মস্তাননগরের যুদ্ধ
মস্তাননগরে ক্যাপটেন অলি আহমদেও সৈন্যদের সাথে ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে ক্যাপটেন মতিনের নেতৃত্বে আগত একটি কোম্পানি যােগদান করে। তারা সংগঠিত হওয়ার পূর্বেই পাকিস্তানি বাহিনী ২১ এপ্রিল মস্তাননগরে ট্যাংক, মর্টার, মেশিনগান এবং অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে জোরালাে আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তিশালী আক্রমণে এ ২টি কোম্পানি উল্লেখযােগ্য প্রতিরােধ গড়তে ব্যর্থ হয়। মাত্র ২ ঘণ্টা যুদ্ধের পরই তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটতে বাধ্য হন এবং করেরহাটে নতুন প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। ক্যাপটেন রফিক ও ক্যাপটেন অলি তাদের বাহিনী নিয়ে হিঙ্গুলি নামক স্থানে খালের পাড়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে স্থানীয় স্বাধীনতাকামী জনযােদ্ধারাও অংশ নিয়েছিলেন।
হিজুলি ও করেরহাটের প্রতিরােধ
মস্তাননগর প্রতিরােধ ব্যর্থ হলে একই তারিখে মুক্তিযােদ্ধারা মিরসরাইয়ের করেরহাটের ১ মাইল দক্ষিণে হিঙ্গুলি ব্রিজ এলাকায় নতুন করে ডিফেন্স নেয়। এখানে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবহমান ছােটো একটি খাল প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ছিল। এটির সদব্যবহারের লক্ষ্যে এর ওপর ব্রিজটিও বিস্ফোরকের ফিউজসংক্রান্ত জটিলতা সত্ত্বেও তারা ধ্বংস করেছিলেন। ইতােমধ্যে তাদের সাথে থাকা ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানিটি অন্য ফ্রন্টে প্রত্যাহৃত হয়। ফলে এ প্রতিরক্ষা অবস্থানে ইপিআর, পুলিশ, মুজাহিদ নিয়ে মাত্র ১০০জনের মতাে যােদ্ধা ছিলেন। এখানে তারা ডিফেন্স নেন ৩ মাইলেরও বেশি বিস্তৃত ফ্রন্ট নিয়ে। অস্ত্র ছিল ২টি এলএমজি, প্রায় অকেজো ১টি ৩ ইঞ্চি মর্টার এবং ৩০৩ রাইফেল। পক্ষান্তরে, শত্রু সৈন্য ছিল ২ ব্যাটালিয়ন। সুতরাং মুক্তিযােদ্ধারা ব্রিজকেন্দ্রিক প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন, যাতে শত্রুপক্ষ মনে করে যে এখানে ১ ব্যাটালিয়নেরও অধিক সৈন্যসমাবেশ ঘটেছে। এ লক্ষ্যে তারা শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অবস্থান গ্রহণের এক চাতুর্যপূর্ণ মুভমেন্ট বা চলাচল করতে থাকেন। এটি সামরিক পরিভাষায় বলা হয় “ডিসেপশান বা প্রতারণা। এর ফলে আগুয়ান পাকিস্তানি বাহিনী তাদের গতি মন্থর করে সেই রাত থেকেই হিঙ্গুলি ব্রিজের আশপাশ থেকে কামানের গােলা বর্ষণ করতে থাকে এবং তা চলে ২ দিন ধরে। এদিকে মুক্তিবাহিনীর প্রত্যাশিত ‘রি-ইনফোর্সমেন্ট’ হয় নি। বরং ফটিকছড়ি রুট ধরে পাকিস্তানি বাহিনীর অগ্রযাত্রা তাদের নতুন বিপদের সম্মুখীন করে। ফলে তারা পশ্চাদপসরণ করে ২৪ এপ্রিল করেরহাটে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করেন। এখানেও তারা পূর্বের কৌশল প্রয়ােগ করেন। কিন্তু স্বল্প শক্তি ও রসদ নিয়ে শুধু প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা ও প্রতারণার আশ্রয়ে অসম শক্তির শত্রুর অগ্রাভিযান মাত্র। দুই দিন বিলম্বিত করা সম্ভবপর হয়। ইতােমধ্যে হাটহাজারী-নারায়ণহাট অক্ষে শক্রর চাপ বাড়তে থাকে। তা ছাড়া সব অক্ষেই শত্রু সৈন্যের আগমণ ঘটে। এমতাবস্থায় করেরহাট মুক্তিযােদ্ধাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কাও বাড়তে থাকে। অবশেষে মুক্তিযােদ্ধারা ২৫ এপ্রিল করেরহাট থেকে পশ্চাদপসরণ করেন।
নাজিরহাটের যুদ্ধ
৭ এপ্রিল একটি সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনা দলের সাথে (দলে ইপিআর-এর কয়েকজন অবাঙালি অফিসার ছিলেন) ইপিআর সেনাদের সংঘর্ষ হয়। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত ও বন্দি করা হয়।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড