You dont have javascript enabled! Please enable it!
মনসারটেক অ্যামবুশ
উদ্দেশ্য
পটিয়ার মনসারটেকে ছিল রাজাকারদের শক্তিশালী অবস্থান। তারা ঐ এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক অত্যাচার চালাত। মুক্তিযােদ্ধারা রাজাকারদের অত্যাচার বন্ধ এবং তাদের অস্ত্র ও গােলাবারুদ দখলের নিমিত্তে একটি গেরিলা অপারেশনের পরিকল্পনা করেন।
পর্যবেক্ষণ ও পরিকল্পনা
হাবিলদার গােলাপুর রহমান ও হাবিলদার নুরুল আলম মনসারটেক চৌরাস্তার মােড়ে রাজাকারদের ওপর অ্যামবুশ করার লক্ষ্যে ঐ স্থান পর্যবেক্ষণ করে। প্রয়ােজনীয় তথ্যসংগ্রহ করেন। পর্যবেক্ষণ তথ্য পাওয়ার পর ক্যাপটেন করিম অপারেশন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। স্থির হয়, ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঐ অপারেশন পরিচালনা করা হবে।
অপারেশন
অপারেশনের দিন রাত ১০টার দিকে ক্যাপটেন করিমের নেতৃত্বে মােট ৬০৬৫ জনের মুক্তিযােদ্ধার ১টি দল প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তাদের বেইজ থেকে (ধলঘাট হাসপাতাল ও ধলঘাট সেনের বাড়ি) অপারেশন স্থলের দিকে যাত্রা করে। ৩-৪ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তাঁরা রাত ১১টার দিকে অপারেশন স্থলের কাছে উপস্থিত হন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হাবিলদার নুরুল আলমের নেতৃত্বে ২২২৩জনের ১টি গ্রুপ মনসারটেক চৌরাস্তার মােড়ের পশ্চিম দিকে রাস্তায় অ্যামবুশ। অবস্থান নেয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্রুপটি নায়েক আজিজুল হকের নেতৃত্বে ২০২২জন মুক্তিযােদ্ধাসহ দক্ষিণ দিকে অবস্থান নেয়। বাকি ২০-২২জন মুক্তিযােদ্ধা হাবিলদার গােলাপুর রহমানের নেতৃত্বে মনসারটেকের উত্তর দিকে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজাকাররা পটিয়া-কালুরঘাট রাস্তা ধরে উত্তর দিকে যাওয়ার পথে ঐ অ্যামবুশের আওতার মধ্যে আসে। কাছাকাছি আসা মাত্র হাবিলদার গোলাপুর রহমানের দল অতর্কিতে রাজাকারদের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। রাজাকাররাও পালটা গুলি করার চেষ্টা করে। ঠিক সে মুহূর্তে দক্ষিণ দিক থেকে নায়েক আজিজের গ্রুপ রাজাকারদের অবস্থানে গুলি বর্ষণ শুরু করে। রাজাকাররা পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে ভয়ে পশ্চিম দিকে পালাতে থাকে। কিন্তু তারা সেদিকে আগে থেকে অবস্থান গ্রহণ করা হাবিলদার নুরুল আলম গ্রুপের আক্রমণের মুখে পড়ে। এ পর্যায়ে নিরুপায় রাজাকাররা বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করে। ঘটনাস্থল থেকে ৬টি .৩০৩ রাইফেল, ম্যাগাজিন ও কিছু সংখ্যক গােলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। মুক্তিযােদ্ধারা এ অপারেশনে ২টি এলএমজি, ৭-৮টি স্টেনগান, ৪টি এসএলআর ও ৫০-৫৫টি রাইফেল ব্যবহার করেন।
বিশ্লেষণ
মুক্তিযােদ্ধারা রাজাকারদের চলাচলের পথে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট স্থানে এ অ্যামবুশের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন। ঐ স্থানে পরিকল্পনা মাফিক পর্যায়ক্রমে আক্রমণের মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধারা রাজাকারদের মধ্যে বিস্ময় ও ভীতি সৃষ্টি করে তাদের পরাভূত করতে সক্ষম হন। মুক্তিযােদ্ধাদের কৌশলগত ও অপারেশনের সাফল্যের নেপথ্যে ভূমি ব্যবহারের জ্ঞান তাদের পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে ভূমির সাথে পরিচিত স্থানীয় লােকদের সংশ্লিষ্টতা অপারেশনকে সফল করে তােলে।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা মাে. শাহাদুল হক। (মনসারটেক অ্যামবুশের নকশাটি ১১৫৪ পাতায়)

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!