You dont have javascript enabled! Please enable it!
বর্ণি এলাকার যুদ্ধ
বর্ণি গ্রামটি সিলেট-কোম্পানিগঞ্জ সড়কের দক্ষিণে কোম্পানিগঞ্জ থানা সদর থেকে ৪ কিলােমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কোম্পানি অধিনায়ক মাহাবুবুল হকের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি ক্যাম্প স্থাপিত হয় বিলাজুরের মােবাশ্বর আলীর বাড়িতে পাশাপাশি আরেকটি প্লাটুন ছিল বিলাজুরের ফুল মিয়ার বাড়িতে অপরদিকে ২৫-৩০জন শত্রু গৌরীনগরে ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযােদ্ধাদের ঐ ২টি প্লাটুন থেকে বাছাইকৃত ১৯জনের ১টি দল গঠন করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন কোম্পানি অধিনায়ক মাহাবুবুল হক। ঐ দলের উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব বর্ণির গৌরীনগরের পাকিস্তানি বাহিনীর যে ক্যাম্প আছে, তা রেইড করে ধ্বংস করা। এ উদ্দেশ্যে তারা প্রতিরক্ষা থেকে রাত ৩টার দিকে রওনা দেয় এবং লক্ষ্যবস্তুতে পৌছায় ভাের ৪টার দিকে। লক্ষ্যবস্তুর চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ শেষে ভাের ৫টার দিকে আক্রমণ শুরু হয়। উভয় পক্ষে প্রায় ২ ঘণ্টা গােলাগুলি হয়। শত্রুদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে মুক্তিযােদ্ধারা ফিরে যান।
 
চানপুর আক্রমণ
সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ থানাধীন ভারতীয় সীমান্তের রাস্তা বরাবর চানপুর একটি গ্রাম। কোম্পানিগঞ্জ থানা সদর থেকে এর দূরত্ব ৭ কিলােমিটার সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারত থেকে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকতে চানপুর বা তার আশপাশে কোনাে একটি এলাকা দিয়েই ঢুকতে হয়। তাই কৌশলগত কারণে পাকিস্তানিরা তাদের ১টি বিরাট দল এখানে প্রেরণ করে। ৯০ সদস্যের এ দলটি সমস্ত গ্রামজুড়েই অবস্থান করছিল। এদের অবস্থানের সংবাদ সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়েও পৌছায় ভােলাগঞ্জ সাব-সেক্টর ক্যাম্পে ৫ নম্বর সেক্টরের অধীন এ সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন হেলালউদ্দিন এবং সহকারী ছিলেন খুরশিদ আলম সংবাদ পেয়েই ক্যাম্প অধিনায়ক চানপুর আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ সময়ই মুক্তিবাহিনীর ১টি দল ভারতের জুরাইন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ শেষ করে অস্ত্র হাতে যােগ দিয়েছে ভােলাগঞ্জ ক্যাম্পে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৭ নম্বর প্লাটুনে এদের ওপর অর্পণ করা হয় চানপুর অপারেশনের দায়িত্ব শুরু হলাে প্রস্তুতি প্রয়ােজনীয় সমস্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য বিশ্বস্ত লােক নিয়ােগ করা হয়। তারপর ঠিক করা হলাে যাত্রার দিন ও তারিখ বিকাল ৩টায় মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা এসে পৌছল চানপুর গ্রামে প্রত্যেককেই পৃথক পৃথকভাবে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়।
সতর্ক প্রহরায় নিযুক্ত হলেন তারা দলনেতার নির্দেশ অনুযায়ী ঝােপজঙ্গলে বসে অপেক্ষা করছে, তারা এ সময় একজন মহিলা গ্রামের সড়কপথ ধরে আসছিলেন মহিলাকে দেখামাত্র দলনেতার সন্দেহ হলাে। মুক্তিবাহিনীর অবস্থান পর্যন্ত আসতে না দিয়ে, যেদিক থেকে আসছিল, সেদিকেই ফিরে যেতে বাধ্য করা হলাে তাকে। এ ঘটনার একটু পরই আক্রান্ত হলাে পুরাে গ্রাম আধ ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। শক্রদের প্রবেশ ঠেকানাে এবং সংবাদ সংগ্রহ করতে কয়েকজনকে এখানে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ধরনের দায়িত্ব পালনকালে অনিল ছত্রী দেখতে পান ৪জন পাকিস্তানি সেনা একেবারে তার কাছাকাছি এসে পড়েছে। তাই প্রাণ রক্ষার্থে তিনি দ্রুত একটি পুকুরে নেমে পানিতে ডুবিয়ে তার মাথা কচুরিপানায় আবৃত করে বসে থাকেন। এ অবস্থায় যুদ্ধ বাধে দ্বিতীয়বার  এর স্থায়িত্ব অবশ্য ৫ মিনিটের বেশি ছিল না। সবাই ফিরছে। আর অনিল ছত্রী ১টি এসএলআর হাতে গর্তে বসে পাহারা দিচ্ছেন সন্ধ্যা তখন হয় হয়। এ সময় ৩জন পাকিস্তানি সেনাকে অনিল ছত্রীর বিপরীত দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। মুহূর্তে কর্তব্য ঠিক করে ফেলেন ছাত্রী। চেপে ধরেন এসএলআরএর ট্রিগার। চোখের পলকে ৩জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হলাে।
আটগ্রাম ডাকবাংলাের যুদ্ধ
সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানার ৩ নম্বর কাজলশাহ ইউনিয়নের অন্তর্গত সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত আটগ্রাম এখানে অবস্থিত ডাকবাংলােয় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। সেপ্টেম্বর মাসে এখানে একটি অপারেশনের পরিকল্পনা করা হয়। জালালপুর সাব-সেক্টর অধিনায়ক মাহবুবুর রব সাদি, আশরাফুল হক ও আব্দুল জলিলের ৩টি প্লাটুন এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২২ সেপ্টেম্বর এলাকা রেকি করে আক্রমণকারী দলকে ৩ ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রথম গ্রুপ রাত ১টায় অবস্থান গ্রহণ করে পরবাল্লা গ্রামে বাকি দুই গ্রুপ কুশিয়ারা নদী পার হয়ে একটি ডানে ও অন্যটি বামে অগ্রসর হয়ে অবস্থান নেয়। রাত ৪টায় আক্রমণ শুরু হয়। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতাে গুলি ছুড়তে ছুড়তে দলগুলাে অগ্রসর হয়। পাকিস্তানি বাহিনী পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। ভারতীয় বাহিনী পিছন থেকে মর্টার ফায়ার দিয়ে সাহায্য করে। সাড়ে ৩ ঘণ্টার যুদ্ধে আনুমানিক ১৮জন শত্রু মারা যায় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। এ সাফল্য ছিনিয়ে আনতে মুক্তিযােদ্ধাদেরও কম মূল্য দিতে হয়নি। তাদের ৮জন শহিদ এবং ৭জন আহত হন।

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!