You dont have javascript enabled! Please enable it!
নিউ মার্কেটের মােড়ে ইপিআরটিসি বাসে অগ্নিসংযোেগ
 
 
প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য, পর্যবেক্ষণ ও পরিকল্পনা
এফএফ-৯-এর অধিনায়ক মুক্তিযােদ্ধা জিন্নাহ (মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রতিপক্ষের হাতে নিহত) তাঁর দলসহ শহরে প্রবেশ করেই বিভিন্ন স্থানে অনেক অপারেশন পরিচালনা করেন। দুর্ধর্ষ প্রকৃতির জিন্নাহ অকুতােভয়ে তার তৎপরতা অব্যাহত রাখেন। শহরে ইপিআরটিসির বাস চলাচল করত। তিনি শহরের কেন্দ্রস্থল নিউ মার্কেটের মােড়ে ইপিআরটিসির বাস জ্বালিয়ে দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা। করেন। এজন্য তিনি নিজেই এলাকা ঘুরে বিস্তারিত তথ্যসংগ্রহ করেন। তারপর তিনি এ অপারেশনে তাঁর দলের মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে কে কোথায় অবস্থান করবে। এবং আসা-যাওয়ার পথ নির্দিষ্ট করেন। ভাের বেলায় অপারেশন চালানাের সিদ্ধান্ত হয়। কারণ, ঐ সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কম থাকে। সুতরাং তাদের হস্তক্ষেপ করার আশঙ্কাও কম থাকবে। পরিকল্পনা করার সময়ই ঠিক করা হয়: ক. জিন্নাহ কমান্ডে থাকবেন এবং তার সংকেত মতাে (সিগন্যাল) অপারেশন শুরু ও শেষ হবে। খ, আহমেদ উল্লাহ অস্ত্রের মুখে বাস থেকে লােকজন নামিয়ে পরে বাসে বােমা নিক্ষেপ করবেন। জাকারিয়া অপারেশনকালীন কভারিংয়ে থেকে বাইরের যে-কোনাে হামলার মােকাবিলা করবেন। ঘ. প্রবীর গাড়িতে পেট্রোল ছিটিয়ে দেবেন। ঙ. ফিরােজ গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন, যাতে দ্রুত নিরাপদে সরে পড়তে পারেন।
 
 
অপারেশন
পরিকল্পনামতাে মুক্তিযােদ্ধা জিন্নাহ, আহমেদ উল্লাহ, জাকারিয়া আহমেদ ও প্রবীর মিত্র একটি গাড়িতে করে নিউ মার্কেটের মােড়ে আসেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন ফিরােজ আহমেদ। গাড়িটি ১ নম্বর সেক্টরের পক্ষ থেকে জিন্নাহ গ্রুপকে প্রদান করা হয় বলে জানানাে হয়। তারা চকবাজারের গােপন আস্তানা হতে নূপুর সিনেমা হলের সামনে ভাের বেলায় এসে অবস্থান গ্রহণ করেন। সকাল ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা। করলেও ইপিআরটিসি’র কোনাে বাস আসে নি। এক পর্যায়ে তারা হতাশ হয়ে স্থান। ত্যাগ করে রওনা দেন জুবিলি রােডের দিকে। কিন্তু লাভলেইন পর্যন্ত যাওয়ার পর দেখা যায় ২টি বাস একসাথে আসছে। এ অবস্থায় তারা বাস ২টির পিছু পিছু পুনরায় নিউ মার্কেটের মােড়ে আসেন।
 
১টি বাস মােড় ঘুরে স্টেশন রােডের দিকে মুখ করে দাঁড়ানাে মাত্রই পুরাে দল গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাসের দিকে অগ্রসর হয়। পরিকল্পনা মতাে সব যাত্রী নামিয়ে পেট্রোল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। জিন্নাহ বাসের মধ্যে থেকেই আহমদ উল্লাহকে বােমা নিক্ষেপের আদেশ দেন। আহমদ উল্লাহ এর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে তাকে নেমে আসতে বলেন। কিন্তু জিন্নাহ উত্তেজিত হয়ে উঠলে বাসে বােমা নিক্ষেপ করা হয়। সাথে সাথে বাসে আগুন ধরে যায় এবং জিন্নাহর গায়েও আগুন ধরে যায়। তাকে দ্রুত নামিয়ে রাস্তার ওপর গড়াগড়ি করিয়ে আগুন নেভানাে হয়। এর মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী নিউ মার্কেটের। আশপাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে অবস্থান নেয় এবং চারদিক থেকে গোলাগুলি শুরু। করে। অপারেশন গ্রুপ গাড়ি নিয়ে দ্রুত কোতােয়ালির দিকে রওনা হয়। কোতােয়ালির মােড়ে পৌছে দেখা যায়, এক দল পুলিশ ও সৈন্য থানার মধ্যে পজিশন নিয়ে আছে। তাদের গাড়ি দেখে সেদিকে বৃষ্টির মতাে গুলি ছুড়তে থাকে। কোনােরকমে এ আক্রমণ এড়িয়ে ফিরােজ গাড়ি ড্রাইভ করে পাথরঘাটার দিক হয়ে। বান্ডেল রােডে চলে যান।
 
বিশ্লেষণ
 
এ ঘটনা মুক্তিযােদ্ধাদের সাহসের, বুদ্ধির ও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠার ইঙ্গিত প্রদান করে। তবে এ অপারেশনের ফলে গােপনে শহরে অবস্থান করে যে-সব অপারেশন পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ সম্পর্কে পরিকল্পনার সময় চিন্তা করা হলেও তা বাস্তবসম্মত ছিল না। কারণ, পাকিস্তানি সৈন্যরা সাহস করে আরও অগ্রসর হলে তাদের নিরাপদ। প্রত্যাবর্তন বা পশ্চাদপসরণ সম্ভব হতাে না। সার্বিক বিচারে এটি একটি উল্লেখযােগ্য গেরিলা অপারেশন।
 
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা আহমেদ উল্লাহ। সম্পাদকের টীকা: এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ১১ খণ্ডের ২৭৫ পৃষ্ঠায় সংকলিত দলিলে। সেখানে সংঘটনের তারিখ ২৬.৯.৭১ লিপিবদ্ধ সাক্ষাৎকার দানকারী তারিখের কোনাে উল্লেখ করেন নি। (নিউমার্কেটের মােড়ে ইপিআরটিসি বাসে অগ্নিসংযােগের নকশাটি ১১৩৬ পাতায়)
 

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!