You dont have javascript enabled! Please enable it!

বঙ্গবন্ধুর সম্বর্ধনা নিয়ে ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়ন বিবাদ

৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক ঘােষণায় আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ব্রিগেডিয়ার রাও ফরমান আলী সেনানিবাসের বন্দিশালা থেকে শেখ মুজিবকে নিজে গাড়ি চালিয়ে ধানমন্ডির বাসায় পৌছে দেন। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কাছে প্রস্তাব আসে শেখ মুজিবকে গণসংবর্ধনা দেওয়ার। ঠিক হয়, রেসকোর্সে জনসভার আয়ােজন করা হবে। কিন্তু সন্ধ্যার মধ্যে সব রাজবন্দী মুক্তি পেলে ছাত্র ইউনিয়ন দাবি করে যে পরদিন রেসকোর্সে সবাইকে একযােগে সংবর্ধনা দেওয়া হােক। ছাত্রলীগ এতে রাজি হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, যেহেতু শেখ মুজিবকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যে ঘােষণা দেওয়া হয়ে গেছে, তাই এটি শুধু শেখ মুজিবেরই সংবর্ধনা হবে। ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগের এই ‘সংকীর্ণতা’ সহ্য করতে রাজি ছিল না। ফলে এক জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির তরফ থেকে বলা হয়, যেন ছাত্রলীগের প্রস্তাব মেনে নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐক্য রক্ষা করা হয় এবং সংবর্ধনা সভায় শেখ মুজিবকে দিয়ে সুস্পষ্টভাবে এগারাে দফা সমর্থন করিয়ে নেওয়া হয়। ফলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐক্য রক্ষা পায়।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া গ্রুপ) সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দোহা এ নিয়ে এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে তিনি ওই সভায় যেতে অস্বীকার করেন। সামসুদ্দোহার বর্ণনামতে, ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইকবাল হলের প্রভােস্ট অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরীর অফিসকক্ষে সংগ্রাম পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয় শেখ মুজিব একাই ভাষণ দেবেন এবং মণি সিংহ, মওলানা ভাসানী, মােজাফফর আহমদ প্রমুখ নেতা মঞ্চে থাকবেন। কিন্তু ছাত্রলীগ শেখ মুজিব ছাড়া অন্য কোনাে নেতার মঞ্চে উপস্থিত থাকার বিরােধিতা করে। ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া) সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক এ বিষয়ে কোনাে ছাড় না দিতে সামসুদ্দোহাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেন। এ সময় কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মােহাম্মদ ফরহাদ একটি চিরকুট পাঠান। যেখানে বার্তা ছিল, মঞ্চে অন্য কারও থাকার দরকার নেই। এই চিরকুট পেয়ে সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক ছাত্রলীগের প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। এতে সামসুদ্দোহা ক্ষুব্ধ হন। তার ভাষ্য হলাে : মানিক ভাই ছিলেন সংগঠনের সভাপতি, তাই স্বাভাবিকভাবেই তার মতামতই চূড়ান্ত হবে। কিন্তু তিনিই তাে আমাকে শক্ত থাকতে বলেন। যা হােক, আমি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সভা আহ্বান করি এবং সেখানে মানিক ভাইয়ের প্রস্তাব অনুমােদন করি। সারা রাত এবং পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত না ঘুমিয়ে আর কিছুতেই থাকা যাচ্ছিল না, তদুপরি মানিক ভাইয়ের ওপর ক্ষোভ ও অভিমান খুবই হয় বিধায় ইকবাল হলে আমার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।২৩ ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্সে শেখ মুজিবকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রচুর জনসমাগম হয়েছিল। ঢাকায় এর আগে সম্ভবত এত বড় জনসভা আর হয়নি। জনসভা আয়ােজনের দায়িত্বে ছিলেন গাজী গােলাম মােস্তফা ও সিরাজুল আলম খান।

সূত্রঃ   আওয়ামী লীগ-উত্থান পর্ব-১৯৪৮-১৯৭০ – মহিউদ্দিন আহমদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!