দ্যা টরেন্টো টেলিগ্রাম (কানাডা) | ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | সম্পাদকীয় – পাকিস্তানে যা করনীয়
পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ রোধে প্রায় তিন মিলিয়ন টন খাদ্যশস্যের আমদানি প্রয়োজন – একথা বলেছেন একজন আমেরিকান ডাক্তার যিনি সম্প্রতি টরন্টোতে এক সম্মেলনে উপমহাদেশের ট্র্যাজেডি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি ডাঃ জন রোড, হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে, তিনি ব্রিটিশ মেডিক্যাল ম্যাগাজিন ল্যান্সেটে লিখেছেন যে পূর্ব পাকিস্তানের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ২৫ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার সম্মুখীন হচ্ছে। ডাঃ রোড গত মাসে টর্নেডোতে দক্ষিণ এশিয়া সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। তিনি সেখানে পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য ভারতীয় সীমান্ত রাজ্যের শরণার্থী ক্যাম্পে ভ্রমণের পর তার কথা বলেন। হাজার হাজার বিশিষ্ট আমেরিকানদের মধ্যে তিনি রয়েছেন যারা পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহতভাবে নিন্দা করে আসছেন এই বলে যে এটি কেবলমাত্র দেশে অব্যাহত শত্রুতা বাড়াবে। ২৫ মিলিয়ন লোকের সংখ্যাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক এবং ডাক্তারের কাছে অতিমাত্রায় প্রকাশিত কিনা তা বোঝা কঠিন। কিন্তু সম্ভাবনা অবশ্যই বিদ্যমান, কারণ এটা এক বছরের কম সময়ের মধ্যে হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের দেশের সবচেয়ে খারাপ ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, বন্যা হয়েছে এবং উপমহাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর সামরিক অভিযান আঘাত হানছে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে পূর্ব পাকিস্তানের ৭৫ মিলিয়ন জনগণের মধ্যে আট মিলিয়ন আগেই ভারতে পালিয়ে গেছে। এটি কেবলমাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থানান্তরণ। ২৫ মার্চ থেকে দেশে গৃহযুদ্ধ চলছে। ফসল অবহেলা করা হয়েছে, সড়ক রেলওয়ে যোগাযোগ বন্ধ, ঘরবাড়ি, দোকান এবং গ্রাম লুট করা এবং পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এটি সুস্পষ্ট যে কয়েক ডজন মিলিয়ন মুখ খাদ্যের জন্য হাহাকার করছে। পরিস্থিতির অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে বিশ্বে খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত আছে – বিশেষ করে চালের উদ্বৃত্তের মাত্রা বাড়ছে। শুধু জাপানের কাছে ৬.৪ মিলিয়ন টন চাল উদ্বৃত্ত আছে। যার ৬৪ শতাংশ সরকার কর্তৃক উৎপাদিত হয়। গত বছর ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সিওলোন, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াতে রেকর্ড পরিমাণ ফসল হয়েছে। এগুলোর সবগুলোই তুলনার দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সমমানের।
মৌলিক সমস্যা হবে কীভাবে খাদ্য বিতরণ করা হবে এবং কখন এগুলো দেশে আসবে। এমনকি ভালো সময়েও সড়ক ও অন্যান্য যোগাযোগগুলি খুব খারাপ। তবে স্পষ্টতই পূর্ব পাকিস্তানে জরুরী সাহায্য দরকার। যদি বিশ্ব সম্প্রদায় এই অসুখী ভাগ্যবিড়ম্বিত জাতিকে আরেকটি বড় বিপর্যয় রোধ করতে চায় তবে তাদের ব্যাবস্থা নিয়েই হবে। জাতিসংঘ একটি সংস্থা যাকে সামনের মাসগুলিতে পাকিস্তানের ঘটনায় আরও গভীরভাবে এগিয়ে আসতে হবে।