You dont have javascript enabled! Please enable it! পটিয়া ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ইউনিয়নে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহতকরণের প্রচেষ্টা - সংগ্রামের নোটবুক
পটিয়া ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ইউনিয়নে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহতকরণের প্রচেষ্টা
অবস্থান প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য
চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পটিয়া থানার অবস্থান। এ থানার উত্তর-পূর্ব দিকে বােয়ালখালী ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আনােয়ারা থানা অবস্থিত। প্রাথমিক প্রতিরােধ ভেঙে পড়ার পর ইপিআর ও সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে আশ্রয় নেন। এক পর্যায়ে তারা মুক্তিযুদ্ধের সামরিক সংগঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে চলে যান। বিমানবাহিনী, ইপিআর, আনসার ও সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য ভারত না গিয়ে স্থানীয়ভাবে মুক্তিযােদ্ধাদের সংগঠিত করে সীমিত প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। প্রশিক্ষিত মুক্তিযােদ্ধারা পুরাে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গেরিলা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনী। পটিয়া থানা সদরে অবস্থান করলেও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের দখলে।  পাকিস্তানি বাহিনী রাজাকারদের মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধাদের দমন করার প্রচেষ্টা চালালেও পুরােপুরি ব্যর্থ হয়। স্থানীয় জনসাধারণ মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয়সহ যাবতীয় সাহায্য সহযােগিতা প্রদান করতেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা মাঝেমধ্যে রাজাকারদের সহযােগিতায় মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় কেন্দ্রে হানা দিয়ে সেগুলাে জ্বালিয়ে দেয়। কিন্তু মুক্তিযােদ্ধাদের নিরস্ত্র ও হতােদ্যম করতে ব্যর্থ হয় এর অন্যতম কারণ ছিল, মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতি এ এলাকার জনসাধারণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযােগিতা এবং এ অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার অসুবিধা।

পাকিস্তানি বাহিনী। মুক্তিযােদ্ধাদের দমন ও তাদের আশ্রয় কেন্দ্রগুলাে ধ্বংস করার জন্য চূড়ান্ত। পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পটিয়া এলাকার ১জন বাঙালি ঠিকাদারের মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধা নেতারা এ তথ্য অবগত হন। নয়াপাড়াস্থ সেনানিবাসে পটিয়া এলাকার এ ঠিকাদার তরকারি সরবরাহ করতেন। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি মানচিত্র ও গােপন পরিকল্পনা হস্তগত করেন। এতে দেখা যায়, শীঘ্রই পাকিস্তানি সৈন্যরা পটিয়ার ৩টি ইউনিয়নে হামলা করার পরিকল্পনা করছে। স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা। অধিনায়করা এ হামলা মােকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সমস্যা ছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্র ও গােলাবারুদের তুলনায় মুক্তিযােদ্ধাদের অস্ত্র ও গােলাবারুদ ছিল নগণ্য। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়, নিয়ন্ত্রিত ফায়ার দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে মােকাবিলা করা হবে। তবু এ অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীকে তাদের ইচ্ছা পূরণ করতে দেওয়া হবে না। পাকিস্তানি বাহিনীর পরিকল্পনা থেকে জানা যায় যে, পটিয়া থানার ৩টি ইউনিয়ন ৬ নম্বর কুসুমপুরা, ৭ নম্বর জিরি ইউনিয়ন ও ৮ নম্বর খাসিয়াইশ ইউনিয়নে একই দিনে হামলা করা হবে। পরিকল্পনামতাে পাকিস্তানি বাহিনী।

