You dont have javascript enabled! Please enable it!
তেলিখাল এলাকার যুদ্ধ
কোম্পানিগঞ্জ থানা সদর থেকে তেলিখাল ২ কিলােমিটার পূর্বে অবস্থিত নভেম্বর মাসে দেশজুড়ে সর্বত্র মুক্তিবাহিনীর জয়-জয়কার একটির পর একটি এলাকা দখল করেন মুক্তিযােদ্ধারা অগ্রসর হচ্ছেন সামনের দিকে নভেম্বর শেষ হয়ে ডিসেম্বর আসতে না আসতেই বিরাট অঞ্চল মুক্ত হয়ে গেছে অনেকে মূল ঘাটি ছেড়ে পালিয়ে গেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। কোম্পানিগঞ্জ থানার গৌরীনগরে তখনাে পাকিস্তানি বাহিনী অবস্থান করছে। ভােলাগঞ্জ সীমান্ত থেকে প্রায় ৩ মাইল দক্ষিণে এ গ্রামটির অবস্থান একটি ছােট বাজারও গ্রামের ভেতর রয়েছে। গৌরীনগর গ্রামের ভেতর বাংকার তৈরি করে অবস্থান করছে শত্রু সৈন্যেরা বেশ কিছুদিন থেকে। শত্রুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০জন। গৌরীনগর গ্রাম থেকে উত্তর দিকে তেলিখালের মাঝ বরাবর রয়েছে একটি নদী। নাম কাটা গাঙ। কোথাও কোথাও একে নয়াগাঙ বলেও অভিহিত করা হয়। এর অপর তীরে তেলিখাল, সেখানে অবস্থান করছে মুক্তিবাহিনীর ১টি গ্রুপ। তাদের কোম্পানি অধিনায়ক আব্দুর কাদির এসেছেন তারা ভােলাগঞ্জ সাব-সেক্টর থেকে একদিন বিকালে তাদের কাছে নির্দেশ এল যে, সে রাতেই গৌরীনগর আক্রমণ করা হবে। ফলে দ্রুত এ কোম্পানির কর্তব্য নির্ধারণ করে। দেওয়া হয়। আর সে অনুসারেই তারা তেলিখাল নদী অতিক্রম করে বড়ভাঙ্গা হাওরে অবস্থান নেন। ভােররাতেই শুরু হয় আক্রমণ। চলে ১০টা পর্যন্ত এ সময় বেশ কজন মুক্তিযােদ্ধা শহিদ হন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়। গৌরীনগর দখল করে মুক্তিবাহিনী। 
লালাবাজারের যুদ্ধ
লালাবাজার সিলেট শহরের ৮ কিলােমিটার দক্ষিণে সিলেট-ঢাকা সড়কে অবস্থিত ৭ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অগ্রাভিযান চলছে অপ্রতিরােধ্য গতিতে একটির পর একটি এলাকা আক্রমণ করছে তারা।পাকিস্তানিরা এ আক্রমণ প্রতিরােধ করতে ব্যর্থ হয়ে ক্যাম্পের পর ক্যাম্প গুটিয়ে নিচ্ছে। প্রতিদিনই পিছু হটছে। প্রতিদিনই পালিয়ে যাচ্ছে তারা জালালপুর ও দেওয়ান বাজার প্রভৃতি স্থানে আগে থেকেই অবস্থান নেয়া মুক্তিযােদ্ধারা সিলেটের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকটি সামরিক যানকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে সদর থানার দিকে। লালাবাজারে সামরিক যানের ওপর মিত্রবাহিনীর হামলা হয়। বিমান আক্রমণে শত্রুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকে। এ সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা হাতেনাতে ধরে ফেলেন ৩জন শত্রুকে।
পূর্বভাগ আক্রমণ
মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক আবুল খায়ের চৌধুরীর নেতৃত্বে জালালপুর সাব-সেক্টরের ৪০জন মুক্তিযােদ্ধা সিলেট শহর অভিমুখে রওয়া হন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ৭ ডিসেম্বর তারা বিয়ানীবাজার থানার অন্তর্গত সুতারকান্দি সীমান্তে পৌঁছান। দলের পথপ্রদর্শক ছিলেন সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও আইনজীবী তবারক হােসেইন। ঐ রাতেই দলটি বিয়ানীবাজার অতিক্রম করে পুরুষপাল গ্রামে পৌছান। গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী আবদুল মুতালিব পুরাে দলটির থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। দিনের বেলা ঐ বাড়িতে কাটিয়ে রাতে আবার রওনা দেন। তারা। সারারাত হেঁটে ভাের হওয়ার আগেই পৌছে যান গােলাপগঞ্জ থানার নদিউরি গ্রামে। পরের রাতে আবার হাঁটা শুরু হবে জালালপুরের দিকে বাকি পথ নিয়ে যাওয়ার জন্য জালালপুর থেকে নতুন ১জন পথপ্রদর্শকও আসার কথা। দিনের বেলা তাই বিশ্রাম আর সন্ধ্যার পরই শুরু হবে কাক্ষিত অভিযান। গ্রামবাসীরা মুক্তিবাহিনীর উপস্থিতিতে অত্যন্ত আনন্দিত আনন্দে।

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!