You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.28 | ১২৮ জন শহীদের রক্তাক্ত প্রান্তর এই পথে | নওগাঁ - সংগ্রামের নোটবুক

” ১২৮ জন শহীদের রক্তাক্ত প্রান্তর এই পথে ”

১৯৭১ সালের ২৮ শে আগষ্ট শনিবার নওগাঁর মান্দা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামে কাক ডাকা ভোরে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় দোষর-ঘাতক, দালাল, রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকুড়িয়া গ্রামের চারিদিক ঘিরে ফেলে। এরপর একে একে গ্রামের যুবক ও বয়ষ্কদের ধরে এনে স্থানীয় ইউনাইটেড হাইস্কুলের মাঠে (বর্তমানে শহীদ বাজার) একে একে জড়ো করে। বাড়িঘর লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সম্ভ্রমহানি করে অসংখ্য মা বোনের।

সেদিন গ্রাম থেকে প্রায় দেড়শ মানুষকে জোর করে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে কয়েক দফায় মেশিনগান ও স্টেনগানের গুলি বর্ষণ ও ব্রাশ ফায়ার করে হানাদার বাহিনী। তারা এক সাথে নির্মমভাবে হত্যা করে ১২৮ জন মুক্তিকামী বাঙালিকে। শুধু ব্রাশ ফায়ার করে ক্ষান্ত থাকেনি ঘাতকরা তারা মৃত্যু নিশ্চিত করতে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রতিটি দেহের মৃত্যু নিশ্চিত করতে থাকে। তবে এ সময় গায়ে রক্ত মেখে নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে মরে যাওয়ার ভান করে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ১৮ জন।

পরে কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা যান আহতদের মধ্যে অনেকেই। সে সময় পাকুড়িয়া পরিণত হয়েছিল এক বিধবা পল্লীতে। যারা শরীরে বুলেটের চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন তারাসহ সেই সময়কার এলাকার স্থানীয় লোকজন আজও সেই দিনের স্মৃতির কথা মনে করে আঁতকে উঠেন। আজও কেঁদে ওঠেন হারানো স্বজনদের কথা মনে করে। এটি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অন্যতম নির্মম পৈশাচিক গণহত্যার গুলোর একটি ঘটনা যা ” পাকুড়িয়া গণহত্যা ” নামে পরিচিত।

নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের দেলুয়াবাড়ী বাজার থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি ছোট পাকা রাস্তা বয়ে গেছে। সড়কের শুরুতেই লাগানো সাইনবোর্ডে লেখা আছে…

“১২৮ জন শহীদের রক্তাক্ত প্রান্তর এই পথে”

গ্রামটিতে গেলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বাধীনতার পর বাজারের নাম দেয়া হয়েছে “শহীদ বাজার” । পুরো বধ্যভূমি ঘেরাও করে একটি সুদৃশ্য ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। নিচু ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা হয়েছে শহীদদের কবরের স্থান। তার পাশেই নতুন করে গড়ে উঠছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ যা নির্মাণাধীন।
ফটকের দেয়ালে শ্বেত পাথরে খোদাই করে লেখা রয়েছে ৭১ জন শহীদের নাম। অপর পাশে লেখা আছে আহত ১৮ জনের নাম। পাশেই এখনো সেই নির্মমতার সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে সেই দিনের রক্তস্নাত বয়ে যাওয়া মাঠটি।
লেখাটি দিয়েছেন আমাদের পাঠক – Musfiqur Rahman