You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেই রাজাকার

দেশের আদালত কর্তৃক প্রদত্ত প্রথম মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত রাজাকার চিকন আলী। চিকন আলী এখন তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করে। রাজাকার চাচা বলে ডাকলে তার খারাপ লাগে। কুষ্টিয়ার মিরপুরের খুনি চিকন আলী রাজাকার এখন রিক্সা চালায় আর একাত্তরের যুদ্ধের কথা শুনে মাথা নিচু করে থাকে।

হত্যার অভিযোগে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল আদেশের ১১ ক ধারায় চিকন আলিকে দোষী সব্যাস্ত করে কুষ্টিয়ার দায়রা জজ শ্রী আর কে বিশ্বাস ঐ বছরের জুন মাসে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এই রায়ের মাধ্যমে প্রথম একজন রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। পরবর্তিতে হাইকোর্ট আপীল করে চিকন আলী ৮ বছর ৪ মাস জেল খেটে মুক্তিলাভ করে। ১৯৭২ সালে পত্রিকায় চিকন আলির খবর প্রচারিত হলে দেশবাসী তার সম্পর্কে জানতে পারে। তার বিরুদ্ধে হত্যা ছাড়া আরও অভিযোগ ছিল। দখলদার বাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি লুটতরাজ, বাড়িঘর জ্বালানো এবং নারী নির্যাতনে অংশ নেয়ার।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা সদরেই চিকন আলির বাড়ী। এখন সে মাঝে মধ্যে কুষ্টিয়া শহরে রিক্সা চালায়। কথা হয় চিকন আলির সঙ্গে। সে অকপটে তার অতীত দিনের কথা বলে। বাবার নাম মোকিম পরামানিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ২৩ বছর। কোন লেখাপড়া জানেনা। আগে কৃষিকাজ করত। স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের কথায় সে রাজাকারে নাম লেখায়। তারপর ৭ দিনের ট্রেনিং শেষে এলাকায় এক মূর্তিমান আতংক হিসেবে চিকন আলির আবির্ভাব ঘটে। রাইফেল কাঁধে ঝুলিয়ে সে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর চিকন আলি মিরপুরের বিরাজুদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ বাড়িতে আব্দুল গফুর তার মেয়ে দুলালীকে পাকসেনা আর রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষার জন্য লুকিয়ে রেখেছিল। অসৎ উদ্যেশ্য চরিতার্থ করার জন্য চিকন আলি দুলালীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাড়ীর মালিক রিয়াজুদ্দিন বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চিকন তাকে গুলি করে হত্যা করে। চিকন আলির ভাষ্য হচ্ছে ঘটনার পর সে ভারতে পালিয়ে যায়। স্বাধীনতার পর সে বাড়ী ফিরলে মুক্তিযোদ্ধা আজিজ, জ্বলিল, কিরণ তাকে বাড়ী থেকে ধরে পুলিশে সোর্পদ করে। আর তার সঙ্গী রাজাকার জ্যাক, সফর, কাশেম, আবুল, খোকা – এদের মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে।

চিকন আলি তার কৃতকর্ম সম্পর্কে বলে, সারা দেশের লোক এক ছিল। এক হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে। এখন তার মনে হয়, সে ভুল করেছে। রিয়াজকে হত্যা করাও তার ভুল হয়েছে। চিকন মনে করে, শুধু নামের জন্যই তার ফাঁসি হয়নি। কেননা সে সময় আদালত নাকি এমন মন্তব্য করেছিলেন, চিকন আলির ফাঁসি হলে মোটা আলীর কী হবে? চিকন আরও বলল, আমি মূর্খ মানুষ, ভুল করেছি। চিকন আলী বলে রক্ষা পেয়েছি। কিন্তু মোটা আলীদের তো কিছুই হয়নি।
– জনকণ্ঠ, ১১-১২-২০০০ সাল।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!