You dont have javascript enabled! Please enable it! বাড়ইপাড়া রেললাইন অপারেশন, বামনসুন্দর-দারােগার হাট অপারেশন - সংগ্রামের নোটবুক
বাড়ইপাড়া রেললাইন অপারেশন
অবস্থান
বারৈয়াঢালা রেল স্টেশনের দক্ষিণে বাড়ইপাড়া গ্রাম সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে একটি গেরিলা অপারেশন পরিচালিত হয়।
উদ্দেশ্য
রেললাইন মাইন দিয়ে ধ্বংস করে পাকিস্তানি সেনাদের চলাচলে বাধার সৃষ্টি করা এবং তাদের মনােবলের ওপর আঘাত হেনে যথাসম্ভব চিড় ধরানাে।
পর্যবেক্ষণ
এলাকার যাবতীয় বিষয় অধিনায়ক ও তাঁর সহযােদ্ধাদের চেনাজানা থাকায় পর্যবেক্ষণ ও অপারেশন একই সাথে সম্পন্ন করা হয়।
অপারেশন
অপারেশনের সঠিক তারিখ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি। তবে মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক। অহিদের মতামতের ভিত্তিতে এ অপারেশনটি ১০ জুন পরিচালিত হয়েছিল বলে ধারণা করা যায়। ১০ জুন রাতে অধিনায়ক মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধা এস এম খুরশিদ আলম, নাসির আহমদ ভূঁইয়া ও আবদুল জলিল ভূঁইয়া বাড়ইপাড়া গ্রাম সংলগ্ন রেললাইনে মাইন পুঁতে রাখার জন্য রওনা হন। অধিনায়ক মাহফুজের বাড়ি ছিল বাড়ইপাড়া গ্রামে। সংশ্লিষ্ট মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ছিল মহালঙ্কা গ্রামে হিতােল মােহাম্মদ ভূইয়ার বাড়ি। মুক্তিযােদ্ধারা খবর নিয়ে জানতে পারেন যে, পাকিস্তানি সেনারা শুভপুরের ভাঙা সড়ক ও রেলসেতু মেরামতের কাজে ব্যস্ত। তারা অনুধাবন করেন যে, এ মেরামত কাজ চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত তাদের চলাচল সচল করে তুলতে পারে। এ আশঙ্কার কথা মনে রেখে মুক্তিযােদ্ধারা এ বাড়ইপাড়া  গ্রাম সংলগ্ন রেললাইন ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ১০ জুন আনুমানিক রাত ৮টায়, তেরিয়াইল গ্রামের উত্তর পাশের কাঁচা রাস্তা ধরে বাড়ইপাড়া গ্রামে তাদের অপারেশনের লক্ষ্যস্থলে যান। সেখানে পৌছে তারা প্রথমেই ওখানে শত্রুপক্ষের পাহারা আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করেন। প্রহরীর অনুপস্থিতির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে সাথে বহন করা ১টি অ্যান্টি-ট্যাংক মাইন রেললাইনের নিচে স্থাপন করেন। তখন রাত ১টা। প্রাথমিক বর্ষাকাল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা নিচু থাকায় সেখানে পানি ছিল। কিন্তু সে রাতের আকাশ ছিল পরিষ্কার। অ্যান্টি-ট্যাংক মাইনটি স্থাপন করেই তারা একটু দূরে দারােগার হাটের দক্ষিণ পাশে মহালঙ্কা বিলের পাশে অবস্থান নেন। রাত ৩টা।
সবাই গভীর আগ্রহে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। খানিক পরে দেখা গেল একটি ট্রেন দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে চলে গেছে। কিন্তু মাইনটি বিস্ফোরিত হওয়ার আওয়াজ তারা শুনতে পান নি। তা ছাড়া ট্রেনটি যাত্রীবাহী না মালবাহী তাও বুঝতে পারেন নি। অবশেষে হতাশ মুক্তিযােদ্ধারা তাদের আশ্রয়স্থল মহালঙ্কা গ্রামে ফিরে যান।  সারাদিন সেখানে অবস্থান করে রাত ৮টায় তারা আবার পুঁতে রাখা মাইনের। স্থানে যান। দেখেন, মাইনটি তখনাে যথাস্থানেই রয়েছে। তারা বুঝতে পারেন, মাইনটিতে যথাযথ চাপ পড়ে নি; তাই বিস্ফোরিত হয় নি। মাইনটি একটু ওপরে  রেললাইন সংলগ্ন করে স্থাপন করা উচিত ছিল। তাই এবার স্থান পরিবর্তন করে তারা নতুনভাবে মাইনটি স্থাপন করেন। রাত তখন ১১টা। এবার এলাকায় না। থেকে তারা তাদের আশ্রয়স্থলে প্রত্যাবর্তন করেন। পরদিন দুপুর ১২টায় তারা  খবর পান, মাইনটি আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে বিস্ফোরিত হয়ে রেললাইন উপড়ে ৩টি বগি লাইন চ্যুত হয়েছে। লাইন চ্যুত ৩টি বগির মধ্যে ২টিতে সেতু নির্মাণসামগ্রী এবং অন্য বগিতে লােকজন ছিল। এখানে ২জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।
 
প্রতিক্রিয়া
 
ঘটনার পরে তিন দিন পর্যন্ত কোনাে ট্রেন চলাচল করে নি। এতে পাকিস্তানি সেনাদের মনােবল ক্ষুন্ন হয় এবং সড়ক ও রেলপথে পাকিস্তানি সেনারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চলাচল করে। এমনকি তারা চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করে।
 
বিশ্লেষণ
 
বাড়ইপাড়া রেললাইনে মাইন স্থাপন গেরিলা অপারেশনের অনন্য একটি দিক নির্দেশ করে। এ ঘটনা গেরিলা যুদ্ধে মাইন কিংবা অন্য বিস্ফোরক ব্যবহারে গেরিলাদের সুসংগঠিত হওয়ার ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির ইঙ্গিত প্রদান করে। তবে বিস্ফোরক ব্যবহারের বাস্তবতা ও অনভিজ্ঞতা জনিত কারণে এ অপারেশনে মুক্তিযােদ্ধাদের পর্যবেক্ষণ ও অপারেশন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ছােটোখাটো ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। প্রাথমিকভাবে মাইন স্থাপনের জন্য অবস্থান নির্বাচনে | ভুলের কারণে মাইনটি বিস্ফোরিত হয় নি। পরবর্তী সময়ে মাইন স্থাপনের পরিকল্পনা সংশােধন করায় মাইন বিস্ফোরিত হয়ে রেললাইন উপড়ে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাক্রম অনুসরণে লক্ষণীয়, মুক্তিযােদ্ধারা নির্দিষ্ট | কোনাে ট্রেনকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নির্ধারণ করেন নি। তা ছাড়া যাত্রীদের ঝুঁকির। মুখে ফেলে দেওয়ার বিষয়টিও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করা হয় নি। তবু সার্বিক বিচারে অপারেশনটি তাৎপর্যপূর্ণ। এ অপারেশনের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে সক্ষম হয় যে মুক্তিযােদ্ধারা ক্রমেই প্রশিক্ষণ ও কৌশলগতভাবে শক্তিশালী। হয়ে উঠছে। আর এ সংবাদ প্রচার নিঃসন্দেহে তাদের মনােবল ক্ষুন্ন করার পিছনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অনির্দিষ্ট কিন্তু সফল এ অপারেশন মুক্তিযােদ্ধাদের মনােবল সমুন্নত করতেও অনিবার্যভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক এস এম খুরশিদ আলম, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।

 
বামনসুন্দর-দারােগার হাট অপারেশন
 
অবস্থান ও পরিবেশ
ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রােডের মিঠাছড়া বাজার থেকে একটি রাস্তা পশ্চিম দিকে বামনসুন্দর-দারােগার হাট বাজারের দিকে গিয়েছে। এ রাস্তায় মিঠাবাজার থেকে জোড়পুকুর পর্যন্ত রাস্তা ইট বিছানাে এবং জোড়পুকুর থেকে বামনসুন্দর দারােগার হাট পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা ছিল। অপারেশনের সঠিক তারিখ অধিনায়ক অহিদ নির্দিষ্টভাবে মনে করতে না পারলেও অপারেশনটি জুন মাসের শেষের দিকে হয়েছে বলে ধারণা করেন। অপারেশনের দিন আবহাওয়া ভালাে ছিল। তা ছাড়া রাস্তার আশপাশের এলাকায় হাঁটু পানি ছিল।
উদ্দেশ্য
পাকিস্তানি সেনাদের চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে তাদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তােলা।
অপারেশন
এলাকা সম্পর্কে পূর্ব থেকেই মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়কের ধারণা থাকায় পর্যবেক্ষণের প্রয়ােজন ছিল না। মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক অহিদ তার গ্রুপসহ মিঠানালা গ্রামের এক হিন্দু বাড়িতে অবস্থান করতেন। ঐ বাড়ির লােকজন পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল। তিনি লােকমুখে শােনেন, পাকিস্তানি সৈন্যরা একটি অসামরিক ট্রাকে করে জোরারগঞ্জ বাজার ক্যাম্প থেকে মিঠাছড়া বাজার হয়ে বামনসুন্দর-দারােগার হাটের দিকে গিয়েছে। ঐ রাস্তা দিয়েই তাদের ফেরত আসা নিশ্চিত ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে ২টি অ্যান্টি-ট্যাংক মাইন ছিল। চিন্তাভাবনা করে ১টি অ্যান্টি-ট্যাংক মাইন জোড়পুকুরের কাছে (যেখানে ইটের রাস্তা শেষ হয়েছে এবং কাঁচা রাস্তা শুরু হয়েছে) গােপনে পুঁতে রাখেন। তখন বেলা ১১টা। পাকিস্তানি সেনারা ট্রাকযােগে বামনসুন্দর-দারােগার হাটে গিয়ে সেখান থেকে হেঁটে দক্ষিণ দিকে মিঠানালা গ্রামে যায় এবং রাজাপুর গ্রাম দিয়ে আবার বামনসুন্দরদারােগার হাট কাঁচা রাস্তায় ওঠে।
 
অধিনায়ক কাশেম গ্রুপের মুক্তিযােদ্ধারাও ঐ এলাকায় অবস্থান করতেন। ইতােমধ্যে তারাও খবর পেয়ে তাদের ২-৩জন মুক্তিযােদ্ধা দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের পার্ক করে রাখা অসামরিক ট্রাকের ফুয়েল ট্যাংকে অতি গােপনে কিছু বালি ও মাটি দিয়ে রাখেন। এ ঘটনা ট্রাকের ড্রাইভার বুঝতে পারে নি। ফলে পাকিস্তানি সেনাদের ট্রাকটি ক্যাম্পে ফেরত যাওয়ার সময় কিছু দূর গিয়েই খারাপ হয়ে যায়। তখন পাকিস্তানি সেনারা উপায়ান্তর না দেখে হেঁটেই মিঠাছড়া বাজারের দিকে এগােতে থাকে। এমনকি নিরাপদে অ্যান্টি-ট্যাংক মাইনের ওপর দিয়ে চলে যেতে সমর্থ হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে তখন স্টেনগান (এসএমসি) থাকায় ফায়ার করে নি। কারণ, এ অস্ত্রের কার্যকর রেঞ্জ ছিল খুবই কম। এমন অবস্থায় কম দূরত্বে গিয়ে ফায়ার করাও ছিল বিপজ্জনক। পরে পাকিস্তানি সেনারা খারাপ ট্রাকটি নিয়ে যাওয়ার জন্য ১টি বড়াে ক্রেন মিঠাছড়া বাজারের দিকে নিয়ে আসে।
ঐ ক্রেনে ৩জন পাকিস্তানি সেনা ও ২জন অসামরিক লােক ছিল। ক্রেনটি জোড়পুকুরে স্থাপিত অ্যান্টি-ট্যাংক মাইনের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময়  তা বিস্ফোরিত হওয়ায় ক্রেনের সবাই মারা যায়। পরবর্তীকালে ঐ নষ্ট ট্রাকটি আনার জন্য আবারও ২০-২৫জন পাকিস্তানি সেনা ২টি অসামরিক ট্রাকযােগে। মিঠাছড়া বাজারের দিক থেকে বামনসুন্দর-দারােগার হাটের দিকে যায়। তারা বামনসুন্দর-দারােগার হাটের কাছে রাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি পৌছলে মুক্তিযােদ্ধারা বামনসুন্দর-দারােগার হাটের দিক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের উপর ফায়ার করেন। মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে তখন ছিল কাশেম গ্রুপের সুবেদার নজিরসহ আরও ৪-৫জন। এ সময় মুক্তিযােদ্ধাদের ছিল ১টি এলএমজি (সেটা ঐ সময় খারাপ ছিল), ৫টি .৩০৩ রাইফেল, ২টি স্টেনগান এবং ২০-২৫টি গ্রেনেড। পাকিস্তানি সেনাদের কাছে ছিল চাইনিজ রাইফেল এবং এলএমজি। উভয় পক্ষের মধ্যে মাগরিবের আজান পর্যন্ত ফায়ারিং চলে। পরে পাকিস্তানি সেনারা আস্তে আস্তে পশ্চাদপসরণ করে মিঠাছড়া বাজারের দিকে চলে যায়। অসামরিক ট্রাকটি পূর্বের স্থানেই পড়ে থাকে। পরে মুক্তিযােদ্ধারা জানতে পারেন যে, ট্রাকটি গ্রামের লােকেরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। প্রতিক্রিয়া অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনারা দীর্ঘদিন ঐ এলাকায় যাতায়াত বন্ধ রাখে এবং যথেচ্ছভাবে বিচরণ করার আর সাহস পায় নি। তারা সব সময়ই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চলাচল করত। গাড়ি থেকে নেমে গ্রামে অবাধে ঘােরাফেরা করতে পারে নি। এ ঘটনায় মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। বিশ্লেষণ বামনসুন্দর-দারােগার হাট অপারেশনটি একটি অত্যন্ত সফল অপারেশন। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিকল্পিত ও সুচারুভাবে সম্পন্ন এ অপারেশনে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও দ্রুত অপারেশন পরিকল্পনার ক্ষমতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। এ অপারেশনটির লক্ষ্যবস্তু বাস্তবে পূর্বনির্ধারিত না থাকলেও মুক্তিযােদ্ধাদের মাইন ব্যবহারের অপূর্ব কৌশলের কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রভূত ক্ষতি হয়। তা ছাড়া অপারেশনটি বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় লক্ষণীয়।
প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানি সেনা দলের ট্রাকযােগে আগমনের খবর পেয়ে মুক্তিযােদ্ধারা দ্রুত অপারেশনের পরিকল্পনা করলেও তাদের সাথে পর্যাপ্ত জনবল ছিল না। তাই তারা রাস্তায় মাইন পুঁতে রাখেন। তা ছাড়া ট্রাকযােগে যাতে পাকিস্তানি সেনারা ফিরে যেতে না পারে এবং প্রয়ােজনীয় সময় লাভের জন্য ট্রাকের জ্বালানি ট্যাংকে গােপনীয়তার সাথে মুক্তিযােদ্ধারা বালি ঢেলে দেন। মুক্তিযােদ্ধারা তখন পর্যন্ত ২০-২৫জন পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার মতাে জনবল কিংবা অস্ত্র সংগ্রহে সমর্থ হয় নি। ট্রাকটিতে যান্ত্রিক গােলযােগ দেখা দিলে পাকিস্তানি সেনারা হেঁটে ফিরে যায়। পরে ক্রেন দিয়ে ট্রাকটি উদ্ধার করতে এলে পুঁতে রাখা মাইনের ওপর দিয়ে অতিক্রমকালীন ক্রেনটি ধ্বংস হয় ও কিছু পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এ ঘটনার সূত্র ধরে দুটি অসামরিক ট্রাকে এক দল পাকিস্তানি সেনা ঘটনাস্থলে এলে মুক্তিযােদ্ধারা তাদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত এবং তাদের প্রভূত ক্ষতিসাধনে সক্ষম হন। এটি সম্ভব হয় এ কারণে যে মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে যাওয়ার আগে কৌশলে সময় বের করে নেন ও জনবল সংগ্রহে সক্ষম হন। সার্বিক বিচারে অপারেশনটিতে তিনটি স্তর। রয়েছে। প্রথমত, লক্ষ্যবস্তু সরাসরি ধ্বংস করার ক্ষমতা মুক্তিযােদ্ধাদের ছিল না। তাই ট্রাকের জ্বালানি ট্যাংকে বালি ঢেলে নতুন লক্ষ্যবস্তুর সৃষ্টি করা অর্থাৎ ক্রেনকে ধ্বংস করার মাঝে মুক্তিযােদ্ধাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। পরবর্তীকালে তৃতীয় লক্ষ্যবস্তু অর্থাৎ অসামরিক ট্রাকযােগে আগত পাকিস্তানি সেনাদের আগমনের পূর্বেই ক্ষিপ্রতার সাথে প্রস্তুতি নেয়ার মাধ্যমে তাদের ক্ষতিসাধন ও বিতাড়নের ঘটনায় নিঃসন্দেহে মুক্তিযােদ্ধাদের সরাসরি সংঘর্ষের সাহস ও দৃঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে।

তথ্যসুত্র: সাক্ষাৎকার: মুক্তিযােদ্ধা অহিদুল আলম, মিরসরাই, চট্টগ্রাম। সম্পাদকের টীকাঃ এ গ্রন্থের দলিলপত্র অধ্যায়ে সন্নিবেশিত মিরসরাই থানার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর গ্রুপের পাটুন অধিনায়ক মাে. জয়নাল আবেদীন প্রদত্ত মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর যুদ্ধবিবরণীতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এটি মধ্য জুনে সংঘটিত। দ্রষ্টব্যঃ গ্রন্থের দ্বাদশ অধ্যায়, দলিল নম্বর ৪০৫।
(বামনসুন্দর-দারোগার হাট অপারেশনের নকশাটি দেখুন ১১১৭ পাতায়)

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড