আলমাস সিনেমা হলের ওপর বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন
সার্কিট হাউজে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের দপ্তর স্থাপন করে শহরের বিভিন্ন স্থানে তৎপরতা পরিচালনা করত। তাদেরকে ব্ৰিত এবং নিজেদের সাহসী উপস্থিতি প্রমাণ করতে মুক্তিযােদ্ধারা আলমাস সিনেমা হলের ওপর বাংলাদেশের। পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেন, যাতে সার্কিট হাউজ থেকে সহজেই এ পতাকা। দেখা যায়। এ জন্য পূর্বপরিকল্পনা মতাে ভােরবেলা যখন সবাই দ্রিামগ্ন, সে সময় মুক্তিযােদ্ধা রফিক, মঞ্জু, ইলিয়াস, মােজাহেরসহ পাঁচজন মুক্তিযােদ্ধার ১টি দল এ কাজে নিয়ােজিত হয়। এর মধ্যে ৪জন পাহারায় থাকেন এবং ১জন পতাকা। উত্তোলন করেন। ঘটনাটি পাকিস্তান সরকারের জন্য অত্যন্ত ব্রিতকর হয়েছিল। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা ইলিয়াস।
দেব পাহাড়ের রাজাকার ক্যাম্পে আগুন
দেব পাহাড়ের ওপর একটি ক্যাম্প স্থাপন করে রাজাকাররা পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাকিস্তানিদের সহায়তা করত এবং স্থানীয় জনসাধারণের ওপর অত্যাচার চালাত। এদের শায়েস্তা করার লক্ষ্য নিয়ে ইলিয়াসসহ ৫-৬জন মুক্তিযোদ্ধা রাত তিনটার সময় চুপিসারে দেব পাহাড়ের রাজাকার ক্যাম্পকে ঘিরে ফেলেন। ক্যাম্পের চারদিকে তারা ফসফরাস বােমা স্থাপন করে বিস্ফোরণ ঘটান। এতে সারা ক্যাম্পে আগুন ধরে যায়। এ অপারেশনে এর চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যায় নি।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা এনামুল হক দানু।
সিজিও বিল্ডিংয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরীর ওপর হামলা
গােপন সূত্রে খবর পেয়ে দেরি না করে আবদুল্লাহ-আল-হারুন, ডা. জাফর, অরুন দাশ, এনামুল হক দানুসহ ১০-১২জনের ১টি দল সিজিও বিল্ডিংয়ে ফজলুল কাদের। চৌধুরীকে হত্যা করার জন্য গমন করেন। এসেই একযােগে সব সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠে টার্গেটের জন্য নির্দিষ্ট রুমে প্রবেশ করেন। ফজলুল কাদের চৌধুরীকে সে রুমে পাওয়া যায় নি। সরকারি অফিস হিসেবে এর আশপাশে পাকিস্তানি সৈন্য অবস্থান করত বলে অপারেশনটি বিপজ্জনক ছিল। তাই বিলম্ব না করে অপারেশন দল দ্রুত প্রস্থান করে। পরে খবর পাওয়া যায় যে ফজলুল কাদের চৌধুরী অন্য। একটি রুমে অবস্থান করছিল। মুক্তিযােদ্ধারা টার্গেটের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পেলেও কিছুটা তড়িঘড়ি করায় অপারেশনটি সফল হয় নি। তথ্যের অসম্পূর্ণতা ও অল্প প্রশিক্ষত মুক্তিযােদ্ধাদের স্নায়ুদুর্বলতা বস্তুত এ ব্যর্থতার প্রধান কারণ। যথাযথ তথ্য ও উঁচুমানের প্রশিক্ষণ ছাড়া এ ধরনের স্পর্শকাতর স্থানে অপারেশন। পরিচালনা প্রায় দুরূহ, তা এ অপারেশনের মাধ্যমে প্রতীয়মান।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা এনামুল হক দানু।
বিবিরহাট রাজাকার অধিনায়ক হত্যা
অধিকাংশ রাজাকার মুক্তিযােদ্ধাদের প্রকারান্তরে সাহায্য করলেও অধিনায়ক। পর্যায়ের অনেকেই বশীভূত হচ্ছিল না। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় ইমরান। গ্রুপের কাছে খবর আসে যে, একজন রাজাকার অধিনায়ক (নাম জানা যায় নি) বিবিরহাটের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে গল্পে মত্ত। ইমরানসহ মোট ৬জন ৩টি রিকশায় চড়ে সেই দোকানে পৌছে সামনাসামনি গুলি করে রাজাকার অধিনায়ককে হত্যা করেন। তার কয়েকজন সহযােগী পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে আহত হয়। প্রত্যাবর্তনকালে অক্সিজেনের মােড়ে মুজাহিদ বাহিনীর (বিহারিদের নিয়ে গঠিত) একটি ট্রাক মুক্তিযােদ্ধাদের চ্যালেঞ্জ করে। এমন বিপজ্জনক অবস্থায় দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে সবাই গুলি বর্ষণ শুরু করে। প্রায় আধ। ঘন্টা গােলাগুলির পর মুক্তিযােদ্ধারা পর্যাপ্ত অস্ত্র ও গােলাবারুদের অভাবে পিছু হটে আসে। এতে হতাহতের সংখ্যা জানা যায় নি।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা সৈয়দ মাে. ইমরান।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড