পাকিস্তানের সংহতি দিবসে স্টেশন রােডে অপারেশন
প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের সংহতি দিবস হিসেবে ৬ সেপটেম্বরকে উদ্যাপন করতাে। ১৯৬৫ সালের এ তারিখে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এবারও পাকিস্তান সরকার দিবসটিকে যথাযােগ্যভাবে পালনের উদ্যোগ নেয়। এজন্য চট্টগ্রামেও বিস্তৃত কর্মসূচি প্রণীত হয়েছিল। সুতরাং এমন একটি দিনে গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং মুক্তিযােদ্ধাদের শক্তি প্রদর্শনই উদ্দেশ্য ছিল।
পরিকল্পনা
এজন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা হয় পাথরঘাটা নজুমিয়া লেইনের আবু তালেবের বাড়িতে পাকিস্তান সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে প্রণীত কর্মসূচি অনুযায়ী পাকিস্তানসমর্থিত গােষ্ঠী মিছিল বের করতে পারে, এ তথ্য মুক্তিযােদ্ধারা জানতেন। সুতরাং মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী মিছিলের ওপর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য সকাল থেকেই টার্গেট চিহ্নিত করে আক্রমণ করা হবে বলে ঠিক হয়।
অপারেশন
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ সেপটেম্বর পাকিস্তানের সংহতি দিবসে সকালে অপারেশন গ্রুপ অধিনায়কের নির্দেশে ১জন সহযােদ্ধাসহ মুক্তিযােদ্ধা সৈয়দুল হক সৈয়দ এবং রফিকুল ইসলাম ১১টার দিকে গােপন আস্তানা থেকে বের হয়ে কোতােয়ালি থানার মােড়ে আসেন। সেখান থেকে তারা একটি ট্যাক্সি নিয়ে নিউ মার্কেট দিয়ে ঘুরে ডিসি হিল, জামাল খান রােড হয়ে আন্দরকিল্লায় পৌছে দেখতে পান, আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের পাশে মানুষের জমায়েত। মসজিদের পার্শ্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১টি গাড়ি দাঁড়ানাে এবং বক্সিরহাটেও তাদের অবস্থান ছিল। এ জমায়েত থেকে ছােটোখাটো একটি মিছিল পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে লালদিঘির মাঠের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিলের মাঝে ও পিছনে গাড়ি থাকায় গ্রেনেড নিক্ষেপ সম্ভব হয় নি। এখান থেকে ব্যর্থ হয়ে তারা পূর্বপরিকল্পনা পরিবর্তন করে মিছিলের বদলে যে-কোনাে একটি স্থানে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর আক্রমণ করার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী লালদিঘি হতে কোতােয়ালি হয়ে টার্গেটের খোঁজে স্টেশন রােড হয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের দিকে রওনা হন।
রিয়াজউদ্দিন বাজার ও উজালা হলের মাঝামাঝি স্থলে পাশাপাশি দাঁড়ানাে ২টি মিলিটারি গাড়ি তাদের চোখে পড়ে। এর মধ্যে ১টি ট্রাক, অন্যটি জিপ। সম্ভবত ট্রাকে কোনাে মালামাল বােঝাই করছিল। এমতাবস্থায় সুযােগ বুঝে বেলা প্রায় ১টার সময় ২টি গাড়ির মাঝখানে তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন।
ক্ষয়ক্ষতি ও প্রতিক্রিয়া
বিবিসি থেকে সেদিনই এ অপারেশনটির খবর গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়েছিল। বিবিসিতে প্রচারিত সংবাদে বলা হয় যে, দিনদুপুরে চট্টগ্রাম শহরের সদর রাস্তায় বাঙালি গেরিলারা পাকিস্তানি বাহিনীর গাড়িতে গ্রেনেড ছুড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে লােকমুখে জানতে পারা যায় যে, সেখান থেকে ৫-৬জন সৈনিককে গুরুতর আহত অবস্থায় ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এতে বেশ কয়েকজন পথচারীও আহত হয়। এ গ্রেনেড অপারেশনের পর থেকে পাকিস্তানি বাহিনী রাস্তায় বিভিন্ন পথচারীকে এবং গাড়ি তল্লাশি করে। তবে তাৎক্ষণিক তেমন কোনাে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে নি।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা রফিকুল ইসলাম। (পাকিস্তানের সংহতি দিবসে স্টেশন রােডে অপারেশনের নকশাটি ১১৩৭ পাতায়)