এলাকা নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সমর্থ হন।
সাচনা-জামালগঞ্জ সংঘর্ষ
সুনামগঞ্জ মহকুমা সদরের পশ্চিম-দক্ষিণে একটি বাজার সাচনা। বড়ছড়া সাবসেক্টরের দায়িত্ব ক্যাপ্টেন মুসলিম নিজ হাতে নেয়ার পূর্বে ৮ আগস্ট সাচনাজামালগঞ্জে পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি বড়াে ধরনের সংঘর্ষ হয়। সিরাজুল ইসলাম নামে এক নির্ভীক সাহসী দেশ প্রেমিক মুক্তিযােদ্ধা মাত্র ১ প্লটুন জনবল নিয়ে পাকিস্তানিদের মজবুত ঘাঁটি সাচনা আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংকার থেকে ব্যাপকভাবে পাল্টা গুলি চালাতে থাকে। পাকিস্তানিদের প্রবল গােলাবৃষ্টির মধ্যে মুক্তিবাহিনী সামনে অগ্রসর হতে পারছিল। অধিনায়ক সিরাজুল ইসলাম তার সাথীদের আক্রমণ অব্যাহত রাখতে বলে। নিজে কয়েকটি গ্রেনেড নিয়ে ক্রলিং করে শত্রুর বাংকারের দিকে এগিয়ে যান। গণবাহিনী অধিনায়ক সিরাজুল ইসলাম শত্রুর বাংকারের মুখােমুখি হয়ে গ্রেনেড। চার্জ করেন। এ গ্রেনেড আক্রমণে শত্রুসেনাদের ২টি বাংকারই বিধ্বস্ত হয়। পাকিস্তানিরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। অধিনায়ক সিরাজুল ইসলাম এ সাফল্য ও জয়ের নেশায় ক্রলিং করে তৃতীয় বাংকারের কাছে পৌছে গ্রেনেড চার্জ করার পূর্বমুহূর্তে এলএমজি’র বুলেট তাঁর দেহ বিদীর্ণ করে দেয়। সিরাজুল ইসলামসহ ৬জন মুক্তিযােদ্ধা এখানে শহিদ হন। সিরাজুল ইসলাম শহিদ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর তার বাবার কাছ থেকে তার লেখা একটি চিঠি পাওয়া যায়। বয়সে তরুণ দেশপ্রেমে সমুজ্জ্বল সিরাজুল ইসলামের চিঠিটি ব্যক্তিগত হলেও স্বাধীনতাকামী যুদ্ধরত লাখাে মুক্তিযােদ্ধার মনের বাসনা চিঠির মধ্যে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সে কারণেই সিরাজুল ইসলামের সেই চিঠির অনুলিপি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলাে।
টেকেরঘাট হইতে
তারিখ ৩০-৭-৭১ ইং প্রিয় আব্বাজান,
আমার ছালাম নিবেন। আশাকরি খােদার কৃপায় ভালই আছেন। বাড়ির সকলের কাছে আমার শ্ৰেণীমত ছালাম ও স্নেহ রহিলাে। বর্তমানে যুদ্ধে আছি, আলী রাজা, রওশন, সাত্তার, রেনু, ইব্রাহিম, ফুল মিয়া সকলেই একত্রে আছি। দেশের জন্য আমরা সকলেই জান কোরবান করিয়াছি। আমাদের জন্য ও দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য দোয়া করিবেন। আমি জীবনকে তুচ্ছ মনে করি। কারণ। দেশ স্বাধীন না হইলে জীবনের কোন মূল্য থাকিবে না। তাই যুদ্ধকেই জীবনের পাথেয় হিসেবে নিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে মাকে কষ্ট দিলে আমি। আপনাদেরকে ক্ষমা করিব না পাগলের সব জ্বালা সহ্য করিতে হইবে, চাচামামাদের ও বড় ভাইদের নিকট আমার ছালাম। বড় ভাইকে চাকুরীতে যােগ দিতে নিষেধ করিবেন। জীবনের চেয়ে চাকুরী বড়াে নয়। দাদুকে দোয়া করিতে বলিবেন। মৃত্যুর মুখে আছি। যে কোন সময় মৃত্যু হতে পারে এবং মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত দোয়া করিবেন মৃত্যু হলেও যেন দেশ স্বাধীন হয়। তখন দেখবেন লাখ লাখ ছেলে বাংলার বুকে পুত্রহারাকে বাবা বলে ডাকছে এ ডাকের অপেক্ষায় থাকুন। আর আমার জন্য চিন্তার কোন কারণ নাই। আপনার দুই মেয়েকে পুরুষের। মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন তবেই আপনার সকল সাধ মিটে যাবে। দেশবাসীর, স্বাধীন বাংলা কায়েমের জন্য দোয়া কর, মীরজাফরী করিও না। কারণ মুক্তিফৌজ তােমাদের ক্ষমা করিবে না এবং বাংলায় তােমাদের জায়গা। দেবে না।
ছালাম দেশবাসী ছালাম
ইতিমাে. সিরাজুল ইসলাম
ক্যাপ্টেন মুসলিম তার ক্যাম্পে পুত্রহারা পিতার কাছ থেকে পত্রটি সংগ্রহের পর প্রায়ই সেই পত্রটি মুক্তিযােদ্ধাদের পড়ে শােনাতেন। এর কিছুদিন পর ক্যাপ্টেন মুসলিম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে নিচে উদ্ধৃত পত্র
fa2ca:
Blue Shirts (Borsors)
No. 9/Casualty 71-72-80-81 To: The Commander-in-Chief Bangladesh Forces Enclosed is a copy of the letter written by one of the fallen Muktifouz to his father. This letter has recently been recovered by us from the father of the deceased. The Muktifouz died the death of martyr. On 8th August 1971 this particular liberation fighter led the attack against extended enemy at sachna Jamalganj p.s. Sylhet which led to capturing the place from the enemy hands. He died of enemy force.
This letter is often read over in the gathering of Muktifouz here. We have experenced that his letter has an electric effect in inspiring other fighters. Hence it is requested that this letter may please be read occasionally over swadhin Bangla Radio for other Muktifouz in dedicating their lives for the cause. Kindly Acknowledge.
Sd/-xx x (Major M.M. DIN) Sub-sector commander
No. 5 (Borsora) Copy With a copy of the above reffered letter is forwarded to HQ No. 5 Sector BDF for information.

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড