খাজা নাজিমউদ্দীন আলােচনা সভায় স্বীকার করেন যে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কোনাে স্বদেশবিরােধী চক্রান্ত নয়। আন্দোলনকারীদের দাবি যথার্থ । তিনি উক্ত চুক্তিনামায় নিজ হাতে লেখেন যে, he was satisfied that the movement was not inspired by enemies of the state.’ ইতােমধ্যে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন বসে। উক্ত অধিবেশনে ভাষার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। ফলে ছাত্ররা নতুন করে আন্দোলন শুরু করে। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য নাজিমউদ্দীন কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা জানার জন্য ছাত্ররা ১৭ মার্চ (১৯৪৮) প্রাদেশিক পরিষদের সভাকক্ষের দিকে মিছিল সহকারে অগ্রসর হলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও বন্দুকের ফাঁকা গুলি করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ছাত্রদের এই আন্দোলনে নাজিমউদ্দীন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি গভর্নর জেনারেল মােহাম্মদ আলী জিন্নাহকে যথাশীঘ্র সম্ভব পূর্ববাংলা সফরে আসার আহ্বান জানান। সে অনুসারে গভর্নর জেনারেল প্রথম এবং শেষবারের মতাে ১৯ মার্চ পূর্ববাংলা সফরে আসেন। কিন্তু ভাষার প্রশ্নে তিনি স্বৈরাচারী মনােভাব দেখান। ২১ মার্চ (১৯৪৮) ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে আয়ােজিত এক বিশাল জনসভায় তিনি দৃঢ়স্বরে ঘােষণা করেন যে, তিনি কোনাে শত্রুকে, এমনকি সে যদি মুসলমানও হয়, সহ্য করবেন না। তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট করে ঘােষণা করেন যে, পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হবে উর্দু-অন্য কোনাে ভাষা নয়। জিন্নাহর এই ঘােষণায় সভার কোনাে-কোনাে অংশ থেকে মৃদু ‘ননা, নাে’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়। উক্ত সভার তিন দিন পর (২৪ মার্চ, ১৯৪৮) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়ােজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন যে পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন আসলে পাকিস্তানের শত্রুদের কারসাজি । তিনি আন্দোলনকারীদের ‘পঞ্চমবাহিনী’রূপে অভিহিত করেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, বাঙালিরা তাদের প্রদেশের সরকারি ভাষারূপে যে-কোনাে ভাষা নির্বাচিত করতে পারে, কিন্তু পাকিস্তানের সরকারি ভাষা অবশ্যই হবে উর্দু। জিন্নাহর এ উক্তির তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে উপস্থিত গ্রাজুয়েটবৃন্দ ‘না না’ ধ্বনি উচ্চারণ করে।
জিন্নাহর এই অবিবেচক, স্বৈরাচারী মনােভাব পূর্ববাংলায় বুদ্ধিজীবী মহলে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি করে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি পূর্ববাংলার মানুষের মনে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের ভাব সৃষ্টি হয় । ভাষার আন্দোলন ক্রমাম্বয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে। ২৪ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধিদল মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সাক্ষাৎকারের সময় প্রতিনিধিদল জিন্নাহকে একটি স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারকলিপি থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে উপস্থাপিত যুক্তিগুলি জানা যায়। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘােষণার স্বার্থ ইতিহাসের বিচারে এ-কথা স্বীকার করতে হবে যে পাকিস্তানের মতাে বহু ভাষাভাষী রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করতে হলে যে কোনাে একটি ভাষাকে Common Language হিসেবে গ্রহণ করার প্রয়ােজনীয়তা ছিল । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে, তৎকালীন পাক-শাসকগােষ্ঠী কেন উর্দুকে Common Language হিসেবে পাকজনগণের উপর চাপিয়ে দেয় এবং এর পিছনে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কী কারণ নিহিত ছিল? ভারতবর্ষে উর্দুর জন্ম মুঘল শাসনামলে মূলত সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাধারণ ভাষা হিসেবে হিন্দি, ফারসি ও আরবি ভাষার সংমিশ্রণে উদুর আবির্ভাব। উর্দু ভাষায় শব্দ বিন্যাসের ব্যাকরণগত পদ্ধতি নেয়া হয়েছে হিন্দি থেকে, আর শব্দ নেয়া হয়েছে আরবি ও ফারসি ভাষা থেকে। উর্দু লেখা হত ফারসি বর্ণমালায়। যেহেতু মুসলমান শাসকগােষ্ঠীর উদ্যোগে এই ভাষার জন্ম, তাই কালক্রমে উর্দু শাসকশ্রেণীর এবং মুসলমান অভিজাতশ্রেণীর ভাষায় পরিণত হয়। ব্রিটিশ আমলে সরকারিভাষা হিসেবে ফারসি পরিত্যক্ত হলে উর্দুর প্রচলন বেড়ে যায় । উচচস্তরের মুসলমানগণ উর্দুকে ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক, বাহক ও মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। অর্থাৎ ভারতে কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা হিন্দিকে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তুতি নিলে মুসলিম লীগের মুসলমান নেতৃবৃন্দ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন পত্রিকায় আলােচনার অবতারণা করেছিলেন। এমনকি অনেক বাঙালি মুসলিম লীগ রাজনীতিবিদ উর্দু পছন্দ করতেন। তাই দেখা যায় যে, পাকিস্তান সৃষ্টির পরও বাঙালি মুসলমান রাজনীতিবিদগণ উর্দুকে বয়কটের কথা কখনাে বলেননি। তারা বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের দাবি করেন।
পাকিস্তানের মাত্র ৩.২৭% জনগণের মাতৃভাষা উর্দু হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের অন্য ভাষাভাষীরা উর্দুকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেখানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উর্দুর প্রচলন করা হয়। তাছাড়া পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তানের শাসনভার যে রাজনীতিবিদ ও আমলাদের হাতে যায় তারা অধিকাংশই ছিলেন উত্তর ভারত থেকে আগত উর্দু ভাষাভাষী লােক। নতুন রাষ্ট্রের ব্যবসা, ব্যাংকিং, কয়েকটি পরিবারের হাতে সীমাবদ্ধ হয়। তারাও ছিলেন উর্দু ভাষাভাষী। তাদের মাতৃভাষা ছিল উর্দু। স্বভাবতই তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতার প্রাধান্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ভাষার উপর প্রাধান্য বজায় রাখতে তাদের দৃঢ় সংকল্প ছিল। কারণ উর্দু প্রশাসনিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ভাষা হলে উর্দু ভাষাভাষীদের জন্য তা যতটা সহজ হবে, অন্য ভাষাভাষীদের জন্য তত সহজ হবে না। প্রশাসনিক, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, যােগাযােগ প্রভৃতি সকল বিভাগের সদর দফতর পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তীরা এমনিতেই অনেক সুযােগসুবিধা ভােগ করছিল, তার উপর উর্দুকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করায় সেখানকার অউর্দুভাষীদের জন্য উর্দু কোনাে সমস্যা ছিল না।
ফলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘােষণা করা হলে পশ্চিম পাকিস্তানীরা এটা মেনে নেয়, সেখানকার অউর্দুভাষীরা এর কোনাে প্রতিবাদই করেনি। প্রতিবাদ উচ্চারিত হল কেবল পূর্ববাংলায়। অপরপক্ষে পাকিস্তান শাসকগােষ্ঠী তথা পূর্ববাংলার মুসলিম লীগ সদস্যগণ কর্তৃক বাংলার দাবি অগ্রাহ্য করার পিছনে আশঙ্কা ছিল যে বাংলা তাদের মতে হিন্দুদের ভাষা এবং বাংলাকে স্বীকৃতি দিলে পূর্ববাংলার বাঙালিগণ পশ্চিমবাংলার বাঙালিদের সঙ্গে যােগসাজশ করে ভবিষ্যতে বৃহৎ বাংলার দাবি করতে পারে। সেজন্য পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলাভাষা আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরােধী ও ইসলামবিরােধী চক্রান্ত বলে। অভিহিত করে। বাংলাভাষাকে ইসলামীকরণ করার উদ্দেশ্যে তারা বাংলাকে আরবি কিংবা রােমান অক্ষরে পরিবর্তিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুঃখজনক যে এই গর্হিত কাজের উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন (১৯৪৯) কেন্দ্রীয় সরকারের বাঙালি শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান। তার উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা পুনর্গঠন কমিটি গঠন করে। পূর্ব পাকিস্তানে এর কড়া প্রতিবাদ হয়। ফলে এই কমিটির রিপাের্ট ১৯৬০ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রয়ােজনীয়তা পূর্ববাংলা বাংলাভাষা আন্দোলনকারীদের বাংলাভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবির পিছনে যুক্তি ছিল যথেষ্ট । বাংলা ছিল পাকিস্তানের ৫৬% লােকেরা মাতৃভাষা। মাতৃভাষা বাদ দিয়ে অন্য আরেকটি ভাষা শিক্ষা করা ও সেই ভাষায় চাকুরির প্রতিযােগিতায় ভালাে করার সম্ভাবনা ছিল কম।
পাকিস্তানের প্রশাসনে, সেনাবাহিনীতে ও অর্থনৈতিক সেক্টরে বাঙালিদের অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য। তারপর যদি উর্দুকে সরকারি ভাষা করা হয় তাহলে ভাষা সমস্যার কারণে বাঙালিদের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হত। ফলে সকল ক্ষেত্রে উর্দুভাষীরা অগ্রাধিকার পেয়ে আস্তে আস্তে বাঙালিদের গ্রাস করে নিজেদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতাে। যার অর্থ হচ্ছে বাঙালি সত্তার সমাধি । সুতরাং বাঙালি শিক্ষিত সম্প্রদায় উর্দুকে একমাত্র সরকারি ভাষা করার সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করতে বাধ্য হন। তাদের এ প্রতিবাদ ক্রমাম্বয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ও অর্থনৈতিক শােষণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনের স্বরূপ লাভ করে ভাষা-আন্দোলন : জিন্নাহর প্রত্যাবর্তনের পর জিন্নাহর পূর্ববাংলা সফর ভাষা-আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেয় জিন্নাহ অনেককে বুঝাতে সক্ষম হন যে, ভাষা আন্দোলন ছিল কমিউনিস্টদের কারসাজি। দেশের সংহতি বিনষ্ট করাই উক্ত আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য। তাঁর জনপ্রিয়তা এবং তার প্রতি সাধারণ। মানুষের অগাধ শ্রদ্ধাবোেধ অনেক আন্দোলনকারীকে আন্দোলন থেকে সরিয়ে ফেলে। এমনকি তমুদ্দন মজলিশও আন্দোলনের কর্মসূচী প্রত্যাহার করে। তবে ভাষাকে ঘিরে ছাত্রদের মনে ক্ষোভ অব্যাহত থাকে। ছাত্ররা ১৯৪৮-এর পর থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত প্রতি বছর ১১ মার্চ পালন করতেন। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান বাঙালি হয়েও বাংলা বর্ণমালাকে আরবিকরণের পরিকল্পনা করেন। এই উদ্দেশ্যে ৯ মার্চ (১৯৪৯) মাওলানা আকরাম খাঁ-এর নেতৃত্বে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ববাংলা ভাষা কমিটি গঠিত হয়। এর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। তারা এর তীব্র নিন্দা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবাদলিপি পেশ করে । ৩১ ডিসেম্বর (১৯৪৮) ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ উক্ত প্রয়াসের সমালােচনা করেন। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে এবং পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলা বর্ণমালার আরবিকরণ প্রয়াস নিয়ে বিতর্ক হয়। তবে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা কমিটি ৭ ডিসেম্বর (১৯৫০) পেশকৃত রিপাের্টে বাংলা বর্ণমালা আরবিতে লেখার বিরােধিতা করলে সরকারের উক্ত প্রয়াস বাধাগ্রস্ত হয়।
১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বরে ভাষার প্রশ্নে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়। পাকিস্তান গণপরিষদের সাংবিধানিক মূলনীতি কমিটি ১৯৫০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে একটি অন্তর্বতী রিপাের্ট গণপরিষদে পেশ করে। উক্ত রিপাের্টে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব হয়। মূলনীতি কমিটির রিপাের্টের প্রতিবাদ ঢাকায় একটি সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। উক্ত সংগ্রাম কমিটি ৪ ও ৫ নভেম্বর (১৯৫০) ঢাকায় জাতীয় মহাসম্মেলন করেন এবং পাকিস্তানের সাংবিধানিক মূলনীতি সম্পর্কে যে সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাতে রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত প্রস্তাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু ও বাংলা হবে বলে দাবি করা হয়। সংগ্রাম কমিটি ১২ নভেম্বর পূর্ববাংলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অবশেষে পাক প্রধানমন্ত্রী উক্ত রিপাের্ট প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে ভাষার প্রশ্নটি আপাতত চাপা পড়ে। তবে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন যেন একেবারে নিঃশেষ হয়ে না যায় সে উদ্দেশ্যে ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ‘উৎসাহী ও সংগ্রামী ছাত্র ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। আবদুল মতিন এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।
সূত্রঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস – মুনতাসীর মামুন, মো. মাহবুবুর রহমান