You dont have javascript enabled! Please enable it! গােয়াইনঘাটের যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
গােয়াইনঘাটের যুদ্ধ
সূচনা
ভারতীয় সীমান্ত থেকে গােয়াইনঘাটের দূরত্ব দক্ষিণে ১২ কিলােমিটার। সিলেটের উত্তরে অবস্থিত গােয়াইনঘাট থানা সদর ও পার্শ্ববর্তী এলাকাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছিল। ২৪ অক্টোবর লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবীর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধা (৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, গণবাহিনী) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর একটি ব্যর্থ অভিযান পরিচালনা করে। পরবর্তী সময় ৪ নভেম্বর ঐ মুক্তিযােদ্ধারাই মিত্রবাহিনীর সহায়তা ছাড়া গােয়াইনঘাট দখল করতে সমর্থ হন। গােয়াইনঘাটের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রয়ােগকৃত রণকৌশল, নিপুণতা ও সাহস সেক্টরের অন্যান্য যােদ্ধাদের অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান সিলেট-তামাবিল-ডাউকি-শিলং মহাসড়কটি অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশে। ইংরেজ শাসনামল থেকেই যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে আসছে। ভারতের আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের সাথে স্থলপথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের একমাত্র যােগাযােগ মাধ্যম হচ্ছে এ সড়কপথ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বার্মা ফ্রন্টের যুদ্ধ পরিচালনাতেও এ সড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভারত সীমান্ত থেকে দক্ষিণ দিকে জাফলং ও সিলেটের মধ্যবর্তী স্থানে (জাফলং-রাধানগর-গােয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কে) গােয়াইনঘাট নদীর তীরবর্তী গােয়াইনঘাট ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। গােয়াইনঘাট থেকে ১০ মাইল দক্ষিণে সিলেট বিমানবন্দরের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই গােয়াইনঘাট, নন্দীরগাঁও, কোম্পানিগঞ্জ ও সালুটিকর ফেরিঘাট শত্রুরা নিজ আয়ত্তে রাখে।
যুদ্ধের পটভূমি দেশের অভ্যন্তরে শক্রর প্রধান ঘাঁটিগুলােয় আক্রমণ চালিয়ে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির জন্য মুক্তিবাহিনী (৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, গণবাহিনীর কোম্পানিগুলাে) ছাতকে (১৩-১৭ অক্টোবর) আক্রমণ পরিচালনা করে। প্রথাগত আক্রমণের জন্য প্রয়ােজনীয় ফায়ার সাপাের্ট, রি-ইনফোর্সমেন্ট, অস্ত্র, গােলাবারুদ, রসদের সরবরাহ ব্যবস্থা তখনাে গড়ে ওঠেনি। ফলে ছাতক আক্রমণ ব্যর্থ হয়। ছাতক ব্যর্থ অপারেশন (১৩-১৭ অক্টোবর) পরিচালনার পর ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘ডি’ কোম্পানি (অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী) ভােলাগঞ্জে উপস্থিত হন। ভােলাগঞ্জে মেজর শাফায়াত জামিল যুদ্ধের সার্বিক অবস্থা পর্যালােচনা করেন ও ‘ডি’ কোম্পানিকে হাদারপাড় (কোম্পানিগঞ্জ থানা) এলাকায় প্রতিরক্ষা নিতে বলেন। ২০ অক্টোবর ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিও হাদারপাড়ে যােগদান করে। ২২ অক্টোবর শত্রু কোম্পানিগঞ্জ অক্ষে গণবাহিনী কোম্পানির ওপর আক্রমণ করে। ২২ অক্টোবর ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মেজর শাফায়াত জামিল হাদারপাড় আসেন এবং মুক্তিযােদ্ধাদের ২৪ অক্টোবর গােয়াইনঘাট আক্রমণের পরিকল্পনার কথা জানান। প্রকৃতপক্ষে ছাতকের মতাে এটিও ছিল আত্মঘাতী একটি অপারেশন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে গােয়াইনঘাটে প্রচলিত যুদ্ধপদ্ধতির আক্রমণের কথা বলা হয়। যদিও তখনাে প্রচলিত যুদ্ধপদ্ধতির আক্রমণ পরিচালনার পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
২৪ অক্টোবর ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ২টি কোম্পানি ও ১টি গণবাহিনী কোম্পানির সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী গােয়াইনঘাট আক্রমণ করে। অভিযানের সবচেয়ে কঠিন দিক ছিল নদী অতিক্রম করে আক্রমণ করা। মুক্তিযােদ্ধারা রাতে নদী পার হতে ব্যর্থ হয়ে আশেপাশে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং পরেরদিন পুনরায় আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর অবস্থান টের পেয়ে যায় এবং তিন দিক থেকে মারাত্মক আক্রমণ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর ২২জন শহিদ এবং আনুমানিক ৩০জন আহত হন। এভাবেই গােয়াইনঘাটে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রথম আক্রমণ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এরপর ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট উত্তর দিকে সীমান্ত এলাকায় ফিরে আসে এবং রি-গ্রুপিং সম্পন্ন করে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মুক্তিযােদ্ধারা (৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, গণবাহিনীর কোম্পানিগুলাে) রাধানগর কমপ্লেক্স দখলের জন্য কার্যক্রম শুরু করেন এবং ৩০ নভেম্বর রাধানগর থেকে শত্রুরা বাধ্য হয়ে গােয়াইনঘাটে ফিরে আসে। ছােটখেল ও রাধানগর এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। এরপরই প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী মুক্তিবাহিনী গােয়াইনঘাট আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গােয়াইনঘাটের গুরুত্ব সামরিক দিক থেকে সিলেট-তামাবিল-শিলং সড়কটি নিজেদের আয়ত্তে রাখতে পারার অর্থই ছিল বৃহত্তর সিলেটের এক বিস্তৃত এলাকার প্রতিরক্ষা সুনিশ্চিত করা।
আর এ কারণেই সিলেট-তামাবিল সড়কটিকে সম্ভাব্য যে-কোনাে বড়াে ধরনের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য পাকিস্তানিরা সিলেট শহর থেকে তামাবিল বিওপি পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। ঐ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় খাদিমনগর, হরিপুর, জৈন্তা, দরবস্ত, গােয়াইনঘাট, রাধানগর, জাফলং বাজার ও তামাবিল পর্যন্ত ছিল এক সুদৃঢ় শক্ত। ছাউনি। প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলাের মধ্যে গােয়াইনঘাটের অবস্থানটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা মুক্তিবাহিনী কিংবা ভারতীয় বাহিনী যদি সিলেট-তামাবিল সড়কের রক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল ধরিয়ে খাদিমনগর বা সিলেট শহর পর্যন্ত পৌছে যায়, সে পরিস্থিতিতে গােয়াইনঘাট থেকে অতি সহজে ও স্বল্প সময়ে রাধানগর ও জাফলং চা-বাগান হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে শিলং-ডাউকি সড়কপথের যেকোনাে অবস্থানে আক্রমণ করে অগ্রসরমাণ ভারতীয় বা মুক্তিবাহিনীর সাপ্লাইলাইন ধ্বংস করে দেওয়া ছিল অতি সহজ কাজ। ডাউকিসহ পিছনের অবস্থান দখল করে মিত্রবাহিনীকে একটি মারাত্মক ফাদে ফেলাও ছিল খুবই সহজ ব্যাপার গােয়াইনঘাটের অবস্থানটি এমনই ছিল যে, এখান থেকে কোনাে বড়াে ধরনের বিপর্যয় ঘটানাে সম্ভব ছিল। আর সে লক্ষ্যেই দীর্ঘ ৮ মাস ধরে পাকিস্তানিরা গােয়াইনঘাটের চারদিকে এক বিস্তৃত এলাকাজুড়ে একটি শক্তিশালী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। খাদিমনগর, দরবস্ত ও পুকাসে পাকিস্তানি আর্টিলারি ইউনিটগুলাের অবস্থান ছিল এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ। রাধানগর, জাফলং, তামাবিল ও জৈন্তায় পাকিস্তানি অবস্থানগুলাে ফায়ার কভার দেওয়ার জন্যই এসব স্থানে ওরা আর্টিলারি ব্যাটারি নিযুক্ত করেছিল। সংগঠন ১. পাকিস্তান সেনাবাহিনী: গােয়াইনঘাটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১টি কোম্পানি মােতায়েন ছিল। এ ছাড়া সেখানে স্থানীয় রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনীর ১টি কোম্পানি ছিল।
৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ছিল খাদিমনগর। এখানে ৩০ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের কিছু সৈনিকও ছিল। এখানে রাজাকারদের এক বিশাল বাহিনী ছিল। মুক্তিবাহিনী: গােয়াইনঘাট এলাকায় ৫ নম্বর সেক্টরের গণবাহিনী। কোম্পানি অক্টোবর মাস পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে আসছিল। অক্টোবর মাসে ‘জেড’ ফোর্সের ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১টি কোম্পানি (লেফটেন্যান্ট নূরন্নবীর নেতৃত্বে) এ এলাকায় পাঠানাে হয়। গােয়াইনঘাটের চূড়ান্ত যুদ্ধে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, গণবাহিনী ছাড়া মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি রেজিমেন্ট সহায়তা করে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অবস্থান ১. পাকিস্তান সেনাবাহিনী: পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিলেট-সারিঘাট গােয়াইনঘাট অক্ষে অগ্রসর হয় এবং ১ মে গােয়াইনঘাট দখল করে। মেজর হামিদের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী গােয়াইনঘাটে স্থায়ীভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তােলে। ঘাট সংলগ্ন নয়ানগর গ্রামের। আজিরউদ্দিন চেয়ারম্যানের পাকা বাড়িটিতে তারা হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করে এবং নদীর তীর ঘিরে চারদিকে মজবুত বাংকার খননের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে অবস্থান নেয়। জুলাই মাসে গােয়াইনঘাট সংলগ্ন। এবং আজিরউদ্দিন চেয়ারম্যানের পাকা বাড়ির বিপরীতে আর্টিলারি গান মােতায়েন করে। ক্রমে ক্রমে গােয়াইনঘাট হয়ে ওঠে সিলেটতামাবিল-ডাউকি-শিলং অক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান। ঘাটি। আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ গােয়াইনঘাট শক্রর একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়। গােয়াইনঘাটকে বিভক্তকারী পিয়াং নদী শক্রর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি বর্ম হিসেবে কাজ করে। পাকিস্তানি বাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১টি কোম্পানি, মিলিশিয়া, টর্চি ও রাজাকারদের মিলিয়ে প্রায় ১৫০জনের মতাে শক্ত ছিল।
তা ছাড়া ফিল্ড গানসহ এখানে ৩০ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের কিছু সৈনিকও ছিল। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী: মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার ওয়ার্টকে গােয়াইনঘাটের আক্রমণের তারিখ নির্ধারণের পর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধা কোম্পানিগুলাে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গােয়াইনঘাটের দিকে দক্ষিণে নেমে আসে। মুক্তিবাহিনীর কোম্পানি গােয়াইনঘাটকে কেন্দ্র করে অবরােধ শুরু করার লক্ষ্যে কাছাকাছি অবস্থান গ্রহণ করে। যুদ্ধ পরিকল্পনা  ১. পাকিস্তানি বাহিনী: গােয়াইনঘাট ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ঘাঁটি। গােয়াইনঘাট থেকে ১০ মাইল দক্ষিণে সিলেট বিমানবন্দরের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই গােয়াইনঘাট, নন্দীরগাও, কোম্পানিগঞ্জ ও সালুটিকর ফেরিঘাট শক্র নিজ আয়ত্তে রাখে রাধানগর ও ছােটখেলের পতনের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বুঝতে পারে যে, মুক্তিবাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু গােয়াইনঘাট  সে লক্ষ্যেই তারা প্রস্তুতি নিতে থাকে, তবে শক্রদের মনােবল ছিল নিচু। শক্রর ঘাঁটি রাধানগর পতনের পর স্থানীয় রাজাকাররা তাদের আনুগত্য পরিবর্তন করে এবং দলে দলে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিবাহিনীর আসন্ন আক্রমণ মােকাবিলা করার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুসংহত করে। নদী পার হয়ে মুক্তিযােদ্ধারা যেন আক্রমণ না করতে পারেন, তার জন্য সমস্ত নৌকা। তারা নিজেদের দিকে নিয়ে আসে।
২. মুক্তিবাহিনী: গােয়াইনঘাটের প্রথম আক্রমণের (২৫ অক্টোবর) বিপর্যয়ের পর মুক্তিবাহিনী শিক্ষা গ্রহণ করে যে, পূর্বপ্রস্তুতি ও শত্রুর অবস্থান, জন ও অস্ত্রবল বিষয়ে পূর্ণ ধারণা নিয়ে আক্রমণে যাওয়া উচিত। প্রথাগত আক্রমণের চেয়ে অবরােধ অপারেশনসহ অপ্রচলিত অপারেশনের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। রাধানগর কমপ্লেক্স দখলে রাখার জন্য গােয়াইনঘাট অবস্থানটি শত্রুমুক্ত করা খুবই প্রয়ােজনীয় হয়ে পড়েছিল। গােয়াইনঘাট হাতছাড়া হওয়ার অর্থ ছিল। সিলেটের পতন এবং শহরের চতুর্দিকের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে যাওয়া।  ৩০ নভেম্বর (রাধানগর পতনের পর) ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবীকে গােয়াইনঘাট আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে বলা হয় । লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সব কোম্পানি ও গণবাহিনী। কোম্পানিকে এ লক্ষ্যে সতর্ক আদেশ প্রদান করেন। ১ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার ওয়ার্টকে ও লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবীকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে গােয়াইনঘাট আক্রমণের আদেশ দেন। লেফটেন্যান্ট নুরুন্নবীকে সম্মিলিত বাহিনীর পক্ষ থেকে এ যুদ্ধের অপারেশনাল অধিনায়ক নিয়ােগ করা হয় । মিত্রবাহিনীর ২টি ইউনিট যথা ৫/৫ গুর্খা রেজিমেন্ট ও ২৫ আসাম রেজিমেন্ট মুক্তিবাহিনীর সাহায্যকারী হিসেবে মুক্তিবাহিনীর সাথেই কাছাকাছি অবস্থান করতে থাকে। 
রাধানগরের মতাে গােয়াইনঘাট এলাকাকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবরােধ অভিযান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার পরই প্রথাগত আক্রমণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ছােটখেল ও রাধানগর অপারেশনের মতাে। এবারও মিত্রবাহিনীর কোনাে সাহায্য ছাড়াই লেফটেন্যান্ট নবী গােয়াইনঘাট আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিন দিক দিয়ে গােয়াইনঘাট অবরােধ এবং বাইরে থেকে রি-ইনফোর্সমেন্ট বন্ধ করার জন্য ক্যাপ্টেন দাউদ সারিঘাট এলাকায়, লেফটেন্যান্ট মতিউর গােয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, পুকাস ও নয়নপুরে এবং সুবেদার মােশাররফের ১টি দল গােয়াইনঘাট থানা, ঘাটপাড়া বাহর ও নয়নগর এলাকায় শত্রুর অবস্থানগুলাের যতদূর সম্ভব কাছাকাছি গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। লেফটেন্যান্ট ইয়ামীনের কোম্পানি আলিরগাঁ ও পিরােজপুরে অবস্থান গ্রহণ করে। ২৫ আসাম। রেজিমেন্টের ১টি দল বর্ণি গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করে। আলফা কোম্পানি ঘােরাগ্রাম, ডেল্টা ও ইকো কোম্পানিকে দুয়ারিখেল ও ছাত্তারগাঁয়ের অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়নি মূল আক্রমণে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা, ডেল্টা কোম্পানি এবং লেফটেন্যান্ট ইয়ামীন চৌধুরীর গণবাহিনী কোম্পানিকে আদেশ দেওয়া হয়।
