You dont have javascript enabled! Please enable it! রাধানগর কমপ্লেক্সের যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
রাধানগর কমপ্লেক্সের যুদ্ধ
সূচনা রাধানগর কমপ্লেক্সের যুদ্ধ সিলেট জেলার ৫ নম্বর সেক্টরের অন্যতম প্রধান। একটি যুদ্ধ। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত রাধানগর এক সময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত স্থানীয় মুক্তিবাহিনী ৫ নম্বর সেক্টর ট্রপস, ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ও মিত্রবাহিনীর সৈনিকেরা অসাধারণ সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন। শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান রাধানগর ৩০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান। সিলেট-তামাবিল-ডাউকি-শিলং মহাসড়কটি অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামল থেকেই যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে আসছে। ভারতের আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের সাথে স্থলপথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের একমাত্র যােগাযােগ মাধ্যম হচ্ছে এ সড়কপথ। রাধানগরের অবস্থান সিলেটের উত্তরে অবস্থিত গােয়াইনঘাট থানার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নে সিলেট-গােয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের শেষপ্রান্তে রাধানগর। অবস্থিত। গােয়াইনঘাট থেকে রাধানগরের দূরত্ব ৬ কিলােমিটার। তামাবিল থেকে এর দূরত্ব ১০ কিলােমিটার। রাধানগর ৫ নম্বর সেক্টরের ডাউকি সাবসেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাধানগরের কাছেই ছিল ভারতের ডাউকি বিএসএফএর বিওপি। তামাবিল-ডাউকি-শিলং মহাসড়ক রাধানগরের পাকিস্তানি সম্মুখবর্তী অবস্থান থেকে মাত্র ২ কিলােমিটারের মধ্যেই ছিল। রাধানগরের দক্ষিণে ছােটখেল, তার আরও পরে দক্ষিণে গােয়াইনঘাট, অল্প দূরেই অবস্থিত সালুটিকর বিমানবন্দর ও সিলেট শহর। যুদ্ধের পটভূমি ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান এপ্রিল মাসের শেষদিকে পাকিস্তানি বাহিনী গােয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কপথটি ধরে ব্যাপক মর্টার ফায়ার সাপাের্টের সাহায্যে রাধানগরে প্রবেশ করে।
অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি বাহিনীর প্রচণ্ড গােলাগুলির ভয়ে অত্র এলাকার সাধারণ জনগণ নিজ নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। শত্রুর নিক্ষিপ্ত গুলির আঘাতে এ সময় শহিদ হন অসংখ্য নিরীহ মানুষ। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা জাফলং চা-বাগান ও জাফলং বাজার হয়ে তামাবিল বিওপিতে গিয়ে অবস্থান নেয়। ফলে ১ মে তামাবিল বিওপিটি পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায়। সুবেদার মজিবুরের নেতৃত্বাধীন ইপিআর বাহিনী ৫ মে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে তামাবিল চেকপােস্ট পুনরায় দখল করে নিলে পাকিস্তানিরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ২৩ জুন বিকালে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী মেজর হামিদ ও ক্যাপ্টেন নাসিরের নেতৃত্বে গােয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কপথ ধরে পুনরায় রাধানগর আক্রমণ করে ও দখল করে। তারা স্থায়ীভাবে রাধানগর বাজার সংলগ্ন আলমনগর গ্রামে মজবুত বাংকার খননের সাহায্যে অবস্থান গ্রহণ করে। কয়েকদিনের মধ্যেই পাকিস্তানি বাহিনী আলমনগর, রাধানগর বাজার, ইসলামপুর, ছােটখেল, কাফাউরা, কুমিল্লা বস্তি, মুরা