You dont have javascript enabled! Please enable it!
কানাইঘাটের যুদ্ধ
সূচনা
দেশকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অনেক প্রচলিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। কানাইঘাট যুদ্ধ সেগুলাের অন্যতম। নভেম্বর মাসে যৌথবাহিনী কমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পাকিস্তানিদের ওপর সিলেটের পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে প্রবল চাপ প্রয়ােগ করা হবে, যার ফলে সিলেট দখল করা সহজতর হবে। তাই সিলেটের উত্তর ও পূর্ব সীমান্ত থেকে সিলেট অভিমুখে। অগ্রসর হতে হলে পথে পাকিস্তানিদের সব বাধা ও শক্ত অবস্থান অপসারণ করতে হবে। সিলেট জেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত কানাইঘাট পাকিস্তানিদের সবচেয়ে শক্ত অবস্থানের মধ্যে একটি। ফলে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সিলেট-কানাইঘাট পথে ইটগ্রাম দখল করা সত্ত্বেও সিলেটের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে ৪ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর দায়িত্ব পড়ে পাকিস্তানিদের এ শক্ত অবস্থান দখল করার। ৪ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযােদ্ধাদের কানাইঘাট আক্রমণ অভিযান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান। কানাইঘাট সিলেট জেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত একটি থানা। থানা সদর সুরমা নদীর পশ্চিমে অবস্থিত। কানাইঘাট থানা সদর সিলেট শহর থেকে ৫২ কিলােমিটার উত্তর-পূর্বে, জৈন্তাপুর থেকে ২৪ কিলােমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং আটগ্রাম থেকে ১৪ কিলােমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। কানাইঘাট সিলেট শহর থেকে চরখাই ও দরবস্ত-এর মাধ্যমে যথাক্রমে দক্ষিণ ও উত্তর দিক থেকে। সড়কপথে সংযুক্ত। কানাইঘাট একটি আধিপত্য স্থাপনকারী অবস্থান, যা গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর অবস্থিত। পার্শ্ববর্তী উল্লেখযােগ্য গ্রাম হল গৌরীপুর, বড় চাতল, দলিয়ার চর কানাইঘাট এলাকায় বেশকিছু পুকুর ও ডােবা এলাকা আছে। যুদ্ধের পটভূমি ৬ এপ্রিল থেকে সিলেটে সেনা মােতায়েন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এ সংখ্যা ব্রিগেড পর্যায়ে উন্নীত হয়। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার এমবি ওয়াটকের ইকো সেক্টরের (ভারতীয় বাহিনীর সেক্টর) অধীনে মিত্র বাহিনীকে জৈন্তাপুর-সিলেট অক্ষ ধরে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অনুরূপভাবে ব্রিগেডিয়ার কুলাউয়ান্ত সিংয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৮৭ বিএসএফ এবং ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নির্দেশ দেওয়া হয় শত্রুপক্ষকে চরখাই এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং তারপর সিলেট-চরখাই অক্ষে অগ্রসর হতে। সীমান্ত থেকে সিলেট অভিমুখী পথে শত্রুদের অগ্রবর্তী অবস্থান এবং কালক্ষেপণ অবস্থান (ডিলেইং পজিশন) ছিল। ব্রিগেডিয়ার সলিমুল্লার নেতৃত্বে পাকিস্তানি ২০২ পদাতিক ব্রিগেডের অবস্থান ছিল সিলেটে। এ ব্রিগেডের দায়িত্ব ছিল। সিলেটের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত থেকে সিলেট অভিমুখী পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ব্রিগেডের অধীনে ছিল ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট, ৯১ মুজাহিদ ব্যাটালিয়ন, ২ কোম্পানি আজাদ কাশ্মীর রাইফেল এবং খাইবার রাইফেলের কিছু অংশ। ২২ নভেম্বর জকিগঞ্জ ও আটগ্রাম মুক্ত হলে কানাইঘাট সিলেটের উত্তর-পূর্ব। সীমান্তের সবচেয়ে দূরবর্তী ঘাঁটিতে পরিণত হয়। রণকৌশলগত দিক দিয়ে। এখান থেকে আটগ্রাম-চরখাই-সিলেট অক্ষে আধিপত্য স্থাপন করা যায়। কানাইঘাটে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানি মােতায়েন ছিল। তাদের সঙ্গে ছিল ১ প্লাটুন মিলিশিয়া (স্কাউট), কিছু স্থানীয় রাজাকার এবং প্রত্যক্ষ সমর্থনে ১টি আর্টিলারি ব্যাটারি। একই সময় দরবন্তে (১৮ কিলােমিটার পশ্চিমে) ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাটি (তামাবিল-জৈন্তাপুর-সিলেট অক্ষে)। কানাইঘাটের মধ্যে লিংক রােড থাকায় যৌথবাহিনীর সিলেটে অগ্রাভিযানে দরবস্ত ও কানাইঘাট দখল করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। মিত্রবাহিনীর পরিকল্পনা অনুসারে ৫৯ মাউন্টেন ব্রিগেড, ৮১ পদাতিক ব্রিগেড ও সেক্টর ট্রপস সিলেট দখলের আদেশপ্রাপ্ত হয়।
অক্টোবরের মাঝামাঝি ‘জেড’ ফোর্স সিলেট এলাকায় মােতায়েন করা হয়। জেড ফোর্সের অধিনায়ক। লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে আটগ্রামচরখাই-সিলেট অক্ষে চূড়ান্ত অভিযানে অংশগ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। এ লক্ষ্য সামনে রেখে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতের জালালপুরে (আটগ্রামের পূর্বে) অবস্থান গ্রহণ করে। ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সুরমা নদী অতিক্রম করে এবং ২০-২২ নভেম্বরে আটগ্রাম ও জকিগঞ্জ যুদ্ধে। অংশগ্রহণ করে। এরপর ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সিলেট শহরের জন্য অগ্রাভিযানে কানাইঘাট দখলের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আটগ্রাম-কানাইঘাট-চরখাইসিলেট অক্ষে যাত্রা করে। ২৭ নভেম্বর ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সুরমা নদীর উত্তর তীরে গৌরীপুর অবস্থান গ্রহণ করে, যা ছিল কানাইঘাট থেকে মাত্র ২ মাইল উত্তরে।
গৌরীপুরে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা ও ডেল্টা কোম্পানি সুরমা নদীর উত্তরে অবস্থান গ্রহণ করে। ২৮ নভেম্বর খুব ভােরে ৩১ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়ন কানাইঘাট থেকে আলফা কোম্পানির ওপর আক্রমণ করে। শত্রুদের অকস্মাৎ আক্রমণে কোম্পানি অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মাহবুব শহিদ হন। প্লাটুন অধিনায়ক সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ওয়াকর হাসান তাঁর প্লাটুন নিয়ে (ডেল্টা কোম্পানি) আক্রমণকারী শত্রুপক্ষের ওপর একপর্যায়ে প্রতি-আক্রমণ করে। যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ ও যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে ‘জেড’ ফোর্স অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান ৪ নম্বর সেক্টর অধিনায়ক মেজর চিত্তরঞ্জন দত্তকে কানাইঘাট শত্রুমুক্ত করার জন্য অনুরােধ করেন। পরবর্তী সময় সেক্টর অধিনায়ক বড়পুঞ্জি সাব-সেক্টর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আব্দুর রবকে সেক্টর ট্রপস দিয়ে কানাইঘাট দখলের নির্দেশ দেন। সিলেটের চূড়ান্ত যুদ্ধে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অপারেশনের সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত। 
