You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.02.05 | ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব কর্তৃক ছয় দফার ব্যাখ্যা - সংগ্রামের নোটবুক
ছয় দফা
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি ব্যাখ্যা করেন। ছয় দফা নিম্নরূপ : ১. শাসনতান্ত্রিক কাঠামাে ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি : ১৯৪০ সালের লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান একটি যুক্তরাষ্ট্র হইবে। সেখানে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অঞ্চলগুলােকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হইবে। পাকিস্তানে সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হইবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভােটে নির্বাচিত আইনসভার সার্বভৌমত্ব থাকিবে। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় (ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা কেবল দুটি বিষয়, যথা : দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতিতে সীমাবদ্ধ থাকিবে। মুদ্রা ও অর্থসম্বন্ধীয় ক্ষমতা: (ক) দুই প্রদেশের জন্য দুটি পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যােগ্য মুদ্রা থাকিবে। অথবা (খ) সমগ্র দেশের জন্য একটি মুদ্রাই রাখা যাইতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান হইতে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার বন্ধ করার জন্য কার্যকর সাংবিধানিক ব্যবস্থা থাকিতে হইবে। এই ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভ এবং পৃথক অর্থ ও মুদ্রাবিষয়ক নীতি থাকিবে। ৪. রাজস্ব, কর ও শুসম্বন্ধীয় ক্ষমতা: কর ধার্যের কোনাে ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের থাকিবে না। এই ক্ষমতা অঙ্গরাজ্যগুলির হাতে ন্যস্ত থাকিবে।
তবে কেন্দ্রীয় সরকার অঙ্গরাজ্যের রাজস্বের একটি নির্দিষ্ট অংশ লাভ করিবে। বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক ক্ষমতা : পাকিস্তান ফেডারেশনভুক্ত দুটি অঙ্গরাজ্যের (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দুটি পৃথক খাত হিসেবে রাখা হইবে। বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত পূর্ব পাকিস্তানের আয় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকিবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের আয় পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকিবে। কেন্দ্রীয় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে বা সর্বসম্মত কোনাে হারে অঙ্গরাজ্যগুলিই মিটাইবে। অঙ্গরাজ্যগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্যাদির চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা কর জাতীয় কোনাে বাধানিষেধ থাকিবে না। সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বিদেশের সহিত বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হইবে। আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা:আঞ্চলিক সংহতি ও সংবিধান রক্ষার জন্য। সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হইবে। অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান ইহার নিজস্ব আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও পােষণ করার অধিকারী হইবে।
সূত্র : চৌধুরী, মিজানুর রহমান