সিলেটে পাকিস্তানি সৈন্যের অবস্থান
মার্চে অসহযােগ আন্দোলন চলাকালে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মাত্র ১টি ডিভিশনের অবস্থান ছিল। ১৪ পদাতিক ডিভিশন নামে পরিচিত এ ডিভিশনের সদর দপ্তর ছিল ঢাকায়। এ ডিভিশনের অধীনস্থ ৪টি ব্রিগেডের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৫৭ পদাতিক ব্রিগেড ঢাকা, ৫৩ পদাতিক ব্রিগেড কুমিল্লা, ১০৭ পদাতিক ব্রিগেড যশাের এবং ২৩ পদাতিক ব্রিগেড রংপুর সেনানিবাস। সিলেটে সেনানিবাস না থাকলেও ১৯৭০ সাল থেকে খাদিমনগরে ১টি নিয়মিত ইউনিট ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট মােতায়েন ছিল। ১ মার্চ থেকে শুরু করে ২৫ মার্চের মধ্যে বিমানযােগে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৯ ও ১৬ পদাতিক ডিভিশন পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হয়। পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের নির্দেশিত অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনায় পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিরস্ত্র জনগণ, বাঙালি সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশ। সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালায়। অপারেশন সার্চলাইটের মূল পরিকল্পনায় সিলেটে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের কার্যক্রম ছিল নিমরূপ:
১. রেডিও স্টেশন, এক্সচেঞ্জ দখল।
২. সুরমার ওপর সেতুর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ।
৩. এয়ারফিল্ড দখল।
৪. আওয়ামী লীগ ও ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তার ।
৫. পুলিশ ও ইপিআরকে নিরস্ত্র করা।
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গৃহীত অপারেশন সার্চলাইটের প্রথম শিকার হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনী। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টগুলাে, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনী আক্রমণের প্রথম প্রহরে সশস্ত্র প্রতিরােধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এ আক্রমণের বিরুদ্ধে বাংলার আপামর জনগণের সর্বাত্মক প্রতিরােধের পুরােভাগে এসে দাঁড়ায় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইউনিটগুলাে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতায় পাকিস্তানি বাহিনী অধিক সৈন্য সমাবেশের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে আরও ২টি ডিভিশন গড়ে তােলে।
৩৬ ও ৩৯ ডিভিশন নামের ২টি ডিভিশন ছিল সাময়িক ও অস্থায়ী। ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দপ্তর ছিল। সমগ্র বাংলাদেশ ছিল এর অধীন ও আওতাভুক্ত। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর সংখ্যা ছিল ৫টি ডিভিশন। যুদ্ধকৌশল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালে পূর্ব পাকিস্তানকে মােটামুটি ৪টি পৃথক| সেক্টরে বিভক্ত করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। এ যুদ্ধের সেক্টরগুলাে হলাে: উত্তর-পশ্চিম সেক্টর, পশ্চিম সেক্টর, উত্তর সেক্টর মেঘনার পূর্ব পাশের এলাকা নিয়ে গঠিত এ সেক্টরের জেলাগুলাে হচ্ছে সিলেট, কুমিল্লা, নােয়াখালী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ সেক্টরে ছিল ১৪ ডিভিশন ও ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশন। ১৪ পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক ছিলেন মেজর জেনারেল কাজী আব্দুল মজিদ। আশুগঞ্জে ছিল এ ডিভিশনের সদর দপ্তর। ডিভিশন অধিনায়কের অধীন ছিল ২৭, ২০২, ৩১৩ পদাতিক ব্রিগেড।
পাকিস্তানের ১৪ ডিভিশনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার (সিলেট-আখাউড়া সেক্টর) অধীন সিলেট এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২টি পদাতিক ব্রিগেড মােতায়েন করে। ১৯৭০ সাল থেকে সিলেটের খাদিমনগরে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট মােতায়েন ছিল। এটি ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে অবস্থিত ৫৩ পদাতিক ব্রিগেডের ১টি নিয়মিত ইউনিট। ব্রিগেডিয়ার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বাধীন ২০২ পদাতিক ব্রিগেড (অ্যাডহক) সিলেটে মােতায়েন করা হয়। অন্যদিকে, ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার হােসেন রানার নেতৃত্বাধীন ৩১৩ পদাতিক ব্রিগেড মৌলভীবাজারে মােতায়েন করা হয়। ২০২ ব্রিগেডের সদর দপ্তর সিলেট শহরে অবস্থিত ছিল এবং সিলেটের উত্তর ও পূর্ব এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ছিল ব্রিগেডের দায়িত্ব। এ ব্রিগেডে ১টি মাত্র পদাতিক ইউনিট ৩১ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর ছিল সিলেটের খাদিমনগরে। ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে সিলেটের ৮টি স্থানে মােতায়েন করা হয়। এ ছাড়া এ ব্রিগেডে ৯১ মুজাহিদ ব্যাটালিয়ন, ১২ আজাদ কাশ্মীর রাইফেলের ২টি কোম্পানি, খাইবার রাইফেল, থাল ও টচি স্কাউট সদস্যদের মােতায়েন করা হয়। এছাড়া ২০২ ব্রিগেডে ৩১ ফিল্ড রেজিমেন্টের ১টি ফিল্ড ব্যাটারি ও ১টি হেভি মর্টারের ব্যাটারি এবং ১০১ উইং ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স (EPCAF) বরাদ্দ ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী সিলেটে বেশ বড়াে ১টি রাজাকার বাহিনী গড়ে তােলে। সিলেট জেলায় পাকিস্তানের প্রধান ঘাটিগুলাের অবস্থান ছিল যথাক্রমে জকিগঞ্জ, আটগ্রাম, কানাইঘাট, চরখাই, দরবস্ত, রাধানগর, গােয়াইনঘাট, সালুটিকর, শেরপুরসাদিপুর, ফেঞ্চুগঞ্জ, লামাকাজী ও খাদিমনগরে। ডিসেম্বরে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে মৌলভীবাজারে অবস্থিত ৩১৩ পদাতিক ব্রিগেড সিলেট শহরে পশ্চাদপসরণ করে।
৪ নম্বর সেক্টরের গঠন
বস্তুত মে মাসের শেষেই ৪ নম্বর সেক্টরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সেক্টর সিলেট জেলার পূর্বে এবং উত্তর-পূর্বে প্রায় ১০০ মাইল সীমান্ত এলাকাজুড়ে ছিল। বলা যায়, উত্তরে হবিগঞ্জ মহকুমা থেকে দক্ষিণে কানাইঘাট পুলিশ স্টেশন পর্যন্ত এ সেক্টরের বিস্তৃতি ছিল। সেক্টরটি পাহাড়ি এলাকায় ঘেরা পাথরিয়া পাহাড়, সাতগাঁও পাহাড় ইত্যাদি পাহাড়ের অবস্থান ছিল এ এলাকায়। প্রায় ১০০টি চাবাগান এ এলাকার অপর বৈশিষ্ট্য। সুতরাং সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে একদিকে যেমন গেরিলাযুদ্ধের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত, অপরদিকে তেমনি দুর্গম পথের জন্য হালকা অস্ত্র ও সরঞ্জাম নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের অগ্রসর হওয়া নিরাপদ ছিল।
সেক্টর গঠনের শুরু থেকেই সেক্টর অধিনায়ক হিসেবে মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে অফিসার বলতে ছিলেন সেক্টর অধিনায়ক মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত ও ক্যাপ্টেন এ রব জুন মাসের শেষের দিকে ক্যাপ্টেন শরিফুল হক, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কাদের ও ক্যাপ্টেন এনাম এ সেক্টরে যােগদান করেন। কুমিল্লা ও সিলেট জেলার। অধিকাংশ ইপিআর সদস্যই এ সেক্টরে যুদ্ধ করেন। সেক্টর অধিনায়ক মেজর দত্ত তাঁর সেক্টর এলাকাকে নিম্নলিখিত কয়েকটি সাব-সেক্টরে বিভক্ত করেন: ১. জালালপুর সাব-সেক্টর: অধিনায়ক ছিলেন গণবাহিনীর মাহবুবুর রব সাদি। বয়সে তরুণ মাসুদুর রব আটগ্রাম, জকিগঞ্জ, লুবাছড়া ও কানাইঘাট পর্যন্ত অপারেশন পরিচালনা করেন। নভেম্বর মাসে সিলেট জেলার অভ্যন্তরে তিনি দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েছেন। বড়পুঞ্জী সাব-সেক্টর: অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন এ রব। এ সাবসেক্টর বাহিনী লাতু, বিয়ানীবাজার, শারােপার, বড়গ্রাম, জকিগঞ্জ, আটগ্রাম, চিকনাগুল ইত্যাদি এলাকায় ব্যাপকভাবে অপারেশন চালিয়ে পাকিস্তানিদের চরম শিক্ষা দিয়েছেন। তরুণ অফিসার লেফটেন্যান্ট নিরঞ্জন ভট্টাচার্যও এ সাব-সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছেন। আমলসিদ সাব-সেক্টর কমান্ড করেছেন লেফটেন্যান্ট জহির।
তিনি কানাইঘাটের যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়েছেন ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সাব-সেক্টর ট্রুপস লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমানের গঠিত ‘জেড ফোর্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে কুকিতল সাব-সেক্টর: অধিনায়ক ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নূরুল কাদের। এ সাব-সেক্টর বাহিনী দিলখুশী চা-বাগান, কুলাউড়া ও জুরী চা-বাগান এলাকায় পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালিয়েছে। পরবর্তী সময় পাকিস্তান থেকে ক্যাপ্টেন শরিফুল হক পালিয়ে এসে তিনি এ সাব-সেক্টরের দায়িত্ব নেন। কৈলাশহর সাব-সেক্টর: অধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট ওয়াকিউজ্জামান। তিনি যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত ন’মৌজার দীর্ঘ এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। ৩ ডিসেম্বর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে লেফটেন্যান্ট জামান তাঁর টুপস নিয়ে মিত্রবাহিনীর ৫৯ ব্রিগেডের সঙ্গে সিলেটে প্রবেশ করেন। ৬. কমলপুর সাব-সেক্টর কমান্ড করেন ক্যাপ্টেন খায়রুল আনাম। তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন। ধলই চা-বাগান, রাজঘাট চা-বাগান এবং অন্যান্য পার্শ্ববর্তী চাবাগানগুলােয় পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানিদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন।
৩ ডিসেম্বরের পর এ সাবসেক্টর ট্রপস মিত্রবাহিনীর ৮১ ব্রিগেডের সঙ্গে মৌলভীবাজারে প্রবেশ করে। কয়েক মাসের যুদ্ধে ক্যাপ্টেন আনামের গতিশীল নেতৃত্বে ট্রপস অত্যন্ত সাফল্যের পরিচয় দেয়। সেক্টরে গেরিলার সংখ্যা ছিল প্রায় ৯,০০০ এবং নিয়মিত বাহিনী ছিল প্রায় ৪,০০০। সেক্টর সদর দপ্তর ছিল প্রথমে করিমগঞ্জ এবং পরে মাসিমপুরে। অক্টোবর মাসে ‘জেড ফোর্সের ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (অধিনায়ক মেজর জিয়াউদ্দিন), ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (অধিনায়ক মেজর একেএম আমিনুল হক) ও ক্যাপ্টেন এ এম রাশেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ২ ফিল্ড আর্টিলারির ১টি ব্যাটারি এ সেক্টরে আসে এবং এর ফলে সেক্টরের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। অক্টোবর মাস থেকেই সেক্টরের প্রতিটি সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। দেওয়ান ফরিদ গাজী ছিলেন মুজিবনগর প্রশাসনের নর্থ ইস্ট জোনের চেয়ারম্যান। তিনি ৪ নম্বর সেক্টরের অধিনায়কের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং বৃহত্তর সিলেট ও কিশােরগঞ্জের মুক্তাঞ্চলের প্রশাসকেরও দায়িত্ব পালন করেন।
৫ নম্বর সেক্টরের গঠন
বর্তমান সিলেট জেলার জৈন্তা, গােয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর থানার অংশ, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, জগন্নাথপুর, ধীরাই, বিশ্বম্ভপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মশালা ও সুনামগঞ্জ সদর থানা নিয়ে গঠিত হয়েছিল ৫ নম্বর সেক্টর। জুন মাসে মুজিবনগর সরকার ভৌগােলিক ও অপারেশনাল কার্যক্রমের সুবিধার্থে এবং মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক সাফল্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে পুরাে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে। ৫ নম্বর সেক্টরটি এর অন্যতম। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খাসিয়া ও জৈন্তা পাহাড়ের সমতলভূমি নিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকের সিলেট-তামাবিল সড়ক এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে বর্তমানের কিশােরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার সীমানা পর্যন্ত এ সেক্টরের অপারেশনাল এলাকা বিস্তৃত ছিল। এ পুরাে এলাকাটিই হচ্ছে হাওর-বাঁওড় বিলে ভর্তি। বর্ষার ৬ মাস নৌপথ ছাড়া এ সেক্টর এলাকার শতকরা ৯০টি গ্রামেই যাতায়াতের কোনাে ব্যবস্থা ছিল না। অন্যদিকে, ভারত সীমান্ত জুড়ে অবস্থিত অগণিত পাহাড় ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এবং অপারেশনাল সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য অতি উত্তম জায়গা। অগণিত হাওরবাঁওড় বিলগুলাের অবস্থানের কারণে এ সেক্টরটি ছিল গেরিলা পদ্ধতির অপারেশন চালনার জন্য খুবই উপযুক্ত। সেক্টর অধিনায়ক ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। সমগ্র এলাকায় সুষ্ঠুভাবে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সেক্টর এলাকাকে নিম্নলিখিত ৬টি সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। ১. তামাবিল-মুক্তারপুর সাব-সেক্টর: সাব-সেক্টর অধিনায়ক ছিলেন সুবেদার নজির হােসেন, জ্যেষ্ঠ মুক্তিযােদ্ধা ছিলেন নাজিম কায়েস চৌধুরী এবং ফারুক। ২. ডাউকি সাব-সেক্টর: সাব-সেক্টর অধিনায়ক ছিলেন সুবেদার মেজর বি আর চৌধুরী।
শেলা সাব-সেক্টর: অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন হেলাল উদ্দিন এবং অন্যান্য অফিসাররা ছিলেন লেফটেন্যান্ট মাহবুবুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট আব্দুর রউফ। ভােলাগঞ্জ সাব-সেক্টর: সাব-সেক্টর অধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট তাহের উদ্দিন আখঞ্জী। অন্যান্য অফিসার ছিলেন লেফটেন্যান্ট আলমগীর এবং লেফটেন্যান্ট এস এম খালেদ। ৫. বালাট সাব-সেক্টর: সাব-সেক্টর অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন এম এ মুত্তালিব। অন্য জ্যেষ্ঠ মুক্তিযােদ্ধা ছিলেন প্রকৌশলী এম কে বালা। ৬. টেকেরঘাট বড়ছড়া সাব-সেক্টর: সাব-সেক্টর অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন মুসলিম উদ্দিন। জ্যেষ্ঠ মুক্তিযােদ্ধা ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সাব-সেক্টরে অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন চা-বাগানের ম্যানেজার মােস্তফা ৫ নম্বর সেক্টরটি পুনর্গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নিয়মিত বা সুসংগঠিত কোনাে বাহিনী এ সেক্টরে গড়ে ওঠেনি। খাসিয়া ও জৈন্তা পাহাড় সংলগ্ন এ এলাকা ছিল অত্যন্ত দুর্গম। রাস্তাঘাটের অভাব, যানবাহনাদির স্বল্পতা, সর্বোপরি প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য কোনাে বাহিনী গড়ে তােলা ছিল অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। ৫ নম্বর সেক্টরেও (বিশেষ করে নদীপথে) মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সেক্টর অধিনায়ক মেজর মীর শওকত আলীর ব্যাপক তৎপরতার ফলে ছাতক, রাধানগর ও টেংরাটিলা ব্যতীত সুরমা নদীর তীর পর্যন্ত প্রায় ২০০ বর্গমাইল এলাকা মুক্ত হয়। অক্টোবর মাসে ‘জেড’ ফোর্সের ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট মেজর শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে এ সেক্টরে আসে এবং এর ফলে সেক্টরের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। অক্টোবর মাস থেকেই সেক্টরের প্রতিটি সাব| সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – দ্বিতীয় খন্ড