You dont have javascript enabled! Please enable it!

মেডিক্যাল কলেজ হােস্টেলের পাশে ইলেকট্রিক পাইলন ধ্বংস

প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য

সেপটেম্বর মাসে শহরে পুরােদমে গেরিলা কর্মকাণ্ড চলছে। এ রকম একটা অস্থিরতা ও অস্বস্তিকর পরিবেশে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষার তারিখ ঘােষণা করা হয়। যুদ্ধে লিপ্ত অধিকাংশ ছাত্রই এ সময় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিল বিএলএফ কেসি-১১১ সিদ্ধান্ত নেয়, মেডিক্যাল কলেজে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে পরীক্ষা আয়ােজনের প্রচেষ্টা ভণ্ডুল করে দিতে হবে। একই সাথে প্রমাণ করে দেওয়া যে, দেশে একটি যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। তা ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে প্রশাসনকে অচল করে দেওয়ার লক্ষ্যেও এ অপারেশন পরিচালনা করা হয়।

পর্যবেক্ষণ ও পরিকল্পনা

মুক্তিযােদ্ধা সাইফুদ্দিন ও ফয়েজ মেডিক্যাল কলেজের আশপাশের এলাকায় পর্যবেক্ষণ করে হােস্টেলের সামনের ২টি ইলেকট্রিক পাইলন নির্দিষ্ট এবং নিমলিখিত বিষয়গুলাে লক্ষ্য করেন:

ক. অপারেশন শেষে প্রত্যাবর্তন করার ৩টি পথ: চট্টেশ্বরী রােড হয়ে চকবাজার, সার্সন রােড হয়ে আসকার দিঘির পাড় এবং চট্টেশ্বরী রােড ধরে পশ্চিম দিকে গিয়ে ওয়ার সিমেট্রি হয়ে মেহেদিবাগ।

খ. আশপাশের এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর কোনাে স্থায়ী উপস্থিতি নেই। তবে অপারেশনের সময় মােবাইল প্যাট্রলের হস্তক্ষেপ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। গ. কী ধরনের বিস্ফোরক এবং কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হবে।

অপারেশন

অপারেশনের দিন সন্ধ্যা ৭টায় সাইফুদ্দিন, বােরহান, ফয়েজ ও গরিবুল্লাহ মিলে কবির তােরণ শেল্টার হতে রওনা হয়ে কদমতলি, এনায়েতবাজার, জামালখান, চকবাজার দিয়ে চট্টেশ্বরী রােডে এসে পৌঁছান। পরিকল্পনা মতাে পাইলনে তাদের মধ্যে ২জন বিস্ফোরক স্থাপন করেন। বাকি ২জন কভারিংয়ের জন্য ট্যাক্সির পাশে অবস্থান নেন এবং এমন অবস্থা তৈরি করেন, যাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে পথিমধ্যে ট্যাক্সি নষ্ট হয়েছে। বিস্ফোরক স্থাপন করার পর পুরাে দল দ্রুত চকবাজারের দিকে চলে যায় এবং যথাসময়ে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পর ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ পাইলন পুরােপুরি ধ্বংস না হয়ে বসে যায়। এর কারণ ছিল, বিস্ফোরক স্থাপনে ভুল। পাইলনের একই উচ্চতায় চার স্থানে বিস্ফোরক স্থাপন করায় বিস্ফোরণে পড়ে না গিয়ে পাইলনটি বসে যায়। সপ্তাহ খানেক পর পাইলনটি মেরামত করা হয়।

প্রভাব

সেনাবাহিনী ও কলেজ প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক প্রমাণের যে চেষ্টা চালায়, তা ব্যর্থ হয়। পরিকল্পনা মতাে মুক্তিযােদ্ধারা অপারেশন সম্পন্ন করেন। এতে প্রমাণিত হয়, শহরে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে এসেছে এবং মুক্তিযােদ্ধারা জনগণের সহায়তায় দিন দিন তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে চলেছেন।

তথ্যসূত্র:

১. সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা সাইফুদ্দিন খালেদ, মুক্তিযােদ্ধা গরিবুল্লাহ। ২. ডা. মাহফুজুর রহমান, বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯৪,

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্র, চট্টগ্রাম।

(মেডিক্যাল কলেজ হােস্টেলের পাশে ইলেকট্রিক পাইলন ধ্বংসের নকশাটি দেখুন ১১২৯ পাতায়)

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!