অপারেশন কোর্ট বিল্ডিং
প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য
আগস্ট মাসে কেসি-২ শহরে আগমন করে। আবদুল্লাহ-আল-হারুনের বর্ণনা মতে, তারা এসেই শহরের জীবনধারা একেবারেই স্বাভাবিক দেখতে পান। পাকিস্তানি বাহিনীও সব জায়গায় অবাধে চলাচল করছে। সর্বত্র একটা নিশ্চিন্ত ভাব। এ অবস্থায় হারুন ও আবু সৈয়দ সরদার মিলে শহরে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে প্রশাসনকে অস্থির ও ব্ৰিত করার পরিকল্পনা নেন। এজন্য তাঁদের কাছে উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় শহরের প্রাণকেন্দ্র কোর্ট হিল।
কোট হিলের অবস্থান
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কোর্ট হিলে অনেক অপারেশন চালানাে হয়। পূর্বোক্ত অপারেশনটিও এর একটি। চট্টগ্রাম শহরের ঠিক মধ্যস্থলে একটি পাহাড় শীর্ষে বিচার-আচার এবং প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র আদালত ভবনের অবস্থান। পাহাড়টি এককালে ‘পরির পাহাড়’ নামে পরিচিত ছিল। তা ছাড়া এটিকে অনেকে কাচারি পাহাড়’ও বলেন। তবে অধিকাংশের কাছে তা কোর্ট হিল নামে সমধিক পরিচিত। শতাধিক বছর যাবৎ এ আদালত ভবন থেকে চট্টগ্রাম জেলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম, নােয়াখালী, কুমিল্লা ও সিলেট নিয়ে গঠিত বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ
শহরের পানওয়ালা পাড়ার জালালের বাড়িতে কোর্ট হিলে অপারেশনের পরিকল্পনা করা হয়। তারা পূর্বেই রেকি করে লক্ষ্য করেন, কোর্টে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে। তাই সাধারণ বেশে কোর্টে প্রবেশে কোনাে অসুবিধা হবে না। তবে অপারেশনের জন্য স্থান ও পদ্ধতি এমনভাবে ঠিক করা হয়, যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি কম হয়। এজন্য অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের স্থানকেই উপযুক্ত লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নেয়া হয়। পরিকল্পনায় নিচের বিষয়গুলাে অন্তর্ভুক্ত করা
ক. গােপন স্থানে (যেমন বাথরুম) লােকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে বােমার টাইমডিভাইস অন করা হবে।
খ, এমন স্থানে রাখতে হবে, যাতে বােমা কেউ নিয়ে না যায়।
গ, বােমা স্থাপনের পর দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হবে।
অপারেশন
সৈয়দ ও মিঠু পরিকল্পনা মতাে অফিস চলার সময় সাধারণ বেশে কোর্টে যান। এর আগে হারুন ২টি বােমাকে ছাতার মধ্যে স্থাপন করে Time Delay Device সংযােগ করে দেন। সাথে এক কেজি পরিমাণ প্লাস্টিক বিস্ফোরক দেওয়া হয়। তারা বােমাটি অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের স্থানটির পাশে রেখে দ্রুত প্রস্থান করেন। নির্দিষ্ট সময়ে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে আদালত ভবন কেঁপে ওঠে। এ অপারেশনে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা যায় নি।
বিশ্লেষণ
প্রশাসনের একেবারে নিউক্লিয়াসে দিবালােকে এমন আক্রমণের ফলে সারা শহরে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে শহর জুড়ে সেনাবাহিনীর চেকপােস্ট বসানাে হয় এবং সশস্ত্র টহল বৃদ্ধি করা হয়। বিভিন্ন সরকারি অফিসে পাহারাও জোরদার করা হয়। মুক্তিকামী জনগণ এ ঘটনায় শঙ্কার পাশাপাশি খুবই আনন্দিত ও উৎফুল্ল হয়। দেশি ছাতার মাধ্যমে বােমা স্থাপন করার কৌশল গ্রহণের মধ্যে সন্দেহ উদ্রেক করার মতাে সুপরিচিত সামগ্রী ব্যবহার অত্যন্ত উপযােগী বলে প্রমাণিত হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের এ গেরিলা অপারেশন প্রশাসনের জন্য ব্রিতকর এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থার সৃষ্টি করতে পেরেছিলন । সে অর্থে এটি একটি উল্লেখযােগ্য সফল অপারেশন। তথ্যসূত্র: মুক্তিযােদ্ধা আবদুল্লাহ-আল-হারুনের সাক্ষাৎকার। (অপারেশন কোর্ট বিল্ডিংয়ের নকশাটি ১১৩২ পাতায়)
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড