You dont have javascript enabled! Please enable it!

হাসানুল হক ইনু
তানদুয়া বি এল এফ (মুজিব বাহিনী) গেরিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রধান, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু)
প্রশ্ন : মােট কতজনকে তানদুয়া কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়?
হাসানুল হক ইনু ১০ হাজার।
প্রশ্ন : তানদুয়ায় প্রশিক্ষণ দিতেন কারা এবং তাদের সংখ্যা কত মটিভেশনের বিষয়বস্তু কি ছিল? 
হাসানুল হক ইনু প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ দেন ভারতীয় সামরিক অফিসাররা। এই প্রথম ব্যাচ থেকে প্রশিক্ষক হিসেবে আটজনকে বেছে নেয়া হয় । এরা হলেন শরীফ নুরুল আম্বিয়া, আ. ফ. ম. মাহবুবুল হক, রফিকুজ্জামান, মাসুদ আহমদ রুমী, সৈয়দ আহমদ ফারুক, তৌফিক আহমদ, মােহনলাল সােম এবং আমি । আমাকে করা হয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রধান। পরে এ সংখ্যা বাহান্নতে উন্নীত করা হয়। আমার সরাসরি ওপরঅলা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল । মেজর মালহােত্রাও ছিলেন কেন্দ্রের একজন ভারতীয় অফিসার । প্রশিক্ষণ কেন্দ্র একজন ভারতীয় ব্রিগেডিয়ারের পরিচালনাধীন ছিল। মটিভেশনের বিষয়বস্তু ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র । আওয়ামী লীগের ঘােষণাপত্র সমাজতন্ত্রের পক্ষে বক্তব্য রাখতে প্রশিক্ষকদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থার সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগের ঘােষণাপত্রে সমাজতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল । 
প্রশ্ন : মটিভেশন প্রশ্নে প্রশিক্ষকদের ভেতর কোন মতবিরােধ ছিল কী?
হাসানুল হক ইনু মতবিরােধ ছিল সমাজতন্ত্রের প্রশ্নে  সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণির অনুসারীরা। অন্যদিকে আমরা ছিলাম সিরাজুল আলম খান ও আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের পক্ষে আমরা যারা সমাজতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম, তারাই ছিল শতকরা আশি ভাগ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সমাজতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন না। এই প্রশ্নে তারা প্রায়শই বিরােধিতা করতেন এক পর্যায়ে কেন্দ্রের সার্বক্ষণিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্নেল প্রশিক্ষকদের রাজনৈতিক বক্তৃতা বন্ধের আদেশ দেন। এ আদেশ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে । আমরা প্রশিক্ষকরা, ভারতীয় কর্নেলকে জানিয়ে দেই যে, দিল্লী থেকে নির্দেশ আসা না পর্যন্ত।
আমরা সামরিক প্রশিক্ষণদানের পাশাপাশি রাজনৈতিক বক্তৃতাও চালিয়ে যাব। কিন্তু কর্নেল বক্ততা বন্ধের চাপ দিয়ে যেতে থাকেন। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কেন্দ্র প্রধান হিসেবে আমি জানিয়ে দেই যে দিল্লী থেকে রাজনৈতিক বক্তৃতা দেবার অনুমতি দেয়া হলে ট্রেনিং প্রদান বন্ধ থাকবে এবং তিনদিন ট্রেনিং বন্ধ থাকে । ট্রেনিং বন্ধের খবর দিল্লীতে পৌছবার সঙ্গে সঙ্গে তানদুয়ায় ছুটে আসেন মেজর জেনারেল উবান । তার সঙ্গে আসেন মুজিব বাহিনীর চার নেতাও। মূল প্রশ্নটি ধামাচাপা দেয়ার মত করে অচলাবস্থার নিরসন ঘটানাে হয় । ট্রেনিং আবার আরম্ভ হয়ে যায় । রাজনৈতিক বক্তৃতাও চলতে থাকে। সমাজতন্ত্রের প্রশ্নে এই যে মতবিরােধ, যুদ্ধ চলাকালে দেশের অভ্যন্তরেও এর প্রসার ঘটে এবং কোথাও কোথাও পারস্পরিক গােলাগুলি বিনিময়ও হয়। চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা স্বপন চৌধুরী (১৯৭০ সালের ১২ আগস্ট ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উত্থাপক) যুদ্ধের শেষদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। আমাদের বিশ্বাস, শেখ ফজলুল হক মণি গ্রুপের লােকজনই তাকে পাক বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়। ধরা পড়ার সময় তিনি প্রতিরােধ করেন এবং আহত হন। পাকবাহিনী স্বপন চৌধুরীর পরিচয় পেয়ে তার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং গােপন খবরাখবর পাবার আশায় তাকে সুস্থ করে তােলার জন্য রাঙ্গামাটি হাসপাতালে নিয়ে রাখে । ১৬ই ডিসেম্বরের আগেই রাঙ্গামাটির পতন ঘটে । স্বপন চৌধুরী তখনও হাসপাতালেই ছিলেন। পরদিন তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাকে গােপনে সরিয়ে ফেলা হয়। আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। যে নার্স তার চিকিৎসায় ছিলেন, তিনিও ১৯৭২ সালে গায়েব হয়ে যান। আমাদের ধারণা, এ কাজও শেখ ফজলুল হক মণি গ্রুপের । কেননা, স্বপন চৌধুরী। নিখোজ হবার সাক্ষী ছিলেন ওই নার্স।
প্রশ্ন : তানদুয়ায় ট্রেনিং প্রদান বন্ধ হয় কবে?
হাসানুল হক ইনু : ২০শে নভেম্বর (১৯৭১) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয় । কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি কি কারণে বন্ধ করে দেয়া হল। অথচ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের আগে আমাদের বেরুতে দেয়া হয় না। ওই সময় অনেকটা আটকাবস্থার মধ্যে ছিলাম । এর কারণ জানতে চাইলে ভারতীয় সেনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন জবাব মেলেনি।

সূত্রঃ   বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে র এবং সিআইএ – মাসুদুল হক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!