You dont have javascript enabled! Please enable it!
ক্যাপটেন রফিকের চট্টগ্রাম শহরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও প্রতিরক্ষা অবস্থান (EPR Strong Points)
২৫ মার্চ রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে প্রাথমিক কয়েকটি প্রতিরােধ অপারেশনের মাধ্যমে ক্যাপটেন রফিক চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করতে সক্ষম হন। এ পরিপ্রেক্ষিতে তার কার্যক্রম ছিল নিম্নরূপ:
ক, রেলওয়ে হিলে তার ট্যাকটিক্যাল সদর দপ্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। খ, পাহাড়তলিস্থ ওয়্যারলেস কলােনিতে অবস্থিত ১টি ইপিআর প্লাটুনের কমান্ডে ছিলেন অবাঙালি ক্যাপটেন হায়াত। বিশ্বস্ত কয়েকজন জেসিও এবং এনসিও নিয়ে ক্যাপটেন হায়াত ও ৩জন অবাঙালি সৈনিককে বন্দি করে প্ল্যাটুনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ (রাত ৯টা)। গ. এ প্ল্যাটুন থেকে ১০জন বাঙালি সৈনিককে ট্যাকটিক্যাল সদর দপ্তরে প্রেরণ। অবশিষ্ট সৈনিকের কয়েকজনকে হালিশহরে রওনা হতে এবং বাকিদের শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত ইপিআর প্লাটুনকে খবর দিতে প্রেরণ ।
রাত সাড়ে ৯টায় তিনি হালিশহরের সেক্টর সদর দপ্তরে এসে পৌঁছান। পূর্বেই তিনি সেক্টর সদর দপ্তরের অস্ত্রাগারে বাঙালি সৈনিকদের প্রহরায় থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। এখানেও তিনি ৩০০ অবাঙালি সৈনিককে বন্দি করতে সক্ষম হন। রাত সাড়ে ১১টায় রেলওয়ে হিলের ট্যাকটিক্যাল সদর দপ্তরে তাঁর অবস্থান গ্রহণ এবং এখানে তার বাহিনীকে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিতে নির্দেশ প্রদান। উপরে বর্ণিত পটভূমি ও অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাপটেন রফিক প্রতিরােধ ও প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এর একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা নিচে প্রদান করা হলাে:
ক. হালিশহরে মূল ঘাঁটি স্থাপন। খ, উপকূলীয় বাঁধ বরাবর শত্রু সৈন্য চলাচল প্রতিরােধের জন্য ২টি প্ল্যাটুন প্রেরণ। গ. ৩০-৪০জন সৈন্যের কয়েকটি দলকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মােড়ে মােতায়েন। ঘ. নিমােক্ত স্থানে ইপিআর প্লাটুন-কোম্পানি অবস্থান গ্রহণ করে:

১. ওয়াপদা কলােনি: ১টি প্লাটুন; ২, প্রবর্তক পাহাড় এলাকা: ১টি প্লাটুন; ৩. পাহাড়তলি রেলওয়ে ভবন: ১টি প্ল্যাটুন; ৪. হালিশহর-পাহাড়তলি এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রােডে অবস্থিত নাহার মঞ্জিল: ২টি সেকশন; আগ্রাবাদ: ১টি কোম্পানি; ৬, হালিশহর: ২টি কোম্পানি (দায়িত্ব: বিমানবন্দর-পাের্ট এলাকার দিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করা); এবং ৭. রামগড়ের সৈন্যদের নিকটবর্তী শুভপুর সেতু ধ্বংস করে সেখানে ১টি কোম্পানিকে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিতে বলা। পাকিস্তানি অবস্থান শহরের অভ্যন্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ছিল নিমরূপ: ক. শত্রুরা যেন বিমানবন্দর ব্যবহার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সেখানে অবস্থিত ইপিআর প্লাটুনের ওপর অর্পিত ছিল। কিন্তু পাের্ট এলাকা থেকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ইপিআর প্লাটুনটিকে নিরস্ত্র ও বন্দি করতে এবং সেখানে সুদৃঢ় রণকৌশলগত অবস্থান গ্রহণে সক্ষম হয়। রেলওয়ে হিলে ইপিআর ট্যাকটিক্যাল সদর দপ্তরের বিপরীত দিকের পাহাড়ে ছিল নৌবাহিনীর যােগাযােগ কেন্দ্র। এখানেও পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান ছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর কমান্ডাে কোম্পানির সৈন্যরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবাঙালিদের ঘরে ঘরে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ঘ. তা ছাড়া নিমােক্ত স্থানেও পাকিস্তানি বাহিনীর দৃঢ় অবস্থান ছিল: ১. টাইগার পাস; ২. পাের্ট এলাকা; ৩. দামপাড়া এমবারকেশন দপ্তর; ৪. সার্কিট হাউজ এলাকা ইত্যাদি। ঙ. ইতােমধ্যে চট্টগ্রামের যুদ্ধ পরিস্থিতি ও গুরুত্ব বিবেচনা করে পাকিস্তানি বাহিনীর ১৬ ডিভিশন চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হয়। 

সূত্রঃ   মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – প্রথম খন্ড

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!