 
কালুরঘাট থেকে পাঁচুরিয়া হয়ে কালারপুল আসবে। কালারপুল থেকে আবার শান্তিরহাট হয়ে ফকিরহাট বাজারে যাবে। তাদের সহযােগিতা করবে রাজাকাররা। ৩টি ইউনিয়নে মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় কেন্দ্র ছিল নিমরূপ: ক. জিরি বিদ্যাপীঠ স্কুল আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার সরবরাহ করতেন গৌরচন্দ্রনাথ মহাজন। খ, খাসিয়াইশ বর্ধনপাড়া প্রাইমারি স্কুল আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার সরবরাহ করতেন ব্রজেন্দুবর্ধন। গ. কট্টলা বুদ্ধিস্ট পাড়ায় বৌদ্ধদের কেয়াং ঘরে অস্ত্র রাখা হতাে। ক্যাপটেন করিম, আনসার অধিনায়ক মাহমুদুল হকসহ নেতৃস্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়করা ৩টি ইউনিয়নের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীকে অ্যামবুশ করার পরিকল্পনা করেন। আশপাশের এলাকার মুক্তিযােদ্ধাদের জিরি বিদ্যাপীঠ স্কুলে জড়াে করে পরিকল্পনা মতাে নির্দেশ প্রদান করা হয়। পুরাে দলকে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত করে বিভিন্ন স্থানে পজিশন নেয়ার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা। হয়। প্রতি দলে ৪১৫জন মুক্তিযােদ্ধা ছিলেন। পুরাে দলের অধিনায়ক ছিলেন। মাহমুদুল হক, ক্যাপটেন করিম ও মহসিন। পাকিস্তানি সেনারা যে-সব পথে যাতায়াত করবে ধারণা করা হয়েছিল, সেগুলাে ছিল: কালুরঘাট থেকে পাচুরিয়া হয়ে কালারপুল; তারপর শান্তিরহাট হয়ে ফকিরহাট বাজার; মনসারটেক হয়ে বুথপুরা বাজার; বিল্লাপাড়ার মধ্য দিয়ে জিরি মাদ্রাসা পর্যন্ত অথবা মেরিন অ্যাকাডেমি থেকে পেশকারহাট হয়েও আসতে পারে। পাকিস্তানি বাহিনীর আগমনের সম্ভাব্য পথগুলাে চিহ্নিত করার পর নিম্নবর্ণিত স্থানে বিভিন্ন উপদলকে পাকিস্তানি বাহিনীকে অ্যামবুশ করার জন্য পজিশন নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়: ক, শান্তিরহাটের ১০০ গজ পূর্ব দিকে ৮-১০জনের ১টি দল। খ, ফকিরহাট বাজারের ফকিরা মসজিদের দুই দিকে হাবিলদার লতিফ ও হাবিলদার সুলতানের নেতৃত্বে ২টি দলকে অ্যামবুশের পজিশন নেয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুরাে অপারেশন দলে মাত্র ২টি এলএমজি থাকলেও ২ দলের প্রত্যেককে ১টি করে এলএমজি প্রদান করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে, পাকিস্তানি সৈন্যরা শান্তিরহাট হয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র ফকিরহাট বাজারে আসার কথা ছিল। ফকিরহাট বাজার মসজিদের আশপাশের এলাকা অ্যামবুশের জন্য উপযুক্ত হিসেবে। বিবেচিত হয়। গ, কাজিরদিঘির পাড়। ঘ. ফুরসিপাড়ায় যেখানে হাবিলদার নুরন্নবীর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধা মহসিন, কালুসহ ৮-১০জন। ঙ. বিদ্যাপীঠ স্কুলে ১টি রিজার্ভ পার্টি। চ. পেশকার হাট। ছ, কালীগঞ্জ। জ, মনসারটেক। ঝ, চানখালী সংলগ্ন কেরিঞ্চায়।
 
অপারেশন
পাকিস্তানি বাহিনী কালুরঘাট থেকে পাঁচুরিয়া হয়ে তাদের কনভয় নিয়ে কালারপুল আসে। পাঁচুরিয়া থেকে শান্তিরহাট, ফকিরহাট, জিরি ও পেশকারহাট পর্যন্ত ছিল কাঁচা রাস্তা। তাই কালারপুলে তাদের মূল দল অবস্থান নিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ। করার জন্য ১ সেকশন সৈন্য অগ্রবর্তী দল হিসেবে পাঠানাে হয়। আনুমানিক ১০১১টার দিকে ১১জনের দলটি ১টি ট্রাকে করে শান্তিরহাট পর্যন্ত আসে। কাঁচা রাস্তা হওয়ায় ট্রাক আর অগ্রসর হতে পারছিল না। পাকিস্তানি বাহিনীর স্থানীয় সহযােগী। ডা. ইউনুস সাইকেলে করে পুরাে এলাকায় মুক্তিযােদ্ধাদের বিভিন্ন অবস্থান সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করে তা তাদেরকে অবহিত করে। ফকিরহাট বাজারে মুক্তিযােদ্ধাদের দৃঢ় অবস্থান সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী ফকিরহাটে না গিয়ে শান্তিরহাট থেকে সােজা দক্ষিণে জিরি গ্রামের দিকে রওনা হয় (এ গ্রামে জিরি। মাদ্রাসা অবস্থিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে এ মাদ্রাসা পাকিস্তানি সহযােগীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতাে কিন্তু মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণের ফলে তাদের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর মুক্তিযােদ্ধারা জিরি বিদ্যাপীঠ স্কুলে গােপন আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তােলেন)। জিরি থেকে একটি রাস্তা দক্ষিণ দিকে মালিয়ারা ও অন্য একটি রাস্তা সােজা পশ্চিম দিকে ফুরসিপাড়ার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। জিরি মাদ্রাসা থেকে ১০০ গজ উত্তরে কাজিরদিঘির দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ে ৪জন মুক্তিযােদ্ধার একটি অ্যামবুশ দল ছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে মুক্তিযােদ্ধা লােকমান তাঁর এসএমজি নিয়ে ৪জনের অ্যামবুশ দলের অজান্তে পজিশন নেন।
 
তিনি মাত্র আগের দিন ভারত থেকে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে আসেন। তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪১৫ বৎসর। অধিনায়ক মাহমুদুল হক তাঁকে এ অপারেশনে অংশগ্রহণ করতে বারণ করেছিলেন। তিনি অধিনায়কের নির্দেশ অমান্য করে অগােচরে কাজিরদিঘির পাড়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরিকল্পনা ছিল, পাকিস্তানি বাহিনী জিরির দিকে অগ্রসর হলে কাজিরদিঘিতে অবস্থানরত ৪জন মুক্তিযােদ্ধা গুলি বর্ষণ করতে থাকবেন এবং জিরি বিদ্যাপীঠ স্কুলের রিজার্ভ থেকে ১টি দল তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের দেখে কাজিরদিঘিতে অবস্থানরত ৪জনের দলটি কোনােরকম প্রতিরােধের চেষ্টা না করে মালিয়ারার দিকে পিছু হটে যায়। ফলে বিদ্যাপীঠ স্কুলে অবস্থিত রিজার্ভ দল থেকে সাহায্য পাঠানাে হয় নি। তরুণ মুক্তিযােদ্ধা লােকমান তার পজিশন থেকে তা বুঝতে পারেন নি। তিনি একাগ্রতার সাথে তার অস্ত্র তাক করে অস্ত্রের কার্যকর সীমার মধ্যে শক্রর আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। ঠিক সে সময় আবদুস সালাম (স্থানীয় ১জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী) মুক্তিযােদ্ধা লােকমানের একা উপস্থিতি ও সম্ভাব্য বিপদ লক্ষ্য করে তাকে সতর্ক করে দেন। তিনি একটু শব্দ করেই লােকমানকে সতর্ক করেছিলেন। তার কণ্ঠ শুনে পাকিস্তানি সেনারা সঙ্গে সঙ্গে তাদের অবস্থান শনাক্ত এবং গুলি বর্ষণ করে। ঘটনাস্থলেই ২জন শহিদ হন। পরে ঐ স্থানেই মুক্তিযােদ্ধা লােকমানকে পরে সমাহিত করা হয়। শহিদ মুক্তিযােদ্ধা লােকমানের সমাধিস্থল আজও ঐ অঞ্চলের জনগণকে আলােড়িত করে।
এদিকে পাকিস্তানি সেনারা শান্তিরহাট থেকে সােজা দক্ষিণ দিকে জিরি মাদ্রাসা পর্যন্ত আসে। জিরি মাদ্রাসার মুফতিকে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারপর পাকিস্তানি সেনারা পশ্চিম দিকে ফুরসিপাড়ার দিকে রওনা হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, ফুরসিপাড়া থেকে বেল্লাপাড়া হয়ে কালারপুলে ফেরত যাওয়া। ফুরসিপাড়ায় এসেই তারা মুক্তিযােদ্ধা দলের অ্যামবুশে পড়ে। এখানে ৮জন মুক্তিযােদ্ধা অ্যামবুশ নিয়ে থাকলেও শুধু মুক্তিযােদ্ধা বদিউল আলম তার এসএলআর দিয়ে গুলি বর্ষণ করতে থাকেন। বাকি ৭জন গুলি বর্ষণের চেষ্টা না করে স্থান ত্যাগ করেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা পালটা গুলি বর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযােদ্ধা বদিউল আলমের গুলি বর্ষণে ২জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং ২জন আহত হয়। মুক্তিযােদ্ধা বদিউল আলম পাকিস্তানি সৈন্যদের পালটা গুলি বর্ষণে শহিদ হন। মুক্তিযােদ্ধা কালু গুলিবিদ্ধ হন। পাকিস্তানি সেনারা ফিরে গিয়ে একই দিন সন্ধ্যার সময় আবার শান্তিরহাট ও জিরি গ্রামে মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর প্রতিশােধ নেয়ার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আসে কিন্তু মুক্তিযােদ্ধারা সকালবেলার ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এলাকার অনেক জনসাধারণও নিরাপদ আশ্রয়ে সরে পড়ে। জিরি গ্রামের ২জন বালক কৌতূহলবশত পাকিস্তানি সেনাদের দেখতে এলে তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের না পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা ফেরত চলে যায়।
 
বিশ্লেষণ
মুক্তিযােদ্ধা নেতারা ৩টি ইউনিয়নে পাকিস্তানি বাহিনীকে সীমিত অস্ত্র ও জনবল নিয়েও প্রতিরােধের পরিকল্পনা করে নেতৃত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় প্রদান করেন। পাকিস্তানি সেনারা, মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে কৌশলগতভাবে অনুকূল প্রধান অ্যামবুশ স্থল ফকিরহাটে না গিয়ে জিরি গ্রামের দিকে গমন করে। ফলে পাকিস্তানি সেনাদের সফলভাবে অ্যামবুশ করা সম্ভব হয় নি। পাকিস্তানি সেনারা জিরি গ্রামের দিকে রওনা হলে কাজিরদিঘির পাড়ের মুক্তিযােদ্ধা দল তাদেরকে প্রতিরােধ না করে পিছু হটে যায়। ফলে পরিকল্পনা মতাে দলে না থেকেও তরুণ মুক্তিযােদ্ধা লােকমান ও ১জন নিরীহ মানুষ শহিদ হন। এ স্থানে অবস্থানরত মুক্তিযােদ্ধাদের সাহসিকতার ঘাটতিকে বিবেচনায় রেখেও আরও কিছু দুর্বল দিক চিহ্নিত করা যায়।  পরিকল্পনাকারীরা জিরি গ্রামের দিকে পাকিস্তানি সেনাদের আগমনের সম্ভাব্যতাকে তুলনামূলক কম প্রাধান্য দেন এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও নগণ্য সংখ্যক মুক্তিযােদ্ধাকে এ স্থানে নিয়ােজিত করেন। অন্যদিকে, পরিকল্পনা করার সময় পাকিস্তানি সেনাদের আগমনের সব বিকল্প পথকে বিবেচনায় না রেখে সংর্কীণ। দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় প্রদান করেন।
তরুণ মুক্তিযােদ্ধা লােকমান স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে একাই পাকিস্তানি বাহিনীকে আঘাত করার জন্য অসীম সাহসিকতার পরিচয় প্রদান করলেও অধিনায়কের আদেশ অমান্য করার মূল্য দিতে হয়েছিল। স্বীয় জীবন বিসর্জন দিয়ে। ফুরসিপাড়ায় পজিশন নেয়া ৮জন মুক্তিযােদ্ধা সংঘবদ্ধভাবে পাকিস্তানি। সৈন্যদের বাধা না দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে স্থান ত্যাগ করেন। কেবল মুক্তিযােদ্ধা বদিউল আলম বীরত্বের সাথে একাই পাকিস্তানি বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করেন। এর ফলে ২জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ২জন আহত হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের পুরাে দল সম্মিলিতভাবে গুলি বর্ষণ করতে থাকলে পাকিস্তানি সৈন্যদের কেউই ফেরত যেতে পারত না এবং মুক্তিযােদ্ধা বদিউল আলমকেও হয়ত জীবন দিতে হতাে না। সার্বিকভাবে মুক্তিযোদ্ধারা সফল না হলেও পাকিস্তানি বাহিনী ৩টি ইউনিয়নে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে এবং মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় কেন্দ্রে হামলা করতে ব্যর্থ হয়। অগ্রবর্তী দলের হতাহতের ঘটনায় পাকিস্তানি বাহিনীর মূল দল ফেরত চলে যায়।

তথ্যসূত্র:

১. সাক্ষাৎকার: আনসার অধিনায়ক মাহমুদুল হক।
২. বাংলাদেশ মুক্তিযােদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধে দক্ষিণ চট্টগ্রাম।

(পটিয়া ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ইউনিয়নে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহতকরণ প্রচেষ্টার

নকশাটি ১১৪০ পাতায়)

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড