সার্সন রােডে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে হামলা
প্রেক্ষাপট
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হােস্টেলের দক্ষিণে চট্টেশ্বরী রােডের সাথে আসকার দিঘির দিক হতে সার্সন রােড এসে মিলিত হয়েছে। এ সার্সন রােডের পাশে অবস্থিত পাকিস্তান টোব্যাকোর একটি বাংলাে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল। এ বাংলোয় ক্যাম্প স্থাপন করে এবং এখান থেকে চট্টেশ্বরী রােড, আসকার দিঘির পাড়, চকবাজার প্রভৃতি এলাকায় নজরদারির কাজ করত।
পরিকল্পনা
এই তথ্যের সঠিকতা যাচাই করে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল সিনেমা প্যালেসের পার্শ্ববর্তী ইসলামিয়া হােটেলে (এখনাে বিদ্যমান) বসে অপারেশনের পরিকল্পনা করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ অবস্থানে হামলা করে। তাদেরকে এ এলাকা ছাড়তে বাধ্য অথবা ভীতি সঞ্চার করে চলাচল সীমিত করা হবে। সে অনুযায়ী মুক্তিযােদ্ধা ইলিয়াস প্রয়ােজনীয় রেকি করে এসে বিস্তারিত রিপাের্ট প্রদান করেন। অপারেশনের জন্য যে-সব তথ্য তিনি সংগ্রহ করেন তা। নিম্নরূপ:
ক, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সকালবেলা সবচেয়ে বেশি ঢিলেঢালাভাবে থাকে। প্রহরীও খুব একটা সতর্ক থাকে না। দ্রুত মুক্তিযােদ্ধাদের পশ্চাদ্ধাবন করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, গাড়িগুলাে তখন তুলনামূলকভাবে চলাচলের জন্য অপ্রস্তুত থাকে। ক্যাম্পটি রাস্তার একেবারেই পাশে। তাই রাস্তা থেকেই গ্রেনেড নিক্ষেপ করা সম্ভব। ঘ, ক্যাম্পটি সশস্ত্র আক্রমণের উপযােগী এবং এতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষতিসাধন করা সম্ভব। কিন্তু এ জন্য প্রচুর জনবল ও ভারী অস্ত্র দরকার হবে। কিন্তু এত অস্ত্র ও জনবল মুক্তিবাহিনীর তখন ছিল না। উ. অপারেশন শেষে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাব্য পথও বিদ্যমান। অপারেশন। উপযুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেনেড নিক্ষেপের মাধ্যমে যথাসম্ভব ভীতি সঞ্চার এবং সে অনুযায়ী প্রাণহানির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে বেশি করে গ্রেনেড চার্জেরও সিদ্ধান্ত হয়। মুক্তিযােদ্ধা মােজাফফর, ইলিয়াস, আবদুস সালামসহ ৭-৮জন মিলে ট্যাক্সিতে করে গন্তব্যে রওনা হন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্পের কাছে পৌছেই ট্যাক্সির গতি কমিয়ে অতি দ্রুততার সঙ্গে ৫-৬টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে দ্রুত প্রত্যাবর্তন করা হয়। পরে জানা গিয়েছিল, এতে ৪-৫জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। তথ্যসূত্র: সাক্ষাঙ্কার: মুক্তিযােদ্ধা মাে. ইলিয়াস। (সার্সন রােডে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে হামলার নকশাটি ১১৩৫ পাতায়)
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড