ফটিকছড়ি চা-বাগানে অপারেশন
জামাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ভারতে প্রশিক্ষিত মুক্তিযােদ্ধা দল ফটিকছড়ি এলাকা দিয়ে দেশে ফিরে শহরে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করার সময় স্থানীয় জনসাধারণের কাছে থেকে খবর পান যে, পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা। ফটিকছড়ি চা-বাগানে অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে তারা একটি গেরিলা অপারেশনের পরিকল্পনা নেন। উদ্দেশ্য, পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে চা-বাগানে দখল প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করা। একজন সঙ্গীসহ অধিনায়ক জামাল উদ্দিন গ্রামের সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে শত্রুদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। বরকতউল্লার খামারে বসে অপারেশন সম্পর্কে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যােদ্ধারা প্রতি গ্রুপে ১৩-১৪জন করে ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে চা-বাগানে অতর্কিত হামলা করার সিদ্ধান্ত হয়। এ অপারেশনে এসএলআর ও স্টেনগান ব্যবহার করা হয়। ভাের ৫টায় বরকতউল্লার খামার থেকে ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এসে। মুক্তিযােদ্ধারা চা-বাগানের পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকে একযােগে গুলি বর্ষণ করতে, করতে চা-বাগানে ঢুকে পড়েন। এ আক্রমণের আকস্মিকতায় শত্রুরা হতবিহ্বল। হয়ে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা ৫-৬জন রাজাকারকে গ্রেপ্তার করেন। তা ছাড়া ৫টি .৩০৩ রাইফেল, ২টি চাইনিজ রাইফেল এবং ২ বাক্স গােলাবারুদ হস্তগত করেন। এটি একটি সার্থক আক্রমণ; কেননা রেকি ও শক্র সম্পর্কিত তথ্য এবং পরিকল্পনা সঠিক ছিল। শত্রু অর্থাৎ রাজাকার গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জিত হয়েছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের কোনাে ক্ষতি হয় নি। এতে স্থানীয় জনসাধারণের স্বতঃস্ফুর্ত সহযােগিতা লক্ষণীয়। অপারেশনে সাফল্যের ফলে জনগণের মনে মুক্তিযােদ্ধাদের কার্যক্রমের প্রতি যথেষ্ট বিশ্বাসেরও সৃষ্টি হয়। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মাে, জানে আলম।
যােগ্যছলা বাজারের অপারেশন
১৯৭১ সালে অক্টোবর মাসে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল ভারতের উদয়পুর শহরের কাছে একটি গেরিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ শেষে বৈঞ্চবপুর সীমান্ত দিয়ে সাবরুম ইপিআর ক্যাম্প হয়ে দেশে ফিরছিলেন। এ দলে ৪০-৫০জন প্রশিক্ষিত মুক্তিযােদ্ধা জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহরে এসে নিজেদের গ্রুপে যােগ দেবার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে তারা পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের আক্রমণের শিকার হন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা যােগ্যছলা বাজারের প্রায় কাছাকাছি পৌছে অনতিদূরে ছােটো ছােটো দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন টিলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধারা বিশ্রামরত মুক্তিযােদ্ধাদের নিরাপত্তা দিয়েছিলেন। তা ছাড়া মুক্তিযােদ্ধারা তাদের বিশ্রাম স্থলে প্রহরীর ব্যবস্থাও করেছিলেন। আনুমানিক রাত ৪-৫টার সময় শত্রুরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিযােদ্ধারা তাদের আশ্রয় স্থল টিলাগুলােকে প্রথমে কভার হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিরক্ষাব্যুহ গড়ে তােলে। তারপর সব যােদ্ধা একত্র হয়ে সম্মুখযুদ্ধ শুরু করেন। থেমে থেমে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা গােলাগুলি চলে। এক পর্যায়ে। গুলি বর্ষণ পুরােপুরি থেমে গেলে মুক্তিযােদ্ধারা দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন; ঠিক তখনই আবার গুলি বর্ষণ শুরু হয়। মুক্তিযােদ্ধা দলের শহর গ্রুপ পূর্বে অবস্থান গ্রহণ করে প্রায় ১ ঘন্টা ধরে গুলি বর্ষণ করে। তারা এ যুদ্ধে এসএলআর, এলএমজি, স্টেনগান, গ্রেনেড, অ্যামুনিশন, এক্সপ্লোসিভ ব্যবহার করে। এ আক্রমণে শত্রুপক্ষের ৪-৫জন নিহত হয়েছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের কোনাে মানসিক প্রস্তুতি না থাকলেও তারা তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তুলে শত্রুর আক্রমণ। প্রতিহত করতে পেরেছিলেন। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মাে, জানে আলম।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড