You dont have javascript enabled! Please enable it!
টেংরাটিলা, আদার বাজার, দোয়ারা বাজার, বেটিরগাও (সােনাপুর), দোহালিয়া যুদ্ধ
সুনামগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত সুরমা নদী দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী গানবােটের সাহায্যে চলাচল করতাে। তাদের গতিবিধি ব্যাহত করার লক্ষ্যে টেংরাটিলা, আদার বাজার, দোয়ারা বাজার, বেটিরগাঁও (সােনাপুর) ও দোহালিয়ায় মুক্তিযােদ্ধারা বিভিন্ন সময় অতর্কিত আক্রমণ করেন। ১৪ আগস্ট টেংরাটিলায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিযােদ্ধাদের ভীষণ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে আলী আহম্মদসহ ৮জন মুক্তিযােদ্ধা শহিদ হন। পরে মুক্তিবাহিনী ১৮ সেপ্টেম্বর আদার বাজার ও দোয়ারা বাজারে প্রতিরােধ সৃষ্টি করে পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল বন্ধ। করে দেয়।
পাহাড়পুরের যুদ্ধ
শাল্লা থানা সদরের, যা সুনামগঞ্জ মহকুমায় অবস্থিত কুশিয়ারা নদীর পাড় ঘেঁষে। বিস্তৃত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ঘন্দিয়ার গা গ্রামটি। এখানে অবস্থান করছে। একদল মুক্তিযােদ্ধা। ১৭ আগস্ট বানিয়াচং থানা সদর থেকে পাকিস্তানিরা এসে মাকালকান্দির ৮৭জন নিরীহ নিরপরাধ লােককে হত্যা করে। লুষ্ঠিত হয় পুরাে গ্রাম। পাশের হারুনি গ্রামেরও ৫জন লােককে হত্যা করেছে পাকিস্তানি বাহিনী। পরবর্তী লক্ষ্য তাদের পাহাড়পুর গ্রাম। এ সংবাদ পৌছে যায় ঘুঙ্গিয়ারগাঁওয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থানস্থলে। জ্বলে ওঠে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতিরােধস্পৃহা। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে পাহাড়পুরের নিরীহ-নিরপরাধ গ্রামবাসীকে। সকাল ৬টার মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন। ৩টি নৌকায় চড়ে ১২জন দুঃসাহসী মুক্তিযােদ্ধা যাত্রা করে। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ বর্তমানে ২টি জেলা হলেও ঘুঙ্গিয়ারগাঁও ও পাহাড়পুরের দূরত্ব জলপথে মাত্র ৪ কিলােমিটার সকাল  নয়টার ভেতর পৌছে যান সেখানে তারা সুবিধাজনক একটি জায়গায় অবস্থান গ্রহণ করে পাকিস্তানিদের আগমনের প্রতীক্ষা করতে থাকেন। ঘণ্টা খানেকের ভেতরেই হাওরের মধ্যে দেখা যায় সারি সারি নৌকা গ্রামটির দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে দেখা যায় পাকিস্তানি বাহিনীকে কোনাে কোনাে নৌকায় শুধু অস্ত্র আর গােলাবারুদ পরে জানা যায়, শত্রুর সংখ্যা ৫০জন আর রাজাকারদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০। ১৮ আগস্ট। গ্রামের যুবতী মেয়ে আর কুলবধূদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হায়েনারা যথাসময় নির্দেশ দিলেন দলনেতা জগৎজ্যোতি দাস। ৩টি সুবিধাজনক অবস্থানে স্থাপিত ৩টি নৌকার ওপর বসানাে ৩ ইঞ্চি মর্টার একই সাথে গর্জে উঠলাে। পাকিস্তানি ও তাদের দোসর রাজাকাররা অকস্মাৎ আক্রমণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না। তাই কোনােরকম প্রতিরােধই তারা গড়ে তুলতে পারেনি। বরং পাল্টা আক্রমণ করার আগেই তারা ধ্বংস হয়েছে মুক্তিযােদ্ধাদের গুলির আঘাতে। তাদের কেউ কেউ পালানাের বৃথা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এবং মুক্তিযােদ্ধাদের বিজয় নিশ্চিত হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানি ও রাজাকার মিলিয়ে প্রায় শতাধিক শত্ৰু ঐ অভিযানে মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রাণ হারায়। এটি ছিল একটি সফল অভিযান।

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড

 

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!