হেমু গ্রামে অপারেশন
সিলেট জেলার জৈন্তাপুর থানার হরিপুর এলাকায় হেমু গ্রাম অবস্থিত গ্রামটি সিলেট-তামাবিল সড়কের উত্তরে নভেম্বর মাসের শেষার্ধে হেমু গ্রামে পাকিস্তানিদের ১টি শক্তিশালী দল অবস্থান করছিল। এখানে পূর্বে আরও কয়েকটি অপারেশন হয়েছে। ৫ নম্বর সেক্টরের সেক্টর অধিনায়ক মেজর মীর শওকত আলী এবং ভারতের মেজর রাও এবার অপারেশন পরিকল্পনা করেন। দরবস্ত এলাকার ২টি গণবাহিনীর কোম্পানি এ অপারেশনে অংশ নেয়। নির্দিষ্ট দিনে দরবস্ত থেকে মুক্তিবাহিনীর যাত্রা শুরু হলাে। কোম্পানিতে মুক্তিযােদ্ধা জয়ন্ত সেনের বাড়ি ঐ এলাকায় পথঘাট তার জানা তিনি নিজেই পথপ্রদর্শক হিসেবে কোম্পানিকে নিয়ে যান। ধীরে ধীরে সড়ক ছেড়ে প্রবেশ করে তারা গ্রামে। আর গ্রামে ফিরে নিজেদের গােপন করেই আক্রমণ করে। পাকিস্তানির ওপর সাথে সাথে পাল্টা আক্রমণ। তারপর প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ চলে। উভয় পক্ষে আর্টিলারি বােমা ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। ২ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সৈন্যেরা পলায়ন করে। পিছনে রেখে যায় বেশকিছু মৃতদেহ ৬জন পাকিস্তানি সেনাসদস্য, ৫জন ইপিসিএএফ সদস্য এবং রাজাকারের ৬টি লাশ পড়ে থাকে। বেশ কিছু অস্ত্র দখল হয়। এ যুদ্ধে ৩জন মুক্তিযােদ্ধা শহিদ এবং আহত হন ১০জন।
পােড়র পাড় অপারেশন
সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ থানার তেলিখাল থেকে পূর্ব দিকে পােড়ার পাড় গ্রামটি অবস্থিত। তেলিখালে অবস্থানকালে মুক্তিযােদ্ধারা একটি অপারেশন পরিচালনা করেন। গ্রামটি তেলিখাল থেকে বেশি দূরে নয়। গ্রামটিতে ছিল শক্রদের একজন কুখ্যাত দালাল। শান্তি কমিটি গঠন করে সে প্রভূত অশান্তির সৃষ্টি করেছে এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছে লুটপাট যত্রতত্র শুধু তা-ই নয়, নারী নির্যাতন, কর্মকাণ্ডও চালিয়ে যাচ্ছিল পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে এ কাজে সে তার সহযােগী হিসেবে ব্যবহার করতে রাজাকারদের এসব সংবাদ অবগত হয়ে পােড়ার পাড়ে অপারেশন পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক নজরুল ইসলাম সাথে তাঁর সুরুজ আলী, আব্দুল আজিজ ও নূরুল হকসহ ১টি গ্রুপ শেষ রাতে গ্রামটি ঘেরাও করেন তাঁরা কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর সহযােগী সেই দালালটি তখন পর্যন্ত গ্রামে আসেনি। রাজাকারদের সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেছে ভিনগ্রামের দিকে দালালটি ফিরে আসে ঠিক ভােরের দিকে। ওত পেতে থাকা মুক্তিযােদ্ধারা এবার তার দিকে অগ্রসর হল। সকাল ৭টায় হামলা করা হয় তার বাড়ির ওপর তখন দালাল ব্যক্তিটি ২জন রাজাকারসহ ঘরে বসে ভাত খাচ্ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সহযােগী রাজাকাররা কায়দা করে পালিয়ে গেলেও তাদের দলনেতা দালালটি ধরা পড়ে। ধৃত ব্যক্তিকে টুকেরবাজার কোম্পানি অধিনায়ক আব্দুল কাদিরের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আলীনগরের যুদ্ধ
সিলেট শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে (দূরত্ব ২২ কিলােমিটার) অবস্থিত সদর থানাধীন আলীনগর গ্রাম। ৩ ডিসেম্বর আনুমানিক দুপুর ১টায় মুক্তিযােদ্ধা ও শত্রুর মধ্যে জালালাবাদ ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামে এক মুখােমুখি সংঘর্ষ হয়। যুদ্ধে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন মাহবুবুল হক ও মমতাজ আলী পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর দুই (দক্ষিণ-পূর্ব) দিক থেকে আক্রমণ করে। মুক্তিযােদ্ধারাও এর পাল্টা জবাব দেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত এ যুদ্ধ স্থায়ী হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর মর্টারের আঘাতে মুক্তিযােদ্ধা মমতাজ আলী, সামছুদ্দোহা, আলী হােসেন, তােতা মিয়াসহ আরও কয়েকজন আহত হন। অন্যদিকে, পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারসহ প্রায় ১৬জন শত্রু সৈন্য নিহত এবং বহু সৈন্য আহত হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের প্রবল চাপে শত্রু বাধ্য হয়ে দক্ষিণে সুনামগঞ্জের গােবিন্দগঞ্জে নিজ ক্যাম্পে ফিরে যায়।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড