You dont have javascript enabled! Please enable it!

///বঙ্গবন্ধু দুই সেকেন্ড থেমে বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি ওকে ডিফিট দিয়া দিব।’///
::::::::::::::::::
এ দেশের গরিব মানুষেরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তাদের শ্রেণিভুক্ত মনে করতেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মূল্যায়নটি প্রাসঙ্গিক : শেখ মুজিব মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকেই এসেছিলেন। উচ্চমধ্যবিত্ত নয়, নিম্নমধ্যবিত্ত। প্রথম যখন ঢাকায় আসেন শহরে তার থাকার কোনাে স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। কিন্তু ওই শ্রেণিতে তিনি আটকে থাকেননি, বের হয়ে গেছেন, বের হয়ে গিয়ে পরিণত হয়েছেন জনগণের নেতাতে, তার জোরটা ছিল ওখানেই। কেবল মধ্যবিত্তের হলে ব্যক্তিগতভাবে উঠতেন নিশ্চয়ই, কিন্তু মহাকাব্যের নায়ক হতে পারতেন না।২৬ নির্বাচনে প্রার্থী মনােনয়ন করা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান চিন্তা ছিল, দলকে জেতাতে হবে। ওই সময় যারা আওয়ামী লীগের জেলা ও তৃণমূলের নেতা ছিলেন, তাঁরা অনেকেই পারিবারিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না। যারা মুসলিম লীগের রাজনীতি করেছেন, তাঁরা ছিলেন তুলনামূলকভাবে সম্পদশালী। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশল সম্পর্কে একটি বিবরণ পাওয়া যায় চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৫৪ ও ১৯৬২ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্য বেগম তােহফাতুন্নেসা আজিমের ছেলে আরিফ মইনুদ্দীনের কাছ থেকে। চট্টগ্রামে মনােনয়ন দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন : বঙ্গবন্ধু আমার আম্মাকে বলেছিলেন, আপনার মেয়ের জামাই তানভির আহমদ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগে নিয়া আসেন। আমি তাকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নমিনেশন দিব। আমি আর আম্মা গেলাম তানভির সিদ্দিকীর বাসায়। উনার নিক নেম নেপােলিয়ন। আম্মা বললেন, “নেপু, আমাকে তাে মুজিবুর বলল, তােমাকে নমিনেশন দিবে। তুমি চলে আসাে।’ তানভির সিদ্দিকী এনএসএফের ফাউন্ডার ট্রেজারার ছিলেন। বললেন, “দেখেন আম্মা, আমি তাে আওয়ামী লীগে জয়েন করতে পারি না। আমি ইন্ডিপেনডেন্ট ইলেকশন করব।’ আম্মা বললেন, তুমি ইন্ডিপেনডেন্ট করলে পারবা না। ছয় দফা অনেক ভােট পাবে এবং ছয় দফা পাওয়ারে আসবে।’ উনি আম্মার কথা শুনলেন না। সাত-আট দিন পর আমি আর আম্মা গেলাম চট্টগ্রামে, এয়ারপাের্টে বঙ্গবন্ধুকে সি-অফ করতে। উনি চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু আম্মাকে দেখে দাড়ায়া গেলেন। বললেন, “আপা, কী হলাে, আপনার জামাই?” আম্মা বললেন, ‘মুজিবুর, ও তাে নাকি ইন্ডিপেনডেন্ট ইলেকশন করবে।’ বঙ্গবন্ধু দুই সেকেন্ড থেমে বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি ওকে ডিফিট দিয়া দিব।’ উনি ঠিকই শামসুল হক সাহেবকে দিয়ে তানভির সিদ্দিকীকে ডিফিট দিলেন। চট্টগ্রামে দেখলাম, এম এ আজিজ ফটিকছড়িতে মীর্জা আবু মনসুরকে প্রাদেশিক পরিষদে নমিনেশন দিলেন। মির্জা আবু মনসুরের বাবা মির্জা আবু আহমেদ ইস্ট পাকিস্তান অ্যাসেম্বলিতে সিক্সটি টু ও সিক্সটি ফাইভে মুসলিম লীগের এমপি ছিলেন। আতাউর রহমান কায়সার সাহেবকে এম এ আজিজ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে দিলেন। তার আব্বা ক্যাপ্টেন ইয়ার আলী খান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে মুসলিম লীগের মেম্বার ছিলেন। চট্টগ্রামে নমিনেশনে আমি যা দেখলাম, পুরা এম এ আজিজ সাহেবের চয়েস। বঙ্গবন্ধুর নমিনেশনের ফারসাইটেডনেস—মুসলিম লীগকে ভাঙতে হবে, আওয়ামী লীগকেও জিতাইতে হবে। চট্টগ্রামে মহিলা নমিনেশন হবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে। আম্মা বললেন, ‘আজিজ দেখিস, ন্যাশনালে যেন আমার সিটটা থাকে।’ তুই করে বলতেন আম্মা। উনি বললেন, “চাচি, আপনি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আর সাজ্জনি (সাজেদা চৌধুরী) প্রভিন্সিয়াল অ্যাসেম্বলিতে যাবে।’ এম এ আজিজ সাহেব মারা যাওয়ায় এটি আর হয়নি।
:::::::::::::::
সূত্রঃ   আওয়ামী লীগ-উত্থান পর্ব-১৯৪৮-১৯৭০ – মহিউদ্দিন আহমদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!