You dont have javascript enabled! Please enable it! হলদিয়া কনখাইনের খাল এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরােধ, নিউ মার্কেটের মােড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পিকআপে, নিউ মার্কেটের মােড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পিকআপে - সংগ্রামের নোটবুক
হলদিয়া কনখাইনের খাল এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরােধ
ফটিকছড়ি থানার একেবারে দক্ষিণে হলদিয়া একটি গ্রাম। মুক্তিযােদ্ধারা এ গ্রামের কনখাইনের খালের পূর্ব দিকে গােপন আস্তানা স্থাপন করেন। এক দিন মুক্তিযােদ্ধারা জানতে পারেন যে, পাকিস্তানি সেনারা ঐ এলাকায় তাদের খোঁজে আসবে। পাকিস্তানি সেনারা বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযােদ্ধাদের খোঁজে হানা দিয়ে কাউকে না পেলে মূল্যবান সামগ্রী লুট এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। ১৫ জনের মতাে। মুক্তিযােদ্ধা আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে কনখাইনের খালের পূর্ব দিকে পজিশন নেন। উদ্দেশ্য, দূর থেকে গােলাগুলি করে পাকিস্তানি বাহিনীকে আতঙ্কিত করা, যাতে তারা গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে। বেলা ১টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী। কনখাইনের খালের পশ্চিম তীরে আসে। অপর পাড়ে পজিশনরত মুক্তিযােদ্ধা দল গুলি বর্ষণ শুরু করে। পাকিস্তানি সেনারাও পজিশন নিয়ে পালটা গুলি ছােড়ে ঘন্টা খানেক গােলাগুলির পর পাকিস্তানি সেনারা গ্রামে প্রবেশ না করে ফেরত চলে যায় । মুক্তিযােদ্ধাদের উদ্দেশ্য সফল হয়।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা শামসুল আলম।
নিউ মার্কেটের মােড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পিকআপে
গ্রেনেড নিক্ষেপ
চট্টগ্রাম শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে নিউ মার্কেটের মােড়ে সর্বক্ষণই পাকিস্তানি সেনাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। এ মােড়ের কাছাকাছি অন্যান্য স্থানেও পাকিস্তানি সেনাদের উপস্থিতি ছিল। অল্প সময়ের মধ্যে এখানে উল্লেখ্যযােগ্য সংখ্যক পাকিস্তানি সেনা উপস্থিত হতে পারত। তাই এ স্থানে সংঘবদ্ধভাবে পাকিস্তানি সেনাদের এর আক্রমণ পরিচালনা করে সফল হওয়ার এবং নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করা সহজ ছিল না। তবু শহরের একটি গেরিলা গ্রুপের অধিনায়ক এখানেই একটি অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যার সময়কেই এ জন্য নির্ধারণ করা হয়। কারণ, দেখা গেছে এ সময় পাকিস্তানি সেনাদের মনােযােগ খানিকটা কম থাকে। তা ছাড়া সন্ধ্যা ৭টা থেকে কারফিউ ছিল। তাই এর আগেই সবাই স্ব স্ব গন্তব্যস্থলে পৌছানাের চেষ্টা করত। তাই নিউ মার্কেটের মােড়ে এ সময় ব্যস্ততা বেড়ে যেত। নির্দিষ্ট দিন মুক্তিযােদ্ধা শামসুল আলম, আনােয়ার হােসেন ও ফরিদ উজালা সিনেমা হলের পিছনের একটি গােপন আস্তানা হতে লুঙ্গি পরে গায়ে অতি সাধারণ পােশাক পরিধান করে স্টেশন রােড ধরে নিউ মার্কেটের দিকে রওনা হন। হাতে বাজারের ব্যাগ। অভ্যন্তরে গ্রেনেড। মােড়ে এসেই তারা লক্ষ্য করেন, সদরঘাট রােডের মাথায় একটি পিকআপ দাড়ানাে। ভিতরে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা বসে আছে। তারা দ্রুত গ্রেনেড প্রস্তুত করে আড়াল ব্যবহার করে গাড়ির কাছাকাছি এসে নিক্ষেপ করেই নিরাপদে সরে পড়েন। গাড়ির অভ্যন্তরে গ্রেনেড বিস্ফোরিত কিংবা পাকিস্তানি কোনাে সেনা হতাহত হয়েছে কি না, তা জানা যায় নি। অবশ্যই শহরের কেন্দ্রস্থলে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপের মতাে এ দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেছিল।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা শামসুল আলম।
ফিরিঙ্গিবাজার ট্রান্সফর্মার ধ্বংস
ফিরিঙ্গিবাজারে খ্রিষ্টানদের চার্চের পাশের ট্রান্সফর্মারটি মুক্তিযােদ্ধারা বিস্ফোরক স্থাপন করে ধ্বংস করে দেন। চার্চের পাশেই ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের শেল্টার। ডা. রবিন ছিলেন মুক্তিযােদ্ধাদের একজন সাহায্যকারী। তাঁর পিতা চার্চেরই একজন। চার্চের অভ্যন্তরে অনেক মুক্তিযােদ্ধার আশ্রয় স্থল ছিল। ডা. মাহফুজ ও জিন্নাহসহ অনেক গ্রুপ এখানে আশ্রয় নিত। চার্চের সন্নিকটে অবস্থিত ট্রান্সফর্মারটি ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়, যাতে আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। মুক্তিযােদ্ধা রফিকের নেতৃত্বে বেনু, ডা. রবিন, আক্তার প্রমুখ সন্ধ্যার পর ছদ্মবেশে ট্রান্সফর্মারের পাশের রাস্তায় উদ্দেশ্যহীনভাবে পায়চারি করতে থাকেন। লােকজনের চলাচল কমে এলে ট্রান্সফর্মারে দ্রুত বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়। ফিউজের কর্ডটিকে টেনে গলির অভ্যন্তরে নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানাে হয়। সঙ্গে সঙ্গে পুরাে এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকারঃ মুক্তিযোদ্ধা নুরউদ্দিন চৌধুরী; টেকনােকেয়ার।
 
ফিরিঙ্গিবাজার রাজাকার অধিনায়ককে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা
মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে তথ্য আসে যে, একজন রাজাকার অধিনায়ক কোতােয়ালি থানায় অবস্থান করছে। থানা থেকে বের হয়ে ফিরিঙ্গিবাজারের দিকে যাবে। পরিকল্পনা মতাে মুক্তিযােদ্ধা জাহিদ ফিরিঙ্গিবাজারস্থ জানে আলম দোভাষীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে একটি ট্যাক্সি করে থানার দিকে রওনা হন। পরিকল্পনা ছিল, রাজাকার অধিনায়ককে একজন মুক্তিযােদ্ধা ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দেবেন। তথ্যসংগ্রহকারী রাজাকার অধিনায়কের সাথেই ছিলেন। ইশারা পেয়ে জাহিদ ট্যাক্সি নিয়ে এগিয়ে যান। অধিনায়কের কাছে ট্যাক্সি আসা মাত্রই তিনি পিস্তল দিয়ে গুলি ছােড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পিস্তল থেকে কোনাে গুলি বের হয় নি। উল্লেখ্য, অপারেশনে যাওয়ার সময় মুক্তিযােদ্ধাদের অস্ত্র পরীক্ষা করে নেয়ার নিয়ম ছিল না।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা জাহিদ হােসেন, পতেঙ্গা ।।

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড