আবদুর রাজ্জাক
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) মুজিব বাহিনী নেতা চতুষ্টয়ের অন্যতম।
প্রশ্ন : স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ কবে গঠিত হয়? বিপ্লবী পরিষদের প্রস্তাবটি কে উত্থাপন করেন এবং সদস্য কে কে ছিলেন?
আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশে স্বাধীনতার কথা আমরা চিন্তা-ভাবনা শুরু করি ১৯৬০-৬২ সাল থেকে। ১৯৬২ সালে আমরা একটি লিফলেট পাই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের; যে লিফলেটটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছ থেকে এসেছিল এবং লিফলেট বিলি করার দায়িত্ব ছিল আমাদের। সেখান থেকে আমরা অনুপ্রাণিত হই ।
প্রশ্ন : আপনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন?
আবদুর রাজ্জাক : আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই সময় থেকে আমরা চিন্তা-ভাবনা শুরু করি কী করে স্বাধীনতা লাভ করা যায়। তবে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের প্রয়ােজন, এই চিন্তাটা আমাদের ছিল এবং ১৯৬৪ সালে আমরা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিই। প্রথমে এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন সিরাজুল আলম খান। তিনিই প্রথম আলাপ করেন।
প্রশ্ন : কোন সালে?
আবদুর রাজ্জাক : এর শুরু ১৯৬২ সাল থেকে। কিন্তু সশস্ত্র বিপ্লব করার জন্য একটা সংগঠন তৈরি করতে হবে, এ বিষয়টি আলাপ আলােচনা হয় ১৯৬৪ সালে ।
প্রশ্ন : প্রস্তাবটা প্রথম তােলেন সিরাজুল আলম খান?
আবদুর রাজ্জাক : প্রস্তাবটা তিনিই প্রথম তােলেন। বলেন :“এসাে আমরা একটা কিছু করি। কারণ, তিনি ছিলেন তখন দলের (ছাত্রলীগ) সাধারণ সম্পাদক আর আমি ছিলাম সহসাধারণ সম্পাদক। আমরা আলাপ আলােচনা করতাম ইকবাল হলের মাঠে বসে। তখন চিন্তা করা হলাে আরেকজন কাকে নেব। ঠিক করা হয় কাজী আরেফ আহমেদকে আমরা আমাদের সঙ্গে নিতে পারি । কাজী আরেফের সঙ্গে তার (সিরাজুল আলম খান) আগেই আলাপ হয়েছিল। অবশেষে কাজী আরেফকে নিয়ে নেয়া হয় ।
প্রশ্ন : মূল ছিলেন আপনারা তিনজন?
আবদুর রাজ্জাক : আমরা তিনজন এবং সেটাই স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ কিন্তু পরবর্তীকালে যখন স্বাধীনতার প্রশ্নটি কাছাকাছি এসে গেল অর্থাৎ ১৯৭১ সালে, তখন আমরা চিন্তা-ভাবনা করলাম যে আরাে কিছু লােক আমাদের সঙ্গে আনত হবে এবং স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদে তাদেরকে না নিয়ে একটা ব্যাপক সংগঠন করা যায় কিনা, সেই চিন্তাভাবনা থেকেই আমরা শেখ ফজলুল হক মণি ও তােফায়েল আহমদকে নিই।
প্রশ্ন : শেখ ফজলুল হক মণি ও তাফায়েল আহমদ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না?
আবদুর রাজ্জাক : না । জানতেন না। জানানাে হয় নি। প্রশ্ন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগ পর্যন্তও জানানাে হয় নি?
আবদুর রাজ্জাক আগে এবং পরেও জানতেন না। তাদেরকে পরেও আমরা জানতে দেই নি। এটা জানাজানি হয় স্বাধীনতার পর পর যখন মতপার্থক্যটা শুরু হয়ে যায়। এর আগে জানতে দেইনি।
প্রশ্ন : কেন জানতে দেন নি?
আবদুর রাজ্জাক : কেননা, এটা তাে আমাদের সংগঠন ছিল। গােপন সংগঠন।
প্রশ্ন তাদেরকে বিশ্বাস করতে পারেন নি বলেই কি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের অস্তিত্বের কথা তাদেরকে জানান নি?
আবদুর রাজ্জাক : আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ আলােচনা করিনি বিভিন্ন কারণে। যেমন, শেখ ফজলুল হক মণি ও সিরাজুল আলম খানের মধ্যে একটা ঠাণ্ডা লড়াই ছিল, যেটা অতীতেও ছিল । আর তােফায়েল আহমদের তখনাে অতটা রাজনৈতিক পরিপক্কতা আসেনি। যাহােক, স্বাধীনতা সংগ্রাম যাতে এগিয়ে নেয়া যায়, এই চিন্তা থেকে ব্যাপক ঐক্যের জন্য তাদেরকে আমরা নিয়েছি এবং আমরা চারজনে মিলে ১৮ জানুয়ারি, ১৯৭১-এ ফাইনাল কথা বলি । কি করতে হবে না হবে, সেটা বঙ্গবন্ধু বলে দেন।
প্রশ্ন : শেখ মুজিবর রহমানকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের কথা কখন জানান?
আবদুর রাজ্জাক ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তুলে নেবার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমাৰ আইয়ুব খানের জেল থেকে বেরিয়ে এলে আমি আর সিরাজুল আলম খান তার কাছে যাই এবং আমাদের পরিকল্পনা তাকে খুলে বলি। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের অস্তিত্বের কথা তখনই জানাই। বলি, আপনিই আমাদের সর্বাধিনায়ক।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালের ১২ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি স্বাধীন বাংলাদেশের যে প্রস্তাব নেয়, শেখ মুজিব তার বিরােধিতা করেছিলেন, সত্য কি?
আবদুর রাজ্জাক : হ্যা কথাটা ঠিক । তবে, তিনি বলেছিলেন কৌশলগত কারণে। বলেছিলেন, তােমরা এমন প্রস্তাব নাও, যাতে সবটাই বােঝায়। আমরা স্বাধীনতার পক্ষে এটা যেমন বােঝায়, তেমনি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ যাতে না হয়, সে ব্যবস্থাও রাখ। এর মানে এই নয় স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের বিরােধিতা করা হয়েছে ।
প্রশ্ন : ১৮ জানুয়ারি আপনাদের চারজনকে শেখ মুজিব কি বলেছিলেন?
আবদুর রাজ্জাক : তিনি পরিষ্কার বুঝিয়ে বললেন যে স্বাধীনতার প্রশ্নে সংগ্রাম করতে হবে এবং সশস্ত্র বিপ্লব করতে হবে। আমি তােমাদের জন্য সে ব্যবস্থা করে রেখেছি। তােমাদের চারজনকে কো-অরডিনেটর হিসেবে ঠিক করে যাব এবং সময় মতাে যাতে সাহায্য পাও, অস্ত্র পাওয়াতে যুদ্ধ করতে পার সে ব্যবস্থা করবাে। তিনি আরাে বলেছিলেন, তাজউদ্দীন আহমকে সঙ্গে নেবে। এ কথা তিনি বলেছিলেন। ২৫ শে মার্চ রাতে যখন ক্র্যাকডাউন হয়ে যায়, তখন আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। আমাদের কাছে একটা। ঠিকানা ছিল। আমার কাছেও ছিল। তাজউদ্দীন আহমদের কাছেও ছি= যেখানে ভারতে কলকাতায় গিয়ে দেখা হবে। ভাবলাম নিশ্চয়ই তাজউদ্দীন আহমদ সেই ঠিকানায় চলে গেছেন। কলকাতায় গিয়ে শুনলাম তিনি দিল্লী চলে গেছেন। ভাবলাম জায়গা মত যাই । জায়গা মতাে গিয়ে দেখি শেখ ফজলুল হক মণি ও তােফায়েল আহমদ।
প্রশ্ন : সেই জায়গাটা কোথায়?
আবদুর রাজ্জাক সে জায়গাটা কলকাতায়, -২১ রাজেন্দ্র রােড, যেখানে চিত্তরঞ্জন সুতার বঙ্গবন্ধুর রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে ছিলেন। ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই। তাজউদ্দীন আহমদ চিত্তরঞ্জন সুতারের সঙ্গে যােগাযােগ করেই (দিল্লী) গেছেন । গিয়ে। শুনলাম যে কোন যােগাযােগই করেন নি। তাকে (চিত্তরঞ্জন) জিজ্ঞেস করা হলাে। তিনি বললেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত তিনি। তার কাছে ওই নামটাও (তাজউদ্দীন আহমদ) আছে । বিশ্বস্ত লােকবিশ্বাস করা যাবে। এ কথা বঙ্গবন্ধু বলে দিয়েছেন। ইতােমধ্যে আমরা খবর পেয়ে গেলাম যে, তিনি সরকার গঠন করেছেন নিজেকে। প্রধানমন্ত্রী করে। প্রধানমন্ত্রী তিনি নিজেকে ঘােষণা করলেন, এই হলাে ক্ষোভের কারণ । কারণ, বঙ্গবন্ধু ১৮ জানুয়ারি আমাদের সঙ্গে বসলেন। পরবর্তীকালে তাজউদ্দীন। আহমদের সঙ্গে বসে যে কথা বলে দিলেন, বলেছিলেন, কমান্ড কাউন্সিল হবে এবং কমান্ড কাউন্সিলের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হবে। এমনি কি তিনি বলেছিলেন স্বাধীনতার পরেও এই কমান্ড কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে পাঁচ বছর পর্যন্ত। পাঁচ বছর পর গণতন্ত্র এবং বহুল ব্যবস্থা চালু হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে নির্বাচন হবে না । কারণ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সশস্ত্র বিপ্লবের পর দেশে অস্ত্র থেকে যায় বিভিন্ন রকমের লােকের কাছে। অথচ আমরা দেখলাম এর উল্টোটি। এটা কেমন। হলাে। বঙ্গবন্ধু যা বলেছিলেন সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। দ্বিতীয় কারণ হলাে, প্রধানমন্ত্রী যদি কেউ হন তাে বঙ্গবন্ধুই হবেন। বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী করে তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। আর উপপ্রধানমন্ত্রী হলে তাে সৈয়দ নজরুল ইসলামই হবেন। কেননা, বঙ্গবন্ধু ছিলেন পার্লামেন্টের নেতা। আর সৈয়দ নজরুল ছিলেন উপনেতা। তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন তৃতীয় ব্যক্তি। তিনি এটা কেন করলেন? কমান্ড কাউন্সিল না করে তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘােষণা করলেন। বঙ্গবন্ধু যদি সরকার। প্রধান না হন, সেই সরকার দুর্বল সরকার হয়ে যাবে ।
প্রশ্ন তাজউদ্দীন আহমদ শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী হবার জন্যই এই ষড়যন্ত্রটি করেছিলেন?
আবদুর রাজ্জাক আমার ধারণা, তিনি মনে করেছিলেন বঙ্গবন্ধু আর ফিরে আসবেন না। সুতরাং তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের নায়ক হিসেবে থাকবেন এবং এই বুদ্ধিটি অন্য জায়গা থেকে দেয়া হয়েছিল ।
প্রশ্ন : বুদ্ধিটা কে দিয়েছিলেন?
আবদুর রাজ্জাক : আমার ধারণা আওয়ামী লীগের আমিরুল ইসলাম অথবা আরাে কেউ এর পেছনে ছিলেন।
প্রশ্ন : ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের স্বার্থটা কি ছিল?
আবদুর রাজ্জাক : নিশ্চয়ই কোন একটা মটিভ ছিল ।
প্রশ্ন : সেটা কি আঁচ করতে পেরেছিলেন?
আবদুর রাজ্জাক পরবর্তীকালে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে তারা আমেরিকান লবির লােক । আর এই আমেরিকান লবি কীভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধকে দেখেছে, সে তাে। বুঝতেই পারেন। এবং আজ আমার কাছে এটা পরিষ্কার যে, তারা প্রথম থেকেই চেষ্টা করেছে বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন আহমদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টির । মতপার্থক্যটা প্রথমে ওখান থেকেই শুরু হয়।
প্রশ্ন এখানে প্রচার আছে যে তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আমেরিকার কোন সম্পর্ক ছিল না। এটা কিভাবে সম্ভব?
আবদুর রাজ্জাক : এখানেই কথা। তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তখনও আমেরিকার কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এই ব্যক্তিকে এই আমিরুল ইসলামকে তিনি চিনতে ভুল করেছিলেন। তারপরেই এখান থেকে তার সঙ্গে (তাজউদ্দীন আহমদ) আমাদের চরম মতানৈক্য শুরু হয়ে যায় । আমার চিন্তা হলাে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে, আমি তার মধ্যে থাকবাে না । যা হয় হবে, আমি ভেতরে চলে যাব। যুদ্ধ করবাে আমাদের তাে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের কর্মীরা ভেতরেই আছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করবাে । রবকে (আসল আবদুর রব) বললাম, আমার সঙ্গে যাবে তুমি?’ রব বললাে, আপনার সঙ্গে আমিও আছি।’ এরপর একটা পরিকল্পনা নিলাম যে, আমরা চলে যাব। শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান এবং তােফায়েল আহমদকে বললাম, আপনারা থাকেন।’ আমরা চলে আসব, এটা ভেবে ওরা চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
প্রশ্ন : আপনি ভেতরে এসে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন? আপনি একা এবং আ স ম আবদুর রব?
আবদুর রাজ্জাক : হ্যা, একদম ভেতরে এসে যুদ্ধ করতে চাইলাম। তখন ওরা আমাদেরকে নিয়ে রাতে চিত্তরঞ্জন সুতারের সঙ্গে বসলেন। কারণ, আমাদের মধ্যে মতবিরােধ দেখা দিচ্ছে। চিত্তরঞ্জন সুতার বললেন, আপনাদের মধ্যে মতপার্থক্য কেন হচ্ছে। আপনারা এক থাকেন। আপনারা সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। ঠিক হলাে, সরকারের সঙ্গে কথা বলবাে।
প্রশ্ন : মিটিংয়ে আপনারা চারজনই ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, তােফায়েল আহমদ এবং আপনি?
আবদুর রাজ্জাক হ্যা, আমরা চারজন ছিলাম। আ স ম রবও ছিলেন। তিনি বললেন, (চিত্তরঞ্জন সুতার) সরকার আপনাদেরকেই তাে চেনে। বঙ্গবন্ধু আপনাদের চারজনের নাম দিয়েছেন । আপনারাই তাে যুদ্ধ করবেন। সরকার তাে আপনাদেরকেই চেনে।
প্রশ্ন এরা আগে চিত্তরঞ্জন সুতারের সঙ্গে স্বাধীনতা সম্পর্কে কোন আলাপ আলােচনা হয়েছিল? | আবদুর রাজ্জাক আমরা এর আগে তার কাছে লােক পাঠিয়েছিলাম । ডা. আবু হেনাকে পাঠিয়েছিলাম। ২৫শে মার্চের আগে পাঠান হয় তাকে। জানতে চেয়েছিলাম, আমাদের অস্ত্রের কি হবে? তখন তিনি (চিত্তরঞ্জন সুতার) বলেছিলেন যে সব রেডি। হচ্ছে। তা আমাদের ওই বৈঠকে তিনি (চিত্তরঞ্জন সুতার) প্রস্তাব দিলেন, বললেন, তাহলে আপনাদের কথা বলি, আপনার কি বলেন?’ আমি বললাম, আলাদা কিছু হলে আমি আছি । আমি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে নেই।’ তিনি বললেন, ‘সরকারকে জিজ্ঞেস করি । তখন ভারত সরকারের সঙ্গে তিনি আলাপ করলেন । এই আলাপের প্রেক্ষিতে একজন অফিসার এলেন । তিনি সিভিল ড্রেসেই এসেছিলেন। তখনও আমাদের পরিচয় হয়নি। জেনারেল উবানই এসেছিলেন।
প্রশ্ন : কলকাতার সেই বাড়িতে? আবদুর রাজ্জাক : সেই বাড়িতে। প্রশ্ন : কত তারিখে?
আবদুর রাজ্জাক এপ্রিলের সতের বা আঠার তারিখটা ঠিক মনে নেই। তিনি আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলােচনা করলেন । জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনাদের কি কোন পরিকল্পনা আছে?’ তখন আমরা একটা খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করলামসামগ্রিক পরিকল্পনা। আমাদের পরিকল্পনা দেখে তিনি খুব খুশি হলেন। বললেন, “এ নিয়ে আলাপ করতে হবে। তিনি গিয়ে রিপাের্ট করলেন যে এরাই পারবে। তার বিষয় ছিল গেরিলা যুদ্ধ । তিনি গেরিলা যুদ্ধের লােক পেয়ে গেছেন। আমাদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা সংবলিত রিপাের্ট ছিল। ভারত সরকার সেটা গ্রহণ করলেন। আমাদের পরিকল্পনার মূল কথা ছিল, এটা রাজনৈতিক যুদ্ধ এবং যুদ্ধটা রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত করতে হবে, যাতে যুদ্ধটা আমাদের হাতে থাকে। যে কারণে আমরা অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে প্রস্তাবও দিয়েছিলাম যে, রিক্রুটমেন্টটা আমাদের হাতে থাকবে। রাজনৈতিক মটিভেশন আমরা দেবাে। ট্রেনিংটা আপনাদের । এই ছিল আমাদের প্রস্তাব । কিন্তু অস্থায়ী সরকার গ্রহণ করেন নি। এই সব কারণেই আমাদের ভেতর মতবিরােধ দেখা দেয়।
প্রশ্ন : সরকার আপনাদেরকে ট্রেনিং দিতে চাইলেন কেন?
আবদুর রাজ্জাক মূল কারণ হচ্ছে, আমরাই ছিলাম বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্যের সৈনিক । সেই সৈনিক হিসেবে যাদের নাম তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন, সে তাে আমরা। শুধু আমাদেরকেই চেনে তারা, এ হলাে এক নম্বর কারণ । দুই নম্বর হচ্ছে আমরা যে রাজনৈতিক যুদ্ধটা করতে চেয়েছি সেটার ব্যাপারে তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলাম।
প্রশ্ন ভারত সরকার মুখে সমাজতন্ত্রী ছিল বটে কিন্তু মূলত ছিল দক্ষিণপন্থী। সমাজতন্ত্রের ব্যাপারে আপনাদের যে রাজনৈতিক মটিভেশন ছিল তাতে তারা আপনাদেরকে কেন গ্রহণ করলাে? তারা কি বুঝতে পারে নি?
আবদুর রাজ্জাক হয়তাে তারা আমাদের লাইনটা এতটা চিন্তা করেনি। তারা ভেবেছে এরা শেখ মুজিবের অনুসারী । এরা যাতে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটাও তাদের কাম্য ছিল । তাছাড়া তাদেরও তাে নীতি ছিল সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। | প্রশ্ন সমাজতন্ত্রে আপনি ও সিরাজুল আলম খান বিশ্বাসী ছিলেন। শেখ ফজলুল হক মণি এবং তােফায়েল আহমদও কি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন? আবদুর রাজ্জাক শেখ ফজলুল হক মণির পরবর্তীকালের যেসব লেখা দেখেছি তাতে তিনি এ ব্যাপারে পরিষ্কার ছিলেন। তােফায়েল আহমদ অতটা পড়াশােনা করতেন আমাদের ভেতর সবচেয়ে তরুণ ছিলেন তিনি, অতটা পরিপক্কও ছিলেন না। | প্রশ্ন : মেজর জেনারেল উবান তার বইতে বলেছেন “যুব নেতারা বলেছেন যে ভারত সরকার নকশাল ও মার্কসবাদীদের ট্রেনিং ও অস্ত্র দিচ্ছে তাদের পঁচিশ বছরের অর্জিত সাফল্য নস্যাৎ করার জন্য আপনারা তাকে কী এ কথা বলেছিলেন। | আবদুর রাজ্জাক : এ কথা ঠিক নয়। এটা তার নিজের বক্তব্য হতে পারে । কিন্তু আমাদের কথায় আমরা পরিষ্কার ছিলাম। আমাদের রাজনীতি ছিল স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্র, এ ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার ছিলাম। আর একটা বিষয়আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের লাইনটা পরিষ্কার ছিল যে সােভিয়েত ইউনিয়নই সাম্রাজ্যবাদ প্রতিহত করতে পারে। সেই লাইনটিও আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল। এবং দেখা গেছে, চীন আমাদের স্বাধীনতার বিরােধিতা করেছে প্রত্যক্ষভাবে । সুতরাং , চীন বিরােধী মনােভাব আমাদের ছিল। সেখানেই আলােচনায় নকশালদের কথা এসেছে । যেহেতু, নকশালপন্থীরা স্বাধীনতা বিরােধী, তারা আমাদের বাধা দিয়েছে অনেক জায়গায় এবং তারা চীনপন্থী । সুতরাং, সেখানে তাদের সঙ্গে কিছুটা মতপার্থক্য আমাদের আছে। সে মতপার্থক্য রাজনৈতিক ।
প্রশ্ন : নকশাল যাদের বলেছেন বা চীনপন্থী যাদের বলেন, তারাও কিন্তু একই সময়ে ভেতরে থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছে।
আবদুর রাজ্জাক এখানে পার্থক্যটা আপনাকে বুঝতে হবে। প্রথমে কিছু কিছু লােক, নকশালরা নয় চীনপন্থীদের মধ্যে কিছু লােক যুদ্ধ করেছে। কিন্তু পরবর্তকিালে চীন সরাসরি বিরােধিতা শুরু করলে তখন তাদের অবস্থানও ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করে। তখন তাদের সঙ্গে আরাে ব্যাপক মতপার্থক্য আমাদের শুরু হয়ে যায়। সেই কারণেই, প্রাথমিকভাবে শুরু করলেও তারা,—যেমন, সর্বহারা পাটি স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছে, পরে কিন্তু তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে গ্রহণ করেনি। তারা অর্থাৎ পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি এবং সাম্যবাদীরা মানে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী); আবদুল হক-মােহাম্মদ তােয়াহা যখন এক সঙ্গে ছিলেন, তখন তারা পরিষ্কার বলেছিলেন দেশ স্বাধীন হয়নি অর্থাৎ স্বাধীনতার বিরােধিতা করেছে এবং চীনের নির্দেশেই তারা এসব কাজ করেছে।
প্রশ্ন : কিন্তু এ তাে সত্য যে তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও লড়েছে।
আবদুর রাজ্জাক প্রথম দিকে লড়েছে পরে কিন্তু তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যােগাযােগ করেছে। পাকবাহিনী অস্ত্র তাে দিয়ে গেছে তাদের কাছে। আপনি শুনে অবাক হবেন যে অস্ত্র দিয়ে গেছে মােহাম্মদ তােয়াহার গ্রুপের লােকদের হাতেযারা এই গ্রুপের চীনপন্থী তাদের কাছে, যাতে আমাদের সঙ্গে লড়াই বাধে। এই লাইনটাকেই তারা ঢােকানাের চেষ্টা করেছে। এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এখানে, স্বাধীনতার পর যখন জুলফিকার আলী ভুট্টো আসেন, সঙ্গে নিয়ে আসেন চল্লিশজন লােক। বিমান থেকে নেমেই তারা বিভিন্ন জায়গায় গেছেন। তারা খোজ করেছেন মােহাম্মদ তােয়াহা কোথায় থাকেন। মশিহুর রহমান কোথায়১ থাকেন। তারা খোজ করেছেন অলি আহাদের২, জানতে চেয়েছেন কোথায় থাকেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে রিপাের্ট যায় এই লােকগুলােকে এরা খুঁজতেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর সম্মানে এক ভােজ দেয়া হয়। ভােজ সভায় আমার পাশে বসেছিলেন ভুট্টোর এক মন্ত্রী। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এখন মােহাম্মদ তােয়াহার অবস্থাটা কী? মশিহুর রহমান, অলি আহাদের অবস্থাটা কি? এখন এদের সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করছি- এইসব । তারা এই সমস্ত লোেক সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। সরকারের কাছে এসবের ওপর রিপাের্ট আছে শুনেছি। কিন্তু আমি তাে একটা সাক্ষী। আমার কাছে এসব প্রশ্ন করা হয়েছিল ।
পরবর্তীকালে দেখা গেল, স্বাধীনতার পর আমাদের বিরুদ্ধে সােজা বিদ্রোহ ঘােষণা করলাে যে অস্ত্র নিয়ে, সেগুলাে পাকিস্তানিরা পরিকল্পনা মাফিকই দিয়ে গেছে। যেগুলাে ফেলে গেছে তারা, সে সম্পর্কে অন্য কথা। রাজশাহীর তানাের অঞ্চলে টিপু বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধ হয়েছে। সুতরাং, এইখানে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তারা ছিল । অবশ্যি প্রাথমিকভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। যেমন, মশিহুর রহমান ভারতে গিয়েছিলেন, আবার ফিরে আসেন। ফিরে এসে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযােগিতা করেন— খােলাখুলি সহযােগিতা। এরা সব চীনের লােক । পরবর্তীকালে চীন এদেরকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একত্রিত করেছে। তারা বলেছে বাংলাদেশ ভারতের একটি আশ্রিত রাষ্ট্র হবে, ভারত গ্রাস করে নেবে। তােমরা ওদেরকে সহযােগিতা দিও না অর্থাৎ পাকিস্তানি লাইনে তাদেরকে চালিত করেছে । সুতরাং, সেই দিক দিয়ে নকশালদের ব্যাপারে আমাদের অ্যালার্জি আছে ঠিকই যে, তারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সেই কারণে নয় যে তারা মার্কসবাদী । আমরা মার্কসবাদলেনিনবাদের ওপর পড়াশােনা করেই সমাজতন্ত্র করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম। সেই কারণে মস্কোপন্থীদের সঙ্গে আমাদের কোন মতানৈক্য ছিল না। তবে বলতে পারেন, কেন আপনারা তাদেরকে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারে নিলেন না। সেটা অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপার, তাজউদ্দীন আহমদের সরকারের ব্যাপার। এখানে আমাদের করণীয় কিছুই ছিল না। মস্কোপন্থীদের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষও হয়নি।
প্রশ্ন : কিন্তু জেনারেল উবান বলেছেন, ‘আপনারা তাকে বলেছেন যে, ভারত সরকার নকশাল ও মার্কসবাদীদের অস্ত্র দিচ্ছে আপনাদের পঁচিশ বছরের অর্জিত সাফল্য নস্যাৎ করার জন্য। আপনারা তাকে কি এ কথা বলেন নি? | আবদুর রাজ্জাক কথাটা আমরা তাকে কখনােই এভাবে বলিনি। আমরা আমাদের কথাটাই বলেছি। নকশালরা কিছু কিছু অস্ত্র নিয়েছে । সেটা নিয়ে তারা তাে আমাদের বিরােধিতা করেছে। স্বাধীনতার বিরােধিতা করেছে।
———————————————————-
১. ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) নেতা, পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সিনিয়র মন্ত্রী। ২. পরবর্তীকালে ডেমােক্রেটিক লীগ নেতা।
প্রশ্ন : মঈদুল হাসান তার মূলধারা ‘৭১’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আপনারা অর্থাৎ মুজিব বাহিনী নেতারা নাকি এই রকম প্রচারণা চালিয়েছেন যে, তাজউদ্দীন আহমদ অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকলে দেশ স্বাধীন হবে না। তাজউদ্দীন আহমদ শেখ মুজিবের গ্রেফতার হবার কারণ…। আবদুর রাজ্জাক তিনি একজন বিভ্রান্ত মার্কসবাদী এটা প্রমাণিত এবং আজকেও হচ্ছে। এক সময় মার্কসবাদী ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়ন করতেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীকালে যা দেখা যাচ্ছে তাতে তাে তিনি বিভ্রান্তই বটে। তাজউদ্দীন আমাদের ওপর ভর করেছিলেন। তাকে দক্ষিণ দিকে নেয়ার চেষ্টা করেছেন । ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের মতােই তিনি একজন। মঈদুল হাসানের পরিচয় তাে এখন পরিষ্কার আমাদের কাছে যে তিনি আমেরিকান লবির লােক দক্ষিণপন্থী লবির লােক। যদিও ভাব-ভঙ্গিটা প্রগতিশীল। এ রকম অনেকেই কিন্তু ধরা পড়েননি। যেমন এনায়েতুল্লাহ খান বহুদিন ধরা পড়েননি। এখন তাে পরিষ্কার। এ ধরনের মার্কিনপন্থী কমিউনিস্ট বাংলাদেশে অনেকেই আছেন। তার মধ্যে মঈদুল হাসানও একজন। তিনি তাজউদ্দীন আহমদের ওপর ভর করেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যে বিরােধ সৃষ্টিকারীদের মধ্যে তিনিও একজন। মঈদুল হাসান, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম- এরাই মূল ভূমিকা পালন করেছেন। তাজউদ্দীন আহমদকে এরা বলেছেন, “আপনিই সব।’ এমন কি তাকে এইভাবে মটিভেট করা হয়েছে যে ‘শেখ মুজিব ধরা দিয়েছেন। শেখ মুজিব আত্মসমর্পণ করেছেন। শেখ মুজিব রাজাকার।
এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলেছেন তারা। সেক্ষেত্রে এটা বােঝা যায় যে শেখ মুজিবের প্রতি তাদের যে অতীত আক্রোশ, এক সময় বিভ্রান্ত মার্কসবাদী হিসেবে যে রকমের অ্যাপ্রােচ (Approach) ছিল, পরবর্তীতে মার্কিনপন্থী লাইনেও ছিল সেই একই রকমের অ্যাপ্রােচ । সেটা হলাে শেখ মুজিবকে খাটো করা, তার বিরুদ্ধাচরণ করা। বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন আহমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন খােন্দকার মােশতাক, চাষী মাহবুব আলম, তাহেরউদ্দীন ঠাকুর যতটা দায়ী—এরাও, এই আমিরুল ইসলাম, মঈদুল হাসান— এই ধরনের মার্কিনপন্থী কমিউনিস্টরাও ততটা দায়ী। | প্রশ্ন : তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়ছিল, মঈদুল হাসান তার মূলধারা ‘৭১’-এ কথা বলেছেন। এ কথা কতটুকু সত্য? | আবদুর রাজ্জাক : এটা আমাদের জানা নেই এবং এ তার একটি বানােয়াট, কল্পিত ষড়যন্ত্র । এসব তিনি করেছেন যাতে আমাদের সঙ্গে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের দ্বন্দ্ব বাধে । তিনি যাতে আমাদের অবিশ্বাস করেন। বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন আহমদের ভেতরকার দ্বন্দ্ব এরাই সৃষ্টি করেছেন। তারা তাকে নিতে নিতে দক্ষিণপন্থী লবিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। যেখানে আমরা সবাই বাকশাল পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করি, সেখানে তাজউদ্দীন আহমদ এলেন না ।
——————————————————–
৩, “ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডে সম্পাদক, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট
এরশাদ সরকারের রাষ্ট্রদূত। আমরা তাে আগেই বলেছি সরকারকে আমরা মানি। কিন্তু সরকারের সব কার্যক্রম আমরা মানতে পারি না। আমরা আমাদের মতাে আছি ।
প্রশ্ন এই বৈঠকেই কি শাহজাহান সিরাজকে মুজিব বাহিনী এবং অস্থায়ী সরকারের মধ্যে যােগাযােগ রক্ষার জন্য লিয়াজো অফিসার করা হয়?
আবদুর রাজ্জাক : না, লিয়াজো নয়। এসব সিরাজুল আলম খানের কার্যকলাপের একটি অংশ। তখন থেকে তার কিছু কিছু সন্দেহজনক কাজ শুরু হয়ে গেছে। তিনি তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে শাহজাহান সিরাজকে দিয়ে রেখেছিলেন। মুজিব বাহিনী নেতাদের সম্মতিতেই তিনি এটা করেছিলেন।
প্রশ্ন : কেন সিরাজুল আলম খান এটা করেছিলেন?
আবদুর রাজ্জাক। তিনি তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে একটা আলাদা লাইন রাখতে চেয়েছিলেন।
প্রশ্ন : স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মুজিব বাহিনী সদস্যরা আওয়া লীগ বিরােধী এবং কমিউনিস্টদের হত্যা করেছে বলে অভিযােগ রয়েছে। আপনি কি বলেন?
আবদুর রাজ্জাক এ অভিযােগ সঠিক নয়। আমরা কমিউনিস্টদের হত্যা করার নির্দেশ দেইনি । আমাদের চারজনের বৈঠকে এ ধরনের কোন প্রশ্নই ওঠেনি । কোন সিদ্ধান্ত নেবার প্রশ্ন আসলে আমাদের চারজনের বৈঠক হতাে। হ্যা, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল যদি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ করে তাহলে প্রথমে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবাে। এড়াতে না পারলে প্রতিরােধ করবাে। কিন্তু কমিউনিস্ট বাহিনীর সঙ্গে কোন সংঘর্ষ হয়নি। আর কমিউনিস্ট বাহিনী তাে ভেতরে ঢুকতে পারেনি। তখনতাে তারা ট্রেনিং নিচ্ছে। কমিউনিস্ট বাহিনী আসলে যুদ্ধে যেতেই পারেনি। আমাদের বাহিনী ট্রেনিং নিয়ে ভেতরে ঢুকছে। কাজ কেবল শুরু করেছি। আমরা তাে সর্বাত্মক যুদ্ধ করতে পারিনি। আমাদের পরিল্পনা ছিল- মুজিব বাহিনী। প্রথমে ভেতরে ঢুকবে। তারপর অস্ত্রশালা তৈরি করবে। এরপর আশ্রয় গড়ে তুলবে। তারপর সংগঠন গড়ে তুলবে, মুজিব বাহিনীর সংগঠন। এরপর থানা কমান্ড করবে । থানা কমান্ড করার পর প্রথম কার্যক্রমটা হবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযােগী অর্থাৎ রাজাকারদের ওপর হামলা চালাবে, তাদের সরবরাহ লাইনের ওপর হামলা চালাবে।
গেরিলা কৌশলে ওদের দুর্বল করে দেবে। সর্বশেষ হলাে, ওরা যখন দুর্বল হয়ে পড়বে, তখন পাকবাহিনীর ওপর আঘাত হানাে। আমরা তখন এ কাজই করছি। প্রাথমিক কাজ আমাদের মােটামুটি হয়ে গিয়েছিল। সংগঠন আমাদের গড়ে ওঠেছিল। আমাদের রিক্রুটমেন্ট হয়ে গিয়েছিল। আমাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত সদস্যরা যেখানে যেতে পেরেছে, সেখানেই থানা কমান্ড হয়ে গেছে। আমরা জনগণের সাথে মিলে যুদ্ধ করছি। কিছু কিছু রাজাকারও খতম হচ্ছে । কিন্তু মূল জায়গাটা মানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সামনে না পড়লে, যুদ্ধ করিনি। দু’চার জায়গায় সামনে পড়ে গেছি, লড়াই হয়েছে। আমরা তাে যুদ্ধ শুরুই করিনি। আমাদের তাে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা। প্রথম বছরে কী করব, তৃতীয় এবং চতুর্থ বছরে কী করবাে। তারপর সরকার গঠন করবাে। এই ছিল আমাদের সামগ্রিক পরিকল্পনা । আমরা যদি সফল হতাম তাহলে কোন ঘাস থাকতাে না, আগাছা থাকতাে না। সমাজদেহ থেকে আগাছা উপড়ে ফেলতাম। প্রতিবিপ্লবীদের থাকতে হতাে। । হয় মটিভেট হয়ে এদিকে আসতাে হতাে, নচেৎ নিশ্চিহ্ন হতে হতাে।
প্রশ্ন : জাসদের লােকজন অভিযােগ করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা মুক্তিযােদ্ধা স্বপন চৌধুরীকে শেখ ফজলুল হক মণি গ্রুপের লােকজন হত্যা করেছে। এ অভিযােগ সম্পর্কে আপনি কী বলেন?
আবদুর রাজ্জাক আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, এটার মধ্যে শেখ ফজলুল হক মণির কোন হাত ছিল না। আমার কাছে এ রকম একটি খবর আছে যে তাকে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পাল্টাটাও শােনা যায় যে ওখানকার রাজাকাররা ধরিয়ে দেয়। সেই ছেলেটা ছিল একটা ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। সে আমার হাতের রিক্রুট ছিল। খুবই ভাল ছেলে ছিল ।
প্রশ্ন : তাকে কি ধরিয়ে দেয়া হয়?
আবদুর রাজ্জাক : আমি এটা সঠিক বলতে পারবাে না। একটা অভিযােগ আছে। সে ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন : এই অভিযােগটা কেন?
আবদুর রাজ্জাক শেখ ফজলুল হক মণি ও সিরাজুল আলম খানের দ্বন্দ্বটা ততদিনে শুরু হয়ে গেছে- নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব।
প্রশ্ন : ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের কাছে মুজিব বহিনী পুনরুজ্জীবিত স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে এই প্রস্তাব রাখে যে বাংলাদেশ সরকার ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠন করা হােক এবং মুক্তিযুদ্ধে অংগ্রহণকারী সকল শক্তিকে জাতীয় বিপ্লবী সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হােক। শেখ মুজিব এ প্রস্তাব নাকচ করেছিলেন, সত্য কি?
আবদুর রাজ্জাক আমরা জাতীয় বিপ্লবী সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম । এটা সিরাজুল আলম খান আর আমি মুজিব বাহিনীর পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম । বঙ্গবন্ধু এ প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। কারণ, এ প্রস্তাব গৃহীত হবার অনুকূল অবস্থা তখন ছিল না । কেননা, আগেই ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হয়েছিল। দুর্বলতা ওখানেই। ছিল। সেই চুক্তি পার্লামেন্টারি সরকারের চুক্তি।
প্রশ্ন : এরপর মুজিব বাহিনী শেখ মুজিবের কাছে ৬টি প্রস্তাব রাখে, সেগুলাে কি?
আবদুর রাজ্জাক : এটা হলাে যার যার বানান কথা । মুজিব বাহিনীর তরফ থেকে আর কোন প্রস্তাব যায়নি। ওটাই মানে ওই জাতীয় বিপ্লবী সরকারের প্রস্তাবটি ছিল মূল প্রস্তাব। যদি কেউ আর কোন প্রস্তাব দিয়ে থাকে তাে ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছে।
প্রশ্ন : সিরাজুল আলম খানের গ্রুপ থেকে একটা প্রস্তাব গিয়েছিল বলে কি মনে করেন?
আবদুর রাজ্জাক : যেতে পারে। আমি তা জানি না। যে কথা নিয়ে আমাদের ভেতর বিভেদ দেখা দিল তা হলাে, তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নই। অথচ ইতােমধ্যে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়ে গেছে এবং তিনি কিছু তরুণকে দিয়ে করাচ্ছেন । সেটা টের পেয়ে আমি তাকে ধরলাম। বললাম, “ঘটনা কি? বসতে হয় আমাদের।” স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের হাই কমান্ড আমরা বসলাম, আমরা তিনজন— সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আর আমি। ঠিক করলাম আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে যাব । সিরাজুল।
আলম খান রাজি হলেন না। বললেন, “তােমরা থাক। আমি গিয়ে বলে আসি । আমরা বললাম, “কেন? আগে যখন যেতাম, সে সময় আমি ছাড়া আমি যাননি । আমি ছাড়া কোন কথা বলেননি। আজকে আপনি একা একা কথা বলবেন কোন অধিকার বলে?’ বললাম, ‘আমিও থাকবাে আজকে আমি শুধু নয়, আরেফও থাকবে। আরেফ আগে তাে যেতাে না । আজ তিনজনে যাব।’ অবশেষে আমরা যেহেতু দুই ভােট একসঙ্গে, বাধ্য হয়ে মানতে হলাে। তাকে। আমরা তাকে প্রােগ্রাম করতে বললাম। প্রােগ্রাম করার দায়িত্ব নিয়ে তিনি পালিয়ে গেলেন খুলনায় কোথাও আর পাই না তাকে খুঁজে ।
প্রশ্ন তাহলে প্রস্তাবটা দেবার একটা চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছিল? সেটা তিনি করেন নি।
আবদুর রাজ্জাক করেন নি শুধু তিনি পালিয়ে গেলেন এবং এটাই হলাে ষড়যন্ত্রের মূল । সাতদিন হয়ে গেল তার খোঁজ নেই। তাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে সিদ্ধান্ত তাে আমাকে একটা নিতে হবে। কারণ, তখন তাে ছাত্রলীগ ভাগ হয়ে গেছে । আমি কোন দিকে যাব? আমি দেখছি তিনি আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। নিশ্চয়ই তিনি একটা মটিভ নিয়ে কাজ করছেন।
প্রশ্ন : তার উদ্দেশ্যটা কি ছিল বলে মনে করেন?
আবদুর রাজ্জাক ইতােমধ্যে আমি খবর পেয়ে গেছি যে তিনি ট্রটস্কি লাইন অনুসরণ করছেন এবং ভারতে যতদিন ছিলেন, যুদ্ধে তিনি যান নি। কলকাতাতেই অধিকাংশ সময় ছিলেন। ওখানে তার যে ক্যাম্প ছিল- শিলিগুড়িরা পাংগা ক্যাম্প, সে ক্যাম্পের ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম ওরফে মার্শাল মণি আর মান্নানকে দায়িত্ব দিয়ে তিনি এসে কলকাতাতেই থাকতেন। কলকাতায় কোথায় কি করতেন, কাউকে জানতে দিতেন না। পরবর্তীকালে খবর পাওয়া গেল তিনি নকশালদের সঙ্গে যােগাযােগ করছেন। এসইউসি’র (সােসালিস্ট ইউনিটি সেন্টার) সঙ্গে যােগাযােগ করেছেন। জয়প্রকাশ নারায়ণ, (সােসালিস্ট নেতা) যিনি মুখে বলতেন সমাজতন্ত্রের কথা, আসলে দক্ষিণপন্থী লােক; তার সঙ্গে যােগাযােগ ছিল। এসব খবর পরবর্তীকালে পেয়েছি।
প্রশ্ন তাহলে বলছেন যে, ১৯৭২ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ভেতর ভারতে বসে জয়প্রকাশ নারায়ণ ও এসইউসি’র শিবদাস ঘােষ এবং বামপন্থী বলে পরিচিত অন্যদের সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের যােগাযােগ ছিল। সেটা কখনাে আপনাদের জানান নি তিনি।
আবদুর রাজ্জাক জানান নি।
প্রশ্ন ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগ দুভাগ হয়ে যায়। এর কারণ কি?
আবদুর রাজ্জাক : ছাত্রলীগের বিভেদের কারণ হচ্ছে, আমরা সবাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম কলকাতা থেকে কিন্তু সিরাজুল আলম খান এলেন বেশ কিছুদিন পর। তার আসার পরই হঠাৎ করেই কিছু কিছু কথা শুরু হয়ে গেল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে, ছাত্রলীগের ছেলেদের মধ্যে। সেটা হলাে, শেখ মুজিব সমাজতন্ত্র করতে পারবেন না। সুতরাং আমাদেরকে নিজস্বভাবে করতে হবে । আ স ম আবদুর রব চৌমুহনীতে গিয়ে বক্তৃতা করলেন। বললেন, “পরাধীন দেশ স্বাধীন হয়েছে। এবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হবে । সে বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবেন একজন যুব নেতা । আপনারা তার অপেক্ষা করুন । তিনি আসবেন। আপনাদের সামনে।” এ সব শুরু করলেন। আসলে তার নেতৃত্ব এবং ভাবমূর্তি তৈরিতে নেমে পড়লেন। আমি ধারণা করি, এর পেছনে একটা মটিভ আছে। সেই মটিভ ধরা পড়ে অনেক পরে। দেখলাম পিটার কাসটার্সের সঙ্গে তার সংযােগ, যখন দেখলাম পশ্চিম বাংলার অতি বামদের সঙ্গে তার যােগসূত্র। যার সঙ্গে ট্রটস্কিপন্থীদের যােগাযােগ, শেষ। পর্যায়ে যােগসূত্র রয়েছে আন্তর্জাতিক সােসালিস্টদের সঙ্গে যারা সিআইএ অরগানাইজড, তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই সবের সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখা গেল পরবর্তীকালে। আমি তখন বুঝতে পারলাম তিনি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন।
আমার কাছে খবর এল কমরুদ্দিন আহমদ বললেন, “ও তাে ট্রটস্কি লাইনের’। আর ট্রটস্কি লাইন সম্পর্কে আমার তাে পরিষ্কার ধারণা আছে—এ তাে সিআইএ-র লাইন। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম । অবস্থা তখন এমনযুদ্ধ ফেরত তরুণদের রক্ত টগবগ করছে। আর সেভাবে তাে বিপ্লবী সরকার হয় নি। একটা সাধারণ পার্লামেন্টারি সরকার। সেখানেও কিছু গােলমাল শুরু হয়েছে। তখন ওই ছেলেদের বােঝান সহজ হয়েছে যে এদেরকে দিয়ে হবে না । ছেলেরা কিন্তু অত্যন্ত সাচ্চা মনে সমাজতন্ত্র করার জন্য সমাজ বিপ্লব করার জন্য তৈরি হয়েছিল। অথচ এই সিরাজুল আলম খান আর আমাকে ডেকেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “অস্ত্র জমা দিও
সব । যেগুলাে রাখার দরকার সেগুলাে রেখে দাও। কারণ, সমাজ বিপ্লব করতে হবে। প্রতিবিপ্লবীদের উৎখাত করতে হবে। সমাজতন্ত্রের দিকে যেতে হবে। এটা আমাদের। পরিষ্কারভাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন।
প্রশ্ন আপনারা, চার যুবনেতা জেনারেল উবানকে বলেছিলেন যে একটি ভারতীয় বিলাসবহুল হােটেলে নকশালপন্থীদের সঙ্গে ভারতীয় অফিসারদের আলাপ-আলােচনা করতে দেখেছেন। সম্ভবত ওই হােটেলে তাদেরকে রাখা হয়েছিল। তাদেরকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দেয়া হয়েছিল। ট্রেনিং প্রদানের জায়গার নামও আপনারা উল্লেখ করেছিলেন জেনারেল উবানের কাছে। এই নকশাল নেতারা কারা এবং ট্রেনিং প্রদানের জায়গাটা কোথায় ছিল? কেন হােটেলে ছিলেন তারা?
আবদুর রাজ্জাক এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। এই সময়টা হতে পারে যখন আমি ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিলাম । আমি তাে মূল ক্যাম্পে ছিলাম যেখানে মুজিব বাহিনীর ট্রেনিং দেয়া হত । আমি তেইশ দিন প্রথম ব্যাচের সঙ্গে ক্যাম্পে ছিলাম। সেই সময় এ কথা হয়তাে হতে পারে।
প্রশ্ন : আপনারা চার নেতা কি ট্রেনিং নিয়েছিলেন?
আবদুর রাজ্জাক আমি নিয়েছিলাম পুরাে ট্রেনি ওরা নিয়েছিলেন প্রাথমিক ট্রেনিং ।
প্রশ্ন মুজিব বাহিনীর তহবিল ভারত সরকার কিভাবে দিতেন?
আলাদা আলাদাভাবে সেক্টরভিত্তিক চারজনের হাতে না একজনের হাতে আবদুর রাজ্জাক না । যার যার সেক্টর তার তার হাতেই দিতেন।
সূত্রঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে র এবং সিআইএ – মাসুদুল হক