You dont have javascript enabled! Please enable it!
ভাষার লড়াই
দেশভাগের সময় পাকিস্তানের পশ্চিম অংশে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। ২০০ জনেরও কম। ভারতের উত্তর প্রদেশের কমিউনিস্ট নেতা সাজ্জাদ জহির পাকিস্তানে এসে কমিউনিস্ট পার্টি পুনর্গঠনে সাহায্য করেন এবং পাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আরও ছিলেন মােহাম্মদ হুসেইন আতা, জামালুদ্দিন বুখারী ও ইব্রাহিম এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছিলেন মণি সিংহ, নেপাল নাগ, মনসুর হাবিব, কৃষ্ণ বিনােদ রায় ও সুধীন রায় (খােকা রায়)। ওই সময় সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মােহাম্মদ আকবর খান একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন একদল উচ্চাকাঙ্ক্ষী সেনা কর্মকর্তা। পাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টি এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল। পরে এই পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়। কিন্তু পরিকল্পনাটি ফাস হয়ে গেলে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়া ১১ জন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা ও চারজন অসামরিক নাগরিকের মধ্যে ছিলেন মেজর জেনারেল আকবর খান, বেগম নাসিম আকবর। খান, পাকিস্তান টাইমস-এর সম্পাদক কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার কমােডর মােহাম্মদ খান জানজুয়া, মেজর জেনারেল নাজির আহমদ, কমিউনিস্ট পার্টির মােহাম্মদ আতা, ব্রিগেডিয়ার সাদিক, লে, কর্নেল জিয়াউদ্দিন, মেজর হাসান খান, লে. কর্নেল নিয়াজ মােহাম্মদ আরবাব, ক্যাপ্টেন খিজির হায়াত, মেজর হাসান, মেজর ইসহাক মােহাম্মদ প্রমুখ। তাদের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করা হয়। সিন্ধু প্রদেশের হায়দরাবাদে একটা বিশেষ আদালতে বিচারে ১৪ জনের সাজা হয়েছিল। অসামরিক অভিযুক্তদের প্রত্যেকের চার বছরের কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা হয়। আকবর খানের হয় ১২ বছরের নির্বাসনদণ্ড। হাইকোর্টে আকবর খানের পক্ষে আপিল করেছিলেন সােহরাওয়ার্দী। ফলে সাজা কমে গিয়েছিল। সাজ্জাদ জহির সাজা ভােগ করার পর ছাড়া পেয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন।
আকবর খানের পরিকল্পনায় কয়েকজন উঁচু পদের সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত ছিল, যাদের অন্যতম ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান। এ প্রসঙ্গে পরে আইয়ুব খান বলেছিলেন, আকবর খানের পক্ষে মামলা লড়ে সােহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের বড় ক্ষতি করেছেন। | পাকিস্তানের শাসকেরা গণতন্ত্রের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সােহরাওয়ার্দীকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন। ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে সােহরাওয়ার্দী কলকাতা ছেড়ে পাকাপাকিভাবে পাকিস্তানে চলে আসেন। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন সঙ্গে সঙ্গেই ঘােষণা দিয়েছিলেন যে সােহরাওয়ার্দী ভারতের দালাল। সােহরাওয়ার্দী পাকিস্তান গণপরিষদে বিরােধী দলের নেতা ছিলেন। বিরােধী দল সম্পর্কে লিয়াকত আলী খানের ভাষা ছিল কুরুচিপূর্ণ। বিরােধীদের তিনি একবার বলেছিলেন, ‘ডগস লেট লুজ বাই ইন্ডিয়া (ভারতের লেলিয়ে দেওয়া কুকুর)। বিরােধী দলের বিরুদ্ধে বিষােদ্গার করতে গিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শের কুচাল দেঙ্গে’ (মাথা ভেঙে দেব)। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডিতে এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় লিয়াকত আলী খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। পাঞ্জাবের গােলাম মােহাম্মদ গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাজিমুদ্দিন প্রথমবার ঢাকা সফরে আসেন। ২৭ জানুয়ারি বিকেলে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় তিনি ঘােষণা দেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘােষণা ছিল ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে তার স্বাক্ষরিত চুক্তির বরখেলাপ। নাজিমুদ্দিনের ঘােষণার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৩০ জানুয়ারি (১৯৫২) এক সভায় ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ছাত্র ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘােষণা দেয়। ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরিতে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ২৮ সদস্যের সংগ্রাম পরিষদে আওয়ামী মুসলিম লীগ ও মুসলিম ছাত্রলীগের প্রাধান্য ছিল। ছাত্রলীগের কাজী গােলাম মাহবুব আহ্বায়ক মনােনীত হন। | মুসলিম লীগের নেতা হামিদুল হক চৌধুরী ১৯৫০ সালে দলের কাউন্সিল অধিবেশনে উপদলীয় কোন্দলের একপর্যায়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তখন থেকে তার মালিকানাধীন ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা পাকিস্তান অবজারভার সরকারবিরােধী ভূমিকায় নামে। ১৯৫২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ‘Crypto Fascism
করা হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা অমান্য করে মিছিল বের করা হবে কি না, এ নিয়ে সংগ্রাম পরিষদের সভায় আলােচনা ও বিতর্ক হয়। সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের মধ্যে আতাউর রহমান খান, শামসুল হক, খয়রাত হােসেন, আনােয়ারা খাতুন, আবুল কাসেম, শামসুল হক চৌধুরী, খালেক নেওয়াজ খান, কাজী গােলাম মাহবুব, মােহাম্মদ তােয়াহা প্রমুখ ১৪৪ ধারা অমান্য করার বিরুদ্ধে ছিলেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন : আওয়ামী মুসলিম লীগ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। দ্বিতীয়ত, গােলযােগের সুযােগ গ্রহণ করিয়া সরকার প্রস্তাবিত সাধারণ নির্বাচন অনিশ্চয়তার গর্ভে নিক্ষেপ করিবে, এবং তৃতীয়ত, রাষ্ট্রবিরােধী ও ধ্বংসাত্মক শক্তি মাথাচাড়া দিয়া উঠিবে।” ১৪৪ ধারা জারির ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একুশে ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল প্রত্যাহারের প্রস্তাব সভায় উত্থাপন করা হলে শামসুল আলম, আবদুল মতিন, গােলাম মওলা ও অলি আহাদ—এই চারজন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভােট দেন।১০। | একুশে ফেব্রুয়ারির (১৯৫২) ঘটনা নিয়ে নানা মত ও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ ছাত্রনেতা মােহাম্মদ সুলতানের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। মােহাম্মদ সুলতান ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সভাপতি এবং ১৯৫৩ সালের মার্চে প্রকাশিত একুশে ফেব্রুয়ারি সংকলনের প্রকাশক । সংকলনটি সম্পাদনা করেছিলেন কবি হাসান হাফিজুর রহমান। সাক্ষাৎকারটির উল্লেখযােগ্য অংশ। সংক্ষেপে উদ্ধৃত করা হলাে : ফয়েজ ; কমিউনিষ্ট পার্টি সে সময় রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে এমন অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়নি, যাকে রাজনৈতিক দিক থেকে হঠকারিতা বলা যায় ।… সুলতান ; আমার মনে হয়, দেশের বামপন্থী চিন্তাধারা নতুন ছাত্র-যুব সংগ্রামী সমাজকে তারা তখন সঠিকভাবে ধরতে পারেনি।…তাদের একটা। নির্দেশ ছিল যে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ যাতে না করা হয়, সেভাবে প্রস্তুতি। নেয়া। প্রায় ১৪টি সংগঠন সেই মিটিংয়ে (সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ, ২০ ফেব্রুয়ারি) উপস্থিত ছিল।…সভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার প্রস্তাব যখন পাস হচ্ছিল, তখন অলি আহাদ দাড়িয়ে বলেন, আমি এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নই এবং আমার আর একটি প্রস্তাব। আছে। তার প্রস্তাবে বলা হয়, সর্বদলীয় সভা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করবে
বলে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন ও আগামীকাল (২১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সভায় যদি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
এবং ছাত্ররা মিছিল করে বেরিয়ে যায়, তাহলে মূল প্রস্তাব ও এই কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে। এই প্রস্তাবটিও মূল প্রস্তাবের সঙ্গে সংযােজিত হয়ে গৃহীত হয়।…বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখলাম ছাত্রসমাজ ব্যাপকভাবে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে। আমরা আটজন ছাত্রকর্মী রাত একটার সময় বসলাম ঢাকা হল (শহীদুল্লাহ হল) ও ফজলুল হক হলের মাঝখানের পুকুরঘাটে। আগামীকাল একুশে কীভাবে মিছিল ও আন্দোলন পরিচালনা করব ও প্রথমে কীভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করব, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । ফয়েজ : পুকুরঘাটের সভায় কারা কারা ছিলেন? সুলতান : গাজীউল হক, এস এ বারী, হাবীবুর রহমান শেলী, কমরুদ্দীন শহুদ,
আমি নিজে—অন্যদের নাম এখন মনে আসছে না। আবদুল মতিন ও অলি আহাদ ছিলেন? সুলতান : মতিন উপস্থিত ছিলেন না। অলি আহাদ তখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন বলে ডাকা হয়নি। এ কেবল ছাত্রদের সভা ।…আমরা ওখানেই প্রথম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম যে গাজীউল হককে আগামীকাল সকালে (একুশে) ছাত্রদের সভায় সভাপতিত্ব করতে হবে। আর কাউকেই আমরা সভাপতি হতে দেব না। দুই নম্বর সিদ্ধান্ত হলাে, ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য প্রথম ব্যক্তি হিসেবে হাবীবুর রহমান শেলী থাকবে।…একুশের সকাল নয়টার আগে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেই দেখি মেডিকেল কলেজ এলাকাসহ এই অঞ্চল পুলিশ সর্বপ্রকার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘিরে আছে। এর পরই ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে আসতে শুরু করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিটিং ঠিক বেলা ১১টায় আরম্ভ হলে আমাদের পূর্ব রাত্রের কর্মসূচি অনুযায়ী। গাজীউল হক চেয়ারে বসল, আমাদের প্রস্তাবমতে। সেই
আমতলাতেই মিটিং। ফয়েজ : কোনাে প্রতিবাদ হয়নি? সুলতান : ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শামসুল হক সাহেব দাঁড়িয়ে বলতে চেষ্টা
করেন যে আজকে কোনােমতেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে না। এই ছাত্রলীগের তখন প্রেসিডেন্ট কামরুজ্জামান সাহেব ও সেক্রেটারি ওয়াদুদ সাহেব।… শামসুল হক সাহেব ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে চেষ্টা করার সময় মিটিং থেকে তীব্র প্রতিবাদ হয় এবং তাকে বসিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মতিন সাহেব প্রস্তাব এনে বক্তৃতা করেন ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করার পক্ষে। বিপুল সমর্থনের পর মিছিল করার জন্য সভা ভেঙে যায়। ফয়েজ : গাজীউল হককে সভাপতি করা নিয়ে কি কোনাে ‘হিচ’ বা আপত্তি
হয়েছিল?
সুলতান : অন্য কাউকে সভাপতি করার উদ্দেশ্যে কেউ কেউ চেষ্টা করেছিল। আমরা প্রস্তাব করেই একটা টিনের চেয়ার নিয়ে তাকে আমতলায় বসিয়ে দিই।…সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে তােয়াহা। সাহেব ও শহীদুল্লা (কায়সার) সাহেব একটা প্রস্তাব নিয়ে আসেন। প্রস্তাবটি যদি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে প্রস্তাব হয়েই যায়, তবে যেন। ১০ জন ১০ জন করে মিছিল বের হয়। ফয়েজ : কেন, ১০ জনের মিছিল কেন? সুলতান : যেন মিছিলে শৃঙ্খলা থাকে।… ফয়েজ : পরােক্ষভাবে এবার তারা (কমিউনিস্ট পার্টি) সমর্থন জানালেন। সুলতান : হঁ্যা, মিছিল হবেই এই সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্ত দেখে তারা মিছিলের বিরােধিতা করেনি। তারপর একটার পর একটা মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে যেতে শুরু করল। পুলিশ আইন ভঙ্গকারী একটি একটি দল ধরে গাড়িতে তুলে নিচ্ছে। কাউকে জেলের দিকে, কাউকে বা দূরবর্তী টঙ্গী এলাকায়। ফয়েজ : প্রথম ব্যাচে কি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাবীবুর রহমান শেলী ছিলেন? সুলতান : প্রথম ব্যাচের প্রথম ব্যক্তিই তিনি ছিলেন। এভাবে ছেলেদের আট দশটা মিছিল বের হবার পর মেয়েদের মিছিল শুরু হয়। ফয়েজ : মেয়েদের পৃথক মিছিলে কারা ছিলেন? সুলতান; তাদের সবার নাম এখন আর মনে নেই। তবে সুফিয়া ইব্রাহীম (ড. মিসেস সুফিয়া ইসতিয়াক), ড. হালিমা খাতুন, রওশনারা বাচ্চু ও শাফিয়া খাতুনের নাম মনে পড়ে। দেখা গেল পুলিশ মেয়েদের গাড়িতে তুলতে চেষ্টা করছে না। কিন্তু মেয়েদের মিছিলের ওপর পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে দিয়েছে এবং বহু মেয়ে সেদিন মিছিল করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। এই বিরতিহীন মিছিল
ঠেকাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছাড়তে শুরু করে।… ফয়েজ : কটা হবে তখন?। সুলতান : সাড়ে ১২টা থেকে ১টা হবে। গ্যাসে টিকতে না পেরে বিক্ষোভকারী ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে ঝাপিয়ে পড়তে থাকে। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ মিটিং করেন এবং তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মুনীর চৌধুরী, অজিত গুহ (জগন্নাথ কলেজ) ও মুজাফফর আহমদ চৌধুরী সেখানে আগমন করেন। ছাত্র, শিক্ষক, বয়, বেয়ারা—সবাই সংগ্রামে জড়িত হয়ে পড়েন। ফয়েজ : শেখ মুজিব কি এই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হতে পেরেছিলেন? সুলতান : তিনি জড়িত হতে পারেননি। এ কথা সঠিক নয় যে তিনি সেবারের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। একুশের সঙ্গে কোনােমতেই
নয়। তার বেশ আগে থেকেই তিনি জেলে ছিলেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে সরিয়ে অন্যত্র (ফরিদপুর জেলে) নিয়ে যাওয়া হয়। অলি আহাদের বিবরণ থেকে জানা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার জেলা প্রশাসক কোরায়শী প্রয়ােজনীয় ধৈর্য, সহনশীলতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় না দিয়ে পুলিশকে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর গুলি চালানাের আদেশ দেন। ওই সময় পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের অধিবেশন চলছিল। পুলিশের গুলিবর্ষণের ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়ে পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ একটি মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করলে খয়রাত হােসেন ও বেগম আনােয়ারা খাতুন তা সমর্থন করেন। প্রস্তাবের বিরােধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন বলেন, ‘কয়েকজন ছাত্র গুরুতররূপে আহত হয়েছে শুনে ব্যথিত হয়েছি। তাই বলে আমাদের ভাবাবেগে চালিত হলে চলবে না।’ প্রতিবাদে মাওলানা তর্কবাগীশ পরিষদ কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করে ছাত্রদের সমাবেশে যােগ দেন। পরিষদ সদস্য খয়রাত হােসেন, আবুল কালাম শামসুদ্দিন (দৈনিক আজাদ-এর সম্পাদক), বেগম আনােয়ারা খাতুন এবং কংগ্রেস দলের সবাই ওয়াকআউট করেন। সন্ধ্যায় ঢাকা শহরে কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী তলব করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহত ১০ জনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকত ও আবদুল জব্বার এবং বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিকুদ্দীন আহমেদ মারা যান। গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘেরাও করে সশস্ত্র পুলিশ নিহত ব্যক্তিদের লাশ সরিয়ে নেয়। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি বংশাল রােডে মুসলিম লীগের সমর্থক দৈনিক সংবাদ অফিসে জনতা আক্রমণ চালায়। সেখানে পুলিশ গুলি চালালে আবদুস সালাম নামের একজন রিকশাচালক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নওয়াবপুর রােডে ‘খােশমহল’ রেস্টুরেন্টের কাছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হাইকোর্টের কর্মচারী শফিউর রহমান আহত হন এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ২২ ফেব্রুয়ারি ভিক্টোরিয়া পার্কের (বর্তমানে বাহাদুর শাহ পার্ক) আশপাশে, নওয়াবপুর রােড ও বংশাল রােডে পুলিশের গুলিতে কতজন নিহত হয়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা কারও জানা নেই।১২ এ ছাড়া আরও যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আবদুল আউয়াল, কিশাের অহিউল্লাহ ও সিরাজউদ্দিনের নাম জানা যায়।১৩ ১৯৫২ সালের ২১-২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মােট কতজন নিহত হয়েছিলেন এবং কী তাদের পরিচয়, তার কোনাে বিস্তারিত অনুসন্ধান হয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধে লাশ গুমের অভিযােগ ছিল। পাকিস্তানি বামপন্থী লেখক-গবেষক লাল খানের মতে, পুলিশের গুলিতে ২৬ জন নিহত এবং ৪০০ জনের মতাে আহত হয়েছিলেন।
১৯৫৩ সালের মার্চে একুশের প্রথম সংকলনে ছাপা হওয়া কবিরউদ্দিন আহমেদের লেখা থেকে জানা যায়, ২২ তারিখের সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী তিনজন নিহত, ৩০ জন আহত ও ১৮০ জন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২৩ তারিখের সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী পাঁচজন নিহত, ১৫০ জন আহত এবং ৩০ জন গ্রেপ্তার হন। ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী সলিমুল্লাহ হলের পশ্চিম দিকের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ৮০ জনের মতাে কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। আন্দোলনের নয়জন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরােয়ানা। জারি করা হয়। ৭ মার্চ সন্ধ্যায় ৮২ নম্বর শান্তিনগরে সভা করার সময় আবদুল মতিন, মীর্জা গােলাম হাফিজ, মুজিবুল হক, হেদায়েত হােসেন চৌধুরী, মােহাম্মদ তােয়াহা, অলি আহাদ, সাদেক খান ও আবদুল লতিফ গ্রেপ্তার হন। কাজী গােলাম মাহবুব, হাসান পারভেজ ও আনিসুজ্জামান পালাতে সক্ষম হন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে মােহাম্মদ সুলতান যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে ভিন্নমত আছে। শেখ মুজিব নিজেই তার ভূমিকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে :
আমি (জেল) হাসপাতালে আছি। সন্ধ্যায় মােহাম্মদ তােয়াহা ও অলি আহাদ দেখা করতে আসে। আমার কেবিনের একটা জানালা ছিল ওয়ার্ডের দিকে । আমি ওদের রাত একটার পরে আসতে বললাম। আরও বললাম, খালেক নেওয়াজ, কাজী গােলাম মাহবুব ও আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে খবর। দিতে।…বারান্দায় বসে আলাপ হলাে এবং আমি বললাম, সর্বদলীয় সংগ্রাম। পরিষদ গঠন করতে। আওয়ামী লীগ নেতাদেরও খবর দিয়েছি।…আরও বললাম, “খবর পেয়েছি, আমাকে শিগগিরই আবার জেলে পাঠিয়ে দিবে, কারণ আমি নাকি হাসপাতালে বসে রাজনীতি করছি। তােমরা আগামীকাল রাতেও আবার এসাে।’…
পরের দিন রাতে এক এক করে অনেকেই আসল, সেখানেই ঠিক হলাে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করতে হবে।…আমি আরও বললাম, আমিও আমার মুক্তি দাবি করে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট শুরু করব। আমার ২৬ মাস জেল হয়ে গেছে।…১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে সকালবেলা আমাকে জেলগেটে নিয়ে যাওয়া হলাে…আমাদের ফরিদপুর জেলে এনেছে এবং আজ থেকে অনশন। করছি।…২১ ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম। রাতে সিপাহিরা ডিউটিতে এসে খবর দিল, ঢাকায় ভীষণ গােলমাল হয়েছে। কয়েকজন লােক গুলি খেয়ে মারা গেছে। জেল থেকে শেখ মুজিবের ছাড়া পাওয়ার আদেশ এসে পৌছায় ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি ফরিদপুর জেল থেকে বেরিয়ে আসেন।
অনশনের কারণে তার শরীর ছিল দুর্বল। বেশ কিছুদিন গ্রামের বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি ঢাকায় আসেন।১৭ এর মধ্যে আওয়ামী লীগের অফিস চলে এসেছে নবাবপুর রােডে। সভাপতি মওলানা ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক তখনাে কারাগারে বন্দী। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভা ডাকেন। আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে এই সভায় ১২-১৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় শেখ মুজিবকে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।১৮ | ১৯৫২ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকার বার লাইব্রেরি হলে আতাউর রহমান। খানের সভাপতিত্বে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের একটা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে ৫০০ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যােগ দেন। সম্মেলনে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্মেলনে নিজ নিজ জেলার পক্ষে বক্তৃতা করেন শামসুল হক (রাজশাহী), আজিজুর রহমান (চট্টগ্রাম), আবদুল গফুর (খুলনা), আবুল হােসেন (ফরিদপুর), আবুল হাশেম (বরিশাল), হাতেম আলী তালুকদার (ময়মনসিংহ), হাবিবুর রহমান (সিলেট), শফিকুল হক (কুমিল্লা), এস হােসেন (রংপুর), আবদুস সাত্তার (বগুড়া), আবদুল বারী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মােহাম্মদ আলী (দিনাজপুর), আবদুল মােমেন (পাবনা), সাইদুর রহমান (কুষ্টিয়া), আলমগীর সিদ্দিকী (যশাের) ও আনিসুর রহমান (নােয়াখালী)। সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমানও বক্তৃতা করেন।