You dont have javascript enabled! Please enable it!
গােল্ডেন টোব্যাকো কোম্পানির নিকটবর্তী পেট্রোল পাম্পে বিস্ফোরণ
চট্টগ্রাম শহরে যৌথ কমান্ড গঠনের পর নেতারা সিদ্ধান্ত নেন শহরের সব পেট্রোল পাম্প অকেজো করে দেওয়া হবে, যাতে চট্টগ্রামে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। এরই অংশ হিসেবে উত্তর কাট্টলির স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা শাহাবুদ্দিন ৩জন সহযােদ্ধা নিয়ে গােল্ডেন টোব্যাকোর পাশে অবস্থিত পেট্রোল পাম্পে বিস্ফোরক স্থাপন করে ধ্বংস করেন। পেট্রোল পাম্পটি শাহাবুদ্দিনের বাড়ির কাছে কর্নেলহাট থেকে ৮ কিলােমিটার উত্তরে অবস্থিত। তাই তিনি পুরাে এলাকা চিনতেন। সে জন্য বিস্তারিত রেকির প্রয়ােজন হয় নি।  পরিকল্পনা মতাে ভাের ৫টায় শাহাবুদ্দিন, মুছা, শহীদুল ইসলাম বাদল ও ডা. জাকির ঘটনাস্থলে গমন করেন। প্রহরীরা ঘুমন্ত ছিল। ৩জন কভারিং ফায়ার প্রদানের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থান নেন। অবশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধারা বিস্ফোরক স্থাপন করেন। যথারীতি ফিউজে আগুন দিয়ে দ্রুত পশ্চিম দিকে উত্তর কাট্টলির গ্রামের মধ্যে চলে যান। কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণে পুরাে পেট্রোল পাম্পে আগুন ধরে যায়। মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন বলেন, একই সময় আরেকটি দল কর্নেলহাট বিদ্যুৎ ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরক স্থাপন করে এবং সেটিও ধ্বংস হয়ে যায়। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা শাহাবুদ্দিন।
বারিক বিল্ডিংয়ের পাশে পেট্রোল পাম্পে অপারেশন
পেট্রোল পাম্প থেকে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত করে শক্রর মনােবল ভেঙে দেওয়া এবং প্রশাসনকে অচল করার উদ্দেশ্যে এ অপারেশন পরিচালনা করা হয়। কেসি৩-এর মুক্তিযােদ্ধারা ঐ পেট্রোল পাম্পটিতে বিস্ফোরক স্থাপন করার পরিকল্পনা করেন। রেকি করে বিস্তারিত তথ্যসংগ্রহ করার পর স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা দলের অধিনায়ক জাহিদ হােসেনকে এ অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাহিদ হােসেনের নেতৃত্বে রাত ২টার সময় ৪-৫জনের ১টি মুক্তিযােদ্ধা দল গােসাইলডাঙ্গা হাড়িশাহের মাজার সংলগ্ন গােপন আস্তানা হতে রওনা হন। তারা রাস্তা ধরে। অগ্রসর না হয়ে বিলের মধ্য দিয়ে গমন করেন। দলের প্রত্যেকের কাছে ১টি করে গ্রেনেড ছিল এবং ২জনের কাছে ২টি রিভলভার ছিল। পথ চলার সময় সবাই লুঙ্গি পরে গ্রামের মানুষের মতাে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। একটি চটের থলের ভিতর একটি টিএনটি স্ল্যাব তৈরি করে আনা হয়। পেট্রোল পাম্পের নিকটে এসেই প্রথমে তারা প্রহরীর অবস্থান ও তৎপরতা লক্ষ্য করেন। কিন্তু কোনাে প্রহরীর তৎপরতা চোখে পড়ে নি। সম্ভবত প্রহরী ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। ২জন মুক্তিযােদ্ধা রিজার্ভ ট্যাংকে এ বিস্ফোরক স্থাপন করেন। বাকিরা পাশে কভারিং ফায়ার দেওয়ার জন্য ঝােপের মধ্যে পজিশন নেন। বিস্ফোরক স্থাপন করে ফিউজে আগুন দেওয়ার পর তারা সবাই দ্রুত বিলের মধ্য দিয়ে দৌড়ে পশ্চিম দিকে গােপন আস্তানায়। প্রত্যাবর্তন করেন। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা জাহিদ হােসেন।

 
পশ্চিম মাদারবাড়ি ট্রাংক রােড সংলগ্ন ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ
মুক্তিযােদ্ধারা ইদ উৎসব বর্জন করার জন্য গােপনে লিফলেট বিতরণ করে। এতে আহ্বান জানানাে হয় অস্বাভাবিক একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইদ উত্সব অনুচিত। প্রশাসন এর প্রতিক্রিয়ায় সারা শহরে মাইকিং করে ঘােষণা করে যে, ইদের দিন যে-কোনাে বেআইনি তৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। মুক্তিযােদ্ধাদের দুস্কৃতকারী আখ্যা দিয়ে দেখা মাত্র গুলি করার ঘােষণা দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতেই কেসি-৩ দলের পরিকল্পনা মতাে মুক্তিযােদ্ধা জাহিদ হােসেন ও গরিবুল্লাহ পশ্চিম মাদারবাড়িতে অবস্থিত বিদ্যুৎ ট্রান্সমিটার ধ্বংস করার দায়িত্ব নেন। এর জন্য গরিবুল্লাহ ঐ এলাকার স্থানীয় অধিবাসী হিসেবে বিস্তারিত রেকি করেন। কবির তােরণের আশ্রয় স্থল থেকে ৩টার সময় জাহিদ ও গরিবুল্লাহ একটি ট্যাক্সি করে ঘটনাস্থলে পৌছেন। তাঁদের সাথে ছিল ১টি রিভলভার ও বিস্ফোরক। গরিবুল্লাহ রিভলভার নিয়ে ট্যাক্সিতে বসেছিলেন এবং জাহিদ ট্রান্সমিটারে বিস্ফোরক স্থাপন করেন। পার্শ্ববর্তী এক পান দোকানদার তাদের এ কাজে বাধা দিতে চেষ্টা করলে তাকে গুলি করার ভয় দেখালে সে পালিয়ে যায়। জাহিদ দ্রুত বিস্ফোরক স্থাপন করে ফিউজে আগুন দেন। কিন্তু ইতােমধ্যে ট্যাক্সিওয়ালাও ভয়ে পালিয়ে যেতে চাইলে গরিবুল্লাহ রিভলভার দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকে বসিয়ে রাখে। বিস্ফোরণে পুরাে ট্রান্সমিটার ধ্বংস হয়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধা ২জন ট্যাক্সি করে নিরাপদ স্থানে চলে যান। 

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!