You dont have javascript enabled! Please enable it!
কাপ্তাই-মদুনাঘাটে জলবিদ্যুৎ লাইনের টাওয়ারে অপারেশন
উদ্দেশ্য
মুক্তিযােদ্ধারা জলবিদ্যুৎ লাইনের টাওয়ার বিস্ফোরণে বিনষ্ট করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে পাকিস্তানি সেনাদের মনােবলে ভাঙন সৃষ্টির কৌশল পূর্বেই গ্রহণ করেছিলেন। কাপ্তাইয়ের মদুনাঘাট এলাকায় জলবিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের টাওয়ার ধ্বংসকরণের অভিযান তারমধ্যে একটি। মুক্তিযােদ্ধা নুরুল আলম মন্টু ঐ অপারেশনের পরিকল্পনা করেন।
পর্যবেক্ষণ
জলবিদ্যুৎ টাওয়ার অপারেশনের কথা মাথায় রেখে নুরুল আলম মন্টু এক দিন লিচু বিক্রেতার ছদ্মবেশে নির্জন স্থানের টাওয়ার চিহ্নিত করার লক্ষ্যে মদুনাঘাট এলাকায় যান। সে এলাকায় পৌছে তিনি দেখতে পান এলাকাটি নির্জন। তিনি ৫-৬ বার ঐ এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন। সে সময় তিনি দেখতে পান, জলবিদ্যুতের সরবরাহ টাওয়ারগুলাের মধ্যে অপারেশনের জন্য সুবিধাজনক একটি টাওয়ারের অবস্থান ছিল মদুনাঘাট এলাকার উত্তর-পূর্ব দিকের বিলের মাঝে। তিনি এ-ও দেখতে পান যে, টাওয়ারটি বিদ্যুতায়িত করা। এতে স্বাভাবিক অপারেশন পরিকল্পনা করা ছিল অসুবিধাজনক ও বিপজ্জনক।
পরিকল্পনা ও অপারেশন
ইতােমধ্যে নুরুল আলম মন্টু তার এক পরিচিত ডাক্তারের মাধ্যমে WAPDA ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার আশিক ও দিলীপচন্দ্র দাসের সাথে পরিচিত হন। এ ২জন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক। নুরুল আলম মন্টু কাপ্তাই মদুনাঘাট জলবিদ্যুৎ লাইনের টাওয়ারে অপারেশন পরিকল্পনা ও অসুবিধার কথা তাদের কাছে। ব্যক্ত করে ঐ বিষয়ে সাহায্য চান। ঐ ইঞ্জিনিয়াররা সাহায্য করতে রাজি হন । তারা প্রস্তাব দেন, অপারেশনের সুবিধার্থে মুক্তিযােদ্ধারা WAPDA’র একটি পিকআপে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বাের্ড লাগিয়ে লাইনম্যানের ছদ্মবেশে অপারেশন স্কুলে যেতে পারেন। কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা অপারেশনের দিন মাদারবাড়ির আশ্রয় স্থল থেকে নুরুল আলম মন্টুর নেতৃত্বে প্রথমে ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ দাস ও আশিকের বাসায় যান। সেখান থেকে পূর্বপরিকল্পনা মাফিক একটি পিকআপ সংগ্রহ করে এর সামনে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বাের্ড ঝুলিয়ে নেন। নিজেরা বিদ্যুৎ ও পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী সেজে পাকিস্তানি সৈন্যদের দৃষ্টি এড়িয়ে নিরাপদে মদুনাঘাট এলাকায় পৌছেন। পূর্বনির্ধারিত টাওয়ারটির ২০০-২৫০ ফুট দূরে পিকআপটি রেখে নির্দিষ্ট টাওয়ারটির কাছে মুক্তিযােদ্ধারা পৌছে যান।
ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ ও আশিকের শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতি অনুযায়ী একটি তারের সাহায্যে টাওয়ারটির গােড়ার বিদ্যুতায়িত অংশটি বিদ্যুহীন করে নিরাপদে টাওয়ারটির গােড়ায় গিয়ে বিস্ফোরক লাগিয়ে অগ্নিসংযােগ করে দ্রুত সরে পড়েন। অল্পক্ষণের মধ্যে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে জলবিদ্যুৎ টাওয়ারটি উপড়ে পড়ে। মুক্তিযােদ্ধারা একই পিকআপে। করে নিরাপদে শহরে ফিরে আসেন। বিশ্লেষণ। এ অপারেশনের মধ্যে মুক্তিযােদ্ধাদের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলী প্রবণতার প্রকাশ ঘটেছে। তারা চমৎকারভাবে নিজেদেরকে ছদ্মবেশে লুকিয়ে রেখে শত্রুকে বােকা বানিয়ে এ অপারেশন সম্পন্ন করেন। এ অপারেশনের ফলে সাত দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। নির্জন স্থান নির্বাচন, ছদ্মবেশ ধারণ, সরকারি গাড়ির ব্যবহারে গেরিলা পদ্ধতি সফলভাবে অনুসৃত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা নুরুল আলম মন্টু। (কাপ্তাই-মদুনাঘাট জলবিদ্যুৎ লাইনের টাওয়ার অপারেশনের নকশাটি ১১৫৬ পাতায়)

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!