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কানাইঘাটের গুরুত্ব
নভেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানিদের মধ্যে যুদ্ধের মাত্রা অপেক্ষাকৃতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সিলেট সেক্টরে প্রধানত সেক্টর ট্রপসই যুদ্ধ করছিল। কিন্তু নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ সেক্টরে পাকিস্তানিদের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে ‘জেড’ ফোর্সকে অবস্থার উন্নতি করতে বলা হয়। কিন্তু এটা সত্য যে, সেক্টর ট্রপস ও ‘জেড’ ফোর্সের যুদ্ধকৌশল ছিল ভিন্ন ধরনের। নভেম্বর মাসে ‘জেড’ ফোর্স ও মিত্রবাহিনী ইটগ্রাম ও জকিগঞ্জ দখল করে। ‘জেড’ ফোর্সের ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রধান দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর হরিপুর-সিলেটের মধ্যে যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া এবং সর্বশেষে ভারতীয় বাহিনীর সাথে প্রতিরক্ষায় অবস্থান নেয়া। কিন্তু শক্রর প্রায় ১ ব্যাটালিয়ন (মাইনাস) অবস্থান ছিল চরখাইতে এবং কানাইঘাটে ছিল ১টি শক্তিশালী কোম্পানির অবস্থান। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানিদের সবচেয়ে অগ্রবর্তী প্রতিরােধ অবস্থান ছিল কানাইঘাট। কানাইঘাট থেকে দরবস্ত পর্যন্ত একটি সংযােগ সড়ক ছিল। সুতরাং দরবস্ত ছিল তাদের আরেকটি অগ্রবর্তী প্রতিরােধ অবস্থান। তাই সিলেট দখলের ক্ষেত্রে কানাইঘাট ও দরবস্ত দখল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যুদ্ধের সংগঠন
১. পাকিস্তান সেনাবাহিনী: কানাইঘাটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানি মােতায়েন ছিল। ৩১
পাঞ্জাবের ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ছিল সিলেটের খাদিমনগরে। মেজর । সরােয়ার ছিলেন কানাইঘাটের কোম্পানি অধিনায়ক। নিয়মিত সৈন্য ছাড়া কানাইঘাটে ১টি মিলিশিয়া প্লাটুন ও শতাধিক রাজাকার ছিল। কানাইঘাটের সমর্থনে ১টি আর্টিলারি ব্যাটারি (৬টি কামানসহ) মােতায়েন করা হয়েছিল। মুক্তিবাহিনী: ৪ নম্বর সেক্টরের অপারেশনাল এলাকার আওতাধীন ছিল কানাইঘাট। সেক্টর টুপসের মােট ৪টি কোম্পানির জনবল ছিল প্রায় ৪০০। সেক্টর ট্রপসের মধ্যে অন্তর্গত ছিল পুলিশ, ইপিআর, আনসার, বেসামরিক এবং স্কুলকলেজের তরুণ ছাত্ররা। ৪ নম্বর সেক্টরের অন্যতম সাব-সেক্টর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আব্দুর রবকে কানাইঘাট যুদ্ধের অপারেশনাল অধিনায়ক হিসেবে নিয়ােগ করা হয়। সেক্টর ট্রপস সীমান্তের নিকটবর্তী লুবাছড়া চা-বাগানে অবস্থান করছিল। ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অবস্থিত ছিল আটগ্রামে। মিত্রবাহিনীর ১টি ব্যাটারি আর্টিলারির সমর্থনে প্রস্তুত ছিল। ৪ নম্বর সেক্টরের অন্যান্য কোম্পানি অধিনায়করা ছিলেন লেফটেন্যান্ট জহির, লেফটেন্যান্ট গিয়াস ও সুবেদার এ মতিন।
অবস্থান
১. পাকিস্তানি বাহিনী: পাকিস্তানি সৈন্যরা কানাইঘাটে চতুর্মুখী প্রতিরক্ষা গ্রহণ করে। তাদের কোম্পানি কমান্ডপােস্ট ছিল ডাকবাংলােয়, যেখানে মেজর সরােয়ার ও আনুমানিক ২০-২৫জন সৈন্য অবস্থান করতেন। ডাকবাংলাের ২০০ গজ পূর্বে সুরমা নদী, সুরমা নদীর পশ্চিম তীরে উত্তর ও পূর্বমুখী তাদের অনেকগুলাে বাংকার ছিল। যেগুলাে পাকিস্তানিরা রাতের বেলায় দখল করে থাকত। এ বাংকারগুলাে কানাইঘাট-চরখাই ও লুবাছড়া চা-বাগান থেকে যেকোনাে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হতাে। রায়ঘর গ্রাম ও বিষ্ণুপুর কালভার্টে ১ প্লাটুন রাজাকার দরবস্তের দিকে মুখ করে নিয়ােজিত ছিল। ধলইচর ও রাজঘর গ্রামের মধ্যে রাজাকার ও পাকিস্তানি সৈন্যরা উত্তর দিকে মুখ করে নিয়ােজিত ছিল। রাজাকারেরা কানাইঘাট-দরবস্ত সড়ক পাহারা দিত। কানাইঘাট টিঅ্যান্ডটি টাওয়ার, মাদ্রাসা ও থানায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ছিল। সুরমা নদীর পূর্ব তীরে। লায়ারনক মাদ্রাসা পাকিস্তানিদের কিছু সৈন্য প্রহরায় নিয়ােজিত ছিল। এ বিন্যাস ছাড়া নাপিতের খালের ব্রিজের কাছে (কানাইঘাট-দরবস্ত)। পাকিস্তানিদের স্ট্যান্ডিং পেট্রোল ছিল। ধলইরচর গ্রামের পূর্বে সুরমা।
নদী বরাবর পাকিস্তানি বাহিনীর মাইন ফিল্ড ছিল । চরখাইয়ে তাদের ১২০ মিলিমিটার মর্টার মােতায়েন ছিল। চরখাই ও দরবস্ত থেকে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রি-ইনফোর্সমেন্ট আসতে পারতাে। মুক্তিবাহিনী বা মিত্রবাহিনী: ৪ নম্বর সেক্টরের সেক্টর টুপসের মােট ৪টি কোম্পানির জনবল ছিল প্রায় ৪০০। সেক্টর টুপসের মধ্যে অন্তর্গত ছিল পুলিশ, ইপিআর, আনসার, প্রাক্তন সেনাসদস্য এবং স্কুলকলেজের তরুণ ছাত্ররা। ৪ নম্বর সেক্টরের অন্যতম সাব-সেক্টর। অধিনায়ক ক্যাপ্টেন রবকে কানাইঘাট যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছিল। ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল আটগ্রামে। মিত্রবাহিনীর ১টি আর্টিলারি ব্যাটারি ভারতের রাতাছড়ায় মােতায়েন ছিল। সেক্টর টুপস।
সীমান্তবর্তী লুবাছড়া চা-বাগানে অবস্থান করছিল। যুদ্ধ পরিকল্পনা ১. পাকিস্তানি বাহিনী: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল কানাইঘাট অবস্থানকে শক্তিশালী করে ধরে রাখা এবং এ অক্ষ দিয়ে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর অগ্রাভিযান বন্ধ করা। এ জন্য তারা কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক বাধার সমন্বয় ও আর্টিলারির সহায়তায় অবস্থানকে শক্তিশালী করেন এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নেয়। তবে মুক্তিবাহিনীর পূর্বের আক্রমণে তারা দরবস্তে পরবর্তী অবস্থান গ্রহণ। করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এ লক্ষ্যে ৩১ পাঞ্জাবের আলফা কোম্পানির। নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাজাকার মিলিশিয়া নিয়ে মেজর সরােয়ার কানাইঘাটে শক্তিশালী ঘাটি তৈরি করে। মুক্তিবাহিনী: মুক্তিবাহিনীর প্রাথমিক পরিকল্পনায় ছিল, ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কানাইঘাট দখল করবে এবং ৪ নম্বর সেক্টর টুপস প্রতিবন্ধক অবস্থান (ব্লকিং পজিশন) স্থাপন করবে। কিন্তু গৌরীপুরে পাকিস্তানিদের ভয়াবহ আক্রমণের আলােকে যুদ্ধ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসে। ৪ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন রবকে সেক্টর ট্রপস নিয়ে। কানাইঘাট দখলের নির্দেশ দেওয়া হয়। কানাইঘাটে ১ কোম্পানির অধিক পাকিস্তানি সৈন্য এবং শক্তিশালী অবস্থান থাকায় মুক্তিবাহিনী এটি দখলের জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা করেন। যেহেতু দরবস্ত ও চরখাইতে শত্রুর অবস্থান ছিল এবং সেখান থেকে শক্রর রিইনফোর্সমেন্ট (সাহায্য) আসার সম্ভাবনা ছিল, সে জন্য মুক্তিবাহিনী।
দরবস্ত ও চরখাই থেকে সাহায্য না আসার জন্য কানাইঘাটকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করে। ওপরে উল্লিখিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়: ক. লেফটেন্যান্ট গিয়াসের নেতৃত্বে ১টি কোম্পানি দরবস্ত-কানাইঘাট সড়কে অবস্থান নেবে এবং দরবস্ত থেকে কানাইঘাটে আসা শত্রুর গমনাগমন এবং শক্তি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা বন্ধ করবে। খ, লেফটেন্যান্ট জহিরের নেতৃত্বে ১টি কোম্পানি চরখাই-কানাইঘাট সড়কে অবস্থান গ্রহণ করবে। কোম্পানিটি চরখাই থেকে কানাইঘাটের দিকে শত্রুর রি-ইনফোর্সমেন্ট বন্ধ করবে এবং কানাইঘাট থেকে শত্রুর প্রত্যাহারে বাধা দেবে। গ. ক্যাপ্টেন আব্দুর রবের নেতৃত্বে দুই কোম্পানি শক্রর পূর্ব-পশ্চিম দিক থেকে কানাইঘাট মূল ঘাঁটি আক্রমণ করবে। যুদ্ধের বিবরণ। ৪ নম্বর সেক্টরের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাপ্টেন রব তার সৈন্যদের লুবাছড়া চা-বাগানে (কানাইঘাট থেকে ৫ কিলােমিটার উত্তরে) সৈন্য সমাবেশ করেন এবং ২৫-২৬ নভেম্বর রাতে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করেন। এর পরদিন আক্রমণকারী মুক্তিযােদ্ধারা দরবস্ত-কানাইঘাটে সড়কে অবস্থিত বড় চাতল গ্রামে প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করেন। বড় চাতলে মুক্তিবাহিনীর দায়িত্ব ছিল কানাইঘাট থেকে শক্রর প্রত্যাহার অথবা দরবস্ত থেকে কানাইঘাটে রিইনফোর্সমেন্ট বন্ধ করা। শত্রু প্রতিবন্ধক অবস্থানের কথা জানতে পেরে আর্টিলারি ফায়ার করে। মারাত্মক আর্টিলারি ফায়ারের মুখেও মুক্তিবাহিনী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ঐ স্থানে অবস্থান করে এবং পাকিস্তানিদের যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন রাখে।
১ ডিসেম্বর ‘জেড’ ফোর্স অধিনায়ক ৪ নম্বর সেক্টর অধিনায়ক মেজর চিত্তরঞ্জন দত্তকে কানাইঘাট আক্রমণের অনুরােধ করেন, যাতে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিলেটে অগ্রাভিযানে সুবিধা হয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত মূল পরিকল্পনা কিছুটা রদবদল করেন এবং ১ ডিসেম্বর বিকাল ৫টায় ক্যাপ্টেন রবকে ২ ডিসেম্বর প্রথম আলাের মধ্যে (পরদিন) কানাইঘাট দখলের আদেশ প্রদান করেন। আদেশ পাওয়ার পর ক্যাপ্টেন রব সৈনিকদের ক্রমাগত অভিযান পরিচালনা, ক্লান্তি ও গােলাবারুদ সরবরাহের বিবেচনা করে। আক্রমণের তারিখ পিছানাের জন্য অনুরােধ করেন। কিন্তু সেক্টর অধিনায়ক সিলেটের এলাকার সার্বিক যুদ্ধ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্যাপ্টেন রবকে ২ ডিসেম্বরের মধ্যেই কানাইঘাট দখলের নির্দেশ দেন। প্রচুর সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ক্যাপ্টেন রবের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযােদ্ধারা ১ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে কানাইঘাটের দিকে অগ্রসর হন। প্রায় ১২ কিলােমিটার অতিক্রম করে তারা প্রায় রাত ২টার সময় সমাগম এলাকায় (অ্যাসেম্বলি এরিয়া) উপস্থিত হন। ক্যাপ্টেন রব রাত সাড়ে ৩টায় সমাগম এলাকা থেকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে যান। পথের মধ্যে শত্রুর স্ট্যান্ডিং প্যাট্রলের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ফলে শত্রুর অবস্থানের ৫০০ গজের কাছাকাছি। আসতেই প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। তিনি যখন বিন্যাস ভূমিতে পৌছান, তখন প্রায় ভাের । এমতাবস্থায় ক্যাপ্টেন রব ঐ সময় আক্রমণ না করে সেক্টর অধিনায়কের নির্দেশমতাে পরদিন আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিযােদ্ধারা বিন্যাস ভূমি (ফর্মিং আপ প্লেস এফইউপি) ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যান এবং বিশ্রাম গ্রহণ করেন। ক্রমাগত অভিযানে নিয়ােজিত থাকায় মুক্তিযােদ্ধারা অনেকেই আক্রমণের জন্য প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েন। ক্যাপ্টেন রব অতিরিক্ত সৈন্য ও অ্যামুনিশনের। জন্য অনুরােধ করেন।
মেজর দত্ত অ্যামুনিশনের ব্যবস্থা করলেও জনবল বাড়ানাে সম্ভব হয়নি। ২ ডিসেম্বর রাত ৮টার সময় ক্যাপ্টেন রব পুনরায় লক্ষ্যবস্তুর দিকে ২ কোম্পানিসহ যাত্রা শুরু করেন। একই সময় লেফটেন্যান্ট গিয়াস এবং লেফটেন্যান্ট জহির তাঁদের কোম্পানিসহ যথাক্রমে দরবস্তকানাইঘাট ও চরখাই-কানাইঘাট সড়কে প্রতিবন্ধক স্থাপনের জন্য রওনা হন। ৩ ডিসেম্বর রাত দেড়টার সময় শত্রু লেফটেন্যান্ট গিয়াসের কোম্পানির অবস্থান টের পায় (দরবস্ত-কানাইঘাট সড়ক) এবং তার ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে। লেফটেন্যান্ট গিয়াসের প্রতিবন্ধক অবস্থান গ্রহণ করতে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। প্রায় একই সময় লেফটেন্যান্ট জহিরের অবস্থানও (চরখাইকানাইঘাট) পাকিস্তানিরা টের পেয়ে আক্রমণ চালায়। যাহােক, রাত ৮টার সময়। লেফটেন্যান্ট গিয়াস তার প্রতিবন্ধক অবস্থান দখল করতে সক্ষম হন। কিন্তু মেশিনগান ও মর্টারের আক্রমণের ফলে লেফটেন্যান্ট জহির নির্ধারিত প্রতিবন্ধক অবস্থান গ্রহণ করতে তখনাে সমর্থ হননি। তার কোম্পানির অনেকে হতাহত হন এবং প্রচুর অ্যামুনিশনের প্রয়ােজন হয়ে পড়ে। এদিকে ৩ ডিসেম্বর ভাের ৪টায় ক্যাপ্টেন রব তার ২ কোম্পানিসহ বিন্যাস ভূমিতে শত্রুর অগােচরে পৌছাতে সক্ষম হন কিন্তু আরম্ভস্থলে (স্টার্ট লাইনে) অবস্থানকালে শক্র তাদের অবস্থান বুঝতে পারে, এর ফলে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণকারী কোম্পানির ওপর ব্যাপক আর্টিলারি শেলিং শুরু করে। তবে শেষ পর্যন্ত শক্রর আর্টিলারি শেলিং মুক্তিবাহিনীর আক্রমণকে রােধ করতে পারেনি। মুক্তিবাহিনী ৩ ইঞ্চি মর্টার সমর্থনে শত্রুর কাছাকাছি চলে আসে। শত্রুর দিকে অগ্রাভিযানকালে মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং আক্রমণ অব্যাহত রাখার জন্য অতিরিক্ত সৈন্যের জরুরি প্রয়ােজন হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় গিয়াস ও লেফটেন্যান্ট জহিরকে তাদের প্রতিবন্ধক অবস্থানে অল্প কিছু সৈন্য রেখে বাকিদের আক্রমণে অংশ নিতে নির্দেশ প্রদান করেন। আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে কোম্পানি অধিনায়করা কানাইঘাটের দিকে রওনা হন। ভােরের প্রথম আলাের আগেই তারা কানাইঘাট পৌছায় এবং উভয় পার্শ্ব দিয়ে তারা কানাইঘাটের শত্রুর অবস্থান ঘিরে ফেলেন। অবশেষে ৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় মুক্তিবাহিনী শত্রুর ওপর তিন দিক থেকে একই সাথে আক্রমণ করে। প্রচণ্ড হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু হয় এবং মুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড সাহস ও তেজের সাথে লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে থাকে। মুক্তিবাহিনী শক্রর প্রতিটি বাংকার চার্জ করে। উপায় না দেখে পাকিস্তানি বাহিনীর কিছু সৈন্য সুরমা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং কিছু সৈন্য পিছনের দিকে পালিয়ে যায়। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর বেয়নেট চার্জ এবং গ্রেনেড আক্রমণে বহু পাকিস্তানি সৈন্য মারা যায়। হাতাহাতি যুদ্ধ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলতে থাকে। তারপর সেক্টর টুপস পাকিস্তানি বাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাজিত করে কানাইঘাট দখল করে। যুদ্ধের ফলাফল এ যুদ্ধে ১১জন মুক্তিযােদ্ধা শহিদ এবং ২০জন আহত হন। অন্যদিকে, শত্রুর আনুমানিক ৫০জন নিহত এবং ২৫জন আত্মসমর্পণ করে। এভাবে সেক্টর ট্রপসের কানাইঘাট দখল ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অগ্রযাত্রাকে সহায়তা করে। কানাইঘাটের পাকিস্তানি অধিনায়ক মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত হয়। তার মৃতদেহ কানাইঘাট বাজারের কাছে নদীর তীরে পাওয়া যায়।
যুদ্ধের সার্বিক মূল্যায়ন ১, কানাইঘাট যুদ্ধ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যর্থতার কারণ ছিল নিম্নরূপ: ক, কিছু রাজাকার ও আলবদর ছাড়া তাদের জনসমর্থন ছিল না। এর। ফলে আসন্ন মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের কোনাে তথ্য তারা পায়নি। খ, চরখাই ও দরবস্ত থেকে তারা রি-ইনফোর্সমেন্ট (শক্তি বৃদ্ধি) সহায়তা আশা করলেও কোনাে রি-ইনফোর্সমেন্ট সহায়তা
পায়নি। গ. মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে তারা পরিকল্পিতভাবে কানাইঘাট থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে ব্যর্থ হয়। ঘ. নীচু মনােবল ও শৃঙ্খলার অভাব। ৬. যুদ্ধ করার মহৎ উদ্দেশ্যের অভাব। চ, সৈনিকের মধ্যে সার্বিক নিরাপত্তাহীনতার ভয়। ২. মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের কারণ ছিল নিম্নরূপ: ক, মুক্তিবাহিনীর প্রতি স্থানীয় জনগণের ব্যাপক সমর্থন থাকায় খাদ্য, আশ্রয়স্থল ও শক্রর তথ্য দিয়ে তারা মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে। খ, মুক্তিবাহিনীর উঁচু মনােবল ও উচ্চমানের শৃঙ্খলা থাকায় তারা প্রায় ২০০ সৈন্যের একটি ঘটিকে দখল করতে সক্ষম হয়। গ, শত্রুদের ও তাদের প্রতিরক্ষার সব তথ্য মুক্তিবাহিনীর সংগ্রহে ছিল ফলে আক্রমণে বিশেষ সুবিধা হয়। ঘ, মুক্তিবাহিনীর পরিকল্পনায় নমনীয়তা ছিল বলে ক্যাপ্টেন রব বিন্যাস ভূমিতে এসেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে আক্রমণ থেকে বিরত থাকেন এবং নিরাপদ স্থানে চলে যান। তিনি যুদ্ধের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন এবং পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরের দিন আক্রমণ পরিচালনা করেন।
মুক্তিযােদ্ধাদের মহৎ উদ্দেশ্য এ যুদ্ধে তাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। চ, কানাইঘাট যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাহস ও অধ্যবসায় ছিল জয়ের অন্যতম কারণ। রণক্লান্ত থেকেও তারা অধ্যবসায় ও দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে কানাইঘাটের মতাে শক্ত অবস্থান দখল করতে সক্ষম হয়। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধা সেক্টর টুপসের ৪০০ জনবলের ৪টি কোম্পানি ছিল, যার মধ্যে ছিল পুলিশ, ইপিআর, আনসার, প্রাক্তন সেনাসদস্য এবং স্কুল ও কলেজের তরুণ ছাত্ররা ৪টি কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন আব্দুর রব, লেফটেন্যান্ট জহির, লেফটেন্যান্ট গিয়াস এবং সুবেদার আব্দুল মতিন ক্যাপ্টেন রবকে কানাইঘাট যুদ্ধের অপারেশনাল অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। কানাইঘাট যুদ্ধের পূর্বে আটগ্রাম মুক্ত করে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আটগ্রামে সমবেত হয়েছিল। কানাইঘাট অঞ্চলের কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধাও কানাইঘাট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। কানাইঘাট অঞ্চলের কমর উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন ‘সি’ কোম্পানির কোয়ার্টার মাস্টার। তিনি ক্যাপ্টেন রবের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযােদ্ধা নুরুল হক (থানা মুক্তিযােদ্ধা সংসদ অধিনায়ক), মতিউর রহমান, হাবিবুর রহমান, খলিলুর রহমান, চান্দু মিয়া, আলীউর রহমান ও নুরুদ্দিন আহমেদ এখনাে জীবিত আছেন। তাঁরা লেফটেন্যান্ট জহির এবং লেফটেন্যান্ট গিয়াসের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। কানাইঘাট যুদ্ধে নুরুল হক, চান্দু মিয়া ও নুরুদ্দিন আহমেদ বুলেটে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
উপসংহার
কানাইঘাটের যুদ্ধ সিলেটের ৪ নম্বর সেক্টরের অন্যতম সফল যুদ্ধ। কানাইঘাট ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী অবস্থান। ৪ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন রব অল্প সময়ের মধ্যে দীর্ঘদিন অপারেশনে নিয়ােজিত সৈন্য নিয়ে কানাইঘাট আক্রমণ করেন ও দখল করেন। শক্তিশালী অবস্থানের বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত রসদ, গােলাবারুদ, আর্টিলারি ফায়ার সমর্থন, নদী পারাপারের উপযােগী সরঞ্জামাদি ছাড়াই মুক্তিবাহিনী মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে কানাইঘাট দখল করেন। মুক্তিবাহিনী বিশেষত ৪ নম্বর সেক্টরের সেক্টর টুপসের সাহস, বীরত্ব ও লড়াকু মনােভাবের ফলেই কানাইঘাট শত্রুমুক্ত হয়। এ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন সেক্টর ট্রপসদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয় ও  অনুপ্রেরণাময়।
(কানাইঘাটের যুদ্ধের নকশাটি ৮৫১ পাতায় দেখুন)

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!