বস্তি ও জাফলং চাবাগানের ফ্যাক্টরি ও স্টাফ কোয়ার্টার এলাকাসহ এক বিস্তৃত এলাকা নিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তােলে ২৭ জুন ভােরবেলায় সুবেদার মজিবুরের নেতৃত্বাধীন ইপিআর বাহিনী এবং এরই মধ্যে গড়ে ওঠা মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা দুই দিক থেকে শত্রু বাহিনীর রাধানগর অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ করে। বসে। সারাদিন ধরে যুদ্ধ করেও পাকিস্তানিদের এক ইঞ্চিও হটাতে সক্ষম না হয়ে মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনী পিছু হটে গেলে পাকিস্তানিরা পুরাে রাধানগর এলাকায় এক বর্বরােচিত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে।
গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। রাধানগর আসার পর থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিদিনই তাদের অবস্থানকে সুসংহত করতে থাকে। অল্প সময়ের ব্যবধানে শত্রু বাহিনী পুরাে রাধানগর এলাকাটিকে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করে ফেলে।  মিত্রবাহিনী বা মুক্তিবাহিনীর পক্ষে এদের এ অবস্থানে রেখে সিলেটের দিকে অগ্রসর হওয়া ছিল আত্মঘাতী। জুন মাসের পর থেকে এ অঞ্চলে ৩টি গণবাহিনী কোম্পানির মুক্তিযােদ্ধারা যুদ্ধ করছিলেন। এঁরা অ্যামবুশ, রেইড ও হেরাসিং ফায়ার করে শত্রুদের ব্যতিব্যস্ত রাখছিলেন। ৪ নভেম্বর ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ডাউকি এলাকায় আনা হয়। ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ডাউকি এলাকায় এলে সমগ্র সাব-সেক্টরে প্রাণচাঞ্চল্য বেড়ে যায়।
মিত্রবাহিনীর ২টি ইউনিট, ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও স্থানীয় গণবাহিনীর মুক্তিযােদ্ধারা রাধানগর-গােয়াইনঘাট-সালুটিকর-সিলেট অক্ষে অগ্রাভিযানের লক্ষ্যে রাধানগর কমপ্লেক্সের শত্রু ঘাটি দখলের পরিকল্পনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাধানগর কমপ্লেক্সের গুরুত্ব সিলেট-তামাবিল-ডাউকি-শিলং মহাসড়কটি অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামল থেকেই যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে আসছে ভারতের আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের সাথে স্থলপথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের একমাত্র যােগাযােগ মাধ্যম হচ্ছে এ সড়কপথ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ পরিচালনাতেও এ সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সামরিক দিক থেকে সিলেট-তামাবিল। সড়কটি নিজেদের আয়ত্তে রাখতে পারার অর্থ অনেকাংশে ছিল সিলেটের প্রতিরক্ষা সুনিশ্চিত করা। এ কারণেই সিলেট-তামাবিল সড়কটিকে সম্ভাব্য যেকোনাে বড়াে রকমের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য পাকিস্তানিরা সিলেট শহর থেকে তামাবিল বিওপি পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা। ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলাের মধ্যে রাধানগর অবস্থানটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্তিবাহিনী কিংবা ভারতীয় বাহিনী যদি সিলেটতামাবিল সড়কের রক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল ধরিয়ে খাদিমনগর বা সিলেট শহর পর্যন্ত পৌছে যায়, সে পরিস্থিতিতে রাধানগর থেকে অতি সহজে ও স্বল্প সময়ে ভারতের শিলং-ডাউকি সড়কপথের যে-কোনাে অবস্থানে আক্রমণ করে। অগ্রসরমাণ মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সাপ্লাই লাইন ধ্বংস করে দেওয়া ছিল সহজ কাজ। ডাউকিসহ পিছনের অবস্থান দখল করে মিত্রবাহিনীকে একটি মারাত্মক ফাদে ফেলাও ছিল সহজ ব্যাপার।
রাধানগরের অবস্থানটি সিলেটতামাবিল-ডাউকি-শিলং মহাসড়কের এতই কাছে ছিল যে, এখান থেকে যেকোনাে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটানাে সম্ভব ছিল। আর সে লক্ষ্যেই দীর্ঘ ৮ মাস ধরে পাকিস্তানিরা রাধানগরের চারদিকে এক বিস্তৃত এলাকাজুড়ে একটি শক্তিশালী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তােলে। অক্টোবর মাসের প্রথম থেকেই পাকিস্তানিরা বাংকারের অবস্থানকে নিরাপদ বলে মনে করতে শুরু করে। কিন্তু একপর্যায়ে বাংকারের অবস্থানকেও নিরাপদ মনে না হওয়ায় তারা প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলাে একেকটি দুর্গের মতাে সাজাতে শুরু করে। রাধানগরের গুরুত্ব ছিল এ এলাকার অন্য সব কটি অবস্থান থেকে ভিন্ন। রাধানগরের কাছেই ছিল ভারতের ডাউকি বিএসএফ ক্যাম্প এবং সিলেট-তামাবিল-ডাউকি-শিলং মহাসড়ক। ডাউকি বিএসএফ-এর বিওপি এবং তামাবিল-ডাউকি-শিলং মহাসড়ক রাধানগরের পাকিস্তানি সম্মুখবর্তী অবস্থান। থেকে মাত্র ২ কিলােমিটারের মধ্যেই ছিল। যুদ্ধের সংগঠন ১. পাকিস্তানি বাহিনী: রাধানগর কমপ্লেক্সে মূলত ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১টি কোম্পানি মােতায়েন ছিল। এর সঙ্গে ১ কোম্পানি ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স (EPCAF), টর্চি স্কাউট ও স্থানীয় রাজাকার, আলবদরও প্রতিরক্ষায় নিয়ােজিত ছিল। ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সদর দপ্তর ছিল সিলেটের খাদিমনগর। মুক্তিবাহিনী: রাধানগর এলাকাটি ৫ নম্বর সেক্টরের ডাউকি-মুক্তারপুর সাব-সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে ক্যাপ্টেন মুত্তালিব, সুবেদার মজিবুর ও সুবেদার মেজর বি আর চৌধুরীর নেতৃত্বে ইপিআর সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। জুলাই মাসের পর এ অঞ্চলে ৪-৫টি গণবাহিনী কোম্পানি অপারেশনে নিয়ােজিত হয়। এ সময় ভারতের মেজর রাও (বিএসএফ) এবং মুক্তিবাহিনীর পক্ষে সিলেটের জাফলং চা-বাগানের ম্যানেজার নাজিম কায়েস চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
৫ নভেম্বর ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আলফা, ডেল্টা, ইকো ও সদর দপ্তর কোম্পানিকে তামাবিল চেকপােস্টে একত্র করা হয়। তামাবিল থেকে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট রাধানগর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। ভারতের ৫/৫ গুর্খা রেজিমেন্ট এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। যৌথবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মেজর জেনারেল গুলবক্স সিং গিল। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অবস্থান রাধানগর এলাকাটি ৫ নম্বর সেক্টরের ডাউকি-মুক্তারপুর সাব-সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে সুবেদার মজিবুর, ক্যাপ্টেন মুত্তালিব ও সুবেদার মেজর বি আর চৌধুরীর নেতৃত্বে ইপিআর সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। জুলাই মাসের পর এ অঞ্চলে ৫টি গণবাহিনী (এফএফ) কোম্পানি অপারেশনে নিয়ােজিত হয়। প্রাথমিক দিনগুলােয় ভারতের মেজর রাও (বিএসএফ) ও মুক্তিবাহিনীর পক্ষে সিলেটের নাজিম কায়েস চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ৫ নভেম্বর ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা, ডেল্টা, ইকো ও হেডকোয়ার্টার্স কোম্পানিকে তামাবিল চেকপােস্টে একত্র করা হয়। তামাবিল থেকে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট রাধানগর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।
ভারতের ৫/৫ গুর্খা রেজিমেন্ট এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর পরিকল্পনা। সিলেট সেক্টরে রাধানগর যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী সরাসরি অংশগ্রহণের পরিকল্পনা। করে। ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর শাফায়াত জামিল ও গণবাহিনীর কোম্পানিগুলাে নিয়ে প্রথমে তিন দিক দিয়ে রাধানগরকে অবরােধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, অবরােধ কার্যকর হওয়ার পর প্রথমে মিত্রবাহিনী ছােটখেল আক্রমণ করবে। ভারতীয়দের আক্রমণে মুক্তিবাহিনী সহায়তা করবে। পরবর্তী সময় ভারতীয় বাহিনী ছােটখেল দখলে। রাখতে ব্যর্থ হলে মুক্তিবাহিনীর ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছােটখেল দখল করে। ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট এস আই এম নূরুন্নবী খান পরিকল্পনা ও সমন্বয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধের বিবরণ লুনি গ্রামে ৬ নভেম্বর রাধানগর কমপ্লেক্সে একপর্যায়ে যুদ্ধ শুর হয়। লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী ডেল্টা কোম্পানি নিয়ে জাফলং চা-বাগান সংলগ্ন লুনি গ্রামের অবস্থানে গিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করেন। লেফটেন্যান্ট মনজুরের আলফা কোম্পানি রাধানগর দুলের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে কাফাউড়া গ্রামে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করে। প্রতাপপুরে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ন সদর স্থাপন করা হয়। ৭ নভেম্বরের মধ্যে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানিগুলাে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। ইতােমধ্যে সুবেদার মােশাররফ তাঁর গণবাহিনী কোম্পানি নিয়ে লুনি গ্রামের দক্ষিণ ও পশ্চিম প্রান্তে এবং লেফটেন্যান্ট মতিউরের গণবাহিনী কোম্পানি রাধানগরের উত্তরে অবস্থান গ্রহণ করে।
রাধানগরের উত্তর-পূর্ব দিকে কাফাউড়া গ্রামকে পশ্চিমে রেখে মুজাহিদ ক্যাপ্টেন দাউদের কোম্পানি অবস্থান নিয়েছিল। এ ছাড়া হাবিলদার (ইপিআর) রফিকের ১টি গণবাহিনী কোম্পানিও লুনি গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামটিতে বেশ কিছুদিন থেকে অবস্থান নিয়েছিল। ৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ১টি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর গুলি করলে লুনি গ্রামে উভয় পক্ষের প্রচণ্ড গােলাগুলি হয়। ৮ নভেম্বর শত্রুদের ১টি দল লুনি গ্রামের মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে দুটি আক্রমণ পরিচালনা করে  রাধানগর অবরােধ অপারেশনের জন্য লেফটেন্যান্ট নবীর কোম্পানি ঘােরা ও সত্তারগাঁও গ্রামে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করে। এভাবে ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত রাধানগর কমপ্লেক্সে পাকিস্তানিদের অবস্থান ঘিরে উত্তর-পূর্বে লেফটেন্যান্ট মনজুর (আলফা কোম্পানি) ও মুজাহিদ ক্যাপ্টেন দাউদের গণবাহিনী কোম্পানি, উত্তরে লেফটেন্যান্ট মতিউরের গণবাহিনী কোম্পানি, পশ্চিমে সুবেদার মােশাররফ ও হাবিলদার রফিকের গণবাহিনী কোম্পানি, দক্ষিণ-পশ্চিমে ডেল্টা ও ইকো কোম্পানি অবস্থান নিয়েছিল। একমাত্র রাধানগর-গােয়াইনঘাট সড়কটিই শক্রদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য খােলা ছিল। ১৪ নভেম্বর ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ২টি প্লাটুন ও ছাত্র কোম্পানির ১টি প্লাটুন ছাতক থেকে এসে লেফটেন্যান্ট নবীর সাথে যােগ দেয়। রাধানগর অবরােধ অপারেশনের গুরুত্ব বিবেচনা করে মেজর শাফায়াত তাদেরকে ছাতক এলাকা থেকে প্রত্যাহার করে রাধানগর এলাকায় আনেন। প্লাটুনগুলাে।
সত্তারগাঁও ও দুয়ারীখেল গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। মুক্তিবাহিনীর দুয়ারীখেল, সত্তারগাঁও ও ঘােরা গ্রামের অবস্থানগুলাে শত্রুদের ভয়ের কারণ ছিল। ওরা বুঝতে পেয়েছিল, মুক্তিবাহিনী চারদিক থেকে রাধানগর ও ছােটখেল অবস্থান ঘিরে ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে শক্ররা ৩টি অবস্থান থেকে যে-কোনাে কিছুর বিনিময়ে মুক্তিবাহিনীকে সরিয়ে ফেলার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। এ পরিস্থিতিতে লেফটেন্যান্ট নবী লেফটেন্যান্ট ইয়ামিনকে খাইরাই কোম্পানিগঞ্জ-সালুটিকর ঘাট এবং লেফটেন্যান্ট খালেদকে খাইরাইগােয়াইনঘাট সড়ক দুটি অবরােধ করে অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। লেফটেন্যান্ট রউফ ও লেফটেন্যান্ট তাহের আখঞ্জি সালুটিকর, চালিতাবাড়ি, জল্লারপাড় এলাকায় রেইড, অ্যামবুশ, টহল কার্যক্রম বাড়িয়ে দেন এবং গােয়াইনঘাটে যাতে রি-ইনফোর্সমেন্ট না আসতে পারে, তার ব্যবস্থা করেন। ১৫-২৩ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে এবং শত্রুরা মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ ও শেলিং অব্যাহত রাখে। ২০ থেকে ২৪ নভেম্বর ৪ দিনই ঘােরা, দুয়ারীখেল, সত্তারগাঁও, লুনি গ্রাম, জাফলং চাবাগান, কাফাউড়া ও বাউবিবাগ অবস্থান থেকে মুক্তিবাহিনী উত্তর, পশ্চিম ও পূর্ব দিক থেকে পাকিস্তানিদের রাধানগর ও ছােটখেল অবস্থানকে অবরােধ করার যে প্রক্রিয়া করেছিল, তা ২৪ নভেম্বর পূর্ণতা পায় । ২৬ নভেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনীর ১টি কোম্পানি শিমুলতলা গ্রামে রাধানগরগােয়াইনঘাট সড়ক সামনে রেখে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। এর ফলে রাধানগরের সাথে শত্রুদের রিয়ার সদর দপ্তরের যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
২৬ নভেম্বর রাতে ভারতীয় ৫/৫ গুর্খা রেজিমেন্ট রাধানগর ও ছােটখেল আক্রমণ করে। সুবেদার বদিউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর ১টি দল। তাদের সাথে এ আক্রমণে অংশ নেয়। প্রচণ্ড যুদ্ধ শেষে গুর্খা রেজিমেন্ট ছােটখেল দখল করে। এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩৬জন ভারতীয় সৈন্য শহিদ ও বহু সৈন্য গুরুতরভাবে আহত হয়। কিন্তু মাত্র ৬ ঘণ্টা পরই পাকিস্তানিরা ছােটখেলে পাল্টা আক্রমণ করে। গুর্খা রেজিমেন্ট পাকিস্তানি হামলার মুখে টিকতে না পেরে অবস্থান ছেড়ে চলে আসে এবং শত্রুরা ছােটখেল পুনর্দখল করে।  গুর্খা রেজিমেন্টের ছােটখেল বিপর্যয়ের পর ছােটখেল দখলের পরিকল্পনা করা হয়। মিত্রবাহিনীর অনুরােধে ৫ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মীর শওকত আলী ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ছােটখেল দখলের নির্দেশ প্রদান করেন। মেজর শাফায়াত জামিল আক্রমণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ডেল্টা কোম্পানির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট নবী রাধানগর ও ছােটখেলের যুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয় যে, লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবীর নেতৃত্বাধীন ডেল্টা কোম্পানি ছােটখেল আক্রমণ পরিচালনা করবে। পরবর্তী সময় অধিনায়ক মেজর শাফায়াত জামিল নিজেই আক্রমণ পরিচালনার কথা জানান। পূর্বনির্ধারিত স্থানে সঠিক সময় মুক্তিযােদ্ধাদের সব প্লাটুন পাকিস্তানিদের মােকাবিলা করার জন্য হাজির হল। কমান্ডিং অফিসার মেজর শাফায়াত জামিল। স্বয়ং প্রথম সারিতে উপস্থিত থেকে এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন, এ কথা জানার ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের মনােবল বহুগুণে বেড়ে যায় ।
২৮ নভেম্বর রাতে এ ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেল্টা কোম্পানির সৈনিকেরা এক সারিতে পাকা ধানক্ষেতের ওপর দিয়ে চুপিসারে ৭০০-৮০০ গজ দূরে অবস্থিত শত্রুর অবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে লাগল। মেজর শাফায়াত বাম দিকের অংশে মাঝামাঝি এবং লেফটেন্যান্ট নবী ডান দিকের অংশের মাঝামাঝি থেকে নেতৃত্ব দেন। শক্রর অবস্থান আর ৩০০ গজ সামনে, এমন সময় শাফায়াত জামিল চিৎকার করে উঠলেন ‘জয়বাংলা’। এক কণ্ঠ যেন সহস কষ্ঠ হয়ে উচ্চারিত হল। মুক্তিযােদ্ধারা অমিত বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানিদের ওপর। ঘােরা গ্রামের ২টি মেশিনগান ও ১টি রিকয়েললেস রাইফেল গর্জে ওঠে। এক একজন মুক্তিযােদ্ধা যেন অসাধারণ শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠেন। পাকিস্তানিদের সঙ্গে হাতাহাতি যুদ্ধ করে মুক্তিযােদ্ধারা ছােটখেল দখল করে নিলেন। চারদিকে তখন রক্তের স্রোত, পাকিস্তানিদের লাশের স্কুপ এবং ফেলে যাওয়া অস্ত্র ও গােলাবারুদ। বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা মুক্তিযােদ্ধারা খড়ের স্কুপে আগুন ধরিয়ে দিলে। প্রজ্বলিত আগুনে চারদিক আলােকিত হয়ে উঠল। লেফটেন্যান্ট নবী পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া ১টি নতুন স্টিল হেলমেট মাথায় দিয়ে দেখানাের জন্য মেজর শাফায়াতের কাছে দৌড়ে যান। মেজর শাফায়াত আনন্দে হাসলেন, ঠিক এ সময়ই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেল। খড়ে আগুন ধরানাে অত্যন্ত ভুল হয়েছিল, এটা বােঝা গেল যখন পাকিস্তানিদের গুলিবর্ষণে মেজর শাফায়াত কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেলেন। মেজর শাফায়াতকে ভারতের তুরা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহত অবস্থায় থেকেও তিনি তার কর্তব্য ভােলেননি। লেফটেন্যান্ট নবীকে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করার জন্য তিনি চিঠি লিখলেন।
সৈন্যদের উৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়ে এ পত্রে পাকিস্তানিদের যে-কোনাে আক্রমণ প্রতিহত করার কথা তিনি লিখিত নির্দেশ দেন। মেজর শাফায়াত জামিল মুরা বস্তি, ইসলামপুর বস্তি, কুমিল্লা বস্তি ও রাধানগর দুল দখলের জন্য আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। এদিকে অধিনায়কের অবর্তমানে লেফটেন্যান্ট নবীকে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অপারেশনাল অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট নবী রাধানগরের সব অবস্থান শত্রুমুক্ত করার জন্য এলাকার সব গণ ও নিয়মিত বাহিনীর কোম্পানি অধিনায়ক ও প্লাটুন অধিনায়কদের নির্দেশ দেন। ২৯-৩০ নভেম্বর রাতে লেফটেন্যান্ট মতিউর, মুজাহিদ, ক্যাপ্টেন দাউদ, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট মনজুর, হাবিলদার রফিক ও সুবেদার মােশাররফ তাদের কোম্পানি নিয়ে পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর হামলা চালান। | ২৯-৩০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাতের অন্ধকারে গােয়াইনঘাটে পালিয়ে যায়। সমগ্র রাধানগর কমপ্লেক্স মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। মুক্তিবাহিনীর সব কোম্পানি অধিনায়করা তখন রাধানগর ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরেন বিজয়ের গভীর আনন্দে। মুক্তিযােদ্ধারা অসম্ভবকে সম্ভব করে তােলেন। আর এভাবেই এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানিদের দুর্ভেদ্য ঘাটি রাধানগর। কমপ্লেক্সের পতন হয়। যুদ্ধের ফলাফল মুক্তিবাহিনীর হাতে রাধানগর পতনের পর পুরা ডাউকি সাব-সেক্টর শক্রমুক্ত হয়। এটি ছিল অত্যন্ত সফল অপারেশন। ছােটখেল আক্রমণে ৫/৫ গুৰ্খা। রেজিমেন্টের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। শুধু ছােটখেল আক্রমণে তাদের আনুমানিক ৩৬জন শহিদ এবং ৫০জন আহত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাদের অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ৩০ নভেম্বর রাধানগর আক্রমণে। তারা নিজেদের অবস্থান ছেড়ে বিনা যুদ্ধে পিছনে চলে যায়। যুদ্ধের সার্বিক মূল্যায়ন ১. পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যর্থতার কারণ: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধটি ছিল একটি জাতির বিরুদ্ধে। পাকিস্তান রক্ষার নামে ওরা চালিয়েছিল গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাট ও নির্যাতন। এসব অমানবিক কর্মকাণ্ড যে-কোনাে মানুষের নৈতিক মনােবল হারাতে বিপুলভাবে সাহায্য করে। নৈতিক মনােবল হারিয়ে ফেলে শেষের দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যরা যুদ্ধ করেছে শুধু নিজেদের জীবন রক্ষার জন্য। সামরিক বিবেচনায় ওদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলাে মজবুত থাকলেও জনগণ থেকে ওরা ছিল সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। যে-কোনাে জনযুদ্ধে জনগণ। হতে বিচ্ছিন্ন থেকে যুদ্ধ জয় অসম্ভব ব্যাপার। ওরা ছিল চারদিক।
থেকেই শক্ৰবেষ্টিত। ওদের শত্রু ছিল এ দেশের প্রায় প্রতিটি নারীপুরুষ। মুক্তিবাহিনীর অপরিসীম দেশপ্রেম এবং দেশকে শত্রুমুক্ত করার অধীর আগ্রহ পাকিস্তানি বাহিনীর রাধানগরে পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সাফল্যের কারণ: ক, শত্রুকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে তার প্রতিটি অবস্থানকে | নিরাপত্তাহীন করে ফেলা। খ, শক্রর অবস্থানের ওপর অনবরত হামলা চালিয়ে তাদের আহার, নিদ্রা, বিশ্রাম ও চলাচল বিপদসঙ্কুল করে ফেলা। মুক্তিবাহিনীর অকুতােভয় প্রতিটি যােদ্ধার অপরিসীম দেশপ্রেম, দেশের মানুষকে শত্রুমুক্ত করার অদম্য স্পৃহা এবং অবিচল মনােবল। কনভেনশনাল ও গেরিলা পদ্ধতিতে অপারেশনের সমন্বয় ঘটিয়ে এবং দুয়ের সংমিশ্রণে সার্থক অপারেশন পরিচালনার কারণেই প্রধানত পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়। সংমিশ্রণ পদ্ধতির এ অপারেশন মুক্তিবাহিনীর অধিনায়কদের নিজস্ব আবিষ্কার ছিল। মায়ের সন্তান মায়ের কোলে ফিরে যাওয়ার অধীর আগ্রহে মুক্তিবাহিনীর প্রতিটি সদস্যই প্রাণপণে শত্রু নিধনে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন।
উপসংহার
রাধানগর কমপ্লেক্সের যুদ্ধ সিলেট রণাঙ্গনের অন্যতম ভয়াবহ ও স্মরণীয় যুদ্ধ। আটগ্রামের যুদ্ধের পর রাধানগর যুদ্ধে মিত্রবাহিনী সরাসরি অংশ নেয়। মিত্রবাহিনী ছােটখেল এলাকা দখলে রাখতে ব্যর্থ হলে মুক্তিবাহিনী ছােটখেল দখল করে। এটি ছিল মুক্তিবাহিনীর অনন্য সাফল্য ও বীরত্বময় ঘটনা। রাধানগর কমপ্লেক্সের পতনের পর মুক্তিবাহিনী গােয়াইনঘাট তথা সিলেট অগ্রাভিযান সহজতর হয়। এ যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
(রাধানগর কমপ্লেক্সের যুদ্ধের নকশাটি দেখুন ৮৫০ পাতায়)

সূত্রঃ    মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড