ইন্দ্রপুল অপারেশন (পটিয়া)
প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য
পটিয়ার পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের সহযােগিতায় প্রায়ই জঙ্গলঘাটসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক অত্যাচার চালাত। ঐ এলাকার মুক্তিবাহিনী গ্রুপ অধিনায়ক শাহ আলম তার গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে সৈনিকদের চলাচলের রাস্তার একটি ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করেন।
পর্যবেক্ষণ, পরিকল্পনা ও অপারেশন
অপারেশনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জন্য মুক্তিযােদ্ধা উদয়ন নাগ ও পিযুষ বড়ুয়া বাঁশ ক্রেতার ছদ্মবেশে ব্রিজটি পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁরা দেখে নিয়েছিলেন, ব্রিজে বিস্ফোরক স্থাপনের স্থান, সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা অবস্থান এবং অপারেশন শেষে প্রত্যাবর্তন পথ ইত্যাদি। পরিকল্পনা অনুযায়ী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে অপারেশন গ্রুপটি জঙ্গলঘাট গ্রামের অ্যাডভােকেট বি নন্দীর বাড়ি থেকে প্রয়ােজনীয় সরঞ্জামসহ অপারেশন স্থলের দিকে যাত্রা করেন। দলটি ছিল ২২জনের। তারা বি নন্দীর বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের খালের পশ্চিম পাড় ধরে উদ্দিষ্ট পুলের কাছে এসে পেীছেন। সেখানে এসে তারা ৩টি গ্রুপে ভাগ হন। ৫জনের ১টি গ্রুপ এলএমজিসহ ‘প্রােটেকশন পাটি’ হিসেবে অবস্থান নেয় ব্রিজের পূর্ব পাশে। পশ্চিম দিকে পাঠানাে হয় বাকি মুক্তিযােদ্ধাদের অ্যাকশন পাটি” হিসেবে। তাদের কাজ ছিল বিস্ফোরক লাগানাে। ব্রিজের নিচে তারা সর্বমােট ১৪টি বিস্ফোরক স্থাপন করেন। বিস্ফোরকে ২ মিনিটের একটি ফিউজ দিয়ে তারা সেখান থেকে সরে এসে একত্রে পশ্চিমের কাগজীপাড়ার মধ্য দিয়ে লাইখাইন গ্রাম ও গৈরালা হয়ে ধলঘাট স্টেশনের পাশ দিয়ে পূর্বনির্ধারিত স্থানে পৌছে যান। ইতােমধ্যে যথাসময়ে বিস্ফোরকগুলাে বিস্ফোরিত হলে ব্রিজটি চলাচলের অযােগ্য হয়ে পড়ে।
ফলাফল ও বিশ্লেষণ
ব্রিজে বিস্ফোরণের তাৎক্ষণিক ফল হিসেবে পাকিস্তানি সেনারা পার্শ্ববর্তী কাগজী গ্রামে হত্যা, নারীদের পাশবিক নির্যাতন ও অন্যান্য ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তবে তাদের চলাচল খুবই সীমিত হয়ে পড়ে। ব্রিজ উড়ানাে সফল হলেও সেটি গ্রামের ভিতর থাকায় স্বভাবতই ঐ গ্রামের লােকজনের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার বেড়ে যায়। এ অপারেশনে রাইফেল, এসএলআর, স্টেনগান, গ্রেনেড, রিভলভার, এলএমজি ও বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়। আপাতদৃষ্টিতে অপারেশনটিকে সাদামাটা এবং স্থানিকভাবে জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকারক মনে হলেও এটি সমকালের পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এটি সুপরিকল্পিত ও বাস্তবায়িত; সুতরাং সফল। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা উদয়ন নাগ ।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড