ক্যাথলিক ক্লাব সন্নিহিত চৌমােহনার ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ
প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য
চট্টগ্রামের ক্যাথলিকরা ছিল কিঞ্চিৎ পরিমাণে আমেরিকান সমর্থক। অন্যদিকে, আমেরিকা ছিল পাকিস্তান সরকারের সহযােগী। ফলে মুক্তিযােদ্ধারা ঠিক করেন, ঐ এলাকার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করবেন। উদ্দেশ্য, ক্যাথলিকদের অসুবিধায় ফেলা এবং তাদের সম্পর্কে পাকিস্তানিদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা।
পরিকল্পনা
নুরুল আলম মন্টু ছিলেন ঐ অপারেশনের মূল পরিকল্পক ও পরিচালক। তাঁকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেন পল রবিনসন নামে একজন খ্রিষ্টান।
পর্যবেক্ষণ
নুরুল আলম মন্টু নিজে ৮-১০ বার ট্রান্সফর্মার এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি ঐ এলাকার লােকজনের যাতায়াত ও রাস্তাঘাট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসংগ্রহ করেন। এর ওপর ভিত্তি করে সার্বিক অপারেশন পরিকল্পনা করা হয়।
অপারেশন
অপারেশনের দিন বিকাল ৪টার দিকে নুরুল আলম মন্টুর নেতৃত্বে ৪জন মুক্তিযােদ্ধা প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতিসহ তাদের ক্যাথলিক চার্চের বেইজ থেকে যাত্রা শুরু করেন। ১০-১২ মিনিটের মধ্যেই তারা ট্রান্সফর্মার এলাকায় পৌঁছেন। সেখানে প্রথমে তারা মুক্তিযােদ্ধাদের সহযােগী এক স্থানীয় বিধবা স্কুল শিক্ষিকার বাসায় আশ্রয় নেন। বিধবার বাসাটি ছিল দোতলায়। সেখান থেকে আশপাশের সবকিছু পরিষ্কার দেখা যেত। বিধবার বাসায় ১জন মুক্তিযােদ্ধাকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে রাখা হয়। তার দায়িত্ব ছিল বাঁশি দিয়ে শত্রুর উপস্থিতি জানানাে। বাকি ৩জনের ১জনকে রাস্তার ওপর রাখা হয়। তাঁর কাজ ছিল শত্রুর উপস্থিতি দেখলে পাখির ডাক দিয়ে। অন্যদের সতর্ক করে দেওয়া। অন্য ২জন নুরুল আলম মন্টু ও পল রবিনসন গেরিলা অপারেশন তৎপরতায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পল রবিনসন বিদ্যুৎ পাইলনটিতে বিস্ফোরক বাধেন, আর নুরুল আলম মন্টু তাতে ফিউজ লাগিয়ে দেন। রবিনসন নিচে নেমে এলে ফিউজে অগ্নিসংযােগ করা হয়। তারপর পূর্বনির্ধারিত সিগন্যাল অনুসারে সবাইকে একত্র করে তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রান্সফর্মারটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। ফলাফল ও বিশ্লেষণ ট্রান্সফর্মার অপরেশনের দুটি উদ্দেশ্যই অর্জিত হয়েছিল। কারণ, এ অপারেশনে ট্রান্সফর্মারটি সম্পূর্ণ বিস্ফোরিত হলে ঐ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। খ্রিষ্টানদের মনে ভীতির সৃষ্টি হয়। এ অপারেশনের পরবর্তী জের হিসেবে পাকিস্তানি সেনারা ক্যাথলিকদের ওপর সন্দেহ প্রসূত অত্যাচার শুরু করে। এ অত্যাচারের ফলে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ক্যাথলিকদের সমর্থনও হ্রাস পায় এবং দূরত্বের সৃষ্টি হয়। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা নুরুল আলম মন্টু ।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড