You dont have javascript enabled! Please enable it! বসতনগরে মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অপারেশন - সংগ্রামের নোটবুক
বসতনগরে মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অপারেশন
অবস্থান
সীতাকুণ্ড থানা থেকে ১ কিলােমিটার উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রােড থেকে একটি কাঁচা রাস্তা শেখপাড়া গ্রামের ভিতর দিয়ে সােজা পশ্চিম দিকে চলে গেছে। ট্রাংক রােড থেকে এ রাস্তা ধরে ২ কিলােমিটার দূরে বসতনগর গ্রাম। এ গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে শেখপাড়া-বসতনগর রাস্তা সংলগ্ন প্রায় সমান্তরালে অবস্থিত ছােটো কুমিরা খাল পূর্ব-পশ্চিমে বয়ে গেছে।
প্রেক্ষাপট
অধিনায়ক নুরুল হুদা সাের্সের মাধ্যমে জানতে পারেন, প্রায় প্রতিদিন ২জন। মিলিশিয়া শেখপাড়া-বসতনগর রাস্তা ধরে চলাচল করে। তারা আশপাশের গ্রামের লােকদের বাড়িঘরে নানা ধরনের উৎপাত ও অত্যাচার করে। স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধারা গ্রামের লােকদের এ মিলিশিয়াদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তা ছাড়া এদের নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত ও ভীত সন্ত্রস্ত করাও গেরিলা যােদ্ধা হিসেবে তাদের দায়িত্ব।
উদ্দেশ্য
ঐ মিলিশিয়াদের শেখপাড়া-বসতনগর রাস্তা ধরে চলাচল করার সময় আকস্মিক আক্রমণে হত্যা করা।
পর্যবেক্ষণ
অধিনায়ক নুরুল হুদাসহ তাঁর গ্রুপের অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের এলাকা সম্পর্কে ভালােভাবে জানা ছিল বলে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করার প্রয়ােজন ছিল না। তবে তারা ঐ মিলিশিয়াদের যাতায়াত পথের খুঁটিনাটি, সময় ও তাদের অপ্রস্তুত অবস্থা চিহ্নিত করার জন্য নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ এবং সে অনুযায়ী অপারেশনের পরিকল্পনা করেন।
অপারেশন
অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি (সঠিক তারিখ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি) অধিনায়ক নুরুল হুদা এ অপারেশন পরিচালনা করেন। তিনি তাঁর সহযােদ্ধাদের (আনুমানিক ৭-৮জন) নিয়ে সাধারণ লােকের বেশে বসতনগরে যান। পর্যবেক্ষণজাত তথ্য অনুযায়ী রাস্তার দুই পাশে পূর্বনির্দিষ্ট স্থানে শত্রুর আগমনের জন্য মুক্তিযােদ্ধারা লুকিয়ে থাকেন। শুধু অধিনায়ক নুরুল হুদা গ্রামের রাস্তা সংলগ্ন চায়ের দোকানে বসেছিলেন। তখন বিকাল আনুমানিক ৪টা। এর আধ ঘণ্টা পর তারা ১০০ গজ দূরে থাকতেই মিলিশিয়াদের দেখতে পান। মিলিশিয়াদের আচরণে মনে হতাে, তাদের ধারণায় গ্রামগুলােয় দিনের বেলায় আক্রমণ করার মতাে সাহস মুক্তিযােদ্ধাদের থাকবে না। হয়তাে এ আশাও তাদের ছিল, মুক্তিবাহিনী কিংবা গ্রামের জনগণ তাদের আক্রমণ করলে পরবর্তীকালে ঐ গ্রামগুলাে পাকিস্তানি সেনারা পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে-এই ভয়েই তাদের কেউ প্রতিহত করতে সাহস পাবে না। তারা প্রায়ই গ্রামের ঐ রাস্তা ধরে সগর্বে চলাচল করত। সেদিনও মিলিশিয়া ২জন তা-ই করেছিল। চায়ের দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় লুকিয়ে থাকা মুক্তিযােদ্ধারা আকস্মিকভাবে আড়াল থেকে উদয় হয়ে মিলিশিয়া ২জনকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে ধরে ফেলে। পরে গ্রামের লােকজনও এসে জমায়েত হয়। এক পর্যায়ে সবাই মিলে মিলিশিয়াদের মেরে ফেলে। মিলিশিয়াদের লাশগুলাে রাস্তা সংলগ্ন ছােটো কুমিরা খালে পুঁতে রাখা হয়।
ক্ষয়ক্ষতি
এ অপারেশনে ২জন মিলিশিয়াকে হত্যা করা হয়। তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত ২টি স্টেনগান মুক্তিযােদ্ধারা দখল করেন। মুক্তিযােদ্ধাদের কেউ হতাহত হন নি। পাকিস্তানি সেনারা জানতে ও বুঝতে পারে নি যে, ২জন মিলিশিয়া কোথায়, কীভাবে মারা গেছে। তাই তারা ঘটনা পরবর্তীকালে বসতনগর গ্রামে যায়। নি। উপরন্তু এ সময় মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণ ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকিস্তানি সেনারা ছিল সব সময় ব্যস্ত ও ভীত সন্ত্রস্ত।
বিশ্লেষণ
অপারেশনকালীন বিক্ষুব্ধ জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে। ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে মিলিশিয়াদের হত্যা করা সহজ হয়েছে। তা ছাড়া লাশ খালে পুঁতে ফেলায় মিলিশিয়াদের নিখোঁজ সংবাদ পাকিস্তানি সেনাদের কাছে পৌছে নি। কারণ, পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা অত্যাচারিত ঐ এলাকার জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক। তা ছাড়া মিলিশিয়ারা মনে করেছিল যে, তারাই ঐ এলাকার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাই তারা কাউকে তােয়াক্কা করত না। এ জন্য স্বীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা ছিল অনেকটা উদাসীন। ফলে সহজেই চারদিক থেকে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযােদ্ধারা তাদের ঘেরাও এবং সম্পূর্ণ পরাভূত করতে সক্ষম। হয়েছিলেন। জনযুদ্ধের নিরিখে এ অপারেশনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক নুরুল হুদা। 

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড