You dont have javascript enabled! Please enable it!
মাতবরঘাট অপারেশন
আনােয়ারা থানায় মাতবরঘাট অবস্থিত। মাতবরঘাটে পাকিস্তানিদের সহযােগী। রাজাকারদের একটি ঘাঁটি ছিল। সেখান থেকে তারা পার্শ্ববর্তী এলাকায় তৎপরতা। চালাত। উক্ত রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন ক্যাপটেন করিম। স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধাদের মাধ্যমে রাজাকারদের তৎপরতা, শক্তি, দুর্বল দিক, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া এবং পরিকল্পনা করা হয়। বােয়ালখালী সেনবাড়িতে অবস্থিত গােপন আস্তানা থেকে আনুমানিক রাত ১২টার সময় ৩০-৩৫জন মুক্তিযােদ্ধা ক্যাপটেন করিমের নেতৃত্বে রওনা হন। উল্লেখ্য, গোপনীয়তা রক্ষার জন্য মাতবরঘাটের ঐ ক্যাম্প আক্রমণের বিষয়টি অন্যদের গােপন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার আগেই বিস্তারিত জানানাে হয়েছিল। অবশ্য সহযােগী মুক্তিযােদ্ধারা যে-কোনাে সময় যে-কোনাে স্থানে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত থাকতেন। মাতবরঘাটের দিকে যাওয়ার পথ ছিল গ্রামের বিলের মাঝ দিয়ে আড়াআড়িভাবে। পথিমধ্যে পুরাে দলকে পরিকল্পনা মাফিক তিন ভাগে বিভক্ত করে নেওয়া হয়। গন্তব্যে পেীছে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলগুলাে ক্যাম্পটির দুই দিকে যার যার পজিশন গ্রহণ করে। প্রথমে ক্যাপটেন করিমের নেতৃত্বাধীন দলটি গুলি ছুড়তে ছুড়তে ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হয়। বাকি ২টি দল থেকেও শত্রুকে বিতাড়িত করার জন্য ততক্ষণে গুলি ছােড়া শুরু হয়। অপ্রস্তুত রাজাকার দল কোনাে প্রতিরােধের চেষ্টা না করেই আত্মসমর্পণ করে। ৩জনকে ধরে এনে পরে হত্যা করা হয়। এ অপারেশনে ৭টি রাইফেল মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা আমির আহমদ ও লিয়াকত আলী খান।
ওয়াছনগর বাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ
ওয়াছনগর বাজারে অবস্থিত ছিল রাজাকারদেব ক্যাম্প। পাকিস্তান সরকার এ রাজাকারদের অস্ত্র সরবরাহ করে। অস্ত্রগুলাে ক্যাম্পের হস্তগত করা ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের টার্গেট। এগুলাে হস্তগত করতে পারলে অস্ত্রের ঘাটতি পূরণ এবং বড়াে ধরনের অপারেশনের পথ প্রশস্ত হবে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপটেন করিম সব তথ্য বিশ্লেষণ করে এখানে অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। কুসুমপুর গােপন আস্তানায় অবস্থান করেছিলেন ২০-২৫জনের এক দল। মুক্তিযােদ্ধা। ক্যাপটেন করিম সেখানে উপস্থিত হয়ে সবাইকে অপারেশনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। স্বদেশপ্রেম ও অসীম সাহসিকতা মুক্তিযােদ্ধাদের তখন প্রতিনিয়ত স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বেলিত করে রেখেছিল। তার প্রস্তাবে অল্প সময়ে তৈরি হয়ে যায় পুরাে দল। অপারেশনের জন্য দলকে মােট ৪টি ছােটো দলে বিভক্ত করে ৪জন। অধিনায়কের নেতৃত্বে করণীয় বুঝিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামের পথ ধরে ফসলি জমির ভিতর দিয়ে রাজাকারদের সন্নিকটে উপস্থিত হয় পুরাে দল। ৪টি দল বাজারের চারদিক অবস্থান নেয়। এক দল বাজারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কিন্তু কোনাে প্রতিরােধ ছাড়াই রাজাকার দল বাজারের জনতার মধ্যে মিশে যায়। এমতাবস্থায় বাজারের সব লােককে লাইনে দাড় করিয়ে ৯জনকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা। হয়। এ অপারেশনে ১৭টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।
চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে গ্রেনেড নিক্ষেপ
চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের নিরাপত্তার জন্য এক দল মিলিশিয়া অবস্থান করত। তা ছাড়া এক দল অবাঙালিও রেল স্টেশনের বিভিন্ন ভবনে অবস্থান নেয়। কখনাে কখনাে পাকিস্তানি সেনাদের ছােটো ছােটো দল রেল স্টেশনে অবস্থান করত। এফএফ গ্রুপ-১৩৭ স্টেশনে একটি অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। পুরাে স্টেশনে অপারেশনের জন্য যে জনশক্তি ও অস্ত্র দরকার, তা ছিল অপ্রতুল থাকায় সিদ্ধান্ত হয়, গ্রেনেড নিক্ষেপ করেই আতঙ্ক সৃষ্টি করা হবে। মুক্তিযােদ্ধা নুর আহমদ। দায়িত্ব নেন গ্রেনেড নিক্ষেপ করার জন্য। তিনি তাঁর নিজ এলাকা কামালগেটের গােপন আস্তানায় অবস্থান করতেন। কামালগেট চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ৫ কিলােমিটার দক্ষিণে সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত। স্থানীয় ২জন যুবক শাহাবুদ্দিন আহমদ ও ফজল হােসেনকে তিনি সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন। তাদেরকে প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করেন নি। নূর আহমদ সঙ্গীসহ রেল স্টেশনের কাছে এসে প্রহরী ও অবাঙালিদের অবস্থান, গ্রেনেড নিক্ষেপের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, স্টেশনের অভ্যন্তরে অবস্থানরত অবাঙালিদের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করা প্রহরীদের দৃষ্টি এড়িয়ে সম্ভব নয়। অক্টোবর মাসের কোনাে এক দিন (তারিখ জানা যায় নি) মাগরিবের নামাজের পর পর কামাল গেট থেকে পূর্বোক্ত ২জন সঙ্গীসহ নুর আহমদ হেঁটে রওনা হন। পরনে লুঙ্গি ও গায়ে শার্ট। রওনা হওয়ার আগ মুহূর্তে সঙ্গীদের তার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা এবং এর সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দেন।  কলেজিয়েট স্কুলের পাশ দিয়ে রেলওয়ে কলােনি হয়ে তাঁরা স্টেশনের দক্ষিণের কাটা দেয়াল পর্যন্ত আসেন। নুর আহমদ নিজে পিন খুলে গ্রেনেড প্রস্তুত করে তার সহযােগীদের হাতে তুলে দেন। তারপর তারা একসাথে ৩টি গ্রেনেড স্টেশনের অভ্যন্তরে ছুড়ে মারেন। গ্রেনেড নিক্ষেপের পর তারা দ্রুত অলিগলি হয়ে ৩জন তিন দিকে চলে যান। গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলে স্টেশনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু কোনাে হতাহতের খবর জানা যায় নি।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা নূর আহমদ (স্থান: কামালগেট)।

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!