গােয়াইন গ্রামের পশ্চিম দিক বিন্যাস ভূমি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। পরিকল্পনা করা হয় যে, লেফটেন্যান্ট মঞ্জুরের নেতৃত্বাধীন ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানি এবং লেফটেন্যান্ট ইয়ামীনের নেতৃত্বাধীন গণবাহিনী কোম্পানি (এফএফ কোম্পানি) ডান পাশ থেকে আক্রমণ করবে। তারা লেগুরা গ্রামের কাছে নদী অতিক্রম করে শত্রুদের ওপর আক্রমণ করবে। সুবেদার মােশাররফের কোম্পানি শক্রর উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আক্রমণ করবে। তার ১টি দল গােয়াইনঘাট-সারিঘাট সড়কে অবস্থান নেবে। লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী পরিকল্পনা করেন যে, ডেল্টা কোম্পানির আক্রমণ হবে সামনাসামনি আক্রমণ। গােয়াইন নদী অতিক্রম করে এ কোম্পানিকে হামলা করতে হবে। এ কোম্পানির কভারিং ফায়ারের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইকো ও সদর দপ্তর কোম্পানিকে। পরিকল্পনার অন্যতম একটি দিক ছিল ডেল্টা কোম্পানির আক্রমণের দিক ও সময় বুঝতে না দেওয়া এবং অপ্রত্যাশিতভাবে নদী পার হয়ে পশ্চিম দিক দিয়ে আক্রমণ করা। যুদ্ধ প্রস্তুতি পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ ৩ ডিসেম্বর রাতে লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। ঐ দিন রাত সাড়ে ১১টায় আলফা কোম্পানি ও লেফটেন্যান্ট ইয়ামীনের গণবাহিনী কোম্পানিকে অপারেশনাল অর্ডার দেওয়া হয়। ঐ দিন রাত ১টায় লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী ডেল্টা, ইকো এবং ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে ব্যক্তিদের আদেশ দেন। পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধ চলাচল বা প্রতিরােধ ব্যবস্থা পাকিস্তানি বাহিনী গােয়াইনঘাটে প্রায় চতুর্মুখী অবস্থান গ্রহণ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বুঝতে পারে যে, মুক্তিবাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য হবে গােয়াইনঘাট।
সে জন্য তারা নিজ অবস্থানে ব্যাপক প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ প্রস্তুতি ৩ ডিসেম্বর রাত থেকে মুক্তিবাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকে। গােয়াইনঘাটে অবস্থানরত ৩০ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অপারগতা প্রকাশ করে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সাথে দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হয়। অবশেষে পায়ে হেঁটেই তারা সিলেটের দিকে ফিরে চলে যায়। আক্রমণের এ সুযােগ লেফটেন্যান্ট নবী কাজে লাগাতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন নদী। পারাপারের জন্য মুক্তিযােদ্ধারা আনুমানিক ২০-২৫টি নৌকা সংগ্রহ করে রাখেন। আক্রমণকারী মূল বাহিনীকে ফায়ার সাপাের্ট দেওয়ার ব্যাপারে অন্যান্য মুক্তিবাহিনী কোম্পানি ও মিত্রবাহিনীর ২৫ আসাম রেজিমেন্টের সাথে সমন্বয় সাধন করা হয়। যেহেতু এটা একটি জটিল অপারেশন, সে জন্য যুদ্ধযাত্রার আগে খুঁটিনাটি সব বিষয়ের প্রস্তুতি ও সমন্বয় সাধন করা হয়। যুদ্ধের বিবরণ ৩-৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন দল নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিতে থাকে। আক্রমণের সময় নির্ধারিত হয় ৪ ডিসেম্বর ভাের সাড়ে ৪টায় (এইচ আওয়ার)। ঠিক সাড়ে ৪টায় লেফটেন্যান্ট ইয়ামীনের গণবাহিনী কোম্পানি ও ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানির মুক্তিযােদ্ধারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনের লেংগুরা গ্রামের দিক থেকে আক্রমণ শুরু করেন। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে একইভাবে চিৎকার করে সুবেদার মােশাররফের কোম্পানির মুক্তিযােদ্ধারা গুলি ছুঁড়তে ছুড়তে এগিয়ে আসেন। আরও পূর্ব দিকের লেফটেন্যান্ট মতিউরের অবস্থান থেকেও প্রচণ্ড গােলাগুলির আওয়াজ আসতে থাকে। এলাকাটি মুহূর্তের মধ্যেই একটি ভয়ংকর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। 
পরিকল্পনা অনুসারে ৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার পর মুক্তিবাহিনী তাদের নিজ নিজ অবস্থান গ্রহণ করে। সেই রাত ছিল ঘন কুয়াশায় ঢাকা। লেফটেন্যান্ট নবী রাত ৪টার মধ্যে সব কোম্পানির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে নদীর পশ্চিম পাড়ে একটি গাছের আড়ালে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৪টায় দক্ষিণ প্রান্ত থেকে সিগন্যাল পিস্তলের সবুজ সংকেতের সাথে সাথে আক্রমণ। শুরু হয়। শত্রুও পাল্টা ফায়ার শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে শত্রুর ঘাটি ভারী অস্ত্র, মর্টার, এমজি ইত্যাদি মুক্তিবাহিনীর রিকয়েললেস রাইফেলের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায়। এতে শত্রুর ফায়ার পাওয়ার প্রায় অর্ধেক কমে যায়। লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী সংকেত দিয়ে ‘ডি’ কোম্পানিকে নদী অতিক্রম করে আক্রমণের নির্দেশ দেন। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ২০টি নৌকায় কোনাে বাধা ছাড়াই ‘ডি’ কোম্পানি নদী পার হয়ে শক্রর অবস্থানে পৌছে যায়। ইতােমধ্যে আঁধার ফিকে হয়ে আসে, শত্রুর গােলাগুলির পরিমাণও কমে আসে। ভাের পৌনে ৬টায় হঠাৎ করে শক্রর গুলির দিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শত্রু তখন সারিবদ্ধ হয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পশ্চাদপসরণ করছিল। মুক্তিবাহিনী ৩ ইঞ্চি মর্টার দিয়ে পলায়নরত শত্রুর ওপর গােলা নিক্ষেপ করতে থাকে। ডি’ কোম্পানি সাফল্যের সাথে শত্রুর অবস্থান দখল করে নেয়। শত্রু রণে ভঙ্গ দিয়ে পলায়ন করে। মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ পরিকল্পনা, মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস ও বীরত্বের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে শক্রর সব প্রতিরােধ। পরে দলে দলে অসংখ্য রাজাকারও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় গােয়াইনঘাট মুক্ত হয়।
যুদ্ধের ফলাফল। গােয়াইনঘাট ছিল পাকিস্তানিদের ডাউকি-তামাবিল সীমান্তের সর্বশেষ শক্ত অবস্থান (Strong Point)। এরপরই ছিল সিলেট শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকাগুলাে। সুরমা নদীর তীর হয়ে পায়ে হাঁটা পথে গােয়াইনঘাট থেকে সালুটিকর ফেরিঘাট ও বিমানঘাঁটি এলাকার দূরত্ব ছিল মাত্র ৭ থেকে ৮ কিলােমিটার। কাজেই সামরিক দিক থেকে গােয়াইনঘাটের গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। গােয়াইনঘাট হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানিদের সিলেট শহরের আশপাশের পাহাড়গুলােয় অবস্থান নেয়া ছাড়া আর কোনাে বিকল্প ছিল না। আর কার্যত হলােও তাই। মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে গােয়াইনঘাট দখলের পর সরাসরি সিলেট শহরে অপারেশন পরিচালনা সহজতর হয়ে যায়। সিলেটের মুক্তি মাত্র সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শত্রুর ওপর শেষ আঘাত হানার জন্য মুক্তিযােদ্ধারা উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। ওঁদের সাহস ও উদ্যম লক্ষগুণে বেড়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর সামনে আর কোনাে বাধাই তখন থাকল না। ওদিকে পাকিস্তানিদের মনােবল ভেঙে পড়ল। তাদের সীমান্তবর্তী প্রতিটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই ভেঙে টুকরাে টুকরাে হয়ে পড়ে। শক্তিশালী অবস্থানগুলাে হাতছাড়া হয়ে পড়লে ওদের পশ্চাদপসরণ ছাড়া কোনাে বিকল্প থাকলাে না। যুদ্ধের সার্বিক মূল্যায়ন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যর্থতার কারণ: পাকিস্তানি বাহিনীর গােয়াইনঘাট অবস্থানটি শক্তিশালী ঘাটি হলেও তাদের সীমান্তবর্তী ছােটখেল ও রাধানগর হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় মনােবল একেবারেই কমে যায়। শক্তিশালী অবস্থানগুলাে হাতছাড়া হয়ে গেলে পশ্চাদপসরণ ছাড়া কোনাে বিকল্প ছিল না। দীর্ঘ ৯ মাস এলাকার নিরীহ অসহায় মানুষের ওপর হত্যা, ধ্বংস, লুণ্ঠন এবং নানাবিধ নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড চালানাের ফলে মানসিক শক্তিরও লােপ ঘটে।
পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যর্থতার অন্য একটি কারণ ছিল স্থানীয় রাজাকারদের দলে দলে পক্ষ ত্যাগ। মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের কারণ: এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের মূল কারণ ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের দেশপ্রেম ও সাহস। গােয়াইনঘাটের পূর্বে ছােটখেল যুদ্ধে ৪/৫ গুর্খা রেজিমেন্ট ব্যর্থ হলেও পরবর্তী সময় মুক্তিযােদ্ধারা ঐ স্থান দখল করেছিলেন। ২৪ অক্টোবর পরিচালিত গােয়াইনঘাটের প্রথম আক্রমণে ব্যর্থ হওয়ার পর মুক্তিযােদ্ধারা এর প্রতিশােধ নিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। উল্লেখ্য যে, গােয়াইনঘাটে প্রথম আক্রমণে যে কয়টি মুক্তিযােদ্ধা কোম্পানি আক্রমণ করে ব্যর্থ হয়েছিল, লেফটেন্যান্ট নবী সে কোম্পানিগুলােকেই মূল আক্রমণে। রাখেন। এ মুক্তিযােদ্ধারা বীরত্বের সাথে গােয়াইনঘাট দখল করেন। এবং কিছুটা হলেও পরাজয়ের গ্লানি মুছতে সক্ষম হন। এ আক্রমণে রণকৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল পূর্ব প্রস্তুতি, শত্রু সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অত্যন্ত কার্যকর ও সাহসী পরিকল্পনা গ্রহণ। যুদ্ধের শুরুতেই লেফটেন্যান্ট নবী তিন দিক থেকে শত্রুপক্ষকে ঘেরাও করে ফেলেন এবং শক্রদের মূল ঘাঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। মুক্তিবাহিনীর মূল আক্রমণকারীরা রাতের বেলায় গােয়াইন নদীর মতাে মােটামুটি বড়াে নদী অতিক্রম করে শক্রর ওপর আক্রমণ করেন। মুক্তিযােদ্ধাদের এ রণকৌশলে। পাকিস্তানি বাহিনী অবাক হয়ে পড়ে। এটা তাদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। যুদ্ধের পরই মিত্রবাহিনীর বেশ কিছু অফিসার ঐ গােয়াইনঘাট যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শন করেন এবং মুক্তিযােদ্ধাদের নদী অতিক্রম করার রণকৌশলের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের অন্যতম কারণ ছিল স্থানীয় জনগণের আন্তরিক সহায়তা।
উপসংহার
গােয়াইনঘাট যুদ্ধটি ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গণবাহিনী ও স্থানীয় গণবাহিনীর মুক্তিযােদ্ধাদের অন্যতম উল্লেখযােগ্য যুদ্ধ। ২৫ অক্টোবর পরিচালিত গােয়াইনঘাটের ওপর প্রথম যুদ্ধে বিপর্যয় ঘটলে মুক্তিযােদ্ধারা প্রতিশােধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন এবং ৪ ডিসেম্বর গােয়াইনঘাট দখলের মাধ্যমে প্রতিশােধ গ্রহণ করেন। মিত্রবাহিনীর সাহায্য ছাড়াই পরিচালিত যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা বীরত্ব ও সাহসের পরিচয় দেন। লেফটেন্যান্ট নবী, লেফটেন্যান্ট ইয়ামীন, লেফটেন্যান্ট মঞ্জুর, সুবেদার মােশাররফ ও সুবেদার বদির নেতৃত্বাধীন এ যুদ্ধ সিলেটের রণাঙ্গনের উল্লেখযােগ্য যুদ্ধ। গােয়াইনঘাট পতনের পর মুক্তিবাহিনী এ অঞ্চলের মূল ঘাঁটি সিলেটের দিকে উচ্চ মনােবল ও অনুপ্রেরণা নিয়ে অভিযান শুরু করে। গােয়াইনঘাট দখলের পর মিত্রবাহিনীর কাছে মুক্তিবাহিনীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। (গােয়াইনঘাটের যুদ্ধের নকশাটি দেখুন ৮৫৩ পাতায়)

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড