You dont have javascript enabled! Please enable it!
কোতােয়ালি থানায় গ্রেনেড নিক্ষেপ
কোতােয়ালি থানায় পুলিশ ছাড়াও এক দল মিলিশিয়া অবস্থান করত। থানার প্রবেশমুখে ২-৩জন প্রহরী সব সময় সশস্ত্র অবস্থায় প্রহরারত থাকত। মুক্তিযােদ্ধা নুর আহমদ ও নাজিম থানার অভ্যন্তরে গ্রেনেড নিক্ষেপের দায়িত্ব নেন। বিকালবেলা তারা কোর্ট বিল্ডিং গিয়ে একটি চায়ের দোকানে অবস্থান নেন। চা খেতে খেতে থানার অভ্যন্তরে পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করেন। উল্লেখ্য, কোতােয়ালি থানার পশ্চিম পাশে পাহাড়ের ওপর কোর্ট বিল্ডিং অবস্থিত। সন্ধ্যা ৬টার দিকে কোতােয়ালি মােড় খুবই কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে। ৭টার পরই শহরে কারফিউ শুরু হবে। ২জন নেমেই একটি ট্যাক্সি ভাড়া করেন। কোতােয়ালি থানার সামনে আসতেই নুর আহমদ ট্যাক্সির গতি কমাতে বলেন। ট্যাক্সির গতি শ্লথ হওয়ার সাথে সাথে তিনি নেমে পড়েন। এর আগেই ২জন গ্রেনেড প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। পরিকল্পনা ছিল ট্যাক্সির ইঞ্জিন চলন্ত অবস্থায় রেখে ২জন একই সাথে থানার দেয়ালের অভ্যন্তরে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সেই ট্যাক্সি করেই দ্রুত ফিরিঙ্গিবাজারের দিকে চলে যাবেন। নূর আহমদ ট্যাক্সি থেকে নামা মাত্রই নাজিম ট্যাক্সিতে বসেই গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। গ্রেনেড থানার দেয়ালের অভ্যন্তরে না পড়ে থানার সামনেই পড়ে। ট্যাক্সির ড্রাইভার এ অবস্থায় ট্যাক্সির গতি বাড়িয়ে দ্রুত ফিরিঙ্গিবাজারের দিকে চলে যেতে থাকে। নাজিম ট্যাক্সিতে বসা। নূর আহমদ উপায়ান্তর না দেখে গ্রেনেড থানার অভ্যন্তরে নিক্ষেপ করেই প্রাণপণে ফিরিঙ্গিবাজারের দিকে দৌড়াতে থাকেন। তাঁকে ধাওয়া করে থানার সামনে ডিউটিরত পুলিশ। আশপাশের জনতাও যে যেদিকে পারে দৌড়াতে থাকে। তিনি জনতার সাথে মিশে যান। ফিরিঙ্গিবাজারের দিকে কিছু দূর গিয়েই তিনি গলির ভিতর ঢুকে যান। অন্যদিকে, নাজিমকে নিয়ে ফিরিঙ্গিবাজারের দিকে গিয়ে এক পর্যায়ে ড্রাইভার ট্যাক্সি রেখে পালিয়ে যান এবং পরে ধরা পড়েন। নাজিমও উপায়ান্তর না দেখে গলির ভিতর ঢুকে পড়েন। গ্রেনেড নিক্ষেপে থানার অভ্যন্তরে ক্ষয়ক্ষতির বিষয় জানা যায় নি।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা নূর আহমদ (স্থান: কামালগেট)।
স্টেশন রােডে ফ্রেসকো হােটেলের সামনে গ্রেনেড নিক্ষেপ
স্টেশন রােডে উজালা সিনেমা হলের পাশে ছিল ফ্রেসকো হােটেলের অবস্থান। পাকিস্তানি সেনারা টহলের সময় এ হােটেলে এসে আড্ডা দিত। মুক্তিযােদ্ধা জাফর উল্লা ও দিলশাদুর রহমান সাব্বির এ হােটেলে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করেন। তারা তথ্যসংগ্রহ করেন যে, দুপুরবেলা খাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনাদের আসা-যাওয়া বেশি থাকে। জাফর ও সাব্বির বেলা আনুমানিক দেড়টার সময় নিউ মার্কেটের দিক থেকে দ্রুতবেগে মােটরসাইকেলে চড়ে হােটেলের সামনে এসে গতি কমিয়ে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেই তারা দ্রুত বাদামতলীর দিকে চলে যান। এতে হতাহতের খবর জানা যায় নি। সম্পাদকের টীকা: এ গ্রন্থের দশম অধ্যায়ে সন্নিবেশিত মুক্তিবাহিনীর দৈনিক পরিস্থিতি প্রতিবেদনে এ ধরনের একটি ঘটনার তথ্য রয়েছে। সেখানে ঘটনাটি ১২ জুন তারিখে সংঘটনের এবং ২জন পাকিস্তানি সেনা আহত হওয়ার কথা বিধৃত। সম্ভবত এটি সেই ঘটনা। দ্রষ্টব্য: দলিল নম্বর ২০৬।
হােটেল এভেজামের ভিতর গ্রেনেড নিক্ষেপ
হােটেল এভেজামের মালিক ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর একজন সহযােগী। এ হােটেলে পাকিস্তানি সহযােগী ও অনেক অবাঙালি আড্ডা দিত। এক দিন সন্ধ্যার পর মুক্তিযােদ্ধা জাফর ও সাব্বির মােটরসাইকেলে করে এসে হােটেলের অভ্যন্তরে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। গ্রেনেড নিক্ষেপের পর মােটরসাইকেলে চড়ে তারা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এ ঘটনার পর। হােটেলটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: দিলশাদুর রহমান (সাব্বির), স্থান: মাস্টার এন্টারপ্রাইজ।

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!