১৯ | একুশে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ হয়েছিল ব্যাপক। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, পুলিশি হামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গণতান্ত্রিক যুবলীগের চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক এবং সীমান্ত পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী রােগশয্যায় বসে কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ শিরােনামে একটি দীর্ঘ কবিতা লেখেন। কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইন ছিল :
ওরা চল্লিশজন কিংবা আরাে বেশী।
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে রমনার রােদ্রদগ্ধ
কৃষ্ণচূড়ার গাছের তলায়…
চল্লিশটি তাজা প্রাণ আর অঙ্কুরিত বীজের খােসার মধ্যে।
আমি দেখতে পাচ্ছি তাদের অসংখ্য বুকের রক্ত২০
রামেশ্বর, আবদুস সালামের কচি বুকের রক্ত…২০ ১৯৫৩ সালের মার্চে প্রকাশিত এবং হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারি সংকলনে এগারােটি কবিতা এবং দুটি গান ছাপা হলেও মাহবুব-উল
আলমের কবিতাটির স্থান হয়নি। সম্ভবত মফস্বলের কবি হিসেবে ঢাকার বিদ্বজ্জনের কাছে তিনি অপাঙক্তেয় ছিলেন। | বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে দুই জ্যেষ্ঠ নেতা ফজলুল হক ও সােহরাওয়ার্দীর ভূমিকা ছিল অনুজ্জ্বল। করাচিতে বসে সােহরাওয়ার্দী ঢাকার আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি ধরতে পারেননি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের বাড়াবাড়ির নিন্দা জানিয়ে তিনি একটা বিবৃতি দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে উর্দু রাষ্ট্রভাষা হােক, এটা তিনি চেয়েছেন বলে পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছিল। দৈনিক আজাদ-এ সােহরাওয়ার্দীর সমালােচনা হয়। শেখ মুজিব সােহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা করতে করাচি যান, সেখান থেকে হায়দরাবাদ। রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে সােহরাওয়ার্দীর নামে যে খবর পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তার প্রসঙ্গ উঠতেই সােহরাওয়ার্দী বললেন, ‘এ কথা তাে আমি বলি নাই। উর্দু ও বাংলা দুইটা হলে আপত্তি কী? এ কথাই বলেছিলাম।’ শেখ মুজিব তাকে বললেন, ‘সেসব কথা কোনাে কাগজে পরিষ্কার করে ছাপানাে হয় নাই। পূর্ব বাংলার জনসাধারণ আপনার মতামত না পেয়ে খুব দুঃখিত হয়েছে। সােহরাওয়ার্দীকে তিনি অনুরােধ করলেন, তাঁকে (সােহরাওয়ার্দীকে) লিখে দিতে হবে যে উর্দু ও বাংলা দুইটাই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে তিনি সমর্থন করেন। কারণ, অনেক ভুল-বােঝাবুঝি হয়ে গেছে। মুসলিম লীগ এবং তথাকথিত প্রগতিবাদীরা প্রপাগান্ডা করছেন তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই লিখে দেব, এটা তাে আমার নীতি ও বিশ্বাস। তিনি লিখে দিলেন। | এর পরপরই ঢাকায় একটি লিফলেট বিলি করা হয়। বাংলা ভাষার সমর্থনে অনেক বিশিষ্টজনের স্বাক্ষর ছিল এতে। স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে ফজলুল হক ও সােহরাওয়ার্দীর নামও ছিল। ফজলুল হক এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, তাঁর বিরােধীরা নুরুল আমিন এবং তার মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে চাইছে। তিনি সম্ভবত পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অ্যাডভােকেট জেনারেলের পদে থাকা অবস্থায় কোনাে ঝামেলায় পড়তে চাননি। কিন্তু শিগগিরই তিনি বুঝতে পারলেন, নুরুল আমিনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ভবিষ্যতে তার কোনাে লাভ হবে না। সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। তিনি তার পুরােনাে কৃষক-প্রজা পার্টিকে কৃষক-শ্রমিক পার্টি (কেএসপি) নামে পুনরুজ্জীবিত করলেন।২২
Source: আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব – ১৯৪৮-১৯৭০- মহিউদ্দিন আহমদ
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!