You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঙলাদেশে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি বহু শহর বারবার হাত বদল :
চুয়াডাঙ্গা থেকে স্বাধীন বাঙলা সরকারের সদর দপ্তর স্থানান্তরিত

সারা বাংলাদেশ এক বিরাট রণাঙ্গনের রূপ নিয়েছে। পকিস্তানের স্থল, জল ও বিমান বাহিনী একযােগে ক্যান্টনমেন্টগুলি থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন শহর দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। বহু শহর ঘনঘন হাত বদল হচ্ছে এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে খুবই ওঠানামা চলছে বলে ইউএনআই সংবাদ দিয়েছে।
সীমান্ত থেকে প্রাপ্ত এক সংবাদে বলা হয়েছে যে, চুয়াডাঙ্গায় প্রচন্ড বােমাবর্ষণের পর অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের সদর দপ্তর এক অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম রণাঙ্গনে পাকবাহিনী কুষ্টিয়া ও রাজশাহী দখল করেছে বটে কিন্তু পূর্ব রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ কিছুটা সাফল্য লাভ করেছে।
গতকাল সকাল থেকেই পাকিস্তানী স্যাবার জেট বিমানগুলি চুয়াডাঙ্গা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে বােমাবর্ষণ করছিল ও গুলিবর্ষণ করছিল। মুক্তিফৌজের শক্ত ঘাঁটি কুষ্টিয়া আজ শত্রুবাহিনীর কবলিত হয় এবং গত ২ সপ্তাহের মধ্যে এই চতুর্থবার রাজশাহী শহরটি হাতবদল হল।
পূর্বরণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ সাহাবাজপুর পুলটি উড়িয়ে দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়ায় এক প্লেটুন পাক সৈন্যকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
আখাউড়ার কাছে পাক সৈন্যর সঙ্গে মুক্তিফৌজের প্রচণ্ড লড়াই চলছে। গঙ্গানগরে ৪ কোম্পনি পাকিস্তানী সৈন্যকে তারা ঠেকিয়ে রেখেছে। সংবাদে জানা গেছে যে, এই যুদ্ধে ৩ শতাধিক পাকিস্তানী সৈন্যকে খতম করা হয়েছে এবং মুক্তিফৌজের মারা গেছেন ৫০ জন।
পূর্বদিন রাত্রি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩টি পাক-বিমান ভূপাতিত হয়েছে এবং রেল স্টেশনে ১০০ সৈন্য নিহত হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় পাক-বিমান আগুনে বােমা ফেলেছে। এতে প্রায় ৫০ জন নাগরিক নিহত ১০০ জন আহত হয়েছেন। ২০টি গ্রাম আগুনে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। ইউএনআই রিপাের্টার মেহেরপুর অঞ্চল থেকে জানাচ্ছেন যে পাকবিমান থেকে পলায়ন গ্রামবাসী এমনকি গরু-বাছুরের উপরও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে।
আওয়ামী লীগ সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেল যে, পাকিস্তানী বাহিনী ঝিনাইদহ রােড ধরে চুয়াডাঙ্গার দিকে এগােচ্ছে, তাদের আর একটি দল হার্ডিঞ্জ ব্রীজ দখল করে ঈশ্বরদি শহরটি কজায় রেখেছে।
যশাের জেলার কয়েক জায়গায় প্রচণ্ড গােলা বর্ষণ হয়েছে। আতঙ্কিত নাগরিকরা শতে শতে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে চলে আসছে।
ময়মনসিংহ শহরে তুমুল লড়াই
ময়মনসিংহ শহরে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। মুক্তিফৌজের গেরিলা বাহিনী সালুতিকার বিমান ঘাঁটি… যুদ্ধে থ্রিতা বৃদ্ধি। …দখলের চেষ্টা করছে। এই সুরক্ষিত ঘাঁটির চার দিকেই সংঘর্ষ হচ্ছে।
শ্রীহট্ট শহরটি এখন কাহারাে হাতে নেই। উভয় পক্ষই শহরটি … গেছে। অধিকাংশ সংঘর্ষ হচ্ছে শহরের বাইরে।
পাকবাহিনী মেঘনা নদীর ওপর ভৈরব ব্রীজ পার হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগােচ্ছে। তাদের যাত্রা পথের দু’ধারে গ্রামগুলি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। লােকদের গুলি করছে।
সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া খবরে আরও জানা গেলে যে, পাকিস্তানের নৌবাহিনীর জাহাজগুলি চট্টগ্রামের উপর নির্বিচারে গােলাবর্ষণ করেছে।
মুক্তিফৌজ ইতিপূর্বে কয়েকটি পাকিস্তানী গানবােট দখল করেছে। পাকিস্তানীরা তাদের অধিকৃত অঞ্চলের কোথাও কোথাও মাইন পেতেছে বলে জানা গেল। আরও জানা গেল যে, মুক্তিফৌজ অধিকৃত দেশের ভেতরের অংশে বিমান সাহায্য নিয়েও পাকবাহিনী বিশেষ এগাতে পারছে না।

সূত্র: কালান্তর, ১৭.৪.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!